মৃত্যুপথযাত্রী বাবার সামনেই নিজের গালে জুতা মারতে বাধ্য করলেন ছাত্রলীগ নেতা!
- আপডেট সময় : ১১:১২:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ১২১ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: মৃত্যুপথযাত্রী বাবার সামনেই পায়ের জুতা খুলে দিয়ে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করার নির্দেশ দিয়ে ফেঁসে গেলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ। এ ঘটনায় পদ হারাতে হচ্ছে তাকে।
শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সংবাদমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ।
তিনি জানান, হাসপাতালে ভর্তি মুর্মূষু বাবার বেডের পাশে বসে পায়ের জুতা খুলে দিয়ে হোসাইন নামের এক কর্মীকে নিজের গালে আঘাত করার দৃশ্য ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি দুঃখজনক। এ কারণে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে পা ধরে মাফ চাচ্ছেন হোসাইন নামের ওই কর্মী। কথোপকথনের একপর্যায়ে পা থেকে জুতা খুলে দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। হোসাইনকে নিজের গালে সেই জুতা দিয়ে আঘাত করার নিদের্শ দেন তিনি। নির্দেশ পালনে কয়েকবার নিজের গালে আঘাত করেন হোসাইন।
মৃত্যুপথযাত্রী বাবার চোখের সামনেই ঘটনাটি ঘটে গেল। সেখানে মা ফাতেমা খাতুন বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুই করার ছিল না তার। ছেলেকে জুতাপেটা করতে দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা।
অমানবিক এ ঘটনটি ঘটেছে ৭ ডিসেম্বর রাত অনুমান ১২টার দিকে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে যশোর হাসপাতালে মৃত্যু হয় হোসাইনের বাবার।
এলাকায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত এক কর্মী হিসেবে এসএম সরকার ওরফে হোসাইন পরিচিত। তার বাড়ি উপজেলার যাদবপুর গ্রামে। ঢাকায় ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। এক ছেলে এক মেয়ের জনক তিনি। বাবা গিয়াস উদ্দিন সরকার অসুস্থ। দুই ছেলে এক মেয়ের পিতা তিনি। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন সবাই।
হোসাইনের ভগিনীপতি মোমিন জানান, মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ পা থেকে জুতা খুলে দিয়ে হোসাইনকে নিজের গালে আঘাত করার নিদের্শ দেন। নিরুপায় হয়ে কাজটি করেন হোসাইন। এর আগে পা ধরে মাফ চায়।
মোমিন আরও জানান, যখন ঘটনাটি ঘটে তখন হোসাইনের বাবা গিয়াস উদ্দিন সরকার মৃত্যুশয্যায়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার।
৬ ডিসেম্বর বিকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে ৮ ডিসেম্বর মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যশোর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তার লাশ।
মোমিনের দেওয়া তথ্যমতে, ফেসবুকে লেখালেখির সূত্র ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপাশের সঙ্গে হোসাইনের বিরোধ চলে আসছিল। সাবেক এমপি নবী নেওয়াজের সর্মথক তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিতা গিয়াস সরকারের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন হোসাইন। পরে সেখানে আসেন মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশসহ কয়েকজন। হোসাইনকে সহজেই বাগে পেয়ে যান তারা। শাস্তি হিসেবে জুতাপেটা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হোসাইন নিজের গালে জুতা দিয়ে আঘাত করছেন। সেই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েও দিলেন আরিফুজ্জামান বিপাশের লোকজন। শেষ পর্যন্ত পদ হারাতে হচ্ছে তাকে। বিপাশের বক্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।