ঢাকা ০৪:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




ফেসবুকে ‘নাবিলা’ সেজে জিতুর প্রতারণা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:১৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯ ১০০ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ;
ফেসবুকের আইডি ‘নাবিলা আখতার’ নামে। কথিত নাবিলার অন্য সব পরিচয় সেখানে ‘গোপন’ করে রাখা হয়েছে। নাবিলার বন্ধুর তালিকায় রয়েছেন ৯০ জন। তবে এই বন্ধুদের অনেকেই নাবিলার প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। কারও সঙ্গে প্রেমের অভিনয়, আবার কাউকে বিদেশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নাবিলা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। নাবিলা নিজে চিকিৎসক বলে পরিচয় দিত।

মূলত সুনামগঞ্জের ছাতকের জিতু হাসানই ফেসবুকে নাবিলা পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে। ভার্চুয়াল জগতে নাবিলার ছদ্মবেশ ধারণ করা জিতু এসএসসির গণ্ডিও পার হতে পারেনি। তবে প্রতারণা চালাচ্ছিল অত্যন্ত সুচতুরভাবে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত প্রতারক জিতুকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগ।

জিতুর প্রতারণার শিকার ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার অভিযোগ, ২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে কথিত নাবিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। চলতি বছরের শুরুতে মেসেঞ্জারে নাবিলা তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে তথ্য জানতে চায়। সরল বিশ্বাসে তার সব খুলে বলেন তিনি। তখন নাবিলা জানায়, সে পেশায় চিকিৎসক, লন্ডনে বসবাস করছে। লন্ডনে তার মতো একজন বয়স্ক লোক তার দরকার। তাকে সেখানে চাকরি দেওয়া বাবদ মাসে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালে তখন নাবিলা জানায়, সব মিলিয়ে ১২/১৩ লাখ টাকা লাগবে। ওই অর্থের মধ্যে ৭/৮ লাখ নাবিলা পরিশোধ করবে; বাকি টাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে বহন করতে হবে। উত্তরে ওই কর্মকর্তা জানান, লন্ডনে যাওয়ার জন্য এত টাকা তিনি খরচ করতে পারবেন না। তখন নাবিলা জানতে চায়, অবসরের পর পাওয়া অর্থ তিনি কী করেছেন। কর্মকর্তা জানান, ওই অর্থ তিনি অন্য খাতে কাজে লাগিয়েছেন। এরপর নাবিলা জানায়, লন্ডনে যাওয়ার খরচ নিয়ে তার বেশি ভাবতে হবে না। ‘হাসান’ নামের এক ছোট ভাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। পরে হাসান পরিচয়ে কথিত নাবিলার ছোট ভাই সেজে ওই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিতু। তখন কথিত হাসান তার কাছে পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র চায়। ওই সময় হাসানের কিছু আচরণে সন্দেহ হলে তার প্রকৃত নাম-ঠিকানা জানতে চান ওই সরকারি কর্মকর্তা। তখন সে জানায়, তার নাম ‘আর রহমান হাসান’। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এরপর ওই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওই নামে সেখানে কোনো শিক্ষক নেই। তখন তিনি মোটামুটি নিশ্চিত হন যে এটা প্রতারক।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের হাতে গ্রেফতারের পর জিতুর সঙ্গে কথা হয়। সে অকপটে এসব প্রতারণার কথা স্বীকার করে। জিতু জানায়, তার প্রকৃত ফেসবুক আইডি জিতু হাসান। প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করতে নাবিলা আখতার পরিচয়ে একটি ফেক আইডি খোলে। জিতু জানায়, মেসেঞ্জারে অনেকের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে আসছিল সে। এ ছাড়া তসলিম নামের কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ীর ভাইকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা নিয়েছে। তসলিমকে জানানো হয় যে তার এক ভাই ঢাকায় রয়েছেন। তিনি তসলিমের ভাইয়ের বিদেশে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেবেন। ওই ভাই তসলিমের সঙ্গে দেখা করবে। প্রাথমিকভাবে সব কাগজপত্র তৈরি বাবদ তাকে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। এতে রাজি হওয়ার পর জিতুই ওই ভাই সেজে সুনামগঞ্জ থেকে এসে তসলিমের কাছ থেকে দুই লাখ নিয়ে নেয়। এ ছাড়া আরও একজনকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথিত নাবিলা জানায়, লন্ডনে একটি হাসপাতালে অনেক কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেখানে মোটা অঙ্কের বেতনও মিলবে। এটা জানিয়ে ওই চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকেও হাতিয়ে নেওয়া হয় দুই লাখ টাকা।

জিতু সমকালকে জানায়, ফেক আইডি থেকে অনেকের কাছেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত সে। যারা সেটি গ্রহণ করত, তাদের সঙ্গে সে প্রতারণা করত।

সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগের ডিসি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ভালোভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে কাউকে গ্রহণ করা বিপদের কারণ হতে পারে। যেটা কথিত নাবিলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ফেসবুকে ‘নাবিলা’ সেজে জিতুর প্রতারণা

আপডেট সময় : ০৪:১৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মে ২০১৯

সকালের সংবাদ;
ফেসবুকের আইডি ‘নাবিলা আখতার’ নামে। কথিত নাবিলার অন্য সব পরিচয় সেখানে ‘গোপন’ করে রাখা হয়েছে। নাবিলার বন্ধুর তালিকায় রয়েছেন ৯০ জন। তবে এই বন্ধুদের অনেকেই নাবিলার প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। কারও সঙ্গে প্রেমের অভিনয়, আবার কাউকে বিদেশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নাবিলা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। নাবিলা নিজে চিকিৎসক বলে পরিচয় দিত।

মূলত সুনামগঞ্জের ছাতকের জিতু হাসানই ফেসবুকে নাবিলা পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে। ভার্চুয়াল জগতে নাবিলার ছদ্মবেশ ধারণ করা জিতু এসএসসির গণ্ডিও পার হতে পারেনি। তবে প্রতারণা চালাচ্ছিল অত্যন্ত সুচতুরভাবে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ পর্যন্ত প্রতারক জিতুকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগ।

জিতুর প্রতারণার শিকার ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তার অভিযোগ, ২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে কথিত নাবিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। চলতি বছরের শুরুতে মেসেঞ্জারে নাবিলা তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে তথ্য জানতে চায়। সরল বিশ্বাসে তার সব খুলে বলেন তিনি। তখন নাবিলা জানায়, সে পেশায় চিকিৎসক, লন্ডনে বসবাস করছে। লন্ডনে তার মতো একজন বয়স্ক লোক তার দরকার। তাকে সেখানে চাকরি দেওয়া বাবদ মাসে এক লাখ টাকা দেওয়া হবে। অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালে তখন নাবিলা জানায়, সব মিলিয়ে ১২/১৩ লাখ টাকা লাগবে। ওই অর্থের মধ্যে ৭/৮ লাখ নাবিলা পরিশোধ করবে; বাকি টাকা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে বহন করতে হবে। উত্তরে ওই কর্মকর্তা জানান, লন্ডনে যাওয়ার জন্য এত টাকা তিনি খরচ করতে পারবেন না। তখন নাবিলা জানতে চায়, অবসরের পর পাওয়া অর্থ তিনি কী করেছেন। কর্মকর্তা জানান, ওই অর্থ তিনি অন্য খাতে কাজে লাগিয়েছেন। এরপর নাবিলা জানায়, লন্ডনে যাওয়ার খরচ নিয়ে তার বেশি ভাবতে হবে না। ‘হাসান’ নামের এক ছোট ভাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। পরে হাসান পরিচয়ে কথিত নাবিলার ছোট ভাই সেজে ওই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জিতু। তখন কথিত হাসান তার কাছে পাসপোর্ট তৈরির কাগজপত্র চায়। ওই সময় হাসানের কিছু আচরণে সন্দেহ হলে তার প্রকৃত নাম-ঠিকানা জানতে চান ওই সরকারি কর্মকর্তা। তখন সে জানায়, তার নাম ‘আর রহমান হাসান’। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এরপর ওই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন, ওই নামে সেখানে কোনো শিক্ষক নেই। তখন তিনি মোটামুটি নিশ্চিত হন যে এটা প্রতারক।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের হাতে গ্রেফতারের পর জিতুর সঙ্গে কথা হয়। সে অকপটে এসব প্রতারণার কথা স্বীকার করে। জিতু জানায়, তার প্রকৃত ফেসবুক আইডি জিতু হাসান। প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করতে নাবিলা আখতার পরিচয়ে একটি ফেক আইডি খোলে। জিতু জানায়, মেসেঞ্জারে অনেকের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে আসছিল সে। এ ছাড়া তসলিম নামের কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ীর ভাইকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা নিয়েছে। তসলিমকে জানানো হয় যে তার এক ভাই ঢাকায় রয়েছেন। তিনি তসলিমের ভাইয়ের বিদেশে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেবেন। ওই ভাই তসলিমের সঙ্গে দেখা করবে। প্রাথমিকভাবে সব কাগজপত্র তৈরি বাবদ তাকে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। এতে রাজি হওয়ার পর জিতুই ওই ভাই সেজে সুনামগঞ্জ থেকে এসে তসলিমের কাছ থেকে দুই লাখ নিয়ে নেয়। এ ছাড়া আরও একজনকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথিত নাবিলা জানায়, লন্ডনে একটি হাসপাতালে অনেক কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেখানে মোটা অঙ্কের বেতনও মিলবে। এটা জানিয়ে ওই চাকরিপ্রত্যাশীর কাছ থেকেও হাতিয়ে নেওয়া হয় দুই লাখ টাকা।

জিতু সমকালকে জানায়, ফেক আইডি থেকে অনেকের কাছেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত সে। যারা সেটি গ্রহণ করত, তাদের সঙ্গে সে প্রতারণা করত।

সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ বিভাগের ডিসি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ভালোভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়া ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে কাউকে গ্রহণ করা বিপদের কারণ হতে পারে। যেটা কথিত নাবিলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে।