ঢাকা ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর পরিদর্শনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী Logo সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহারে শাবি শিক্ষক সমিতি মৌন মিছিল ও কালোব্যাজ ধারণ Logo শাবিপ্রবিতে কুমিল্লা স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত Logo শাবিপ্রবি কেন্দ্রে সুষ্ঠভাবে গুচ্ছভর্তির তিন ইউনিটের পরীক্ষা সম্পন্ন Logo শাবির গণিত সমিতির ভিপি রাহুল ও সম্পাদক রিজভী Logo শাবিপ্রবির শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংঘের সভাপতি রনি, সম্পাদক দীপ্ত   Logo শাবিপ্রবির শাহপরান ও মুজতবা আলী হলে ৬ সহকারী প্রভোস্ট নিয়োগ Logo কুবির শেখ হাসিনা হলের নতুন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মেহের নিগার Logo শাবিপ্রবিতে সুষ্ঠভাবে গুচ্ছভুক্ত ‘খ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন Logo গুচ্ছ খ-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষা উপকরণ ও সুপেয় পানি দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের সহযোগিতা




তালপাতার ঝুপড়িতে নিষ্ঠুর হোম কোয়ারেন্টিন!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:১৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ এপ্রিল ২০২০ ৬২ বার পড়া হয়েছে

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ 
ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১)। করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। এর পরই স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।
সোমবার পর্যন্ত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ওই স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লগন্ডা গ্রামে।

এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।

জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে ফেরেন।

বাড়ি ফেরার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে মানবতার জীবনযাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না।

কান্নাজনিত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনও বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করব।

অন্যদিকে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়িঘরের ভেতর রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




তালপাতার ঝুপড়িতে নিষ্ঠুর হোম কোয়ারেন্টিন!

আপডেট সময় : ০২:১৭:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ এপ্রিল ২০২০

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ 
ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন এক নারী স্বাস্থ্যকর্মী (২১)। করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। এর পরই স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী একটি নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।
সোমবার পর্যন্ত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ওই স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লগন্ডা গ্রামে।

এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলাব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে।

জানা গেছে, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরি করতেন এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিয়ে দেয়। ছুটিতে তিনি বাড়িতে ফেরেন।

বাড়ি ফেরার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈর নির্দেশে এলাকাবাসী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভেতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে মানবতার জীবনযাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার আগে জানা ছিল না।

কান্নাজনিত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। আমার মেয়েটির এখনও বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে এর দায় কে নেবে? এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে আমার মেয়েটিকে এখানে রেখেছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা প্রশান্ত বাড়ৈর বলেন, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তে ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের মধ্যে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম। আমরা এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ওখান থেকে এনে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করব।

অন্যদিকে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে যারা এভাবে ঝুপড়িঘরের ভেতর রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।