ঢাকা ০১:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




রেলক্রসিংয়ের নারী গেটম্যানের গল্প

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:০৬:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০১৯ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;
নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিংয়ে লাল-সবুজ রঙের দুটো পতাকা হাতে নিয়ে ছুটোছুটি করছেন তানজিলা খাতুন। বয়স কুড়ি পেরোয়নি। কিন্তু কাজের মাধ্যমে তিনি বয়সকে ছাড়িয়ে গেছেন।
‘মেয়েরা এখন কী কী পারে?’ -এই প্রশ্নটা সেকেলে হয়ে গেছে। আধুনিক যুগের প্রশ্নটা হচ্ছে, ‘মেয়েরা এখন কী কী পারে না?’ সংসারের কাজ থেকে শুরু করে এভারেস্ট জয়, সবকিছুতেই মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে।

যেকোনো জায়গায় কাজ করতে কিংবা যেকোনো কাজের ভালো পর্যায়ে যেতে মেয়েদের অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়। নারী ক্রিকেটারেরা আজকে এই পর্যায়ে এসেছে প্রতিবন্ধকতা ও অনেক মানুষের সমালোচনাকে পেছনে ফেলে। রেলক্রসিংয়ে কর্মরত এই তরুণীকেও শুনতে হয় নানা সমালোচনা। অন্য সফল নারীদের মতো তিনিও এই সমালোচনা গায়ে মাখেন না।

ট্রেন চলে যাবার পরে তিনি রেললাইনের ধারে আনমনা হয়ে বসে ছিলেন। আমি পাশে বসতেই তিনি হকচকিয়ে উঠলেন। আমি বললাম, ‘ভয় পাবেন না। আমি সাংবাদিক।’

এবার তিনি স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ‘বলুন,।‘

আমি বললাম, ‘আসলে আমি আপনার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি। কীভাবে এ কাজে এলেন, এ কাজে আসার সময় প্রতিবন্ধকতা ছিল কী না, এসব কিছুই জানতে চাই।’

তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘জেনে কী হবে?’

আমি বললাম, ‘ এই অজানা কথাগুলো দমিয়ে রাখা নারীদের অনুপ্রেরণা দেবে।’

এবার তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে এক মধ্যবিত্ত সচ্ছল পরিবারে। কিন্তু ছোটোবেলা থেকে আমি কোনো কাজকেই ছোটো করে দেখিনি। ছোটোবেলা নিজের জুতো যেমন সেলাই করেছি, বন্ধু বান্ধবদের জুতোও সেলাই করেছি।

‘আমার স্বামী রেলওয়ের দপ্তর শাখায় কাজ করেন, তিনি যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোভাবে চলে যায়। কিন্তু ছোটোবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল আমি আত্মনির্ভরশীল হব। তাই এই কাজকে বেছে নেওয়া।’

তানজিলা বলতে থাকেন, আমি আমার যোগ্যতা বলেই এখানে চাকরি পেয়েছি। এ বছর আমি উন্মুক্ত কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেব। সংসার সামলানো, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা আর এই দায়িত্ব পালন করাই আমার কাজ।’

মানুষের সমালোচনামূলক মন্তব্য কীভাবে মোকাবেলা করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সেগুলোকে এড়িয়ে চলি। ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ আপনি চাইলেও দূর করতে পারবেন না। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো, ডাস্টবিন থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা।’

‘মেয়েরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। মেয়েদের দমিয়ে রাখার মানসিকতা মান্ধাতা আমলে যেমন ছিল আজও তেমনই আছে। আমি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পছন্দ করি।’

আপনার এই কাজে স্বামীর কোনো বাধা আছে কী না, এই প্রশ্নের জবাবে তানজিলা বলেন, ‘আমার স্বামীর নাম মিজানুর রহমান। মেয়েদের দমিয়ে রাখার পক্ষে তিনি নন। উনি আমাকে সহায়তা করেন বলেই আমি এই কাজটা করতে পারছি। রাতে যখন ডিউটি থাকে, মাঝেমধ্যে তখন তিনি আমার সঙ্গে থাকেন। এছাড়া, আমার অনুপস্থিতিতে আমাদের বাচ্চাকাচ্চাদের তিনি দেখাশোনা করেন।’

নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘স্বামীর আয় করা টাকা দিয়ে নিজের শখ-আহ্লাদ পূরণ করা যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ইতস্তত বোধ হয়। অনেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়েও চাকরি করেন না। শিক্ষিত হয়েও বেকার বসে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত, কোনো কাজই ছোট নয়।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




রেলক্রসিংয়ের নারী গেটম্যানের গল্প

আপডেট সময় : ১১:০৬:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক;
নগরীর ভদ্রা রেলক্রসিংয়ে লাল-সবুজ রঙের দুটো পতাকা হাতে নিয়ে ছুটোছুটি করছেন তানজিলা খাতুন। বয়স কুড়ি পেরোয়নি। কিন্তু কাজের মাধ্যমে তিনি বয়সকে ছাড়িয়ে গেছেন।
‘মেয়েরা এখন কী কী পারে?’ -এই প্রশ্নটা সেকেলে হয়ে গেছে। আধুনিক যুগের প্রশ্নটা হচ্ছে, ‘মেয়েরা এখন কী কী পারে না?’ সংসারের কাজ থেকে শুরু করে এভারেস্ট জয়, সবকিছুতেই মেয়েরা এখন অনেক এগিয়ে।

যেকোনো জায়গায় কাজ করতে কিংবা যেকোনো কাজের ভালো পর্যায়ে যেতে মেয়েদের অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়। নারী ক্রিকেটারেরা আজকে এই পর্যায়ে এসেছে প্রতিবন্ধকতা ও অনেক মানুষের সমালোচনাকে পেছনে ফেলে। রেলক্রসিংয়ে কর্মরত এই তরুণীকেও শুনতে হয় নানা সমালোচনা। অন্য সফল নারীদের মতো তিনিও এই সমালোচনা গায়ে মাখেন না।

ট্রেন চলে যাবার পরে তিনি রেললাইনের ধারে আনমনা হয়ে বসে ছিলেন। আমি পাশে বসতেই তিনি হকচকিয়ে উঠলেন। আমি বললাম, ‘ভয় পাবেন না। আমি সাংবাদিক।’

এবার তিনি স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ‘বলুন,।‘

আমি বললাম, ‘আসলে আমি আপনার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি। কীভাবে এ কাজে এলেন, এ কাজে আসার সময় প্রতিবন্ধকতা ছিল কী না, এসব কিছুই জানতে চাই।’

তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘জেনে কী হবে?’

আমি বললাম, ‘ এই অজানা কথাগুলো দমিয়ে রাখা নারীদের অনুপ্রেরণা দেবে।’

এবার তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘আমার জন্ম হয়েছে এক মধ্যবিত্ত সচ্ছল পরিবারে। কিন্তু ছোটোবেলা থেকে আমি কোনো কাজকেই ছোটো করে দেখিনি। ছোটোবেলা নিজের জুতো যেমন সেলাই করেছি, বন্ধু বান্ধবদের জুতোও সেলাই করেছি।

‘আমার স্বামী রেলওয়ের দপ্তর শাখায় কাজ করেন, তিনি যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোভাবে চলে যায়। কিন্তু ছোটোবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল আমি আত্মনির্ভরশীল হব। তাই এই কাজকে বেছে নেওয়া।’

তানজিলা বলতে থাকেন, আমি আমার যোগ্যতা বলেই এখানে চাকরি পেয়েছি। এ বছর আমি উন্মুক্ত কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেব। সংসার সামলানো, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা আর এই দায়িত্ব পালন করাই আমার কাজ।’

মানুষের সমালোচনামূলক মন্তব্য কীভাবে মোকাবেলা করেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সেগুলোকে এড়িয়ে চলি। ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ আপনি চাইলেও দূর করতে পারবেন না। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো, ডাস্টবিন থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলা।’

‘মেয়েরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। মেয়েদের দমিয়ে রাখার মানসিকতা মান্ধাতা আমলে যেমন ছিল আজও তেমনই আছে। আমি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পছন্দ করি।’

আপনার এই কাজে স্বামীর কোনো বাধা আছে কী না, এই প্রশ্নের জবাবে তানজিলা বলেন, ‘আমার স্বামীর নাম মিজানুর রহমান। মেয়েদের দমিয়ে রাখার পক্ষে তিনি নন। উনি আমাকে সহায়তা করেন বলেই আমি এই কাজটা করতে পারছি। রাতে যখন ডিউটি থাকে, মাঝেমধ্যে তখন তিনি আমার সঙ্গে থাকেন। এছাড়া, আমার অনুপস্থিতিতে আমাদের বাচ্চাকাচ্চাদের তিনি দেখাশোনা করেন।’

নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘স্বামীর আয় করা টাকা দিয়ে নিজের শখ-আহ্লাদ পূরণ করা যায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ইতস্তত বোধ হয়। অনেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়েও চাকরি করেন না। শিক্ষিত হয়েও বেকার বসে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত, কোনো কাজই ছোট নয়।’