ঢাকা ০৮:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নিজেই মাদকাসক্ত মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা; মাসে মাসোহারা আদায় ৭লাখ! Logo দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রকারী মাস্টারমাইন্ড সেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তার শাপলা Logo ‘শেখ হাসিনা ও জিয়াউলের বিরুদ্ধে ২০০ গুমের প্রমাণ মিলেছে’ Logo দুর্নীতির ছায়ায় রাজউক ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান! Logo নিয়মিত চুমু খেলে মিলবে যে শারীরিক উপকার Logo প্রধান উপদেষ্টা কাতার যাচ্ছেন আজ, সফরসঙ্গী যারা Logo জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হলেন মুহাম্মদ আবু আবিদ Logo প্রধান উপদেষ্টার দেয়া নির্বাচনী সময়ে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি Logo ডেসটিনি প্রতারক রফিকুল আমিনের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন Logo একচেটিয়া লিফট সরবরাহ চুক্তি: ওয়ালটনের টাকায় শেখর সহ গণপূর্ত’ চার প্রকৌশলীর বিদেশ ভ্রমণ!




‘মেম্বার আমার সংসারটা শেষ কইরা দিছে’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯ ১০৭ বার পড়া হয়েছে

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি;
দুঃখের দিন আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসেছে গফরগাঁওয়ের রাবেয়া বেগমের ওপর। ময়মনসিংহের এই উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে পক্ষে ভোট না দেওয়ায় গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে ইউপি সদস্যের নির্দয় নির্যাতনের শিকার হন স্বামী বাদল মিয়া। এরপর দেওয়া হয় পুলিশে। সেই থেকে জেল হাজতে রয়েছেন রিকশাচালক স্বামী।

দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা রাবেয়া বেগম লোকজনের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে তিন মুখের আহার যোগানোর চেষ্টা করছেন। আর মিথ্যা গরু চুরি মামলায় জেলে থাকা স্বামী বাদল মিয়ার জামিনের জন্য দুই সন্তান নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আদালত নিরপরাধ বাদল মিয়ার জামিন মঞ্জুর না করলেও একই ঘটনায় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক মামলায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই ইউপি সদস্য আবুল কাশেম।

উপজেলার বড় বাড়ি গ্রামের কৃষক আলামিন মিয়ার একটি গরু গত ১২ এপ্রিল রাতে চুরি করে একই গ্রামের হিমেল (২৫) নামে এক চোর। পরের দিন ১৩ এপ্রিল ভোরে পাশের পাল্টিপাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন গরুসহ হিমেলকে আটক করে। এ সময় উস্থি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেম সেখানে যান। তিনি গরু চোর হিমেলের সঙ্গে কথা বলে গরুর মালিক আলামিনকে ফোন করে গরু নিয়ে যেতে বলেন। গরুর মালিক আলামিন বাদল মিয়ার রিকশাসহ তিন-চারটি রিকশা ভরে লোকজন নিয়ে গরু নিতে এলে ইউপি সদস্য আবুল কাশেম রিকশা চালক বাদলকে ধরে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে বেদম পেটাতে থাকেন। পরে গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাদল মিয়াকেও পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন তিনি।

পাগলা থানা পুলিশ বাদলকেও গরু চুরির মামলায় আদালতের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেল হাজতে পাঠান। রিকশা চালক বাদল মিয়াকে নির্দয় নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেইসবুকে ভাইরাল হয় এবং কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পাগলা থানা পুলিশ রিকশা চালক ‘বাদল মিয়াকে নির্দয় নির্যাতন ও মিথ্যে চুরি মামলায় ফাঁসানোর’ অপরাধে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেন।

তবে গ্রেপ্তার না করায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে সদর্পে এলাকায় ফিরে আসেন ইউপি সদস্য আবুল কাশেম। আর চুরি মামলায় ফাঁসানো হলেও রিকশা চালক বাদল মিয়ার জামিন হয়নি। এ অবস্থায় বাদল মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম দুই সন্তান নিয়ে আদালত, পাগলা থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘুরেও কোনও পথ বের করতে পারছেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাবেয়া বেগম দুই সন্তান রিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এলে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মেম্বার (আবুল কাশেম) আমার সংসারটা শেষ কইরা দিছে। এই দুই সন্তান নিয়া কিবায় বাঁচবাম আল্লাই জানে।’

পাগলা থানার অফিসার ইনচার্জ (চলতি দায়িত্ব) ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আদালতে জামিনের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নাই। তবে রিকশা চালক বাদল মিয়ার জামিনে পুলিশের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হবে না। রিকশা চালক বাদল মিয়ার পরিবারকে আগেও সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দেখি আবার এক বস্তা চাল দেওয়া হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘মেম্বার আমার সংসারটা শেষ কইরা দিছে’

আপডেট সময় : ১০:৪৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০১৯

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি;
দুঃখের দিন আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসেছে গফরগাঁওয়ের রাবেয়া বেগমের ওপর। ময়মনসিংহের এই উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে পক্ষে ভোট না দেওয়ায় গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে ইউপি সদস্যের নির্দয় নির্যাতনের শিকার হন স্বামী বাদল মিয়া। এরপর দেওয়া হয় পুলিশে। সেই থেকে জেল হাজতে রয়েছেন রিকশাচালক স্বামী।

দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা রাবেয়া বেগম লোকজনের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে তিন মুখের আহার যোগানোর চেষ্টা করছেন। আর মিথ্যা গরু চুরি মামলায় জেলে থাকা স্বামী বাদল মিয়ার জামিনের জন্য দুই সন্তান নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আদালত নিরপরাধ বাদল মিয়ার জামিন মঞ্জুর না করলেও একই ঘটনায় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা পৃথক মামলায় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই ইউপি সদস্য আবুল কাশেম।

উপজেলার বড় বাড়ি গ্রামের কৃষক আলামিন মিয়ার একটি গরু গত ১২ এপ্রিল রাতে চুরি করে একই গ্রামের হিমেল (২৫) নামে এক চোর। পরের দিন ১৩ এপ্রিল ভোরে পাশের পাল্টিপাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন গরুসহ হিমেলকে আটক করে। এ সময় উস্থি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেম সেখানে যান। তিনি গরু চোর হিমেলের সঙ্গে কথা বলে গরুর মালিক আলামিনকে ফোন করে গরু নিয়ে যেতে বলেন। গরুর মালিক আলামিন বাদল মিয়ার রিকশাসহ তিন-চারটি রিকশা ভরে লোকজন নিয়ে গরু নিতে এলে ইউপি সদস্য আবুল কাশেম রিকশা চালক বাদলকে ধরে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে বেদম পেটাতে থাকেন। পরে গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাদল মিয়াকেও পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন তিনি।

পাগলা থানা পুলিশ বাদলকেও গরু চুরির মামলায় আদালতের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেল হাজতে পাঠান। রিকশা চালক বাদল মিয়াকে নির্দয় নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেইসবুকে ভাইরাল হয় এবং কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পাগলা থানা পুলিশ রিকশা চালক ‘বাদল মিয়াকে নির্দয় নির্যাতন ও মিথ্যে চুরি মামলায় ফাঁসানোর’ অপরাধে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেন।

তবে গ্রেপ্তার না করায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে সদর্পে এলাকায় ফিরে আসেন ইউপি সদস্য আবুল কাশেম। আর চুরি মামলায় ফাঁসানো হলেও রিকশা চালক বাদল মিয়ার জামিন হয়নি। এ অবস্থায় বাদল মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া বেগম দুই সন্তান নিয়ে আদালত, পাগলা থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘুরেও কোনও পথ বের করতে পারছেন না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাবেয়া বেগম দুই সন্তান রিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে এলে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মেম্বার (আবুল কাশেম) আমার সংসারটা শেষ কইরা দিছে। এই দুই সন্তান নিয়া কিবায় বাঁচবাম আল্লাই জানে।’

পাগলা থানার অফিসার ইনচার্জ (চলতি দায়িত্ব) ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আদালতে জামিনের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নাই। তবে রিকশা চালক বাদল মিয়ার জামিনে পুলিশের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হবে না। রিকশা চালক বাদল মিয়ার পরিবারকে আগেও সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দেখি আবার এক বস্তা চাল দেওয়া হবে।’