ঢাবির প্রথম ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী অঙ্কিতার স্বপ্নকথন
- আপডেট সময় : ০৯:০২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
দরিদ্র পরিবারের জন্ম। বেড়ে উঠার সময়টাতে পদে পদে বাধা পেয়েছেন। পড়াশুনা করতে গিয়েও বাধা পেয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, ‘ওকে পড়াশুনা করিয়ে কী হবে’! বহু কষ্টে টিউশনি করে পড়াশুনার খরচ চালিয়েছেন। সেই অঙ্কিতা ইসলামই এখন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। বলা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পড়ার সুযোগ পেলেন এক ট্রান্সজেন্ডার নারী। এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন অঙ্কিতা। এর আগে গণিতে স্নাতক করেছেন। একটি ব্যাংকে কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে তার। অঙ্কিতার ভবিষ্যত লক্ষ্য, উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করবেন। ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবেন।
অঙ্কিতার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নান্দুরিয়ায়। করোটিয়ায় সরকারি সা’দত কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে দেশের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরে খুশি অঙ্কিতা। যদিও পড়ার খরচ চালাতে পারবেন কী না সেই অনিশ্চয়তা ছিল। পরে অবশ্য স্কলারশিপে পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
অঙ্কিতা জানান, তার অনেকদিন ধরেই মাাস্টার্স করার ইচ্ছে ছিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সার্কুলার দেখে আবেদন করেন। পারবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর ভাইভাতেও উতরে যান তিনি। অঙ্কিতা বলেন, ভাইভা দেওয়ার আগে আমার ভয় হচ্ছিল আমাকে স্যাররা কীভাবে নেয়। তবে স্যাররা যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন এবং সৌভাগ্যক্রমে আমি টিকে যাই।
অঙ্কিতা বলেন, আমার জন্য কঠিন হলেও ধার করে ভর্তিও হয়ে যাই। কিন্তু কোর্স ফি দেখে আমি আকাশ থেকে পড়লাম এত টাকা আমি কিভাবে ম্যানেজ করব। এদিকে আমার তীব্র ইচ্ছে যেভাবে হোক আমাকে পড়াশোনা সম্পন্ন করতেই হবে। তখন অনেকভাবে চেষ্টার পর ট্রান্সজেন্ডার রাইট অ্যাক্টিভিস্ট হোচিমিন ইসলাম আপুর সাথে দেখা হয় এবং ঘটনাটা শেয়ার করি। আপু আমাকে নিয়ে উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করেন। স্যার যথেষ্ট মানবিকতার সাথে আমার কথা শোনেন এবং সাথে সাথে ডিন স্যারকে ডেকে স্কলারশিপের মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন।
অঙ্কিতা বলেন, এখানে যে আন্তরিক পরিবেশ পেয়েছি সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এটা শুধু আমার জন্য না, ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য বিশাল একটা জায়গা তৈরি হলো, নতুন একটা যাত্রা শুরু হলো। ভবিষ্যতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো আমার অন্য ট্রান্সজেন্ডার ভাই-বোনেরা পড়াশোনা করতে পারবে। তারা অনুপ্রাণিত হবে পড়াশোনা করার জন্য। আমি মনে করি এর মাধ্যমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও আমাদের প্রতি আরেকটু পজিটিভ হবে।