ঢাকা ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




‘৬০ লক্ষ ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩ ৯৬ বার পড়া হয়েছে

৬০ লক্ষ ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

‘নগদ ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চেয়ারে (ওসির চেয়ার) বসেছি। ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা নেতাদের দিয়ে তদবির করিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারও কথার আমি ধার ধারি না…।’ চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সেবাপ্রার্থীকে এই মন্তব্য করে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে ওসি খায়রুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি ওই ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।

ঘটনাটি ২২ মের। সেদিন চান্দগাঁও থানায় গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর মোহরা ওয়ার্ড এ-ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে চান্দগাঁও থানা মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সানোয়ারা আবাসিক এলাকার সভাপতি মুজিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজন থানায় গিয়েছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই আমিনুল ইসলামকে লক্ষ্য করে ওই মন্তব্য করেন ওসি খায়রুল ইসলাম। তবে তাঁর এ ধরনের মন্তব্যের কোনো অডিও বা ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। অবশ্য ঘটনার সময় উপস্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্যরা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে ওসি খায়রুল এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারেন না।

আমিনুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে তাঁর বড় ভাই তাঁকে ও তাঁর প্রবাসী ছোট ভাইসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১৪ মে চান্দগাঁও থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর আমিনুল ২২ মে তাঁর বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় মামলা করতে যান। তিনি বলেন, ‘ওই মামলা (বড় ভাইয়ের করা মামলা) রেকর্ডের আগে উনি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমাকে কোনো কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওসি আমাকে মামলার আসামি করেন। ২০ মে আমি আদালত থেকে জামিন নিই।’

আমিনুল অভিযোগ করেন, ‘২২ মে রাত ৯টায় আমি ও আমার আরেক ভাইসহ কয়েকজন মিলে চান্দগাঁও থানায় গিয়েছিলাম আমাদের বিরুদ্ধে যিনি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে। কিন্তু ওসি আমাদের অভিযোগটি গ্রহণ করেননি। আমি বলেছিলাম, আপনি যুক্তিসংগত কারণ কিংবা প্রাথমিক কোনো তদন্ত ছাড়াই হুট করে একজনকে আসামি করে মামলা নিয়েছেন। আমাদের মামলা কেন নেবেন না? এ সময় ওসি খায়রুল আমাদের সঙ্গে যা-তা ব্যবহার করেন।

তিনি নাকি ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে ওসির চেয়ারে বসেছেন। ফ্রিতে সেবা দেন না। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা নেতাদের দিয়ে তদবির করিয়ে কোনো লাভ হবে না।’ চান্দগাঁও থানার মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতিতেই তিনি (ওসি) এই ধরনের অশোভন মন্তব্য করেছেন। একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। আমরা নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছি। কয়েক দিনের মধ্যে সাংগঠনিক বৈঠক করে ওসির এই ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম নগরীর সানোয়ারা আবাসিক এলাকার সভাপতি মুজিবুর রহমানও বলেন, তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। ওসি খায়রুল অশোভন আচরণ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি খায়রুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওসি পদের মতো একটা দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে কোনো সুস্থ মানুষ কি এই ধরনের কথাবার্তা বলতে পারে? এটা আপনারা বিবেচনা করেন। এটা একটা অসংলগ্ন কথাবার্তা।’ তিনি বলেন, ‘উনারা ওই দিন মামলার জন্য এসেছিলেন। আগে অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে, তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব বলে উনাদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিতর্কিত কোনো কথাবার্তা আমি বলিনি। উনারা যেসব অভিযোগ করেছেন, সেটা উনাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’

পুলিশের এসআইয়ের কাছ থেকে দুদক কর্মকর্তা ৫ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগপুলিশের এসআইয়ের কাছ থেকে দুদক কর্মকর্তা ৫ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘উনি (ওসি) যদি এ ধরনের বার্তা বলে থাকেন, তাহলে তা বাহিনীর শৃঙ্খলা পরিপন্থী অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর জন্য কঠিন শাস্তিও রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘৬০ লক্ষ ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’

আপডেট সময় : ০২:০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

৬০ লক্ষ ঘুষ দিয়ে চেয়ারে বসেছি, ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি’

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

‘নগদ ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চেয়ারে (ওসির চেয়ার) বসেছি। ফ্রিতে সেবা দিতে আসিনি। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা নেতাদের দিয়ে তদবির করিয়ে কোনো লাভ হবে না। কারও কথার আমি ধার ধারি না…।’ চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সেবাপ্রার্থীকে এই মন্তব্য করে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে ওসি খায়রুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি ওই ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি।

ঘটনাটি ২২ মের। সেদিন চান্দগাঁও থানায় গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর মোহরা ওয়ার্ড এ-ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে চান্দগাঁও থানা মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সানোয়ারা আবাসিক এলাকার সভাপতি মুজিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজন থানায় গিয়েছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই আমিনুল ইসলামকে লক্ষ্য করে ওই মন্তব্য করেন ওসি খায়রুল ইসলাম। তবে তাঁর এ ধরনের মন্তব্যের কোনো অডিও বা ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি। অবশ্য ঘটনার সময় উপস্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ অন্যরা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে ওসি খায়রুল এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে পারেন না।

আমিনুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে তাঁর বড় ভাই তাঁকে ও তাঁর প্রবাসী ছোট ভাইসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১৪ মে চান্দগাঁও থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর আমিনুল ২২ মে তাঁর বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় মামলা করতে যান। তিনি বলেন, ‘ওই মামলা (বড় ভাইয়ের করা মামলা) রেকর্ডের আগে উনি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) আমাকে কোনো কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওসি আমাকে মামলার আসামি করেন। ২০ মে আমি আদালত থেকে জামিন নিই।’

আমিনুল অভিযোগ করেন, ‘২২ মে রাত ৯টায় আমি ও আমার আরেক ভাইসহ কয়েকজন মিলে চান্দগাঁও থানায় গিয়েছিলাম আমাদের বিরুদ্ধে যিনি মিথ্যা মামলা দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে। কিন্তু ওসি আমাদের অভিযোগটি গ্রহণ করেননি। আমি বলেছিলাম, আপনি যুক্তিসংগত কারণ কিংবা প্রাথমিক কোনো তদন্ত ছাড়াই হুট করে একজনকে আসামি করে মামলা নিয়েছেন। আমাদের মামলা কেন নেবেন না? এ সময় ওসি খায়রুল আমাদের সঙ্গে যা-তা ব্যবহার করেন।

তিনি নাকি ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে ওসির চেয়ারে বসেছেন। ফ্রিতে সেবা দেন না। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র বা নেতাদের দিয়ে তদবির করিয়ে কোনো লাভ হবে না।’ চান্দগাঁও থানার মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতিতেই তিনি (ওসি) এই ধরনের অশোভন মন্তব্য করেছেন। একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। আমরা নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছি। কয়েক দিনের মধ্যে সাংগঠনিক বৈঠক করে ওসির এই ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম নগরীর সানোয়ারা আবাসিক এলাকার সভাপতি মুজিবুর রহমানও বলেন, তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। ওসি খায়রুল অশোভন আচরণ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি খায়রুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওসি পদের মতো একটা দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে কোনো সুস্থ মানুষ কি এই ধরনের কথাবার্তা বলতে পারে? এটা আপনারা বিবেচনা করেন। এটা একটা অসংলগ্ন কথাবার্তা।’ তিনি বলেন, ‘উনারা ওই দিন মামলার জন্য এসেছিলেন। আগে অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে, তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব বলে উনাদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিতর্কিত কোনো কথাবার্তা আমি বলিনি। উনারা যেসব অভিযোগ করেছেন, সেটা উনাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’

পুলিশের এসআইয়ের কাছ থেকে দুদক কর্মকর্তা ৫ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগপুলিশের এসআইয়ের কাছ থেকে দুদক কর্মকর্তা ৫ লক্ষাধিক টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘উনি (ওসি) যদি এ ধরনের বার্তা বলে থাকেন, তাহলে তা বাহিনীর শৃঙ্খলা পরিপন্থী অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর জন্য কঠিন শাস্তিও রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’