ডিপিডিসি লুটেপুটে গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারের সম্পদের পাহাড়!
- আপডেট সময় : ০৪:২৭:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫৮ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিপিডিসির একের পর এক কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের দুর্নীতির খবর প্রচার করা হলেও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। দেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের যেন অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে। এবার প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির ধারাবাহিকতায় গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারের দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন এবং অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে। তিনি নির্বাহী পরিচালক, ডিপিডিসি
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসির) নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও স্বেচ্ছাচারীমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।
তার পাহাড় সমান দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া লিখিত অভিযোগ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি, দোকানসহ জায়গার মালিক হয়েছেন। নির্বাহী পরিচালক হওয়ার আগেই আলাদিনের চেরাগ ধরা দিয়েছিল তার হাতে।
তখন সময়টা ছিল বিএনপি সরকারের। ঢাকার মোহাম্মদপুরের সূর্য নামে এক নেতার সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের কাছে সূর্যর সাথে প্রায়ই হাওয়া ভবনে যেতেন গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার। তাই বিএনপির আমলে ভাল পোষ্টিং, বিদেশ ভ্রমণসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন কারাগারে থাকলেও তার সহযোগীর কাছে নিয়মিত অবৈধ অর্থের ভাগ পাঠান এবং কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে খাবার ও টাকা দিয়ে আসেন। বিএনপির রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত থেকে ঢাকার উত্তরাতে তিনটি ফ্ল্যাট গড়েছেন।
যার মধ্যে একটি আলিশান ফ্লাটে নিজে বসবাস করেন। ওই ফ্লাটে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রেখে মনের মত সাজিয়েছেন। বাকী দুইটি ফ্লাট ভাড়া দেওয়া। মোহাম্মদপুরের বায়তুল আমান হাউজিংয়ে ২টি এবং লালমাটিয়াতে ২টি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া আছে। এ ছাড়াও তার নামে-বেনামে অসংখ্য জায়গা ও দোকান রয়েছে। শুধু দেশে নয়, এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার রয়েছে আমেরিকাতে বাড়ি-গাড়ি।
তার মেয়ে আমেরিকাতে পড়াশুনা শেষে আলিশান জীবন যাপন করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই কর্মকর্তা খোলস পাল্টিয়ে রাতারাতি একজন মন্ত্রীর বড় ভাই পরিচয়ে এবং একটি চক্রের সহযোগীতায় হঠাৎ ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান।
সূত্র জানায়, ডিপিডিসির একজন প্রভাবশালী ‘স’ অদ্যাক্ষরের এক বোর্ড মেম্বারের পরক্ষ ছত্রছায়ায় তিনি খুব ক্ষমতাবান বনে গেছেন।
সূত্র আরো জানায়, এই কর্মকর্তা যখন ডিপিডিসির প্রিপেইড মিটারের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ছিলেন, তখন তিনি অনেক অনিয়ম করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। তৎকালীন সময় হেক্সিন ঠিকাদারী কোম্পানীর নিম্নমানের প্রিপেইড মিটার ক্রয় ও গ্রাহকের আঙ্গিনায় মিটার স্থাপনের সময় সরকারের অনেক রাজস্ব ক্ষতি সাধন করেছেন। তৎকালীন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশিতও হয়েছিলো।
ডিপিডিসির একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, ডিপিডিসিতে অনেক যোগ্য লোক থাকতেও জোয়ার্দারের মত অযোগ্য লোককে নেয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল সই করেন না। হুমকি-ধমকির ভয়ে তার রুমে কেউ যেতে চায় না। তারা আরো জানান, কর্মকর্তাদের ওপর যখন তখন টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন এবং রুমে গেলে কাজের চেয়ে অকাজের কথা বেশি বলেন। গত দুই বছরে নির্বাহী পরিচালক হয়ে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য করেছে। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ডিপিডিসিতে চলছে বিদেশ ভ্রমণ ও দুর্নীতির মহোৎসব।
নির্বাহী পরিচালক থাকাকালীন গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার প্রকল্প পরিচালকও ছিলেন। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ঠিকাদারকে সুবিধা দেয়ার জন্য ভেরিয়েশনের মাধ্যমে অন্তত দুইশ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। তাছাড়া ওই প্রকল্পের কাজের গুনগত মান নিম্নমানের হওয়ায় এরই মধ্যে সাতটি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েছে। ফলে সরকার তথা ডিপিডিসির অন্তত ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কিছু বৈদ্যুতিক সাবষ্টেশন নির্মাণেও তিনি অনেক ঘাপলা করেছেন। নিম্নমানের মালামাল সরবরাহের কারণে সাবষ্টেশনগুলোতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
ডিপিডিসি থেকে আরও জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দারকে দুই দফা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার পরও একটি ঠিকাদার চক্র তৃতীয়বারের মত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সার্ভিস রুলস্ সংশোধনের পায়তারা করছে তারা। আগামী বছরের জানুয়ারীতে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীতে নির্বাহী পরিচালক নিয়োগে বয়সের যে বিধিমালা রয়েছে তা সব সংস্থার এক নিয়মে চলে।
ডিপিডিসিতে নিয়োগের বয়স সংশোধন হলে সিস্টেম ভেঙ্গে পরবে। এতে করে মেধাসম্পন্ন যোগ্য লোক যথাস্থানে বসতে পারবে না। প্রতিষ্ঠানে দেখা দিবে অসঙ্গতি, কাজের গতি কমে যাবে এবং প্রকৌশলীদের মনোবল ভেঙ্গে যাবে। বিদ্যুত সেক্টর ও ডিপিডিসির এ যাবত কালের সমস্ত নিয়ম কানুন ভঙ্গ করে দশ কোটি টাকার বিনিময়ে একটি শক্তিশালী চক্র উঠেপড়ে লেগেছে এই অযোগ্য, অর্থবর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে আর একবার চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। তিনি কথায় কথায় নিচের কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, আমিই ডিপিডিপির এমডি হব। এখন কথা মত কাজ না করলে এর ফল পরে ভোগ করতে হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার সঙ্গে মুঠোফোন বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
ডিপিডিসির এমডি প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমি পাইনি। দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। তারা তাদের মত তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।