ঢাকা ০৩:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo দুদকের মামলার মাথায় নিয়েও বহাল কুমেক হাসপাতালের আবুল Logo সংস্কারের বিপরীতে রহস্যজনক বদলী: এক চিঠিতে ৫২ রদবদল ফায়ার সার্ভিসে! Logo গণপূর্তে ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সিন্ডিকেট সক্রিয়  Logo বাংলাদেশ সাইন ম্যাটেরিয়ালস এন্ড মেশিনারিজ ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন’ সভাপতি খালেদ সাধারণ সম্পাদক মানিক  Logo চৌদ্দগ্রামে এলজি বন্ধুক ও দেশীয় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক: টর্চার সেলের সন্ধান Logo সাফা মাধ্যমিক বিদ্যালয় অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম আল-আমিন Logo সওজ ও গণপূর্তের ‘মাফিয়া’ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দোসর মুস্তাফিজ ধরাছোঁয়ার বাইরে Logo ২০০ কোটি টাকা নয়ছয় করেও বহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জিম্মি শহিদুল! Logo আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় এনআরবি ব্যাংক’ ২ পরিচালকের অর্থ সহায়তা Logo ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফায়ারের উপ-পরিচালক দীনোমনির বিরূদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ




পুলিশের কোমল, কঠোর, মানবিকতা 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:১০:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০ ১৯৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক; 

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ১৮ নম্বর সড়ক। ছোট এই সড়কের দক্ষিণে আবাসিক ভবন রয়েছে নয়টি। আর উত্তরে রয়েছে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। সব মিলিয়ে এই সড়কের দুপাশে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বসবাস। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ছুটি ঘোষণার পর সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রতিদিন একাধিকবার পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করেন। তাঁদের টহলের পর আশপাশের দোকানের ঝাঁপি বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন ঘরে ঢুকে যায়। পুলিশের টহল দল চলে গেলে আবার সরব হয়ে বেরিয়ে আসে লোকজন। বাসিন্দারা পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করলেও ঘরে থাকার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী থাকেন না। এই চিত্র কেবল মিরপুরে নয়, রাজধানী ঢাকায় প্রায় সব এলাকায়।

তবে প্রশংসা ও অসন্তোষ, যা-ই প্রাপ্য হোক না কেন, করোনা প্রতিরোধে নগরবাসীকে ঘরে রাখতে সামনের দিনগুলোয় মানবিক আচরণের পাশাপাশি কঠোরও হবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশি তৎপরতা জোরদার করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যারা হয়েছে, তাদের বড় একটি অংশ যুবক-শিশু। এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তব অবস্থা জানাতে গিয়ে তাঁরা বলেন, যুবকেরা অলিগলিতে চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। আর কিশোরেরা দল বেঁধে ক্রিকেট খেলে। সাধারণ মানুষের এই অংশ যতক্ষণ সচেতন না হবে, ততক্ষণ করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর কাজ কঠিনই থাকবে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) মো. মনির হোসেন বলেন, ‘মানুষকে বুঝতে হবে তাদের কেন ঘরে থাকতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের বোঝানো, সচেতন করা। যাঁরা বাইরে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে তিনি ঘরে ফিরলে তাঁর পরিবার, এমনকি প্রতিবেশীরাও আক্রান্ত হবেন।’

যুগ্ম কমিশনার মো. মনির হোসেন বলেন, ঘরে রাখার জন্য তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। এর অংশ হিসেবে যদি ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হতে পারে। গত শনিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্ব পালন করছিল পুলিশের একটি দল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা আফরোজ। সকালবেলা গাবতলী হয়ে সাভারের দিকে বেশ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স। তল্লাশিচৌকি সামনে আসার পর অ্যাম্বুলেন্সটিকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। সংকেত দেখেই অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে থাকা এক যাত্রী শুয়ে পড়েন।

পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্যই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক যাত্রী অসুস্থতার ভান করেন। এমন অভিযোগ ঘটনার সময় তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলেন, পরে দেখা যায়, যাত্রী বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের চালক এই কৌশল যাত্রীদের শিখিয়ে দেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। কিন্তু অনেকে এর সুযোগ নিচ্ছে। সুযোগ নিয়ে বাড়তি আয় করছে। এ জন্য পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করেছেন তাঁরা। কখনো ত্রাণ বিতরণ করছেন দুস্থ লোকজনের মধ্যে, কখনো ডিএমপির ওয়াটার ক্যানন দিয়ে ওষুধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি মানুষ যেন অকারণে ঘর থেকে বের না হয়, সে জন্য রাজধানীতে ডিএমপির ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। আবার কখনো কখনো কঠোর অবস্থানও নিতে দেখা গেছে। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, কান ধরিয়ে ওঠবস করার মতো দৃশ্য চোখে পড়েছে। আবার ঘর থেকে যেন বের হতে না হয় সে জন্য ত্রাণও দিচ্ছে।

তবে ঢাকা মহানগরীতে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ছুটির কারণে একশ্রেণির মানুষ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁরা জানান, সড়কে দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে অনেক চালক বের হচ্ছেন। প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব থাকার কথা বললেও চালকেরা অটোরিকশার সামনে ও পেছনে পাঁচজন যাত্রী বসাচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি কয়েক গুণ ভাড়া নিচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্স, মিনিট্রাকেও এভাবে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দায়িত্ব পালনকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বস্তিবাসী বা স্বল্প আয়ের অতি দরিদ্র মানুষদের বোঝাতে গিয়ে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয় বেশি। অন্যদিকে যুবকশ্রেণির একটি বড় অংশের কারণে তাদের (পুলিশ) ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

কারণ জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এদের বড় অংশ বস্তিবাসী। এদের ঘরগুলো ছোট। দিনের পর দিন তাদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা অসম্ভব নয়। আবার ছোট ঘরে খাবার মজুত করে রাখা যায় না। ‘দিন আনি দিন খাই’ মানুষদের পক্ষে কাজের সন্ধানে যাওয়া ছাড়া বিকল্প উপায়ও নেই। তাই রাস্তায় তাদের বাধা দেওয়া যায়। কিন্তু বোঝানো যায় না। মানবিক কারণে তাই মৌখিকভাবে সতর্ক করা ছাড়া উপায় থাকে না।

আশকোনা, যাত্রাবাড়ী, রমনা, মিরপুরের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ সচেতন মানুষ পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। কিন্তু যুবকশ্রেণির বড় অংশ ঘরে থাকতে চায় না। অকারণে তারা বাইরে বের হয়।

রমনা থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ মার্চ বিকেল চারটার দিকে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়া এক যুবককে থামানো হয়। বয়স ২০ বছর। তাঁকে থানায় আনা হয়। খবর পেয়ে সবুজবাগের বাসা থেকে তাঁর মা থানায় আসেন। তিনি পুলিশকে বলেন, বাইরে বের না হতে ছেলের পা ধরা শুধু বাকি ছিল। কিন্তু কথা শোনেনি। আড্ডা দিতে বিকেলে বের হন তাঁর ছেলে।

ওই মা বলেন, তাঁর স্বামী প্রবাসী। বাইরে চাকরি করেন। একমাত্র ছেলে। জেদ ধরায় ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




পুলিশের কোমল, কঠোর, মানবিকতা 

আপডেট সময় : ০৫:১০:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল ২০২০

অনলাইন ডেস্ক; 

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের এ ব্লকের ১৮ নম্বর সড়ক। ছোট এই সড়কের দক্ষিণে আবাসিক ভবন রয়েছে নয়টি। আর উত্তরে রয়েছে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। সব মিলিয়ে এই সড়কের দুপাশে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের বসবাস। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ছুটি ঘোষণার পর সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রতিদিন একাধিকবার পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করেন। তাঁদের টহলের পর আশপাশের দোকানের ঝাঁপি বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন ঘরে ঢুকে যায়। পুলিশের টহল দল চলে গেলে আবার সরব হয়ে বেরিয়ে আসে লোকজন। বাসিন্দারা পুলিশি তৎপরতার প্রশংসা করলেও ঘরে থাকার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী থাকেন না। এই চিত্র কেবল মিরপুরে নয়, রাজধানী ঢাকায় প্রায় সব এলাকায়।

তবে প্রশংসা ও অসন্তোষ, যা-ই প্রাপ্য হোক না কেন, করোনা প্রতিরোধে নগরবাসীকে ঘরে রাখতে সামনের দিনগুলোয় মানবিক আচরণের পাশাপাশি কঠোরও হবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশি তৎপরতা জোরদার করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা ও টহল কার্যক্রম জোরদার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

ডিএমপির একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যারা হয়েছে, তাদের বড় একটি অংশ যুবক-শিশু। এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তব অবস্থা জানাতে গিয়ে তাঁরা বলেন, যুবকেরা অলিগলিতে চায়ের দোকানে আড্ডা দেন। আর কিশোরেরা দল বেঁধে ক্রিকেট খেলে। সাধারণ মানুষের এই অংশ যতক্ষণ সচেতন না হবে, ততক্ষণ করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর কাজ কঠিনই থাকবে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) মো. মনির হোসেন বলেন, ‘মানুষকে বুঝতে হবে তাদের কেন ঘরে থাকতে হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের বোঝানো, সচেতন করা। যাঁরা বাইরে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে তিনি ঘরে ফিরলে তাঁর পরিবার, এমনকি প্রতিবেশীরাও আক্রান্ত হবেন।’

যুগ্ম কমিশনার মো. মনির হোসেন বলেন, ঘরে রাখার জন্য তাদের কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। এর অংশ হিসেবে যদি ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হতে পারে। গত শনিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্ব পালন করছিল পুলিশের একটি দল। দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা আফরোজ। সকালবেলা গাবতলী হয়ে সাভারের দিকে বেশ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স। তল্লাশিচৌকি সামনে আসার পর অ্যাম্বুলেন্সটিকে থামার সংকেত দেওয়া হয়। সংকেত দেখেই অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে থাকা এক যাত্রী শুয়ে পড়েন।

পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্যই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা এক যাত্রী অসুস্থতার ভান করেন। এমন অভিযোগ ঘটনার সময় তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলেন, পরে দেখা যায়, যাত্রী বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের চালক এই কৌশল যাত্রীদের শিখিয়ে দেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। কিন্তু অনেকে এর সুযোগ নিচ্ছে। সুযোগ নিয়ে বাড়তি আয় করছে। এ জন্য পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে গত ২৫ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করেছেন তাঁরা। কখনো ত্রাণ বিতরণ করছেন দুস্থ লোকজনের মধ্যে, কখনো ডিএমপির ওয়াটার ক্যানন দিয়ে ওষুধ ছিটানো ও পরিচ্ছন্ন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি মানুষ যেন অকারণে ঘর থেকে বের না হয়, সে জন্য রাজধানীতে ডিএমপির ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। আবার কখনো কখনো কঠোর অবস্থানও নিতে দেখা গেছে। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, কান ধরিয়ে ওঠবস করার মতো দৃশ্য চোখে পড়েছে। আবার ঘর থেকে যেন বের হতে না হয় সে জন্য ত্রাণও দিচ্ছে।

তবে ঢাকা মহানগরীতে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ছুটির কারণে একশ্রেণির মানুষ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁরা জানান, সড়কে দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে অনেক চালক বের হচ্ছেন। প্রশাসন সামাজিক দূরত্ব থাকার কথা বললেও চালকেরা অটোরিকশার সামনে ও পেছনে পাঁচজন যাত্রী বসাচ্ছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি কয়েক গুণ ভাড়া নিচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্স, মিনিট্রাকেও এভাবে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দায়িত্ব পালনকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বস্তিবাসী বা স্বল্প আয়ের অতি দরিদ্র মানুষদের বোঝাতে গিয়ে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয় বেশি। অন্যদিকে যুবকশ্রেণির একটি বড় অংশের কারণে তাদের (পুলিশ) ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

কারণ জানতে চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এদের বড় অংশ বস্তিবাসী। এদের ঘরগুলো ছোট। দিনের পর দিন তাদের পক্ষে ঘরে বসে থাকা অসম্ভব নয়। আবার ছোট ঘরে খাবার মজুত করে রাখা যায় না। ‘দিন আনি দিন খাই’ মানুষদের পক্ষে কাজের সন্ধানে যাওয়া ছাড়া বিকল্প উপায়ও নেই। তাই রাস্তায় তাদের বাধা দেওয়া যায়। কিন্তু বোঝানো যায় না। মানবিক কারণে তাই মৌখিকভাবে সতর্ক করা ছাড়া উপায় থাকে না।

আশকোনা, যাত্রাবাড়ী, রমনা, মিরপুরের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ সচেতন মানুষ পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। কিন্তু যুবকশ্রেণির বড় অংশ ঘরে থাকতে চায় না। অকারণে তারা বাইরে বের হয়।

রমনা থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই) প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ মার্চ বিকেল চারটার দিকে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়া এক যুবককে থামানো হয়। বয়স ২০ বছর। তাঁকে থানায় আনা হয়। খবর পেয়ে সবুজবাগের বাসা থেকে তাঁর মা থানায় আসেন। তিনি পুলিশকে বলেন, বাইরে বের না হতে ছেলের পা ধরা শুধু বাকি ছিল। কিন্তু কথা শোনেনি। আড্ডা দিতে বিকেলে বের হন তাঁর ছেলে।

ওই মা বলেন, তাঁর স্বামী প্রবাসী। বাইরে চাকরি করেন। একমাত্র ছেলে। জেদ ধরায় ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দিতে বাধ্য হয়েছেন।