আদম ব্যবসায়ীর প্রতারণার ফাঁদে বরিশালের ৬ যুবক
- আপডেট সময় : ১১:৪৩:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২০ ১৩০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল;
বিদেশে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বরিশাল নগরীর এক আদম ব্যবসায়ী ৬ যুবকের কাছ থেকে অন্তত ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার শিকার ওই ৬ যুবক হলেন- নগরীর রূপাতলীর মো. পান্না মিয়া, নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফিশারী রোডের আমিনুল ইসলাম, একই ওয়ার্ডের দিয়াপাড়ার মাহমুদ হোসেন ও মো. মুন্না, নগরীর আমানতগঞ্জের মিজানুর রহমান এবং নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের ফল বিক্রেতা মো. হাফিজ।
তারা অভিযোগ করে বলেন, নগরীর কাশীপুরের ফিশারী রোডের বাসিন্দা ওমানপ্রবাসী শহীদুল ইসলাম ওমানে থাকা-খাওয়া ফ্রি ও মাসিক বেতন ৪০ হাজার টাকা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ৬ জনের কাছ থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।
মো. পান্না মিয়া অভিযোগ করেন, ওমানে উচ্চ বেতনে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত বছরের ২৪ মে শহীদুল ইসলাম নগদ ৫ লাখ টাকা নেন। এক মাসের মধ্যে তাকে ওমান পাঠানোর চুক্তি হয়। জুনের মাঝামাঝি সময় ভিসা আসে পান্নার। শহীদুল তাকে একটা বিমান টিকিটও দেন। এরপর শহিদুল তখন জানান মেডিকেল করতে হবে না, সেটা ওমান থেকেই ম্যানেজ করা হবে।
তিনি জানান. উড়াল দেয়ার আগে শুধু ঢাকায় নিয়ে ৩ দিনের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে শহীদুল ও তার ভগ্নিপতি হাইকোর্টে কর্মরত জাহাঙ্গীর সরদার। সবকিছু প্রথমদিকে ঠিকঠাকই মনে হচ্ছিল। ১৯ সেপ্টেম্বর ভোরে ওমানের ফ্লাইট বলে জানান শহিদুল। তার আগে পরিবার-পরিজন ছেড়ে ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় লঞ্চযোগে বরিশাল ত্যাগ করেন। নদী বন্দরে বিদায়ের মূহূর্তে উপস্থিত ছিলেন আদম ব্যবসায়ী শহীদুলও।
মো. পান্না মিয়া বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রা.) বিমানবন্দরে প্রথম ইমিগ্রেশন গেটে প্রবেশের সময় কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ করেন পান্নাকে। ভিসা ও টিকিট ডকুমেন্ট দেখে দুটোই জাল বলে শনাক্ত করেন তারা। ওই ভিসা ও টিকিট নিয়ে ওমান তো ভালো কথা বিমান বন্দরের মধ্যেও ঢুকতে পারবে না বলে জানান ইমিগ্রেশমন কর্মকর্তারা।
শেষ মুহূর্তে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি। সেখানেই পান্নার সাথে পরিচয় হয় শহীদের প্রতারণার শিকার বরিশাল নগরীর কাশীপুরের আরেক যুবক আমিনুল ইসলামের। প্রবাস জীবনের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর ওইদিন বিকেলেই বরিশাল ফিরে ভিসাদাতা শহীদুলের কাছে টাকা ফেরত চান পান্না। এবার আগের ভিসা জাল স্বীকার করে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে নতুন ভিসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন শহীদুল। কিছুদিন পর ওমানের আরেকটি ভিসা দিলেও সেটিও জাল বলে শনাক্ত হয়।
এরপর টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে স্বপরিবারে ওমান পালিয়ে যান শহীদুল। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থআত্মসাতের কাজে সহযোগিতা করেন শহীদুলের ভগ্নিপতি বরিশাল সদর উপজেরার দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অফিসার পরিচয়দানকারী জাহাঙ্গীর সরদার।
মো. পান্না মিয়া বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থআত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত শহীদুল ইসলাম, তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার এবং তাদের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর সরদারের বিরুদ্ধে গত ৩০ ডিসেম্বর বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা করেন পান্না মিয়। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে ওই মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এসআই কবির বলেন, বাদী পান্নার মিয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ভিসা দুটো প্রকৃত অর্থে জাল কিনা তা চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কাজ চলছে।
একই অবস্থা নগরীর আমানতগঞ্জের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের। তিনি বলেন, শহীদুল ইসলাম তাকে একবার একটা ভিসার ফটোকপি দিয়েছিল। কিন্তু ওই ফটোকপি দিয়ে তাকে ওমান নিতে পারেননি শহীদ। বলেছে ওমানে ভিসায় সমস্যা হয়েছে। ওমান নেওয়ার বিষয়ে শহীদুলের সাথে তার (মিজান) জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি রয়েছে বলেও দাবি মিজানের। তার কাছ থেকেও ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন শহিদুল।
নগরীর নথুল্লাবদ বাস টার্মিনালের ভাসমান ফল ব্যবসায়ী মো. হাফিজ বলেন, ৫ মাস আগে প্রায় ৪ লাখ টাকা দিয়েও ওমান যেতে পারেননি তিনি। শহীদুল ইসলাম বারবার শুধু সময় চাইছে। তারপরও তাকে বিদেশ নেবে সেই আশায় রয়েছেন তিনি।
নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফিশারী রোডের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম, একই ওয়ার্ডের দিয়াপাড়ার মাহমুদ হোসেন ও মো. মুন্না আদম ব্যবসায়ী শহিদুলের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে স্বপরিবারে ওমানে থাকায় শহীদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে শহিদুলের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর সরদারের সঙ্গে মুঠোফোনে সোমবার বিকেলে যোগাযোগ করা হয়। জাহাঙ্গীর সরদার নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অফিসার (পেশকার) পরিচয় দিয়ে বলেন, কোর্ট চলছে। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।
তবে ওই ঘটনায় সে জড়িত নয় বলে জানান জাহাঙ্গীর সরদার। শহিদুলের ওমানের ব্যবহৃত ফোন নম্বর চাইলে তিনি তার শাশুড়ি শহীদুল ইসালামের মা লাইলী বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
শহীদুল ইসালামের মা লাইলী বেগম বলেন, তার ছেলে শহিদুলের দোষ নেই। উল্টো বিদেশে যাওয়ার জন্য লোকজন তার কাছে এসে বলত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ ১২ জনকে ওমান নেওয়ার কথা বলেছিল। সে কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, কয়েকজনের টাকা এখনও নেয়নি। এদের মধ্যে ২ জনকে ওমান নিতে পেরেছে সে। শহীদুল ওমানে নিজেই প্রতারণার শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, এ কারণে সমস্যা হয়ে গেছে। তারপরও সবাইকে ওমান নেওয়ার চেষ্টা করছে। পান্না মিয়া ওমান যাওয়ার জন্য শহীদুলকে টাকা দিয়েছে বলে স্বীকার করেন লাইলী বেগম।