সিটিজি ক্রাইম টিভির নামে ভয়ংকর প্রতারণা

- আপডেট সময় : ০৩:৪৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৯১ বার পড়া হয়েছে

ইসমাইল হোসেন টিটুঃ নাম শুনলেই গলা শুকিয়ে যাওয়ার অবস্থা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারনার ব্যবসা আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে। দিনদিন এই প্রতারনার সাথে যুক্ত হচ্ছে তথাকথিত সাংবাদিক, কিশোর,যুবকসহ স্থানীয় মহিলা ও পুরুষ। সিটিজি ক্রাইম টিভি নাম দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসায়ীকে শেল্টার সহ নানা অভিযোগে জর্জরিত তথাকথিত এই চ্যানেলের নামে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরের চকবাজারে চট্টগ্রামের কথিত যুবলীগ নেতা ও সিটিজি ক্রাইম টিভির পরিচালক নূর মোস্তফা টিনুকে পিস্তলসহ আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একটি দল। সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী হিসাবে চট্টগ্রামে পরিচিত । চকবাজার ,বদ্দারহাট, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি কিশোর অপরাধীদের বড় ভাই হিসেবে পরিচিত।
এছাড়া চট্টগ্রাম কলেজ এবং মহসিন কলেজের আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষ এবং মারামারি ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগে ২০১৮ সালে ২৮শে নভেম্বর, পটিয়া থানায় সিটিজি ক্রাইম টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করতে গিয়ে আটক হন এই চ্যানেলের তিন সাংবাদিক । এসময় তাদের কাছ থেকে আইডি কার্ড, ভিডিও ক্যামেরা, মোবাইল, ভিজিটিং কার্ড এবং সিটিজি ক্রাইম টিভির স্টিকারযুক্ত প্রভোক্স প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।
সিটিজি ক্রাইম টিভি অনলাইন পোর্টালের চেয়ারম্যান আজগর আলী মানিক প্রতারণার শিকার দাবি করে প্রথমে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে শুরু করেন নাটক। টাকা দিয়ে শুরু করেন বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের অপহরণের সংবাদ।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সহ-সম্পাদক এবং সিটিজি ক্রাইম টিভি’র পরিচালক নুরুল আবছার তাকে অপহরণ করে। সংবাদে বলা হয় চট্টগ্রামে মাদক ব্যবসায়ীর হাতে সাংবাদিক অপহরণ ৮ঘণ্টা পর উদ্ধার।
সিটিজি ক্রাইম টিভির চেয়ারম্যান আজগর আলী মানিক গতকাল ব্যক্তিগত কাজে ইউএস বাংলা একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন । চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে পৌঁছালে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে হঠাৎ একটি ফোন আসে । ফোন রিসিভ করলে বিমান বন্দর এমিগ্রেশন হতে বাহিরে আসার জন্য বলে। মানিক বলেন আমি তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে এমিগ্রেশন হতে বাহির হয়ে এয়ারপোর্টের চেক পোষ্টে আসি ।
পতেঙ্গা সিভিজ আবাসিক হোটেল কাছে নিয়ে যায় হয়। ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল আবছার তার নির্দেশেই আমাকে জোরপূর্বক একটি হোটেলে আটকে রাখা হয় । কিছুক্ষণ পরে আমাকে আটককৃত রুমে নুরুল আফছার আসে । শুরু হয় আমার উপর তিন থেকে চার ঘন্টা শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে সে জোরপূর্বক আমার নিকট হতে নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষর নেয় এবং ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে জোরপূর্বক বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা স্বীকারোক্তি মোবাইলে ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে। নুরুল আবছার আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি মাদক ব্যবসা করে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক সংবাদে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও বায়েজিদ থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয় ।
এবার নুরুল আবছার তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে শুরু করেন মানিকের অপকর্মের গল্প। আমি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সহ-সম্পাদক এবং সিটিজি ক্রাইম টিভি’র পরিচালক নুরুল আবছার। আমার ব্যবসায়িক পার্টনার আজগর আলী মানিক সিটিজি ক্রাইম টিভিকে স্যাটেলাইট চ্যানেল করার কথা বলে আমার কাছ থেকে ব্যবসায়িক চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা নেয়।কিন্তু মানিক তার কথানুযায়ী সিটিজি ক্রাইম টিভিকে স্যাটেলাইট করতে পারে নি এবং নিয়োগ বাণিজ্য,নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায়।আমি এতগুলো টাকা দেয়ার পরও প্রতিষ্ঠানের কোন প্রকার উন্নতি না হওয়ায় আমি তার কাছে ব্যবসায়িক চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে সকল টাকা ফেরত চাই। আর একারণে মানিক আমার পাওনা টাকা না দেয়ার উদ্দেশ্যে অপহরণের মিথ্যা নাটক সাজায়।
নুরুল আবছার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদ নিতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেন অভিযোগ উঠেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অপরাধ জগতের কোন ব্যক্তিকে স্যাটেলাইট চ্যানেল অথবা অনলাইন নিউজ পোর্টাল অনুমোদন দিলে তারা দেশ ও জাতিকে ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলে দিতে পারে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে ব্যবস্থা নিবেন এবং কেউ যেন সহজে কোন সংবাদপত্র টেলিভিশন চ্যানেল অনুমোদন না নিতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠিন নজরদারিতে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন ।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় চ্যানেলটির চেয়ারম্যান আজগর আলী মানিক একজন সেলসম্যান ছিল। নারী কেলেঙ্কারিসহ অসংখ্য অভিযোগ তার নামেও। চট্টগ্রাম বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন মানিকের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তাহারা কল রিসিভ করেননি ।