ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo গুচ্ছ খ-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষা উপকরণ ও সুপেয় পানি দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের সহযোগিতা Logo মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি হবে সত্যিকারের গ্রীন ক্যাম্পাসঃ ভিসি মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo প্রতারণাচক্র থেকে সাবধান থাকতে আহবান জানিয়েছেন শাবি উপাচার্য Logo শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্বোধনী কাজে সর্বদা সাপোর্ট থাকবে; শাবি উপাচার্য Logo জবি শিক্ষককে হেনস্থা, গুরু পাপে লঘু দণ্ড Logo কুবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, মারধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী




হলে যাদের সিট দিলাম তারা এখন এমপি-মন্ত্রী, আর আমারে কয় ‘হামিদ পাগলা’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:১২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: আমার সঙ্গে যারা ছিল ওরা তো সচিব, ব্যারিস্টার, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছে। যাদের হলে সিট দিলাম, ওদের অনেকেই এখন দেশের পদস্থ কর্মকর্তা; আর আমারে লোকজন কয় ‘হামিদ পাগলা’।

শুক্রবার কথাগুলো বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৪-৮৫ ব্যাচের মেধাবী ছাত্র মো. আবদুল হামিদ। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মেসিডেঙ্গি গ্রামের মৃত এমডি সাবুদ আলীর ছেলে তিনি।

মো. আবদুল হামিদ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন। মাদকের নেশায় মেধাবী সেই ছেলেটির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তিনি এখন এলাকায় ‘হামিদ পাগলা’ নামে পরিচিত।

অসংলগ্ন আচরণের কারণে এলাকাবাসী তাকে পাগল বলেই চেনেন। শত চেষ্টা করেও তাকে নেশা থেকে ফেরাতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। এই সুযোগে তার জমি দখলে নিয়েছেন অন্য ভাইয়েরা। সহায়-সম্বল হারিয়ে ভবঘুরে এই মেধাবী ছেলেটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান আবদুল হামিদ। শুধু তাই নয়, তিনি উপজেলায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এসএসসিতেও প্রথম বিভাগ (স্টার মার্ক) পেয়ে বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তি পান ১৯৮২ সালে।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। প্রথম বিভাগ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন এবং লাভ করেন শিক্ষাবৃত্তি। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালেই পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও ভাইদের কর্মসংস্থানের জন্য ‘মা মৎস্য ফিসারিজ’ করার জন্য পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ভাইয়েরা তাকে ভুল বোঝেন।

জমি নিয়ে বিভেদের জেরে নানা অজুহাতে তার উপরে নেমে আসে অত্যাচার-নির্যাতন। এরই মাঝে মাদকের নেশা পেয়ে বসে। প্রথমে সিগারেট, পরে মদ ও গাঁজার নেশায় জীবনটাই তছনছ হয়ে যায় হামিদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাটা তার পক্ষে আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাগলের মতো অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন হামিদ। বিয়ে করলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে এ আশায় তাকে বিয়ে করালেও তিনি এখন ছন্নছাড়া জীবনযাপন করছেন।

হামিদ আফসোস করে বলেন, ‘অনেকবার নেশা ছাড়ার চেষ্টা করেছি। ছাড়ছিও। কিন্তু শেষমেশ ছাড়তে পারি নাই। আমার মাথাটা এখন ঠিক নাই, চিকিৎসা দরকার। স্ত্রী-সন্তান, ছোট বোন, মা কারো জন্যই তো কিছু করতে পারলাম না। নেশা শুধু আমারে খাইছে না; আমার পরিবার, স্বপ্ন সব খাইছে। অকর্মা মানুষ আমি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হলে যাদের সিট দিলাম তারা এখন এমপি-মন্ত্রী, আর আমারে কয় ‘হামিদ পাগলা’

আপডেট সময় : ০৮:১২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুন ২০২১

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: আমার সঙ্গে যারা ছিল ওরা তো সচিব, ব্যারিস্টার, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছে। যাদের হলে সিট দিলাম, ওদের অনেকেই এখন দেশের পদস্থ কর্মকর্তা; আর আমারে লোকজন কয় ‘হামিদ পাগলা’।

শুক্রবার কথাগুলো বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৪-৮৫ ব্যাচের মেধাবী ছাত্র মো. আবদুল হামিদ। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মেসিডেঙ্গি গ্রামের মৃত এমডি সাবুদ আলীর ছেলে তিনি।

মো. আবদুল হামিদ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন। মাদকের নেশায় মেধাবী সেই ছেলেটির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তিনি এখন এলাকায় ‘হামিদ পাগলা’ নামে পরিচিত।

অসংলগ্ন আচরণের কারণে এলাকাবাসী তাকে পাগল বলেই চেনেন। শত চেষ্টা করেও তাকে নেশা থেকে ফেরাতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। এই সুযোগে তার জমি দখলে নিয়েছেন অন্য ভাইয়েরা। সহায়-সম্বল হারিয়ে ভবঘুরে এই মেধাবী ছেলেটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা গেছে, কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান আবদুল হামিদ। শুধু তাই নয়, তিনি উপজেলায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এসএসসিতেও প্রথম বিভাগ (স্টার মার্ক) পেয়ে বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তি পান ১৯৮২ সালে।

উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। প্রথম বিভাগ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন এবং লাভ করেন শিক্ষাবৃত্তি। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালেই পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও ভাইদের কর্মসংস্থানের জন্য ‘মা মৎস্য ফিসারিজ’ করার জন্য পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ভাইয়েরা তাকে ভুল বোঝেন।

জমি নিয়ে বিভেদের জেরে নানা অজুহাতে তার উপরে নেমে আসে অত্যাচার-নির্যাতন। এরই মাঝে মাদকের নেশা পেয়ে বসে। প্রথমে সিগারেট, পরে মদ ও গাঁজার নেশায় জীবনটাই তছনছ হয়ে যায় হামিদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাটা তার পক্ষে আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাগলের মতো অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন হামিদ। বিয়ে করলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে এ আশায় তাকে বিয়ে করালেও তিনি এখন ছন্নছাড়া জীবনযাপন করছেন।

হামিদ আফসোস করে বলেন, ‘অনেকবার নেশা ছাড়ার চেষ্টা করেছি। ছাড়ছিও। কিন্তু শেষমেশ ছাড়তে পারি নাই। আমার মাথাটা এখন ঠিক নাই, চিকিৎসা দরকার। স্ত্রী-সন্তান, ছোট বোন, মা কারো জন্যই তো কিছু করতে পারলাম না। নেশা শুধু আমারে খাইছে না; আমার পরিবার, স্বপ্ন সব খাইছে। অকর্মা মানুষ আমি।