ঢাকা ১০:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




‘আব্বু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও’ চিরকুট লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:২৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০১৯ ১০০ বার পড়া হয়েছে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি; কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কেবিএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী চাঁদনী আক্তার মুন্নীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত এলাকার জয়নালের নেতৃত্বে ৫-৬ বখাটে। বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। বখাটেরা বাঁচতে দেয়নি মুন্নীকে।শেষ পর্যন্ত ওই বখাটেদের যৌন হেনস্তার শিকার হয়ে বৃহস্পতিবার চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে সে। চিরকুটে তার মৃত্যুর জন্য ওই বখাটেদের দায়ী করে গেছে মুন্নী।

অভিযুক্ত বখাটেরা হল কাতলামারী এলাকার হাশেম রাজের ছেলে জয়নাল, আনছের আলীর ছেলে মিঠুন, রেজন আলীর ছেলে আঙ্গুর, নাসের রাজের ছেলে রাজু এবং আফতার আলীর ছেলে পারভেজ। এ ঘটনায় এ পাঁচ বখাটেকে আসামি করে মিরপুর থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাতলাগাড়ি গ্রামের হেকমত আলীর মেয়ে মুন্নীর চাচাতো ভাই সুজন বলেন, ওই বখাটেরা প্রায়ই মুন্নীকে উত্ত্যক্ত করত।

মুন্নির চাচা হাসেম আলী বলেন, শুক্রবার আমার বড়ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। এজন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে মুন্নী ও আমার মেয়ে আমলা বাজারে ফুল কিনতে যায়। এ সময় জয়নালসহ ৫ বখাটে তার পেছনে লাগে। বখাটে জয়নাল প্রলোভন দেখিয়ে মুন্নীকে আমলা ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে নিয়ে যায়। এ সময় মুন্নী চলে আসতে চাইলে বাধা দেয় বখাটেরা। তখন আমলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই আশরাফ এসে মুন্নীকে উদ্ধার করেন।

তিনি বলেন, দুপুরে আমলা আলু ভিত্তি বীজ উৎপাদন খামারের সামনে থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য রেজেলা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করি।

ইউপি সদস্য রেজেলা খাতুন জানান, পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার কাছে দিলে আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে জয়নাল, মিঠুন, আঙ্গুর, রাজু, পারভেজসহ বেশ কয়েকজন মেয়েটিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। বখাটেরা জোর করে মুন্নীকে পার্শ্ববর্তী সাদিমনের বাড়িতে নিয়ে যায়।

সাদিমন জানান, দুপুরে একটি মেয়েকে জোর করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে পাঁচ ছেলে। তারা মেয়েটিকে গালাগাল করছিল। সন্ধ্যার দিকে মেয়ের বাড়ির লোকজন এসে মেয়েটিকে নিয়ে যায়।

মুন্নীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর চিরকুট লিখে নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আÍহত্যা করে মুন্নী। কিছুক্ষণ পর টের পেয়ে বাড়ির লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্নীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মুন্নী আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে যায়। বাবার উদ্দেশে লেখা ওই চিরকুটে সে লিখেছে, ‘আব্বু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আমি জানি না কী করে, কী হয়ে গেল। আমি তোমার মান-সম্মান বাঁচাতে পারলাম না। আর আমি কোনো কিছু ইচ্ছে করে করেনি। এ কাজ আমাকে জোর করে করানো হয়েছে। মুন্নী আরও লেখে, জয়নাল আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে। আর রাজপাড়ার মিঠুন, আঙ্গুর তোমার মেয়ের ক্ষতি করল। আমি যদি মরে থাকি তাহলে তুমি মনে করবা রাজপাড়ার ছেলেদের কারণে আমি মারা গিয়েছি।’

মিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হালিম বলেন, মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে যৌন হয়রানি করা হয়েছে কিনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




‘আব্বু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও’ চিরকুট লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

আপডেট সময় : ১০:২৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০১৯

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি; কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কেবিএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী চাঁদনী আক্তার মুন্নীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত এলাকার জয়নালের নেতৃত্বে ৫-৬ বখাটে। বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। বখাটেরা বাঁচতে দেয়নি মুন্নীকে।শেষ পর্যন্ত ওই বখাটেদের যৌন হেনস্তার শিকার হয়ে বৃহস্পতিবার চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করে সে। চিরকুটে তার মৃত্যুর জন্য ওই বখাটেদের দায়ী করে গেছে মুন্নী।

অভিযুক্ত বখাটেরা হল কাতলামারী এলাকার হাশেম রাজের ছেলে জয়নাল, আনছের আলীর ছেলে মিঠুন, রেজন আলীর ছেলে আঙ্গুর, নাসের রাজের ছেলে রাজু এবং আফতার আলীর ছেলে পারভেজ। এ ঘটনায় এ পাঁচ বখাটেকে আসামি করে মিরপুর থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাতলাগাড়ি গ্রামের হেকমত আলীর মেয়ে মুন্নীর চাচাতো ভাই সুজন বলেন, ওই বখাটেরা প্রায়ই মুন্নীকে উত্ত্যক্ত করত।

মুন্নির চাচা হাসেম আলী বলেন, শুক্রবার আমার বড়ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। এজন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে মুন্নী ও আমার মেয়ে আমলা বাজারে ফুল কিনতে যায়। এ সময় জয়নালসহ ৫ বখাটে তার পেছনে লাগে। বখাটে জয়নাল প্রলোভন দেখিয়ে মুন্নীকে আমলা ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে নিয়ে যায়। এ সময় মুন্নী চলে আসতে চাইলে বাধা দেয় বখাটেরা। তখন আমলা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই আশরাফ এসে মুন্নীকে উদ্ধার করেন।

তিনি বলেন, দুপুরে আমলা আলু ভিত্তি বীজ উৎপাদন খামারের সামনে থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য রেজেলা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করি।

ইউপি সদস্য রেজেলা খাতুন জানান, পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার কাছে দিলে আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে জয়নাল, মিঠুন, আঙ্গুর, রাজু, পারভেজসহ বেশ কয়েকজন মেয়েটিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। বখাটেরা জোর করে মুন্নীকে পার্শ্ববর্তী সাদিমনের বাড়িতে নিয়ে যায়।

সাদিমন জানান, দুপুরে একটি মেয়েকে জোর করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে পাঁচ ছেলে। তারা মেয়েটিকে গালাগাল করছিল। সন্ধ্যার দিকে মেয়ের বাড়ির লোকজন এসে মেয়েটিকে নিয়ে যায়।

মুন্নীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পর চিরকুট লিখে নিজের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আÍহত্যা করে মুন্নী। কিছুক্ষণ পর টের পেয়ে বাড়ির লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুন্নীকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মুন্নী আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে যায়। বাবার উদ্দেশে লেখা ওই চিরকুটে সে লিখেছে, ‘আব্বু আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আমি জানি না কী করে, কী হয়ে গেল। আমি তোমার মান-সম্মান বাঁচাতে পারলাম না। আর আমি কোনো কিছু ইচ্ছে করে করেনি। এ কাজ আমাকে জোর করে করানো হয়েছে। মুন্নী আরও লেখে, জয়নাল আমাকে জোর করে নিয়ে গেছে। আর রাজপাড়ার মিঠুন, আঙ্গুর তোমার মেয়ের ক্ষতি করল। আমি যদি মরে থাকি তাহলে তুমি মনে করবা রাজপাড়ার ছেলেদের কারণে আমি মারা গিয়েছি।’

মিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল হালিম বলেন, মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে যৌন হয়রানি করা হয়েছে কিনা।