ঢাকা ০৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




বেকার ও বিধবা নারীদের ভরসা মরিয়ম বুবু

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:২০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০১৯ ১২০ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম;

বেকার ও বিধবা নারীদের ভরসার নাম এখন মরিয়ম বুবু। দূর-দূরান্ত থেকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও কাজ শিখতে ছুটে আসছেন তার কাছে। যদি কাজ শিখে পরিবারের জন্য বাড়তি উপার্জন করা যায়। এ উপার্জনও কিন্তু সহজ নয়। সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের পর আয় হয় দুশ’-তিনশ’ টাকা। কোনদিন তা-ও হয় না। কিন্তু টানাটানির সংসারে একজনের আয় দিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই কষ্ট করে কিছু শিখে যদি আয় বাড়ানো যায়। এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মরিয়ম বুবু। খুলেছেন মহিলা উন্নয়ন সমিতি। সমিতিতে এখন সদস্য তিনশ’ জন। সবাই মিলে চলছে বেঁচে থাকার লড়াই।

মরিয়ম বুবুর জীবন সহজ ছিল না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দর্জি দেলোয়ার হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। দু’জনের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের আস্করনগর বাণিয়াটারী গ্রামে। দরিদ্র স্বামীর সংসারে সন্তান আসার পর টানাটানি যেন বেড়েই চলছিল। সংসারের দৈন্য দেখে স্বামীর কাছ থেকে দর্জির কাজ শিখে নেন মরিয়ম বেগম। এরপর বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন আধুনিক পোশাক তৈরির কলা-কৌশলের। হয়ে ওঠেন দক্ষ প্রশিক্ষক। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। আগ্রহীরা ভিড় করতে থাকেন তার কাছে।

২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ‘আস্করনগর বাণিয়াটারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি’। পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় সরকারি সেবা সংগঠনগুলো। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে সমিতির রেজিস্ট্রেশন নেন। এরপর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন পান। এলাকার গরিব ও বিধবা নারীদের ডেকে এনে সেলাই প্রশিক্ষণসহ ১৬ ধরনের কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন।

মরিয়ম তিনশ’ নারীকে সমিতির মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণসহ টেইলারিং ব্লক বাটিক এমব্রয়েডারি, কাটচুপি, বাঁশের তৈরি মোড়া, কার্পেট, পুতির বিভিন্ন ধরনের ভ্যানেটি ব্যাগ, পার্সব্যাগ, শোপিস, বেতের শীতল পাটি, বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা, প্যান্ট, শার্ট, বোরকা, লেহেঙ্গা, কামিজ, পায়জামা, সাফারি শার্ট, রাজ কোট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া তৈরিতে সহায়তা করেন। পাশাপাশি কাটিং মাস্টার হিসেবে পুরো জেলায় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

তার এ কর্মকাণ্ডের ফলে ২০১৪ সালে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসন তাকে ‘জয়িতা সম্মাননা’ দেন। ২০১৫ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত স্বামী মারা গেলে নারীদের আর্থিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য বেরিয়ে পড়েন তিনি। মরিয়ম বেগম বর্তমানে লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে কয়েক হাজার তরুণি ও যুবতি ট্রেইনার হিসেবে সেলাই প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মরিয়ম বেগম জানান, আর্থিক অনুদান পেলে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় মিনি গার্মেন্টস দিয়ে এলাকার হতদরিদ্র যুবক-যুবতিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন। এজন্য সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা চান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বেকার ও বিধবা নারীদের ভরসা মরিয়ম বুবু

আপডেট সময় : ০৭:২০:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম;

বেকার ও বিধবা নারীদের ভরসার নাম এখন মরিয়ম বুবু। দূর-দূরান্ত থেকে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও কাজ শিখতে ছুটে আসছেন তার কাছে। যদি কাজ শিখে পরিবারের জন্য বাড়তি উপার্জন করা যায়। এ উপার্জনও কিন্তু সহজ নয়। সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের পর আয় হয় দুশ’-তিনশ’ টাকা। কোনদিন তা-ও হয় না। কিন্তু টানাটানির সংসারে একজনের আয় দিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই কষ্ট করে কিছু শিখে যদি আয় বাড়ানো যায়। এসব অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মরিয়ম বুবু। খুলেছেন মহিলা উন্নয়ন সমিতি। সমিতিতে এখন সদস্য তিনশ’ জন। সবাই মিলে চলছে বেঁচে থাকার লড়াই।

মরিয়ম বুবুর জীবন সহজ ছিল না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে দর্জি দেলোয়ার হোসেনের সাথে তার বিয়ে হয়। দু’জনের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের আস্করনগর বাণিয়াটারী গ্রামে। দরিদ্র স্বামীর সংসারে সন্তান আসার পর টানাটানি যেন বেড়েই চলছিল। সংসারের দৈন্য দেখে স্বামীর কাছ থেকে দর্জির কাজ শিখে নেন মরিয়ম বেগম। এরপর বিভিন্ন জনের কাছে পরামর্শ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন আধুনিক পোশাক তৈরির কলা-কৌশলের। হয়ে ওঠেন দক্ষ প্রশিক্ষক। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। আগ্রহীরা ভিড় করতে থাকেন তার কাছে।

২০০৬ সালে গড়ে তোলেন ‘আস্করনগর বাণিয়াটারী মহিলা উন্নয়ন সমিতি’। পাশে সহায়তার হাত বাড়ায় সরকারি সেবা সংগঠনগুলো। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে সমিতির রেজিস্ট্রেশন নেন। এরপর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন পান। এলাকার গরিব ও বিধবা নারীদের ডেকে এনে সেলাই প্রশিক্ষণসহ ১৬ ধরনের কুটির শিল্পের প্রশিক্ষণ দেন।

মরিয়ম তিনশ’ নারীকে সমিতির মাধ্যমে সেলাই প্রশিক্ষণসহ টেইলারিং ব্লক বাটিক এমব্রয়েডারি, কাটচুপি, বাঁশের তৈরি মোড়া, কার্পেট, পুতির বিভিন্ন ধরনের ভ্যানেটি ব্যাগ, পার্সব্যাগ, শোপিস, বেতের শীতল পাটি, বিভিন্ন ডিজাইনের হাতপাখা, প্যান্ট, শার্ট, বোরকা, লেহেঙ্গা, কামিজ, পায়জামা, সাফারি শার্ট, রাজ কোট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া তৈরিতে সহায়তা করেন। পাশাপাশি কাটিং মাস্টার হিসেবে পুরো জেলায় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

তার এ কর্মকাণ্ডের ফলে ২০১৪ সালে নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসন তাকে ‘জয়িতা সম্মাননা’ দেন। ২০১৫ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত স্বামী মারা গেলে নারীদের আর্থিক উন্নয়নে সহযোগিতা করার জন্য বেরিয়ে পড়েন তিনি। মরিয়ম বেগম বর্তমানে লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে কয়েক হাজার তরুণি ও যুবতি ট্রেইনার হিসেবে সেলাই প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

মরিয়ম বেগম জানান, আর্থিক অনুদান পেলে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় মিনি গার্মেন্টস দিয়ে এলাকার হতদরিদ্র যুবক-যুবতিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন। এজন্য সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা চান তিনি।