ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




উপহাস পেরিয়ে এখন বিসিএস ক্যাডার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০৯:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৩৯ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ নিউজ ডেস্ক;

মিলিটারি একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থী মো. হালিমুল হারুন লিটন। তিনি ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান লাভ করেছেন। মানুষের উপহাস পেরিয়ে তিনি এতদূর এসেছেন। তার সফলতার গল্প লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন-

পরিচয়: ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার বন্দচরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মো. হালিমুল হারুন লিটন। বাবা মো. আজিবর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মা হালিমা বেগম গৃহিণী।

ক্যাপ্টেন বলে: আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে জিপিএ ৫ পান। ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করা যেন তার অভ্যাস ছিল। ফলে ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই থেকে এখনো বন্ধুরা ক্যাপ্টেন বলে ডাকে। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে পেয়েছেন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের সফল ইতি টানেন।

ঢাবি ছেড়ে মিলিটারি একাডেমি: উচ্চ মাধ্যমিকের সফল সমাপ্তির পর বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, বুটেক্স, বাকৃবি ও ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পান। ভর্তি হন ঢাবির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সেনা-পুলিশের পোশাকের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল। তাই ৩ মাস ক্লাস করেও পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের মিলিটারি একাডেমিতে। সেখান থেকে বিএসসি করেন এবং সেনা বাহিনীর অফিসার হন। মিলিটারি একাডেমিতে ভালো ফলাফল করায় পেয়েছেন কুদরত-এ-খোদা স্বর্ণপদক ও ওসমানী স্বর্ণপদক।

জীবনের মোড় যেখানে ঘোরে: সেনা বাহিনীর চাকরির দিনগুলো খুব ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত সেনা বাহিনীর চাকরি থেকে অকালীন অবসরে যান। তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এমবিএ’তে। অবসরে যাওয়ায় অনেক মানুষ উপহাস করতো। কিন্তু লিটন দমবারপাত্র ছিলেন না। প্রিয়তমা স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে মেধায় ১ম-১০ম স্থানের মধ্যে থাকবেন। সেই থেকে জোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করেছেন। ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল তার জীবনের প্রথম বিসিএস। বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি পুলিশ ক্যাডারে ১ম স্থানই অধিকার করেছেন। এরআগে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন।

লক্ষ্য যাদের বিসিএস: যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের উদ্দেশে লিটন পরামর্শ দিয়ে বলেন, নিজেকে কমিটমেন্ট দেন যে আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করেন। রেফারেন্স বইয়ের প্রয়োজনীয় অংশগুলো পড়তে পারেন। লিখিত পরীক্ষার খাতায় প্রচুর ডাটা, চার্ট দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশ সম্পর্কে প্রচুর জানার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত দেশি-বিদেশি পত্রিকা ও ‘মাসিক আর্টিকেলস অ্যান্ড কলামস’র মতো পত্রিকাগুলো পড়া যেতে পারে।

পতাকা মোড়ানো মৃতদেহ: লিটন বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় তার বাবা-মা, স্ত্রী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অনেক খুশি হয়েছেন। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করে সৎ পুলিশ অফিসার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে শপে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন- আমি যখন মারা যাব; তখন আমার মৃতদেহ বহনকারী বাক্সটায় বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো থাকবে। রাষ্ট্রীয় সম্মানায় আমাকে বিদায় জানাবে সোনার বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




উপহাস পেরিয়ে এখন বিসিএস ক্যাডার

আপডেট সময় : ০৩:০৯:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০১৯

সকালের সংবাদ নিউজ ডেস্ক;

মিলিটারি একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থী মো. হালিমুল হারুন লিটন। তিনি ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান লাভ করেছেন। মানুষের উপহাস পেরিয়ে তিনি এতদূর এসেছেন। তার সফলতার গল্প লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন-

পরিচয়: ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার বন্দচরপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মো. হালিমুল হারুন লিটন। বাবা মো. আজিবর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মা হালিমা বেগম গৃহিণী।

ক্যাপ্টেন বলে: আগারগাঁও তালতলা সরকারি কলোনি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে জিপিএ ৫ পান। ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম স্থান অধিকার করা যেন তার অভ্যাস ছিল। ফলে ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই থেকে এখনো বন্ধুরা ক্যাপ্টেন বলে ডাকে। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে পেয়েছেন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের সফল ইতি টানেন।

ঢাবি ছেড়ে মিলিটারি একাডেমি: উচ্চ মাধ্যমিকের সফল সমাপ্তির পর বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, বুটেক্স, বাকৃবি ও ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পান। ভর্তি হন ঢাবির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সেনা-পুলিশের পোশাকের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল। তাই ৩ মাস ক্লাস করেও পরে ভর্তি হন চট্টগ্রামের মিলিটারি একাডেমিতে। সেখান থেকে বিএসসি করেন এবং সেনা বাহিনীর অফিসার হন। মিলিটারি একাডেমিতে ভালো ফলাফল করায় পেয়েছেন কুদরত-এ-খোদা স্বর্ণপদক ও ওসমানী স্বর্ণপদক।

জীবনের মোড় যেখানে ঘোরে: সেনা বাহিনীর চাকরির দিনগুলো খুব ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত সেনা বাহিনীর চাকরি থেকে অকালীন অবসরে যান। তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এমবিএ’তে। অবসরে যাওয়ায় অনেক মানুষ উপহাস করতো। কিন্তু লিটন দমবারপাত্র ছিলেন না। প্রিয়তমা স্ত্রী তানজিনা সুলতানাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন, তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে মেধায় ১ম-১০ম স্থানের মধ্যে থাকবেন। সেই থেকে জোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করেছেন। ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল তার জীবনের প্রথম বিসিএস। বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি পুলিশ ক্যাডারে ১ম স্থানই অধিকার করেছেন। এরআগে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন।

লক্ষ্য যাদের বিসিএস: যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের উদ্দেশে লিটন পরামর্শ দিয়ে বলেন, নিজেকে কমিটমেন্ট দেন যে আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করেন। রেফারেন্স বইয়ের প্রয়োজনীয় অংশগুলো পড়তে পারেন। লিখিত পরীক্ষার খাতায় প্রচুর ডাটা, চার্ট দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। দেশ-বিদেশ সম্পর্কে প্রচুর জানার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত দেশি-বিদেশি পত্রিকা ও ‘মাসিক আর্টিকেলস অ্যান্ড কলামস’র মতো পত্রিকাগুলো পড়া যেতে পারে।

পতাকা মোড়ানো মৃতদেহ: লিটন বিসিএস ক্যাডার হওয়ায় তার বাবা-মা, স্ত্রী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অনেক খুশি হয়েছেন। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করে সৎ পুলিশ অফিসার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেকে শপে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন- আমি যখন মারা যাব; তখন আমার মৃতদেহ বহনকারী বাক্সটায় বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো থাকবে। রাষ্ট্রীয় সম্মানায় আমাকে বিদায় জানাবে সোনার বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ।’