উপজেলা নির্বাচন: বাতিলের খাতায় ২.২% ভোট

- আপডেট সময় : ১২:৪৫:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯ ৯১ বার পড়া হয়েছে

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে গড়ে ৪০ শতাংশের মত; এর মধ্যে ২.২ শতাংশ ভোট গেছে বাতিলের খাতায়।
উপজেলায় চতুর্থ ধাপে ভোটের হার নেমে এল ৩৬ শতাংশে
ভোট পড়েছে ৪৪%, বাতিলের খাতায় সোয়া লাখ
তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট বাতিলের খাতায়
বিপুল বাতিল ভোট, দায় কার?
দিনাজপুরের ৬ উপজেলায় লাখো ভোট বাতিল!
ব্যালটে সিল বাতিল হচ্ছে
আওয়ামী লীগের রেকর্ড ভোট, বিএনপির অর্ধেক জামানতহারা
এই চার ধাপে ১০ মার্চ, ১৮ মার্চ, ২৪ মার্চ ও ৩১ মার্চ দেশের প্রায় সাড়ে চারশ উপজেলায় ভোট হয়েছে। বিএনপির বর্জনের মধ্যে শতাধিক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বাকি উপজেলাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। আর এক তৃতীয়াংশ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন, যাদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী।
ভোটের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়- চার পর্বে ৬ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ জন ভোটারের মধ্যে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯২৭ জন ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ, ভোটের হার দাঁড়াচ্ছে ৪০.৩৭ শতাংশ।
এর মধ্যে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭২৯ ভোট বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়ে গেছে, যা মোট প্রদত্ত ভোটের ২.২ শতাংশ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটারদের অসচেতনতা, ব্যালট পেপারে একাধিক প্রতীকে সিল, ভাঁজ ঠিক মতো না করা, কালি ছড়িয়ে ফেলা, প্রতীকের ঘরের বাইরে সিল মারা, অনিয়মের প্রবণতাসহ নানা কারণে ভোট বাতিল হয়।
“ধীরে ধীরে প্রযুক্তির দিকে গেলে, ইভিএম ব্যবহার বাড়ালে বাতিল ভোটের হারও কমে আসবে।”
পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট এ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে তা দশম সংসদ নির্বাচনের বাতিল ভোটের দ্বিগুণের বেশি। দেশের ১৪৭ আসনে (১৫৩ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) ওই সংসদ নির্বাচনেও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল ।
আর গত বছর ডিসেম্বরে হয়ে যাওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে এখনও বিস্তারিত পরিসংখ্যান প্রকাশ না করায় বাতিল ভোটের হার জানা যায়নি।
উপজেলার প্রথম ধাপ
ভোটার: ১ কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৬৩ জন
ভোট পড়েছে: ৪৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫১২টি
ভোটের হার: ৪৩.৩২%
বাতিল হয়েছে: ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৪ ভোট
মোট বৈধ ভোট: ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৮টি
প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪১৭ ভোট বাতিল হয়েছে নাটোরের সিংড়ায়। আর সর্বনিম্ন ৪৮৯ ভোট বাতিল হয়েছে রাজশাহীর বাগমারায়।
দ্বিতীয় ধাপ
ভোটার: ১ কোটি ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৯০৭ জন
ভোট পড়েছে: ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৭৪টি
ভোটের হার: ৪১.২৫%
বাতিল হয়েছে: ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৪ ভোট
মোট বৈধ ভোট: ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি
এ ধাপে শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩২৬টি ভোট বাতিল হয়। থানচিতে বাতিল হয় সর্বনিম্ম ৬৭ ভোট।
তৃতীয় ধাপ
ভোটার: ১ কোটি ৮২ লাখ ১ হাজার ৭৭০ জন
ভোট পড়েছে: ৭৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৬টি
ভোটের হার: ৪১.৪১%
বাতিল হয়েছে: ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৩ ভোট
মোট বৈধ ভোট: ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার ৪৯৭টি
এ ধাপে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৩৮ ভোট বাতিল হয় মিঠাপুকুর উপজেলায়। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও কিশোরগঞ্জের অষ্টমগ্রামে একটি ভোটও বাতিল হয়নি।
চতুর্থ ধাপ
ভোটার: ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮১ জন
ভোট পড়েছে: ৬০ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫টি
ভোটের হার: ৩৬.৫০%
বাতিল হয়েছে: ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৮ ভোট
মোট বৈধ ভোট: ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ২৭১টি
চতুর্থ ধাপে ঈশ্বরগঞ্জে একটি ভোটও বাতিল হয়নি। মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬০০ ভোট বাতিল হয়েছে।
ইসির যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, “ইভিএম হলে ভোট বাতিলের হারও কমে যাবে। সবাই সচেতন থাকলে ব্যালট পেপারেও ভোট বাতিল হওয়ার সুযোগ থাকে না।”
এবার ৩০টি উপজেলায় সব পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি।
ইভিএমে ভোট বাতিলের কারণ
ইভিএমে ভোট হলে বাতিল হওয়ার সুযোগ বন্ধ হবে বলে যে যুক্তি নির্বাচন কমিশন দিয়ে আসছে, উপজেলা নির্বাচনে তা খাটেনি।
তৃতীয় ধাপে রংপুর সদর উপজেলায় ইভিএমে নির্বাচন হলেও সেখানে ৪৩৬ ভোট বাতিল হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, উপজেলায় একজন ভোটার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানের তিনটি পদে ভোট দিতে পারেন। এখন কেউ যদি একটি বা দুটি পদে ভোট দিয়ে, অন্য পদে ভোট না দেন, তাহলে তার ব্যালট বাতিল বলে গণ্য হয়।
আর ব্যালটে ভোট হলে ভোটারের হাতে তিন পদের জন্য আলাদা তিনটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয়। সিল মারার পর তা ফেলতে হয় আলাদা তিনটি বাক্সে। সেখানে তিনি একটি ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে বাকি দুটি খালি রেখে জমা দিলেও তার একটি পদের ভোট বৈধ হিসেবে গণ্য হয়।
সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের কেবল একটি পদেই ভোট দিতে হয়। ফলে সেখানে ইভিএমে নির্বাচন হলে ভোট বাতিলের সম্ভাবনা থাকে না বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য।