ঢাকা ০৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo গোপালগঞ্জে ‘নৌকার দুর্গ’ ভাঙার চ্যালেঞ্জে বিএনপি Logo ফরিদপুরে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ Logo ডিপিডিসির রুহুল আমিন ফকির দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন শতকোটি টাকার সম্পদ Logo উত্তরখানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা Logo খুলনা-৬ আসনে বিএনপির সাক্ষাতের ডাক পেলেন সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী Logo গুলশানে ‘Bliss Art Lounge’-এ অভিযান: প্রচুর বিদেশি মদসহ ৯ জন গ্রেফতার Logo টঙ্গীতে ১১ বছরের ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ নিখোঁজ Logo “স্টার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫” পেলেন দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ Logo খুলনায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ, এলাকায় চাপা উত্তেজনা Logo স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগী ‘যশোর বিআরটিএ অফিসের তারিক ধরাছোঁয়ার বাইরে|(পর্ব – ০১)

বেলুচিস্তানের সোনার খনি দখলে নিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কৌশল !

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০ ২৪৭ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন প্রতিবেদক; গত বছর চিলি এবং কানাডার যৌথ খননকারী সংস্থা টেথিয়ান কপার কোম্পানির (টিসিসি) সঙ্গে বেআইনিভাবে খনি চুক্তি বাতিল করে দেওয়ায় পাকিস্তানকে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত। যা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক আদালতের করা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানা। আর এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তানকে ফেলে দেওয়ার পেছনে হাত রয়েছে খোদ নিজেদের সেনাবাহিনীর-ই।

গত বছর পাকিস্তান ও ওই কোম্পানির মধ্যে প্রায় সাত বছর ধরে চলা ঐ মামলার রায় শুনে ইমরান খান সরকারের ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। অর্থনীতি তলানিতে ঠেকা পাকিস্তানের কাছে এই জরিমানা রীতিমতো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তখনই ঠিক কাদের দোষের কারণে গোটা দেশকে এই বিপর্যয়ে পড়তে হয় তা জানতে তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যদিও সে নির্দেশ বেশি দূর গড়ায়নি, চুপ রয়েছেন তিনি। এত দিনে উপলব্ধি হয়েছে- পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে বেলুচিস্তানের ওই সোনা ও তামার খনি দখলে নেওয়ার পেছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গভীর ভূমিকা স্পষ্ট।
কেননা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টিসিসি’র সাথে চুক্তিবাতিল করে নিজের দেশের এক অভিজ্ঞ পারমাণবিক বিজ্ঞানীর সংস্থাকে এবং বন্ধু দেশ চীনের মুখিয়ে থাকা খননকারী সংস্থাকেও প্রজেক্টটি দিতে অপারগতা জানায়। সেসময় খনিটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ঘোষণা করে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি অনভিজ্ঞ কোম্পানিকে এর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। ফ্রন্টাইনার ওয়ার্কস অরগানাইজেশন (এফডব্লিউও) নামের ওই কোম্পানি মূলত রাস্তা নির্মাণ ও বিল্ডিং কন্সট্রাকশন নিয়ে কাজ করে, খনি নিয়ে তাদের কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিলো না। এভাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একের পর এক সিদ্ধান্তই স্পষ্ট করে যে- খনিটি দখলে নিতে চাল চেলেছে সেনাবাহিনী। যার ফলে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে পাকিস্তানকে, জরিমানাও গুণতে হবে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির নড়বড়ে অর্থনীতিকে কোমায় পাঠানোর জন্য যথেষ্ট।

উল্লেখ্য, টিথিয়ান কপার কর্তৃপক্ষ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় আগে ২০০৬ সাল থেকে পাকিস্তানের ইরান ও আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বিশাল খনিজ সম্পদের ভাণ্ডারের আবিষ্কার করে। ধারণা করা হয়, ওই সময়ের আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় সোনা ও তামার খনির মধ্যে একটি অন্যতম।

যৌথ মালিকানাধীন এই কোম্পানি ২০১১ সাল পর্যন্ত ‘রেকো ডিক’ নামে খনিটির বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। সোনা ও তামার আকরিকের জন্য বিখ্যাত পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রেকোডিক এলাকায় কোম্পানিটি প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। কিন্তু ২০১১ সালে কোনো কারণ ছাড়াই কোম্পানিটির ইজারা নবায়নের আবেদন বাতিল করে দেয় পাকিস্তান। এরপর ২০১৩ সালে চুক্তিটিই বাতিল বলে জানিয়ে দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে যায় কোম্পানিটি। এরপর ২০১৭ সালে এ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রায় দেন বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংস্থা (আইসিএসআইডি)। যদিও তখন জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ হয় না। পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার (পাঁচ দশমিক ৯৭৬ বিলিয়ন ডলার) জরিমানা করে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত।

বিশ্লেষকদের মতে ওই মামলা ও তার রায় এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ে দেশটি। ‘রেকো ডিক’ খনির মামলাটির কারণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সামনেও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। অপর দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী খনিটিকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বলে অবহিত করে চলমান বিরোধের মধ্যেও এর প্রক্রিয়াজাত ও উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :
error: Content is protected !!

বেলুচিস্তানের সোনার খনি দখলে নিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কৌশল !

আপডেট সময় : ১০:৪৩:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুন ২০২০

অনলাইন প্রতিবেদক; গত বছর চিলি এবং কানাডার যৌথ খননকারী সংস্থা টেথিয়ান কপার কোম্পানির (টিসিসি) সঙ্গে বেআইনিভাবে খনি চুক্তি বাতিল করে দেওয়ায় পাকিস্তানকে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত। যা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক আদালতের করা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানা। আর এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তানকে ফেলে দেওয়ার পেছনে হাত রয়েছে খোদ নিজেদের সেনাবাহিনীর-ই।

গত বছর পাকিস্তান ও ওই কোম্পানির মধ্যে প্রায় সাত বছর ধরে চলা ঐ মামলার রায় শুনে ইমরান খান সরকারের ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। অর্থনীতি তলানিতে ঠেকা পাকিস্তানের কাছে এই জরিমানা রীতিমতো মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তখনই ঠিক কাদের দোষের কারণে গোটা দেশকে এই বিপর্যয়ে পড়তে হয় তা জানতে তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যদিও সে নির্দেশ বেশি দূর গড়ায়নি, চুপ রয়েছেন তিনি। এত দিনে উপলব্ধি হয়েছে- পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে বেলুচিস্তানের ওই সোনা ও তামার খনি দখলে নেওয়ার পেছনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর গভীর ভূমিকা স্পষ্ট।
কেননা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টিসিসি’র সাথে চুক্তিবাতিল করে নিজের দেশের এক অভিজ্ঞ পারমাণবিক বিজ্ঞানীর সংস্থাকে এবং বন্ধু দেশ চীনের মুখিয়ে থাকা খননকারী সংস্থাকেও প্রজেক্টটি দিতে অপারগতা জানায়। সেসময় খনিটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ঘোষণা করে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি অনভিজ্ঞ কোম্পানিকে এর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। ফ্রন্টাইনার ওয়ার্কস অরগানাইজেশন (এফডব্লিউও) নামের ওই কোম্পানি মূলত রাস্তা নির্মাণ ও বিল্ডিং কন্সট্রাকশন নিয়ে কাজ করে, খনি নিয়ে তাদের কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিলো না। এভাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একের পর এক সিদ্ধান্তই স্পষ্ট করে যে- খনিটি দখলে নিতে চাল চেলেছে সেনাবাহিনী। যার ফলে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে পাকিস্তানকে, জরিমানাও গুণতে হবে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির নড়বড়ে অর্থনীতিকে কোমায় পাঠানোর জন্য যথেষ্ট।

উল্লেখ্য, টিথিয়ান কপার কর্তৃপক্ষ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় আগে ২০০৬ সাল থেকে পাকিস্তানের ইরান ও আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে একটি মৃত আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বিশাল খনিজ সম্পদের ভাণ্ডারের আবিষ্কার করে। ধারণা করা হয়, ওই সময়ের আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় সোনা ও তামার খনির মধ্যে একটি অন্যতম।

যৌথ মালিকানাধীন এই কোম্পানি ২০১১ সাল পর্যন্ত ‘রেকো ডিক’ নামে খনিটির বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে। সোনা ও তামার আকরিকের জন্য বিখ্যাত পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রেকোডিক এলাকায় কোম্পানিটি প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। কিন্তু ২০১১ সালে কোনো কারণ ছাড়াই কোম্পানিটির ইজারা নবায়নের আবেদন বাতিল করে দেয় পাকিস্তান। এরপর ২০১৩ সালে চুক্তিটিই বাতিল বলে জানিয়ে দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে যায় কোম্পানিটি। এরপর ২০১৭ সালে এ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রায় দেন বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংস্থা (আইসিএসআইডি)। যদিও তখন জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ হয় না। পরে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার (পাঁচ দশমিক ৯৭৬ বিলিয়ন ডলার) জরিমানা করে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত।

বিশ্লেষকদের মতে ওই মামলা ও তার রায় এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ে দেশটি। ‘রেকো ডিক’ খনির মামলাটির কারণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সামনেও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। অপর দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী খনিটিকে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বলে অবহিত করে চলমান বিরোধের মধ্যেও এর প্রক্রিয়াজাত ও উন্নয়নে কাজ করছে বলে জানা যায়।