ভূয়া কাগজে দিলীপ কুমারের ঋণ কেলেংকারী!
- আপডেট সময় : ১১:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোটার: সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের তৎকালীন ডিজিএম আব্দুস সালাম সিন্ডিকেট ৩ কোটি টাকা ঘুষ বাবদ হাতিয়ে নিয়ে নাম সর্বস্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে ১ম দফায় ৯ কোটি টাকা শিল্প ঋণ দিয়েছিলো ২০১৫ সালে। অতপর প্রতিষ্ঠানটি কিছু দিন ঠিকঠাক মতো কার্য পরিচালনা করলেও ২০১৭ সালের শুরু দিকে মুলধন সংকটে পড়ে ২য় দফায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋন আবেদন করে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই না করে আবারো ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করে। সম্প্রতি নড়েছড়ে বসে ব্যাংক ও ফ্লাইরাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সঠিক তথ্য প্রমান যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ফ্লাইরাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের ৩ দফায় ঋণ আবেদন স্থগিত করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। চলছে নানা তদন্ত। আর তদন্ত ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে তথাকথিত ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের ভূয়া এমডি দিলীপ কুমার দাস। তবে শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সাধারন মানুষ। সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড শিল্প ঋণ কর্মসূচির আওতায় হাটাব, মাসুমাবাদ রূপগঞ্জ নারায়নগঞ্জে ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রকল্পে ৯ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে ২০১৫ সালে। উল্লেখিত ঠিকানায় ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজ ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনে বিভিন্ন মেশিনারিজ, কাচামাল ও শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে।
ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের এমডি দিলীপ কুমার দাস কিছু দিন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার পর অর্থ সংকটে পড়ে শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধ না করেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে রাখে। এতে বেরিয়ে আসে ঋণের টাকা তছরুপ করা মুল রহস্য।
সুত্র জানায়, দিলীপ কুমার দাস ঋণের টাকা প্রতিষ্ঠানে না খাটিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। কারন গৃহিত ঋণে প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবেই চলার কথা। অথচ প্রকল্পে ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন, মেশিনারিজ ও অল্প কিছু কাচামাল ছাড়া আর কিছু নেই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফিপটি ফিপটি রেশিওতে যেকোন প্রতিষ্ঠানকে শিল্প ঋণ প্রদান করে।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তির বাস্তবায়িত প্রকল্পে ১শ টাকার অবকাঠামোগত মুলধন থাকলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে সমপরিমান অর্থাৎ ১শ টাকা ঋণ প্রদান করবে। এই হিসেবে ফ্লাইরাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো মুলধন হিসেবে ৯ কোটি টাকার হিসাব দেখিয়েছে। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে আরো ৯ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করেছে। এতে প্রকল্পের মোট মুলধনের পরিমান দাড়িয়েছে ১৮ কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন হলো ফ্লাইরাবার ইন্ডাষ্ট্রিজের এমডি দিলীপ কুমার দাস ৯ কোটি টাকা ঋন উত্তোলন করে কি কাজে ব্যবহার করেছে তার কোন হদিস খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গেলে একাধিক সুত্র জানায়, ফ্লাইরাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রকল্পের ১০ শতাংশ জমিতে ৩ তলা বিশিষ্ট ৬ হাজার ১শ বর্গফুটের ভবনটি দীর্ঘ দিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। রাবার মিক্সার রোলারের সরকারী দর জনতা ব্যাংক অনুসারে ১৬হাজার ডলার। কিন্তু সোনালী ব্যাংক তা নির্ধারন করেছে ৮০ হাজার ডলার। ডিজেল জেনারেটর (পারকিনস ব্রান্ড এর স্ক্রাপ) ক্রয় করেছে মাত্র ১২ লাখ টাকা আর ব্যাংক ধরেছে ৪৮ লাখ টাকা। কারখানায় দুটি হ্যান্ড প্রিন্ট মেশিন যার দাম ১ লাখ টাকার বেশী নয় তার মুল্য ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। ১ লাখ ডলারের কাচামালকে দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ডলারের মুল্য।
স্থায়ী যন্ত্রপাতির হিসেবে যেগুলো দেখানো হয়েছে সেগুলো বাস্তবে লোহার প্লেট। যাহা বাজারে ৫০ টাকা দরে বিক্রয় করা হয়। ১৫/০৮/২০১৯ তারিখে প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার কথা থাকলেও ফ্লাইরাবার তা পরিশোধ না করায় তারা খেলাপী গ্রাহকের তালিকায় চলে যায়। কিন্তু তারপরেও ব্যাংক তাদেরকে কিভাবে ৩য় দফায় ঋণ দিচ্ছে সেই প্রশ্ন ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে। ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজকে তৎকালীন সময়ে লোকাল অফিসের জিএম নজরুল ইসলাম (বর্তমানে ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্রাঞ্চে কর্মরত) ঋণ প্রদানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলো।
ফ্লাইরাবারের এমডি দিলীপ কুমার দাস এখনো তাকে খুশি রাখার জন্য বড় বড় মাছ, টাকা পয়সা সহ নানা উপঢোকন দিয়ে থাকেন। স্থানীয় চায়ের দোকানদার জানায়, ফ্লাইরাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ প্রতিষ্ঠানটি শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেছে। শুনেছি এরা ঋণ খেলাপীর তালিকায় পড়েছে। গত ছয় মাস যাবৎ কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ না করে বন্ধ করে রেখেছে। আবার ঋণ এটা চালু করা হবে। মাঝে মধ্যে অফিসার টাইপের লোকজন নিয়ে এটা দেখি নিয়ে যায়।
অপর একটি সুত্র জানায়, ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের কর্মচারীদের বেতনভাতা অনেকদিন যাবৎ পরিশোধ করছে না এমডি দিলীপ কুমার দাস। বেতন চাওয়ায় দিলীপ কুমার দাস তার কর্মচারী শাহ জালালকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। শাহ জালাল বর্তমানে চায়ের দোকানদার। দিলীপ কুমার দাসের পরিকল্পনা ছিলো গত কোরবানীর ঈদের উক্ত ঋণটি পাশ করাতে পারলে সমস্ত টাকা নিয়ে ভারত চলে যাবে। কিন্তু বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ার তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তবে যে কোন কিছুর বিনিময়ে ঋণটি পাশ করিয়ে সাজানো প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে ভারতে পালিয়ে যাবে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
এব্যাপারে ফ্লাইরাবার এন্ড ফুটওয়ার ইন্ডাষ্ট্রিজের এমডি দিলীপ কুমার দাস বলেন, ১৮ কোটি টাকা ঋণের বিষয়টি সঠিক নয়। আমার প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে সাড়ে ১২ কোটি টাকা। চলবে!