প্রশাসন কবে ব্যবস্থা নিবে...
উত্তরায় দুর্ধর্ষ সিন্ডিকেট: লাশের বিনিময়ে হলেও চাঁদা চায় ওরা
- আপডেট সময় : ১১:২১:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০২৪ ২৫৫০ বার পড়া হয়েছে
#উত্তরা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এর কড়া হুঁশিয়ারীকেও ডোন্ট কেয়ার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের
#চাঁদা নাপেয়ে হামলার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার ঘটনা..
#২০১১ সালের ২ মার্চ উত্তরার ৭ নং সেক্টরে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রথম খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে এই দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী চক্রের
#কৃষকলীগের কথিত নেতা রাসেল, বিএনপি নেতা নোয়াখাইল্যা নবী, চাঁদপুরের মোটা দুলাল ও আতিক নিয়মিত দোকানপাট থেকে চাঁদা তুলছে। স্থানীয় থানা পুলিশের যোগসাজোস রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য ভুক্তভোগীরা..
#দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে যে-কোন সময় চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের হাতে ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরায় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সুমন নামের এক কাপড় বিক্রেতাকে কুপিয়েছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এই ঘটনায় সুমন আলী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৭/৮ জনকে আসামি করে আদালত একটি সিআর মামলা দায়ের করছেন (মামলা নং ২)। মামলার এফআইআর থেকে জানাযায়, উত্তরার মাসকাট প্লাজা সংলগ্ন সড়কে কয়েক বছর যাবত গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করে আসছিলেন সুমন। গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা চাঁদার জন্য ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সুমনকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করে। অপহরণে পর ৭ নং সেক্টরের ৩৪ নং সড়কে অবস্থিত ১৬ নম্বর বাড়িতে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্নস্থানে স্টিলের রড দিয়ে উপর্যুপরি আগাত করে। স্থানীয়রা জানায়, বাড়িটির একটি অংশ আসামীরা টর্চার সেল হিসাবে ব্যবহার করে।
সুমন আলী মামলায় নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে জানান, তারাবী চলাকালীন সময় (আনুমানিক রাত ৯ টা) উত্তরার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণকারী কিশোর গ্যাং লিডার গোয়ালটেকের
মিলন ওরফে নীল মিয়া(৩৫), রাজাবাড়ি এলাকার উজ্জল মিয়া(৩৩) এবং নাহিদ হাসান ইউসুফ (৩২) এর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণ করেন।
এরপর হত্যার উদ্দেশ্যে কিল-ঘুষি ও স্টিলের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।
সরেজমিনে ঘটনার খোঁজখবর এবং পথচারীদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, ঐ দিন কয়েক যুবকের সহায়তায় দৌড়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা পেলেও সন্ত্রাসীরা সুমনকে হত্যার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন এবং সুমনের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
পথচারী রাসেল আহমেদ জানান, তারাবি চলাকালীন সময় দৌড়ে পালাতে দেখেছিলাম অল্প বয়সের এক কিশোরকে। তখন ছেলেটির শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত পড়ছিল তাই আমরা ধরাধরি করে আহত অবস্থায় টঙ্গী মেডিকেলে নিয়ে যাই।
আশপাশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, মামলার দুই নম্বর আসামি উজ্জল প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন, ‘রমজানেই হত্যা করা হবে সুমন এবং রিয়াজকে’।
একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখাযায় কিশোর গ্যাং চক্রের মূল হোতা উজ্জলের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি গ্রুপ মামলার বাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় ফুটপাত ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে এবং মামলার নথি থেকে জানাযায়, আসামীরা বছরের পর বছর উত্তরার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণের সাথে যুক্ত রয়েছেন। সেক্টরের এবং প্রধান সড়কের বিভিন্ন দোকানপাট থেকে নিয়মিত চাঁদা উঠানোকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত।
মামলার বাদী সুমন আলী জানান, নিয়মিত টাকা দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলাম। ঘটনার ৪/৫ দিন আগে রমজান উপলক্ষে আসামীরা নির্দিষ্ট টাকার বাহিরে চাঁদা দাবি করলে দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এরপর উজ্জলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার দোকান বন্ধ করে দেয়। এবং মালামাল ও টাকাপয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
সুমন দাবি করেন, ঐ দিনই ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি এবং পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়ে ছিলেন।
উত্তরার ফুটপাতে নিয়মিত ব্যবসা করা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানাযায়, কৃষকলীগের কথিত নেতা পরিচয়ে আজিমপুরের রাসেল, বিএনপি নেতা নোয়াখাইল্যা নবী, চাঁদপুরের মোটা দুলাল ও আতিকের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটা সিন্ডিকেট নিয়মিত দোকানপাট থেকে চাঁদার টাকা তুলে। চক্রটি পেশাদার চাঁদাবাজ। প্রায় বিশ বছর যাবত তারা এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত।
সূত্র বলছে, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের অলিগলি এবং প্রধান সড়কে প্রতিদিন দুই হাজারের অধিক হকার দোকানপাট নিয়ে বসে। ভ্রাম্যমাণ এসকল দোকান থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকার কাছাকাছি চাঁদা উঠানো হয়।
চাঁদার বড় একটি অংশ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭/৮ সদস্য ভাগাভাগি করে নিয়ে থাকেন।
বাকি টাকার ক্ষুদ্র অংশ কয়েকজন সাংবাদিক, লাইনম্যান এবং ক্যাডার ভিত্তিক রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে কিশোর গ্যাং এর পৃষ্ঠপোষক দক্ষিখান ও উত্তরখান থানার তালিকাভুক্ত অস্ত্র ও পুলিশ কোপানো মামলার আসামী ঠোঁটকাটা আলতাফসহ দু-একজন পেয়ে থাকেন।
দীর্ঘদিন ফুটপাতের টাকা উঠানোর দায়িত্বে থাকা কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানাযায়, প্রতিমাসে রাসেল, নবী, আতিক ও মোটা দুলাল চাঁদার যে পরিমাণ অংশ নিজেদের জন্য রাখেন তা প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার বেতনের সমতূল্য বা তার চেয়ে অধিক।
সূত্র বলছে, মাঠ পর্যায়ে টাকা উত্তোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে অফিসারের ‘নাম’ সরাসরি হকার বা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে প্রচার করে থাকেন; সর্বদা তাকে বেশি টাকা মাসোহারা দিতে হয়।
ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের (হকার) অভিযোগ,
উত্তরার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণের সাথে যেসকল ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন তাদের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন রাসেল মন্ডল এবং তার প্রধান ক্যাডার উজ্জল।
২০১১ সালের ২ মার্চ উত্তরার ৭ নং সেক্টরের ৩৫ নং সড়কে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলামের সন্তান মো. সেলিম (৩১) কে ঐ সময় চাঁদাবাজরা টাকার জন্য পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের একদিন পর অর্থাৎ ০৩ মার্চ উত্তরা পশ্চিম থানায় ৯ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন সেলিমের পিতা মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল (মামলা নং ০৯)।
সূত্র বলছে, ঐ সময় জাকির মোল্লার নেতৃত্ব উত্তরার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করতেন দক্ষিণখানের রাজাবাড়ী এলাকার শফিক মিয়ার ছেলে উজ্জল। পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় হত্যা মামলার আসামী বনে যান প্রধান সাক্ষী। সেই সাক্ষীর হাতে যে-কোন সময় খুন হতে পারেন রিয়াজ এবং সুমন। আর এই খুনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ঠোঁটকাটা আলতাফ হোসেন।
তথ্য বলছে, সেলিমকে সেক্টরের যে স্থানে হত্যা করা হয় ঠিক তার পাশের সড়কে (৩৪ সড়ক) মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সুমন আলীকে অপহরণের পর হত্যা চেষ্টা চালায় উজ্জলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী।
বিডিআর মার্কেটের ব্যবসায়ী রিয়াজ জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ইউসুফ, উজ্জল ও মিলনসহ ২০/২৫ জন অজ্ঞাতব্যক্তি অস্ত্র নিয়ে একই সড়কে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মহড়া দিচ্ছিলেন। যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি; পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহাবুব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ব্যবসায়ী মাসুমের করা সাধারণ ডাইরি থেকে জানাযায়,
২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল রাতে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় সন্ত্রাসী উজ্জলের গডফাদার রাসেল মন্ডল ওরফে মাখন চাঁদার জন্য মাসুকে প্রকাশ্যে মারপিট এবং হত্যা চেষ্টা চালায়। পথচারীরা ঐ সময় তাকে উদ্ধার করে টঙ্গী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানোয় সে যাত্রায় প্রানে বেঁচে যায়।
গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) উত্তরা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহাজাহান (পিপিএম) উত্তরার সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে কড়া হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, ‘চাঁদা না দিয়ে পুলিশকে জানাবেন, আমরা তাদের ধরে নিয়ে আসবো।
এসময় তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাঁদা না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোথাও যদি চাঁদার জন্য আপনাদের উপর জুলুম করে সে ক্ষেত্রে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এবং ঐ দিন রাতেই সুমন আলীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে।