শত বছর বয়সী মায়ের বসবাস টয়লেটে!

- আপডেট সময় : ০৮:৩৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০১৯ ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

রংপুর ব্যুরোঃ
নছিমন বেওয়া। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে হাটতে পারেন। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া নিরুপায় তার চলাফেরা। বয়স প্রায় একশ’র কাছাকাছি।
ছেলেমেয়ে থাকার পরও স্বামী হারা এই বৃদ্ধার মাথা গোঁজার জায়গা নেই। তাইতো নিদারুণ কষ্ট আর মানবেতর যন্ত্রণায় বছরের পর বছর টয়লেটেই তার রাত কাটছে।
টয়লেটই এখন নছিমন বেওয়ার ঠিকানা। সেখানে আছে ভাঙা একটি চৌকি, চট আর কিছু পানির বোতল। টয়লেটের দুর্গন্ধের সঙ্গে রাতে অসহ্য গরম আর মশার কামড় এই বৃদ্ধার এখন নিত্যসঙ্গী।
কোনো রকমে রাত পার হলেই লাঠিতে ভর করে টয়লেট থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। কখনো রাস্তার ওপর নতুবা ড্রেনের শ্লোপের ওপর বসে শুয়ে থাকেন। এমন কষ্টের দৃশ্য সন্তানদের চোখে না পড়লেও গ্রামের মানুষ ঠিকই উপলব্ধি করতে পারেন। তাই স্থানীয়দের সাহায্য সহযোগিতায় খাবার জুটে তার মুখে।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নছিমন বেওয়া বাকরুদ্ধ। বুকভরা কষ্টগুলো চিৎকার করে বলতে চাইলেও বয়সের ভারে বন্ধ হয়ে গেছে তার আওয়াজ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। বুধবার রাতে রংপুর মহানগরীর নিউ জুম্মাপাড়া কলোনিতে গিয়ে বৃদ্ধা নছিমন বেওয়ার জীবনের কষ্টভরা রাত্রিযাপনের এমন দৃশ্য দেখা যায়।
জানা গেছে, বৃদ্ধা নছিমনের স্বামী মারা যাবার পর থেকে সন্তানদের অনাদরে অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ভিক্ষা করতেন। এক সময় বড় ছেলে জয়নাল মিয়ার মায়ের প্রতি মায়া হয়। মায়ের জন্য কলোনির ভেতরে সিটি কর্পোরেশন থেকে তৈরি করা পাবলিক টয়লেটের এক কোণায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর থেকে ওই টয়লেটেই বৃদ্ধা নছিমনের ঠিকানা।
প্রতিবেশী সালমা বেগম বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসী সাধ্যমত বৃদ্ধাকে সাহায্য সহযোগিতা করি। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে এখনো জীবিত আছেন। তারা কেউই ঠিক মতো দেখাশুনা করেন না। টয়লেটে থাকা ওই বৃদ্ধা মায়ের কষ্ট কেউ বুঝবে না। এটা অমানবিক এবং গুরুতর অন্যায়।
সন্তানরা যেহেতু মাকে ঠাঁই দিতে পারছেন না, তাই নছিমনকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করতে সমাজের বৃত্তবানসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চান তিনি। এদিকে নছিমনের ছেলে জয়নাল মিয়া ও মিন্টু মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর মোছা. হাসনা বানু বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই বৃদ্ধাকে প্রায় টাকা ও খাবার দিয়ে সহযোগিতা করি। তার ছেলে সন্তানরা থাকার পরও টয়লেটে বসবাস খুবই দুঃখজনক। সিটি করপোরেশন থেকে তার জন্য বয়স্ক ভাতাসহ অন্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করব।’