ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




যেখানে ২৪ ঘণ্টাই দিন, কিভাবে রোজা রাখেন তারা?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:২৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০১৯ ১২৯ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;

স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে দিন বড়, রাত খুবই ছোট। আবার কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে। পৃথিবীর এসব অঞ্চলে বসবাসরত মুসলিমরা রোজা কিভাবে পালন করেন, এ প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে।

নরওয়ে, আইসল্যান্ডের মুসলমানরা রোজা রাখা নিয়ে খুব সমস্যার মুখোমুখী। এই অঞ্চলটিতে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে বছরের এই সময়টাতে সূর্যই অস্ত যায় না। আর্কটিক সাগরে নরওয়ের এসভালবার্ড দ্বীপমালা তেমনি একটি অঞ্চল। এপ্রিল থেকে আগস্ট- বছরের এই সময়টাতে ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে সেখানে। এছাড়া নরওয়ের মূল ভূখণ্ডের ট্রোমসো শহরের অবস্থাও একই।

এই রকম অঞ্চল যেখানে রাতই হয় না, তারা কিভাবে রোজা রাখবেন। কিভাবে সেহেরী ও ইফতার করবেন বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে তাদের জন্য তিনটি অপশন রয়েছে বলে জানিয়েছেন নরওয়ের রাজধানী অসলোর একটি মসজিদের ইমাম ও মুসলিম স্কলার অসিম মোহাম্মাদ।
এদিকে চলতি রমজানের মধ্যেই নতুন একটি চাকরিতে যোগদান করবেন ৩৪ বছর বয়সী নওমুসলিম নারী সোফি ক্লাউজার দার। ডেনমার্কের এই বাসিন্দা চিন্তায় আছেন কিভাবে নতুন চাকরিতে গিয়ে ১৭ ঘণ্টা রোজা পালন করবেন। স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলের দেশটিতে এখন ১৭ ঘণ্টা লম্বা দিন হয়। এত দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে হয় ডেনিশ মুসলমানদের।

একটি বেবি কেয়ার সেন্টারে চাকরি শুরু করবেন সোফি। নওমুসলিম এই নারীকে সেখানে বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ করতে হবে। দেশটিতে রাত এতই ছোট এখন যে রাতের কাজগুলো ঠিক মতো করাও কষ্টকর।

সোফি বলেন, রাতের খাবার ও সেহেরী খাওয়া, মাগরিব, এশা ও তারাবির নামাজ- এতসব কাজের জন্য রাত খুবই ছোট। সময় দ্রুতই শেষ হয়ে যায় এখানে। রাতে ঘুমানোর সময়ই পাওয়া যায় না।

গরমে দীর্ঘক্ষণ রোজ রাখতে গিয়ে অনেকেই পানিশূন্যতা, ক্লান্তিসহ অনেকভাবে অসুস্থ বোধ করতে পারেন। এই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সোফি দার বলেন, রাত এত ছোট যে পরের দিন রোজা রেখে সুস্থ্য থাকার মতো পর্যাপ্ত পানি ও খাবার গ্রহণ করা হয় না। যে কারণে রোজা রাখা সত্যিই কঠিন। রাত ছোট হওয়ার কারণে ঘুম হয় না বললেই চলে সেটিও রোজাদারদের জন্য কষ্টকর। ধরুন আমার বাচ্চাকে সকাল আটটায় স্কুলে দিয়ে আসতে হয় কাজেই বিষয়টি কঠিন। তবে কয়েকদিন গেলে তখন রোজার একই কষ্টে অভ্যস্ত হয়ে যান বলে জানান এই মুসলিম নারী। তখন আর কষ্ট অনুভব হয়না।

ইমাম ও মুসলিম স্কলার অসিম মোহাম্মাদ বলেন, যে অঞ্চলে সূর্য ডোবেই না, তারা হয়তো নিকটস্থ শহরের সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখে রোজা রাখা ও ইফতার করতে পারেন। কিংবা মুসলিমদের কেবলার নগরী মক্কার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অথবা তাদের এলাকায় কিছুদিন আগে যখন সূর্যাস্ত হত সেই সময় হিসাব করে করতে পারেন।

এই ইমাম জানান, তার আশাপাশের অনেকেই রমজান মাসে চাকরি থেকে ছুটি নেয়ার চিন্তা করছেন। কারণ ১৭ ঘণ্টার বেশি রোজা রেখে চাকরি করা কঠিন। তিনি বলেন, অবশ্য চাকরিতে কাজের ধরনের ওপর এটি অনেকটা নির্ভরশীল। যারা অফিসের অভ্যন্তরে ডেক্স জব করে, এয়ার কন্ডিশনারের ভেতর তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে যারা এই গরম আবহাওয়ায় বাইরে কাজ করেন তাদের জন্য কঠিন।

নরওয়েতে গ্রীষ্ম কিংবা বসন্তের দিকে দিন বড় হয়; কিন্তু শীতে এই চিত্রটা একদমই উল্টো। তাই যখন শীতে রোজ হয় তখন তাদের জন্যে সেটি খুবই সহজ হয়ে যায়। ইমাম মোহাম্মদ বলেন, নরওয়েতে গ্রীষ্ম ও শীতে দিন-রাতের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য। ডিসেম্বরের শীতে সোয়া তিনটার মধ্যেই সূর্য ডোবে। যে কারণে শীতে রোজা রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সবাই।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




যেখানে ২৪ ঘণ্টাই দিন, কিভাবে রোজা রাখেন তারা?

আপডেট সময় : ০১:২৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক;

স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে দিন বড়, রাত খুবই ছোট। আবার কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে। পৃথিবীর এসব অঞ্চলে বসবাসরত মুসলিমরা রোজা কিভাবে পালন করেন, এ প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে।

নরওয়ে, আইসল্যান্ডের মুসলমানরা রোজা রাখা নিয়ে খুব সমস্যার মুখোমুখী। এই অঞ্চলটিতে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে বছরের এই সময়টাতে সূর্যই অস্ত যায় না। আর্কটিক সাগরে নরওয়ের এসভালবার্ড দ্বীপমালা তেমনি একটি অঞ্চল। এপ্রিল থেকে আগস্ট- বছরের এই সময়টাতে ২৪ ঘণ্টাই দিন থাকে সেখানে। এছাড়া নরওয়ের মূল ভূখণ্ডের ট্রোমসো শহরের অবস্থাও একই।

এই রকম অঞ্চল যেখানে রাতই হয় না, তারা কিভাবে রোজা রাখবেন। কিভাবে সেহেরী ও ইফতার করবেন বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে তাদের জন্য তিনটি অপশন রয়েছে বলে জানিয়েছেন নরওয়ের রাজধানী অসলোর একটি মসজিদের ইমাম ও মুসলিম স্কলার অসিম মোহাম্মাদ।
এদিকে চলতি রমজানের মধ্যেই নতুন একটি চাকরিতে যোগদান করবেন ৩৪ বছর বয়সী নওমুসলিম নারী সোফি ক্লাউজার দার। ডেনমার্কের এই বাসিন্দা চিন্তায় আছেন কিভাবে নতুন চাকরিতে গিয়ে ১৭ ঘণ্টা রোজা পালন করবেন। স্ক্যান্ডেনেভিয়া অঞ্চলের দেশটিতে এখন ১৭ ঘণ্টা লম্বা দিন হয়। এত দীর্ঘ সময় রোজা রাখতে হয় ডেনিশ মুসলমানদের।

একটি বেবি কেয়ার সেন্টারে চাকরি শুরু করবেন সোফি। নওমুসলিম এই নারীকে সেখানে বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ করতে হবে। দেশটিতে রাত এতই ছোট এখন যে রাতের কাজগুলো ঠিক মতো করাও কষ্টকর।

সোফি বলেন, রাতের খাবার ও সেহেরী খাওয়া, মাগরিব, এশা ও তারাবির নামাজ- এতসব কাজের জন্য রাত খুবই ছোট। সময় দ্রুতই শেষ হয়ে যায় এখানে। রাতে ঘুমানোর সময়ই পাওয়া যায় না।

গরমে দীর্ঘক্ষণ রোজ রাখতে গিয়ে অনেকেই পানিশূন্যতা, ক্লান্তিসহ অনেকভাবে অসুস্থ বোধ করতে পারেন। এই পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সোফি দার বলেন, রাত এত ছোট যে পরের দিন রোজা রেখে সুস্থ্য থাকার মতো পর্যাপ্ত পানি ও খাবার গ্রহণ করা হয় না। যে কারণে রোজা রাখা সত্যিই কঠিন। রাত ছোট হওয়ার কারণে ঘুম হয় না বললেই চলে সেটিও রোজাদারদের জন্য কষ্টকর। ধরুন আমার বাচ্চাকে সকাল আটটায় স্কুলে দিয়ে আসতে হয় কাজেই বিষয়টি কঠিন। তবে কয়েকদিন গেলে তখন রোজার একই কষ্টে অভ্যস্ত হয়ে যান বলে জানান এই মুসলিম নারী। তখন আর কষ্ট অনুভব হয়না।

ইমাম ও মুসলিম স্কলার অসিম মোহাম্মাদ বলেন, যে অঞ্চলে সূর্য ডোবেই না, তারা হয়তো নিকটস্থ শহরের সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখে রোজা রাখা ও ইফতার করতে পারেন। কিংবা মুসলিমদের কেবলার নগরী মক্কার সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অথবা তাদের এলাকায় কিছুদিন আগে যখন সূর্যাস্ত হত সেই সময় হিসাব করে করতে পারেন।

এই ইমাম জানান, তার আশাপাশের অনেকেই রমজান মাসে চাকরি থেকে ছুটি নেয়ার চিন্তা করছেন। কারণ ১৭ ঘণ্টার বেশি রোজা রেখে চাকরি করা কঠিন। তিনি বলেন, অবশ্য চাকরিতে কাজের ধরনের ওপর এটি অনেকটা নির্ভরশীল। যারা অফিসের অভ্যন্তরে ডেক্স জব করে, এয়ার কন্ডিশনারের ভেতর তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। তবে যারা এই গরম আবহাওয়ায় বাইরে কাজ করেন তাদের জন্য কঠিন।

নরওয়েতে গ্রীষ্ম কিংবা বসন্তের দিকে দিন বড় হয়; কিন্তু শীতে এই চিত্রটা একদমই উল্টো। তাই যখন শীতে রোজ হয় তখন তাদের জন্যে সেটি খুবই সহজ হয়ে যায়। ইমাম মোহাম্মদ বলেন, নরওয়েতে গ্রীষ্ম ও শীতে দিন-রাতের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য। ডিসেম্বরের শীতে সোয়া তিনটার মধ্যেই সূর্য ডোবে। যে কারণে শীতে রোজা রাখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সবাই।