টাঙ্গাইলে এক গৃহবধূকে রাতভর একাধিক স্থানে নিয়ে গণধর্ষণ

- আপডেট সময় : ১০:১৪:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ১৫২ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ;
টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসটার্মিনাল সংলগ্ন লেকপাড়ে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। বখাটেরা ওই নারীকে শহরের একাধিক স্থানে নিয়ে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ আজ শনিবার ভোরে পৌর এলাকার চরজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে দুই বখাটেকে আটক ও ওই নারীকে উদ্ধার করে।
সকালে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। ওই নারীকে উদ্ধারের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আরো চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন শনিবার সন্ধ্যায় ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, ওই নারী মির্জাপুরের গোড়াইয়ে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তার স্বামী ওই এলাকায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। তাদের গত ১০মাস আগে বিয়ে হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ওই নারী তার স্বামীকে নিয়ে কালিহাতীর পিত্রালয় থেকে মির্জাপুর কর্মস্থলে ফিরছিলেন। কালিহাতী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে তারা রাত ১০টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাস টার্মিনালে এসে নামেন। এ সময় তিন বখাটে ওই নারীর স্বামীকে ডেকে দূরে নিয়ে বেদম মারপিট করে আটকে রাখে। অন্যদিকে দলের কয়েকজন ওই নারীকে জোরপুর্বক লেকের পাড়ে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর চলে হাত বদল ও স্থান পরিবর্তন।
তারা ওই নারীকে অপর বখাটেদের হাতে তুলে দেয়। তারা তাকে কোদালিয়া এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই নারীর স্বামী রাত ১২টার দিকে বখাটেদের কবল থেকে কৌশলে পালিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় গিয়ে ওসির কাছে ঘটনা খুলে বলেন। পরে পুলিশের চারটি দল বিভক্ত হয়ে শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে নারীটিকে উদ্ধারসহ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, শহরের কোদালিয়ার আলমগীর হোসেনের ছেলে ইউসুফ, আব্দুর রশিদের ছেলে রবিউল ইসলাম রবিন, ফজলু মিয়ার ছেলে মফিজ, রকিবুল ইসলামের ছেলে তানজিরুল ইসলাম তাছিন, দেওলার আবুল হোসেনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ও বিশ্বাস বেতকার বাদশা মিয়ার ছেলে ইমন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমরা অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। ইউসুফ, রবিন ও মফিজ ধষর্ণের কথা স্বীকার করেছে। উজ্জল ও হাসান নামে তাদের দুইজন সহযোগীকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ভিকটিমকে পরীক্ষার জন্য গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. জাকিয়া সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গণধর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।’
এদিকে দুপুরে ধর্ষিত ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত ছয়জন ও পলাতক উজ্জল ও হাসানসহ মোট আটজনকে আসামি করে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইলেল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে তাদের মধ্য থেকে তিনজন সন্ধ্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা হচ্ছে ইউসুফ, রবিউল ইসলাম রবিন ও জাহিদুল ইসলাম। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন কুমার সরকার। ছয় আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ধর্ষিত নারী ২২ ধারায় ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে আদালতে একই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।’