স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগী ‘যশোর বিআরটিএ অফিসের তারিক ধরাছোঁয়ার বাইরে|(পর্ব – ০১)

- আপডেট সময় : ০৬:৪৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৬৪২ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"square_fit":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. তারিক হাসান এখন শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা নন, বরং দুর্নীতি, ঘুষ, নারী কেলেঙ্কারি ও মাদকের অন্ধকার জগতের সঙ্গে জড়িত এক বিতর্কিত চরিত্র। সাবেক ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় আর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া তাকে দিয়েছে অজস্র সুরক্ষা। ফলে শাস্তি তো দূরের কথা, বছরের পর বছর শুধু বদলির মাধ্যমে অভিযোগ আড়াল হয়েছে, অপরাধের ধরন বদলায়নি—শুধু ভৌগলিক অবস্থান বদলেছে।
ঝিনাইদহ থেকে যশোর_ অপরাধের ধারাবাহিকতা:
ঝিনাইদহে কর্মরত থাকার সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ফিঙ্গারপ্রিন্টে সমস্যা সৃষ্টি, জাতীয় পরিচয়পত্রে জটিলতা দেখানো, পুরনো এমআরপি নবায়নের নামে টাকা হাতানো—এসব ছিল তার দৈনন্দিন চাঁদাবাজির কৌশল। এসব কাজে তার ছত্রছায়ায় নিয়োগ পায় অর্ধশতাধিক দালাল, যারা প্রকাশ্যেই অফিসকক্ষে বসে টাকা লুটত।
নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাও একাধিকবার ধরা পড়ে, কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং দালালদের হাত ধরে মাদকের যোগান পৌঁছত তার অফিস কক্ষেই। ধীরে ধীরে ঝিনাইদহ অফিস পরিণত হয় তার ব্যক্তিগত অপরাধকেন্দ্রে।
যশোর অফিসে নতুন সিন্ডিকেট:
যশোরে বদলি হয়ে আসার পরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং নতুন দালাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্মার্ট কার্ড, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিট কিংবা শ্রেণি পরিবর্তন—প্রতিটি ধাপেই বাধ্যতামূলক ঘুষ দিতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছে, বিআরটিএ এখন দুর্নীতির বাজারে পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা না দিলে কাগজপত্র অকারণে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পর্যন্ত করা হয়।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা:
ঝিনাইদহে কর্মরত অবস্থায় এক লিটন নামের ব্যক্তি গাড়ির কাগজ সংশোধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা নেওয়ার পরও কাজ সম্পন্ন করেননি তারিক হাসান। উল্টো আরও অর্থ হাতানোর চেষ্টা করেন। লিটন চাপ দিলে তারিক ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠি হাতে গালাগালি শুরু করেন। পরে এলাকাবাসী জড়ো হলে জনরোষের মুখে পড়ে সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে অফিস ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
আওয়ামী রাজনৈতিক ছত্রছায়া:
তারেকের সবচেয়ে বড় শক্তি তার দালাল পিএস শাহীন, যিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহানের শালা। এই রাজনৈতিক সেতুবন্ধনই তাকে সব ক্ষমতার উর্ধ্বে ভেবে চলতে শিখিয়েছে। স্থানীয় সাংসদ ও প্রভাবশালী মহলের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে তিনি দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। অনেকের ভাষায়, তিনি আর শুধু কর্মকর্তা নন—অঞ্চলের দুর্নীতির এক গডফাদার।
অস্বাভাবিক সম্পদ ও ড্রাগনের প্রজেক্ট:
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তার বাড়ির পাশে বিশাল পুকুর, প্রকল্প ও অন্যান্য সম্পদ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, “ড্রাগনের প্রজেক্ট” নামে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে তার গোপন বিনিয়োগ আছে, যা সরকারি বেতনের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রশাসনের উদাসীনতা:
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ওঠার পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? কেন তাকে শাস্তি না দিয়ে বদলি করা হয়েছে? রাজনৈতিক প্রভাব আর প্রশাসনিক উদাসীনতার সুযোগে তার মতো কর্মকর্তারা জনগণের টাকা লুটে সাম্রাজ্য বিস্তার করছে।
বর্তমানে যশোর বিআরটিএ অফিস যেন ঘুষ আর দুর্নীতির আতঙ্কের নাম। প্রতিদিন হাজারো মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ এ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাই হয়ে উঠেছেন দুর্নীতির মূল হোতা।