ফায়ার সার্ভিসে চাকুরী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৪:৫৬:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫ ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ড্রাইভার ও ফায়ার ফাইটার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা (স্মারক নং: ৫৮.০৩.০০০০.০০.২.১১.০০৭.২৩.-৩৮৫৭ [২০২৫], তারিখ: ২৫ আগস্ট ২০২৫) ঘিরে প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন— ফোনে টাকা নিয়ে বাছাই, ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করানো, আর পছন্দসই প্রার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মাঠ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রার্থী নির্বাচনের খবর ইতিমধ্যেই স্যোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই কিছু প্রার্থীকে আগেই বাছাই করা হয়। শারীরিক যাচাইয়ে তাদের আলাদা চিহ্ন দেওয়া হয় যাতে সহজে উত্তীর্ণ করা যায়। গাড়ি চালনার পরীক্ষায়ও অনিয়ম ঘটে। যাদের ফেল করানোর সিদ্ধান্ত ছিল তাদের দেওয়া হয় পুরনো ও ভাঙা গাড়ি, আর যাদের পাস করাতে হবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন ও ভালো গাড়ি। ড্রাইভার নিয়োগের পাশাপাশি ফায়ারম্যান নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘটেছে এমনটি।
সূত্র জানায়, বর্তমান মহাপরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার চারপাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের বিশ্বস্ত লোকজনের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই তিনি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যে কারণে বিগত এক বছরে অসংখ্য সংবাদমাধ্যমে দুর্নীতি অনিয়মের সংবাদ প্রসারিত হলেও মহাপরিচালক কোন পদক্ষেপ নেননি। বড় তিনি সংবাদমাধ্যমকে এগিয়ে নিজের ফয়দা হাসিল করে চলেছেন।
প্রার্থীরা জানান, নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব আগে থেকেই প্রার্থীদের তালিকা চিহ্নিত করে রেখেছিলেন। সেই তথ্য ব্যবহার করে ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর মো. মহিউদ্দিন বিভিন্ন প্রার্থীকে ফোন করে টাকা আদায় করেন। পরীক্ষার সময় রোল নাম্বার দেখে প্রার্থীদের আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়। এভাবে আর্থিক লেনদেন ও বিশেষ চিহ্নের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যা সংবাদ মাধ্যম ও স্যোসাল মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলেও ফায়ার সার্ভিসের মহা পরিচালক নীরব দর্শক হিসেবে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ লজ্জাহীন কাণ্ড হিসেবে অনেকের কাছেই স্পষ্ট।
এ অভিযোগকে ঘিরে আরও জানা যায়, এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক পদে একাধিকবার পরিবর্তন আনা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া যুগ্ম সচিব শহীদ ছাইদুল হক (আইডি-১৫২২৮) কে নিয়োগ কমিটিতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ আদেশে একজনকে নিয়োগ কমিটির সভাপতি করা হয়, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
প্রার্থীরা দাবি করেছেন, এই অনিয়মের ফলে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীরা ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা পরীক্ষাটি বাতিল করে নতুনভাবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসংখ্য প্রার্থীদের মন্তব্য মতে, এমন কর্মকাণ্ড শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। তাদের অনুরোধ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সঠিক তদন্ত ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।