ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo গোপালগঞ্জে ‘নৌকার দুর্গ’ ভাঙার চ্যালেঞ্জে বিএনপি Logo ফরিদপুরে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ Logo ডিপিডিসির রুহুল আমিন ফকির দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন শতকোটি টাকার সম্পদ Logo উত্তরখানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা Logo খুলনা-৬ আসনে বিএনপির সাক্ষাতের ডাক পেলেন সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী Logo গুলশানে ‘Bliss Art Lounge’-এ অভিযান: প্রচুর বিদেশি মদসহ ৯ জন গ্রেফতার Logo টঙ্গীতে ১১ বছরের ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ নিখোঁজ Logo “স্টার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫” পেলেন দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ Logo খুলনায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ, এলাকায় চাপা উত্তেজনা Logo স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগী ‘যশোর বিআরটিএ অফিসের তারিক ধরাছোঁয়ার বাইরে|(পর্ব – ০১)

আওয়ামী সুবিধাবাদী নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম গণপূর্তে বহাল তবিয়তে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৫:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ই/এম, বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বিগত আট বছর একই পদে বহাল থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে এক জায়গায় তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালনের বিধি আরোপ থাকলেও সেটি মানছে না আশরাফুল।তবে তাঁর এ দীর্ঘ মেয়াদি অবস্থান শুধু নীতিমালা লঙ্ঘন-ই নয়, বরং প্রতিষ্ঠিত প্রভাব ও দুর্নীতির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অবস্থানের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

২০২১ সালের ৫ আগস্ট গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিন বছরের বেশি সময় ধরে যেসব নির্বাহী প্রকৌশলী একই পদে বহাল রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে বদলি করতে হবে। উদ্দেশ্য ছিল অপারদর্শিতা, দুর্নীতি, ও স্বজনপ্রীতির চক্র ভেঙে শৃংখলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন, এ নীতির প্রয়োগ হয় অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্টভাবে। আশরাফুল ইসলাম তার পদে আছেন আট বছর ধরে, যা নিজেই হয়ে উঠেছে একটি উদাহরণ, নাকি ব্যতিক্রম, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আলোচিত দুর্নীতির মামলায় তার নাম থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখানেই ঘটনার ধুম্রজাল, একজন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কীভাবে এতবছর ধরে ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহাল থাকতে পারেন?

বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতির মামলা থাকা অবস্থায় কোনো কর্মকর্তার পদে বহাল থাকা সরকারি প্রশাসনিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে আশরাফুল ইসলাম একই পদে থাকেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিয়ে গোটা অধিদপ্তর জুড়ে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছেন।

এদিকে বহিরাগত চেহারায় ”ক্লিন ইমেজ’ বজায় রাখা হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, দরপত্র ছাড়াই কাজ শুরু করা, কাজ শেষ হওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করা, এসবই আশরাফুল ইসলামের ডিভিশনে অঘোষিত নীতি হিসেবে বিবেচিত।

প্রক্কলন না করেই কাজ শুরু করে পরে প্রক্কলন এবং টেন্ডার লাইভে দেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন অধিদপ্তরের একাধিক ঠিকাদার ও আভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশরাফুল এর দপ্তরে কর্মরত একজন জুনিয়র কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি না করলে এ দপ্তরে টিকে থাকা মুশকিল। তবে আশরাফ ভাই এ বিষয় অনেক পারদর্শী। তিনি জানেন কাকে কখন কোথায় ব্যবহার করতে হবে। গণপূর্তে ম্যানেজমেন্টের মাস্টার হিসেবে পরিচিত।

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে,উত্তরবঙ্গীয় কোটা ও নিজস্ব প্রভাবের জোরে তিনি বিশেষ সুবিধাভোগী বলে অনেকে দাবি তুলছেন। একাধিকবার অভিযোগ উঠলেও প্রধান প্রকৌশলী তা আমলে নেয়নি। বিশেষ করে সোহবানবাগ মসজিদ প্রকল্পে অনিয়মে সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করা হলেও, অদৃশ্য কারণে আশরাফ রয়েছেন বহাল তবিয়তে।টানা ৮ বছর গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা আশরাফের মাঝে ‘সরকারই আমি’এই মনোভাব গড়ে উঠেছে বলে দাবি অনেকের। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তার ওই জোনের সিনিয়র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। ফলে অধিদপ্তরে এক অদৃশ্য শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বলয় রয়েছেন তিনি।

আর মাত্র চার বছর পর এক যুগ পূর্ণ করবেন আশরাফ একই পদে থেকে। তখন কি বদলি হবেন? না কি নতুন কোনো রেকর্ড গড়ার পথে হাঁটবেন?

নিয়মের বাইরে অবস্থান, দুর্নীতির অভিযোগে পদোন্নতি বন্ধ থাকা, অথচ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল থাকা এসব কিছুই প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও নিকৃষ্ট অবকাঠামোর প্রমাণ।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে ‘মিস্টার ম্যানেজার’দের ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন ৫ আগস্টের মত উচ্চাশী ঘোষণাগুলো কেবল ফাইলের পৃষ্ঠায় জমে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার মানবিকার কর্মী আব্দুর রাজ্জাক রাজ।

এসব বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :
error: Content is protected !!

আওয়ামী সুবিধাবাদী নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম গণপূর্তে বহাল তবিয়তে

আপডেট সময় : ১২:২৫:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ই/এম, বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বিগত আট বছর একই পদে বহাল থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে এক জায়গায় তিন বছরের বেশি দায়িত্ব পালনের বিধি আরোপ থাকলেও সেটি মানছে না আশরাফুল।তবে তাঁর এ দীর্ঘ মেয়াদি অবস্থান শুধু নীতিমালা লঙ্ঘন-ই নয়, বরং প্রতিষ্ঠিত প্রভাব ও দুর্নীতির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অবস্থানের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

২০২১ সালের ৫ আগস্ট গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিন বছরের বেশি সময় ধরে যেসব নির্বাহী প্রকৌশলী একই পদে বহাল রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে বদলি করতে হবে। উদ্দেশ্য ছিল অপারদর্শিতা, দুর্নীতি, ও স্বজনপ্রীতির চক্র ভেঙে শৃংখলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন, এ নীতির প্রয়োগ হয় অনেক ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্টভাবে। আশরাফুল ইসলাম তার পদে আছেন আট বছর ধরে, যা নিজেই হয়ে উঠেছে একটি উদাহরণ, নাকি ব্যতিক্রম, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে আলোচিত দুর্নীতির মামলায় তার নাম থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখানেই ঘটনার ধুম্রজাল, একজন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা কীভাবে এতবছর ধরে ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বহাল থাকতে পারেন?

বিশ্লেষকদের মতে, দুর্নীতির মামলা থাকা অবস্থায় কোনো কর্মকর্তার পদে বহাল থাকা সরকারি প্রশাসনিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তবে আশরাফুল ইসলাম একই পদে থাকেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিয়ে গোটা অধিদপ্তর জুড়ে প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছেন।

এদিকে বহিরাগত চেহারায় ”ক্লিন ইমেজ’ বজায় রাখা হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, দরপত্র ছাড়াই কাজ শুরু করা, কাজ শেষ হওয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করা, এসবই আশরাফুল ইসলামের ডিভিশনে অঘোষিত নীতি হিসেবে বিবেচিত।

প্রক্কলন না করেই কাজ শুরু করে পরে প্রক্কলন এবং টেন্ডার লাইভে দেন। এমন অভিযোগ তুলেছেন অধিদপ্তরের একাধিক ঠিকাদার ও আভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশরাফুল এর দপ্তরে কর্মরত একজন জুনিয়র কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি না করলে এ দপ্তরে টিকে থাকা মুশকিল। তবে আশরাফ ভাই এ বিষয় অনেক পারদর্শী। তিনি জানেন কাকে কখন কোথায় ব্যবহার করতে হবে। গণপূর্তে ম্যানেজমেন্টের মাস্টার হিসেবে পরিচিত।

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে,উত্তরবঙ্গীয় কোটা ও নিজস্ব প্রভাবের জোরে তিনি বিশেষ সুবিধাভোগী বলে অনেকে দাবি তুলছেন। একাধিকবার অভিযোগ উঠলেও প্রধান প্রকৌশলী তা আমলে নেয়নি। বিশেষ করে সোহবানবাগ মসজিদ প্রকল্পে অনিয়মে সিভিল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করা হলেও, অদৃশ্য কারণে আশরাফ রয়েছেন বহাল তবিয়তে।টানা ৮ বছর গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা আশরাফের মাঝে ‘সরকারই আমি’এই মনোভাব গড়ে উঠেছে বলে দাবি অনেকের। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তার ওই জোনের সিনিয়র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। ফলে অধিদপ্তরে এক অদৃশ্য শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বলয় রয়েছেন তিনি।

আর মাত্র চার বছর পর এক যুগ পূর্ণ করবেন আশরাফ একই পদে থেকে। তখন কি বদলি হবেন? না কি নতুন কোনো রেকর্ড গড়ার পথে হাঁটবেন?

নিয়মের বাইরে অবস্থান, দুর্নীতির অভিযোগে পদোন্নতি বন্ধ থাকা, অথচ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বহাল থাকা এসব কিছুই প্রশাসনিক ব্যবস্থার দুর্বলতা ও নিকৃষ্ট অবকাঠামোর প্রমাণ।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতরে ‘মিস্টার ম্যানেজার’দের ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন ৫ আগস্টের মত উচ্চাশী ঘোষণাগুলো কেবল ফাইলের পৃষ্ঠায় জমে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার মানবিকার কর্মী আব্দুর রাজ্জাক রাজ।

এসব বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।