ঢাকা ০৬:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ




চাঁদাবাজি ও ফিটিংবাজি যাদের হাতের খেল

উত্তরা জুড়ে ভুয়া পত্রিকার প্রতারণা ফাঁদ!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪ ২৬৯ বার পড়া হয়েছে

* টঙ্গী থেকেই বের হচ্ছে ৫টি ভূয়া প্রিন্ট পত্রিকা

* বহু মামলার আসামি, চিহ্নিত প্রতারক, চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তরাই সম্পাদক-প্রকাশক

* জাল রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারেই অনলাইন, ইপেপার ও প্রিন্ট পত্রিকা প্রকাশ

* জেলা-উপজেলায় চাহিদা মাফিক টাকার বিনিময়ে রিপোর্টার আইডি প্রদান

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনুমোদনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টালের মতো ডিক্লিয়ারেশনবিহীন পত্রিকাতেও বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। সরকারি নিয়মনীতির ধার ধারছে না প্রতারকরা, ইচ্ছে হলেই যে কোনো নামে পত্রিকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ছে, চালিয়ে যাচ্ছে বেশুমার চাঁদাবাজি। দেশজুড়ে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণা, নামে-বেনামে পত্রিকার ডিক্লারেশন নিয়ে রাতারাতি সম্পাদক বনে যাচ্ছেন একশ্রেনীর মানুষ। নতুন নতুন সাংবাদিক তৈরী করে কার্ড বানিজ্যের প্রতারনায় মশগুল তারা। সম্পাদক পরিচয়ে নানামুখী প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন নিজেরাই।

ইদানিং টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিউজ জিরো টেন নামের একটি ডিক্লিয়ারেশনবিহীন পত্রিকা। কোনো অনলাইন, ইপেপার নয়- রীতিমত প্রিন্ট আকারে সে পত্রিকা ছাপানো হচ্ছে। সরকারের কোনো সংস্থা থেকে অনুমোদন না নিয়েই তথাকথিত পত্রিকাটি প্রকাশ হচ্ছে এবং তা বাজারেও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পত্রিকাটির নামে শত শত প্রেসকার্ডও বিক্রি হচ্ছে দেশজুড়ে। মাদক ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে পেশাদার সব অপরাধীদের গলায় পিঠে এ পত্রিকার সাংবাদিক কার্ড ঝুলতে দেখা যাচ্ছে।

বহুল বিতর্কিত নারী হাফসা আক্তার নিজেকে এ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দাবি করছেন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে রয়েছে কুখ্যাত সোর্স মো. মোজাহিদুল ইসলাম নামের একজন। নির্বাহী সম্পাদক লেখা রয়েছে এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম। অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বিএনএস সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা। তবে বিএনএস সেন্টারে খোঁজাখুঁজি করেও নিউজ জিরো টেন নামের কোনো পত্রিকা অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ তারা দেদারছে সাংবাদিক নিয়োগের বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে শত শত আইডি কার্ড বিক্রির ধুম বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

টঙ্গী এলাকা থেকেই দৈনিক মুক্ত আলো অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ভুয়া পত্রিকা দীর্ঘদিন যাবৎ মনগড়া (৬৪২৬) রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে কার্ড বানিজ্যের প্রতারণা চালাচ্ছে আরেকটি চক্র। সরকারি মিডিয়াভুক্ত জাতীয় দৈনিক মুক্ত আলো পত্রিকা দৈনিক ছাপাখানায় প্রকাশিত হয় মর্মে “কথিত সম্পাদক” ফেসবুক পেইজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দিয়েছেন। বাস্তবে যার না আছে অফিস, না আছে কোন ঠিকানা। এমনকি সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে আকরাম খান নাম ব্যবহার করা হলেও তার প্রকৃত নাম শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও সে এবং তার সহযোগী মুক্ত আলো পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শামীম আহমেদ “বন্ধু ওয়েব সাইড” নামে ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বানানোর কথা বলে বিভিন্ন জন থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী শামীম আহমেদ টঙ্গী আউচপাড়ার মোল্লাবাড়ী এলাকায় দীর্ঘদিন ডিস লাইনের কাজ করতো। উল্লেখ করার মতো তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। কিন্তু ভুয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলেই তারা সম্পাদক- প্রকাশক বনে গেছে। এছাড়াও শফিকুলের বিরুদ্ধে টঙ্গীতে নানারকম প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ করার বেশুমার অভিযোগে রাতারাতি পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পরে গাজীপুরের শালনায় আস্তানা গড়ে তুললেও সেখানেও প্রতারণা মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজ জেলা শেরপুর পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। সেখানে বসেও তিনি দৈনিক মুক্ত আলো নামে “ভুয়া” পত্রিকার নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

একই চক্র তাদের চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজিসহ নানা অপকর্ম সাধনকল্পে অন্তত চারটি দৈনিক পত্রিকা মাঝে মধ্যেই বের করে থাকে। পত্রিকাগুলো হচ্ছে, দৈনিক মুক্ত আলো, দৈনিক বাংলার সময়, দৈনিক আমার বাংলাদেশ, দৈনিক আমাদের বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেদিন যে নামের পত্রিকাই তারা ছাপান না কেন, রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভূয়া ডিএ নাম্বার-৬৪২৬।

Loading

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




চাঁদাবাজি ও ফিটিংবাজি যাদের হাতের খেল

উত্তরা জুড়ে ভুয়া পত্রিকার প্রতারণা ফাঁদ!

আপডেট সময় : ০১:০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪

* টঙ্গী থেকেই বের হচ্ছে ৫টি ভূয়া প্রিন্ট পত্রিকা

* বহু মামলার আসামি, চিহ্নিত প্রতারক, চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তরাই সম্পাদক-প্রকাশক

* জাল রেজিষ্ট্রেশন নাম্বারেই অনলাইন, ইপেপার ও প্রিন্ট পত্রিকা প্রকাশ

* জেলা-উপজেলায় চাহিদা মাফিক টাকার বিনিময়ে রিপোর্টার আইডি প্রদান

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনুমোদনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টালের মতো ডিক্লিয়ারেশনবিহীন পত্রিকাতেও বাজার সয়লাব হয়ে পড়েছে। সরকারি নিয়মনীতির ধার ধারছে না প্রতারকরা, ইচ্ছে হলেই যে কোনো নামে পত্রিকা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ছে, চালিয়ে যাচ্ছে বেশুমার চাঁদাবাজি। দেশজুড়ে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করে চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারণা, নামে-বেনামে পত্রিকার ডিক্লারেশন নিয়ে রাতারাতি সম্পাদক বনে যাচ্ছেন একশ্রেনীর মানুষ। নতুন নতুন সাংবাদিক তৈরী করে কার্ড বানিজ্যের প্রতারনায় মশগুল তারা। সম্পাদক পরিচয়ে নানামুখী প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন নিজেরাই।

ইদানিং টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিউজ জিরো টেন নামের একটি ডিক্লিয়ারেশনবিহীন পত্রিকা। কোনো অনলাইন, ইপেপার নয়- রীতিমত প্রিন্ট আকারে সে পত্রিকা ছাপানো হচ্ছে। সরকারের কোনো সংস্থা থেকে অনুমোদন না নিয়েই তথাকথিত পত্রিকাটি প্রকাশ হচ্ছে এবং তা বাজারেও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পত্রিকাটির নামে শত শত প্রেসকার্ডও বিক্রি হচ্ছে দেশজুড়ে। মাদক ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে পেশাদার সব অপরাধীদের গলায় পিঠে এ পত্রিকার সাংবাদিক কার্ড ঝুলতে দেখা যাচ্ছে।

বহুল বিতর্কিত নারী হাফসা আক্তার নিজেকে এ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দাবি করছেন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে রয়েছে কুখ্যাত সোর্স মো. মোজাহিদুল ইসলাম নামের একজন। নির্বাহী সম্পাদক লেখা রয়েছে এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম। অফিসের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বিএনএস সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা। তবে বিএনএস সেন্টারে খোঁজাখুঁজি করেও নিউজ জিরো টেন নামের কোনো পত্রিকা অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ তারা দেদারছে সাংবাদিক নিয়োগের বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে শত শত আইডি কার্ড বিক্রির ধুম বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

টঙ্গী এলাকা থেকেই দৈনিক মুক্ত আলো অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ভুয়া পত্রিকা দীর্ঘদিন যাবৎ মনগড়া (৬৪২৬) রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে কার্ড বানিজ্যের প্রতারণা চালাচ্ছে আরেকটি চক্র। সরকারি মিডিয়াভুক্ত জাতীয় দৈনিক মুক্ত আলো পত্রিকা দৈনিক ছাপাখানায় প্রকাশিত হয় মর্মে “কথিত সম্পাদক” ফেসবুক পেইজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দিয়েছেন। বাস্তবে যার না আছে অফিস, না আছে কোন ঠিকানা। এমনকি সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে আকরাম খান নাম ব্যবহার করা হলেও তার প্রকৃত নাম শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও সে এবং তার সহযোগী মুক্ত আলো পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শামীম আহমেদ “বন্ধু ওয়েব সাইড” নামে ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বানানোর কথা বলে বিভিন্ন জন থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগী শামীম আহমেদ টঙ্গী আউচপাড়ার মোল্লাবাড়ী এলাকায় দীর্ঘদিন ডিস লাইনের কাজ করতো। উল্লেখ করার মতো তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও নেই। কিন্তু ভুয়া অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলেই তারা সম্পাদক- প্রকাশক বনে গেছে। এছাড়াও শফিকুলের বিরুদ্ধে টঙ্গীতে নানারকম প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ করার বেশুমার অভিযোগে রাতারাতি পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পরে গাজীপুরের শালনায় আস্তানা গড়ে তুললেও সেখানেও প্রতারণা মাধ্যমে বিভিন্ন লোকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজ জেলা শেরপুর পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। সেখানে বসেও তিনি দৈনিক মুক্ত আলো নামে “ভুয়া” পত্রিকার নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

একই চক্র তাদের চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজিসহ নানা অপকর্ম সাধনকল্পে অন্তত চারটি দৈনিক পত্রিকা মাঝে মধ্যেই বের করে থাকে। পত্রিকাগুলো হচ্ছে, দৈনিক মুক্ত আলো, দৈনিক বাংলার সময়, দৈনিক আমার বাংলাদেশ, দৈনিক আমাদের বাংলাদেশ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেদিন যে নামের পত্রিকাই তারা ছাপান না কেন, রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভূয়া ডিএ নাম্বার-৬৪২৬।

Loading