ঢাকা ০৯:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




কাস্টমস কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদ

কোন যাদুর কাঠিতে কাস্টমস কর্মকর্তা রাসেল কবিরের এত সম্পদ!

নিজস্ব প্রতিবেদক;
  • আপডেট সময় : ১১:১৯:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩ ৯০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদের পরিমাণ কতটুকু হতে পারে? যদি তার বেতন হয় ৩০-৩৫ হাজার অংকের ঘরে। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমসে কর্মরত রাজশ্ব কর্মকর্তা রাসেল কবিরের সম্পদের পরিমাণ যেন সীমারেখার বাইরে। তার সম্পদের বিবরণী শুনলে যে কেউ মনে করতে পারেন এরাবিয়ান ড্রামা সিরিজ আলিফ লায়লার আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ যেনো তার কব্জায়।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের বেনাপোল কাস্টমসের কর্মকর্তা রাসেল কবিরের অস্বাভাবিক অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। ঘুষ-অনীয়মসহ নানাভাবে দুর্নীতির মাধ্যমেই তিনি এসব অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার সম্পদের অনুসন্ধানে অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।

রাসেল কবির বেনাপোল কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে কর্মরত রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা ও বেনাপোলে কাস্টমস কর্মকর্তা রাসেল কবিরের ৫টি বাড়িসহ নামে বেনামে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়াও কাস্টমস’র এই কর্মকর্তার রয়েছে মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় কেডিএ’র ৪ কাঠার একটি প্লট । উক্ত প্লটে চলছে ৬তলা ভবন নির্মানের চোখ ধাঁধানো নির্মাণকাজ । কেডিএ’র এই ৪ কাঠার প্লটের আনুমানিক বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা। এছাড়া প্রস্তাবিত ৬ তলার নির্মাণ খরচ হবে আনুমানিক ৩ কোটি টাকা।

সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাসেল কবিরের পরিবার বর্তমানে বসবাস করছেন মুজগুন্নী শেখপাড়ায় মেয়ে রাফিয়ার নামে একটি বাড়িতে। ঐ বাড়ির জমির পরিমান প্রায় আড়াই শতক, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া মুজগুন্নী শেখপাড়া মাদ্রাসার পেছনে রয়েছে ৫ শতক ও মাদ্রাসার সামনের গলিতে রয়েছে বাড়িসহ ৩ শতক জমি।
এছাড়া অবকাশ যাপনের জন্য কেডিএ’র ময়ূরী আবাসিক প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২২ শতক জমির উপর রয়েছে বাগান-বাড়ি। পরিবার ও ছেলে মেয়েদের নেভী স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য রয়েছে একটি প্রাইভেট সিএনজি থ্রী হুইলার। যার মুল্য প্রায় ৫লক্ষ টাকা। গাড়ীটি পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানায় সিএনজির বেতনভুক্ত ড্রাইভার মোঃ জাহাঙ্গীর।

তার স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতাদি বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ১০ম গ্রেডের স্কেলে ২০১৫ এর বেতনক্রম অনুযায়ী ১৬হাজার থেকে ৩৮ হাজার ৬৪০ টাকায় ও তৎসহ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য ভাতাদি পেয়ে থাকেন। এই স্কেলে তার সার্ভিসে যোগদান অনুযায়ী সর্বসাকুল্যে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো বেতন পান। আর এই বেতনে এই কর্মকর্তা তার কর্মস্থল বেনাপোলে আলাদাভাবে থাকেন। সপ্তাহের ছুটির দিন পরিবারের কাছে যান। সেক্ষেত্রে তার নিজের খরচ এবং স্ত্রী ও সন্তান থাকেন মুজগুন্নী শেখপাড়া বাসায় সেখানকার ব্যায়। সবমিলিয়ে তার নিজের খরচ, সন্তানদের পেছনে খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে বাকিটা সঞ্চয় করলেও চাকরি জীবনের আয় দিয়ে এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তার এলাকাবাসি।

এই কাস্টমস কর্মকর্তার পাহাড়সম সম্পদের বিষয়ে মুঠোফোনে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসকল তথ্য ভিত্তিহীন। আমার নিজস্ব একটি বাড়ী আছে এবং মুজগুন্নী আবাসিকে পরিবারের সকলের বিনিয়োগে জমি কিনে বাড়ি করছি। কিছু লোক সম্মানহানী করার জন্য এমন তথ্যপ্রচার করছে”। তবে ময়ূরী আবাসিক সংলগ্ন বাগানবাড়ির জমির বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে খুলনার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এ বিষয়ে তথ্য যাচাই করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 178 total views,  1 views today

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




কাস্টমস কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদ

কোন যাদুর কাঠিতে কাস্টমস কর্মকর্তা রাসেল কবিরের এত সম্পদ!

আপডেট সময় : ১১:১৯:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদের পরিমাণ কতটুকু হতে পারে? যদি তার বেতন হয় ৩০-৩৫ হাজার অংকের ঘরে। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমসে কর্মরত রাজশ্ব কর্মকর্তা রাসেল কবিরের সম্পদের পরিমাণ যেন সীমারেখার বাইরে। তার সম্পদের বিবরণী শুনলে যে কেউ মনে করতে পারেন এরাবিয়ান ড্রামা সিরিজ আলিফ লায়লার আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ যেনো তার কব্জায়।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনের বেনাপোল কাস্টমসের কর্মকর্তা রাসেল কবিরের অস্বাভাবিক অবৈধ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। ঘুষ-অনীয়মসহ নানাভাবে দুর্নীতির মাধ্যমেই তিনি এসব অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার সম্পদের অনুসন্ধানে অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।

রাসেল কবির বেনাপোল কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে কর্মরত রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনা ও বেনাপোলে কাস্টমস কর্মকর্তা রাসেল কবিরের ৫টি বাড়িসহ নামে বেনামে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়াও কাস্টমস’র এই কর্মকর্তার রয়েছে মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় কেডিএ’র ৪ কাঠার একটি প্লট । উক্ত প্লটে চলছে ৬তলা ভবন নির্মানের চোখ ধাঁধানো নির্মাণকাজ । কেডিএ’র এই ৪ কাঠার প্লটের আনুমানিক বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা। এছাড়া প্রস্তাবিত ৬ তলার নির্মাণ খরচ হবে আনুমানিক ৩ কোটি টাকা।

সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাসেল কবিরের পরিবার বর্তমানে বসবাস করছেন মুজগুন্নী শেখপাড়ায় মেয়ে রাফিয়ার নামে একটি বাড়িতে। ঐ বাড়ির জমির পরিমান প্রায় আড়াই শতক, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া মুজগুন্নী শেখপাড়া মাদ্রাসার পেছনে রয়েছে ৫ শতক ও মাদ্রাসার সামনের গলিতে রয়েছে বাড়িসহ ৩ শতক জমি।
এছাড়া অবকাশ যাপনের জন্য কেডিএ’র ময়ূরী আবাসিক প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২২ শতক জমির উপর রয়েছে বাগান-বাড়ি। পরিবার ও ছেলে মেয়েদের নেভী স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য রয়েছে একটি প্রাইভেট সিএনজি থ্রী হুইলার। যার মুল্য প্রায় ৫লক্ষ টাকা। গাড়ীটি পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানায় সিএনজির বেতনভুক্ত ড্রাইভার মোঃ জাহাঙ্গীর।

তার স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতাদি বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ১০ম গ্রেডের স্কেলে ২০১৫ এর বেতনক্রম অনুযায়ী ১৬হাজার থেকে ৩৮ হাজার ৬৪০ টাকায় ও তৎসহ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য ভাতাদি পেয়ে থাকেন। এই স্কেলে তার সার্ভিসে যোগদান অনুযায়ী সর্বসাকুল্যে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মতো বেতন পান। আর এই বেতনে এই কর্মকর্তা তার কর্মস্থল বেনাপোলে আলাদাভাবে থাকেন। সপ্তাহের ছুটির দিন পরিবারের কাছে যান। সেক্ষেত্রে তার নিজের খরচ এবং স্ত্রী ও সন্তান থাকেন মুজগুন্নী শেখপাড়া বাসায় সেখানকার ব্যায়। সবমিলিয়ে তার নিজের খরচ, সন্তানদের পেছনে খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে বাকিটা সঞ্চয় করলেও চাকরি জীবনের আয় দিয়ে এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তার এলাকাবাসি।

এই কাস্টমস কর্মকর্তার পাহাড়সম সম্পদের বিষয়ে মুঠোফোনে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসকল তথ্য ভিত্তিহীন। আমার নিজস্ব একটি বাড়ী আছে এবং মুজগুন্নী আবাসিকে পরিবারের সকলের বিনিয়োগে জমি কিনে বাড়ি করছি। কিছু লোক সম্মানহানী করার জন্য এমন তথ্যপ্রচার করছে”। তবে ময়ূরী আবাসিক সংলগ্ন বাগানবাড়ির জমির বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে খুলনার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এ বিষয়ে তথ্য যাচাই করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 179 total views,  2 views today