হেফাজতের বিরুদ্ধে মামলা ৪৫, আসামি ৩৫ হাজার!
- আপডেট সময় : ০৭:৫৮:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১ ১৬৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: মামলা ৪৫, আসামি ৩৫ হাজার, গ্রেফতার ৩৩! ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) সদর থানায় আরও ছয় মামলা হয়। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা ৪৫। অন্যদিকে এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। তবে গ্রেফতার করা হয়েছে মাত্র ৩৩ জনকে। এদের মধ্যে অবশ্য হেফাজতে ইসলামের কোনও নেতা কিংবা মাদ্রাসা ছাত্র নেই।
উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা আরমান আলিফ নামে এক যুবককে। র্যাব-১৪ এর একটি দল বিদেশি পিস্তলসহ তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে ম্যুরাল ভাঙচুরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবি দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। হেফাজত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ ও মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া তাণ্ডবে ৪৫টি মামলার মধ্যে সদর থানায় ৪০টি, আশুগঞ্জ থানায় ২টি, সরাইল থানায় ২টি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা করা হয়। ৪৫ টির মধ্যে ৬টি মামলায় ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি সবাই ‘অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী। কোনও কোনও মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাদের অনুসারী দুষ্কৃতিকারীদের’ কথা উল্লেখ করা হয়। তবে কোনও মামলাতেই হেফাজতের কোনও নেতাকর্মীর নাম নেই। মামলা ও গ্রেফতার সংক্রান্ত বিষয়টি জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ নিশ্চিত করেন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাণ্ডবের মাত্রা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন সকলের সমন্বিত প্রয়াস। পাশাপাশি সরকারের ব্যাপক ভূমিকা রাখার কথাও বলছেন তারা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক আবদুন নূর একের পর এক ঘটনার জন্য বিচারহীনতার সাংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন। তিনি মনে করেন, আগের ঘটনাগুলোর বিচার হলে একই শক্তি আবারো এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পেতো না।
সুর সম্রাট ওস্তাদ দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, ‘২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারিও এখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সে ঘটনার বিচার হয়নি। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান আমলে মৌলবাদ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও দেশ স্বাধীনের আগে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। এবারের ধ্বংসযজ্ঞে গান পাউডার ব্যবহার করা হয়। এসব থেকে বোঝা যায়, এটা পরিকল্পিত হামলা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন বলেন, ‘৭১ এর মতো বর্বরোচিত তাণ্ডব চালানো হয়েছে। বেছে বেছে সরকারি অফিসের পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনে হামলা চালানো হয়। এ হামলা পূর্ব পরিকল্পিত। এর আগে এ ধরণের হামলার কোন বিচার পাওয়া যায়নি।
গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চের ঘটনার আগে সর্শেষ ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি মাদ্রাসা ছাত্রদের তাণ্ডবে রেলওয়ে স্টেশন, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিস ভাঙচুর করা হয়। ২০০১ সালে ফতোয়াবিরোধী আন্দোলনে মারা যায় ছয় জন। তখন আন্দোলন হলেও এতটা তাণ্ডব হয়নি। কয়েক বছর আগে একটি কনসার্ট আয়োজনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিলেও কোনও ধরণের নাশকতা হয়নি। তবে এসব ঘটনায় বেশ কিছু মামলা হলেও একটিরও তদন্ত বা বিচার হয়নি।
পৌরসভার সেবা শুরু
অবশেষে নিত্যদিনের সেবা প্রদান শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। মঙ্গলবার সকাল থেকে পৌরসভার উদ্যোগে বর্জ্য অপসারণ শুরু করা হয়েছে। দুপুরে কাউতলী, কুমারশীল মোড় এলাকায় ময়লা অপসারণ করতে দেখা যায়। তবে অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হওয়ার কারণে পৌর মেয়রসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখনো নিজ কার্যালয়ে বসতে পারেনি।