ঢাকা ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ফরিদপুরে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ Logo ডিপিডিসির রুহুল আমিন ফকির দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন শতকোটি টাকার সম্পদ Logo উত্তরখানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা Logo খুলনা-৬ আসনে বিএনপির সাক্ষাতের ডাক পেলেন সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী Logo গুলশানে ‘Bliss Art Lounge’-এ অভিযান: প্রচুর বিদেশি মদসহ ৯ জন গ্রেফতার Logo টঙ্গীতে ১১ বছরের ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ নিখোঁজ Logo “স্টার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫” পেলেন দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ Logo খুলনায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ, এলাকায় চাপা উত্তেজনা Logo স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগী ‘যশোর বিআরটিএ অফিসের তারিক ধরাছোঁয়ার বাইরে|(পর্ব – ০১) Logo টাঙ্গাইল-৩ আসনে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে মাইনুল ইসলাম

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কী?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০ ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোনো একক ও সর্বসম্মত সংজ্ঞা পাওয়া মুশকিল। তবে পেশাদার সাংবাদিকরা, এর মূল উপাদান নিয়ে মোটামুটি একমত: পদ্ধতি বা পরিকল্পনামাফিক (সিস্টেম্যাটিক) অনুসন্ধান, গভীর (ইন-ডেপথ) ও মৌলিক গবেষণা এবং গোপন তথ্য উন্মোচন। অনেকে আবার মনে করেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত তথ্য (পাবলিক ডাটা) ও নথিপত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এ ধরনের প্রতিবেদনের মূল বিবেচ্য থাকে সামাজিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা।

ইউনেস্কোর সংজ্ঞাটিও অনেকেই উল্লেখ করে থাকেন। ইউনেস্কো তার প্রকাশনা ‘স্টোরি-বেইজড এনকোয়ারি’ নামের এক হ্যান্ডবুকে বলছে, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হচ্ছে গোপন বা লুকিয়ে রাখা তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা। সাধারণত ক্ষমতাবান কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এসব তথ্য গোপন রাখে; কখনো হয়তো-বা বিপুল ও বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে থাকা তথ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, যা চট করে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই কাজের জন্য একজন সাংবাদিককে সাধারণত প্রকাশ্য ও গোপন নানা উৎস (সোর্স) ব্যবহার করতে হয়, ঘাটতে হয় নানা ধরনের নথিপত্র।” আবার ডাচ-ফ্লেমিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংঘ ভিভিওজে’র সংজ্ঞায়, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলতে সেসব প্রতিবেদনকে বোঝায়, যেগুলো “বিশ্লেষণাত্মক ও কোনো একটি বিষয়কে তলিয়ে দেখার চেষ্টা করে”।

কোনো কোনো সাংবাদিক আবার মনে করেন, সব রিপোর্টিংই অনুসন্ধানমূলক। এই দাবির পেছনে খানিকটা সত্য রয়েছে। বিট সাংবাদিকরা, যারা বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কাজ করেন অথবা অনুসন্ধানী টিমের সদস্যরা, যারা কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা স্টোরি করেন, উভয়পক্ষই অনেকাংশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এর চেয়ে ব্যাপক। এতে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রণালি অনুসরণ করতে হয়। এটি এমন এক ধরনের শিল্প, যা মুঠোয় আনতে বছরের পর বছর চেষ্টা করে যেতে হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পাওয়া প্রতিবেদনগুলো দেখলেই বোঝা যায়, কত ব্যাপক গবেষণা আর কঠোর শ্রম এর পেছনে ব্যয় করা হয়েছে। কঠিন একাগ্রতা, আর বিষয়ের গভীরে যাওয়ার নিষ্ঠা আছে বলেই এই স্টোরিগুলো জনগণের সম্পদ লুট, পরিবেশ বিপর্যয়, ক্ষমতার অপব্যবহার,স্বাস্থ্যসেবার করুণ দশা ইত্যাদি এত জোরালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে কখনো কখনো এন্টারপ্রাইজ, ইন-ডেপথ বা প্রজেক্ট রিপোর্টিংও বলা হয়। কিন্তু একে স্কুপ বা লিক জার্নালিজমের (কোনো নথি ফাঁস বা কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির দেওয়া চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ) সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা সমীচীন নয়। অনেক উদীয়মান গণতান্ত্রিক দেশে হরহামেশাই বিশ্লেষণাত্মক বা ফাঁস হওয়া তথ্য সমৃদ্ধ সংবাদকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে অপরাধ ও দুর্নীতিবিষয়ক খবর, বিশ্লেষণ, এমনকি মতামতকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলা হয়।

অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকরা বলে থাকেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য হলো সতর্কতার সঙ্গে অনুসন্ধানের কৌশল নির্বাচন, তথ্যের জন্য প্রাথমিক সোর্সের ওপর নির্ভর করা, একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে তাকে পরখ করে দেখা এবং সবশেষে নিখুঁতভাবে সত্যতা যাচাই করা। “অনুসন্ধান” শব্দের আভিধানিক অর্থই হলো প্রণালিবন্ধ বা নিয়মানুগ (সিস্টেম্যাটিক) অনুসন্ধান”, যা একদিন বা দুই দিনে করা যায় না; একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের জন্য সময় দরকার হয়।

এই ধারার সাংবাদিকতা, নতুন নতুন কৌশল ব্যবহারে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকে। যেমন, ১৯৯০ সালে তথ্য বিশ্লেষণ ও চিত্রায়ণের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান এবং ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্স – এর সাবেক প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ট হিউস্টন বলেন, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কাজ করার নতুন পথ দেখায়। এই কৌশলগুলো ধীরে ধীরে প্রতিদিনকার সাংবাদিকতার সঙ্গে মিশে যায় এবং শেষপর্যন্ত গোটা পেশারই মান বাড়ায়।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :
error: Content is protected !!

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কী?

আপডেট সময় : ১১:৩৫:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোনো একক ও সর্বসম্মত সংজ্ঞা পাওয়া মুশকিল। তবে পেশাদার সাংবাদিকরা, এর মূল উপাদান নিয়ে মোটামুটি একমত: পদ্ধতি বা পরিকল্পনামাফিক (সিস্টেম্যাটিক) অনুসন্ধান, গভীর (ইন-ডেপথ) ও মৌলিক গবেষণা এবং গোপন তথ্য উন্মোচন। অনেকে আবার মনে করেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত তথ্য (পাবলিক ডাটা) ও নথিপত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এ ধরনের প্রতিবেদনের মূল বিবেচ্য থাকে সামাজিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা।

ইউনেস্কোর সংজ্ঞাটিও অনেকেই উল্লেখ করে থাকেন। ইউনেস্কো তার প্রকাশনা ‘স্টোরি-বেইজড এনকোয়ারি’ নামের এক হ্যান্ডবুকে বলছে, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হচ্ছে গোপন বা লুকিয়ে রাখা তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা। সাধারণত ক্ষমতাবান কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এসব তথ্য গোপন রাখে; কখনো হয়তো-বা বিপুল ও বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে থাকা তথ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, যা চট করে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই কাজের জন্য একজন সাংবাদিককে সাধারণত প্রকাশ্য ও গোপন নানা উৎস (সোর্স) ব্যবহার করতে হয়, ঘাটতে হয় নানা ধরনের নথিপত্র।” আবার ডাচ-ফ্লেমিশ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংঘ ভিভিওজে’র সংজ্ঞায়, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলতে সেসব প্রতিবেদনকে বোঝায়, যেগুলো “বিশ্লেষণাত্মক ও কোনো একটি বিষয়কে তলিয়ে দেখার চেষ্টা করে”।

কোনো কোনো সাংবাদিক আবার মনে করেন, সব রিপোর্টিংই অনুসন্ধানমূলক। এই দাবির পেছনে খানিকটা সত্য রয়েছে। বিট সাংবাদিকরা, যারা বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কাজ করেন অথবা অনুসন্ধানী টিমের সদস্যরা, যারা কয়েক সপ্তাহ ধরে একটা স্টোরি করেন, উভয়পক্ষই অনেকাংশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এর চেয়ে ব্যাপক। এতে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রণালি অনুসরণ করতে হয়। এটি এমন এক ধরনের শিল্প, যা মুঠোয় আনতে বছরের পর বছর চেষ্টা করে যেতে হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পাওয়া প্রতিবেদনগুলো দেখলেই বোঝা যায়, কত ব্যাপক গবেষণা আর কঠোর শ্রম এর পেছনে ব্যয় করা হয়েছে। কঠিন একাগ্রতা, আর বিষয়ের গভীরে যাওয়ার নিষ্ঠা আছে বলেই এই স্টোরিগুলো জনগণের সম্পদ লুট, পরিবেশ বিপর্যয়, ক্ষমতার অপব্যবহার,স্বাস্থ্যসেবার করুণ দশা ইত্যাদি এত জোরালোভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে কখনো কখনো এন্টারপ্রাইজ, ইন-ডেপথ বা প্রজেক্ট রিপোর্টিংও বলা হয়। কিন্তু একে স্কুপ বা লিক জার্নালিজমের (কোনো নথি ফাঁস বা কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির দেওয়া চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ) সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা সমীচীন নয়। অনেক উদীয়মান গণতান্ত্রিক দেশে হরহামেশাই বিশ্লেষণাত্মক বা ফাঁস হওয়া তথ্য সমৃদ্ধ সংবাদকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে অপরাধ ও দুর্নীতিবিষয়ক খবর, বিশ্লেষণ, এমনকি মতামতকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলা হয়।

অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকরা বলে থাকেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য হলো সতর্কতার সঙ্গে অনুসন্ধানের কৌশল নির্বাচন, তথ্যের জন্য প্রাথমিক সোর্সের ওপর নির্ভর করা, একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে তাকে পরখ করে দেখা এবং সবশেষে নিখুঁতভাবে সত্যতা যাচাই করা। “অনুসন্ধান” শব্দের আভিধানিক অর্থই হলো প্রণালিবন্ধ বা নিয়মানুগ (সিস্টেম্যাটিক) অনুসন্ধান”, যা একদিন বা দুই দিনে করা যায় না; একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের জন্য সময় দরকার হয়।

এই ধারার সাংবাদিকতা, নতুন নতুন কৌশল ব্যবহারে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকে। যেমন, ১৯৯০ সালে তথ্য বিশ্লেষণ ও চিত্রায়ণের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান এবং ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্স – এর সাবেক প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ট হিউস্টন বলেন, “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কাজ করার নতুন পথ দেখায়। এই কৌশলগুলো ধীরে ধীরে প্রতিদিনকার সাংবাদিকতার সঙ্গে মিশে যায় এবং শেষপর্যন্ত গোটা পেশারই মান বাড়ায়।”