ঢাকা ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




গাঁজায় পাগল সচিবের বেপরোয়া কান্ড!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৮:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০২০ ৫৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;  

ধোপদুরস্ত পোশাক পরিচ্ছদ-চলনে বলনে ওভার স্মার্ট শীর্ষ পর্যায়ের আমলা কবির বিন আনোয়ার এখন সবার জন্যই ’উটকো ঝামেলা‘ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তার চালচলন এমপি-মন্ত্রী স্টাইলে। তিনি কখনও প্রেমিক কবি, মানবসেবায় মাদারতেরেসার আদর্শপুত্র (!), কখনও অজ্ঞাত ক্ষমতার বেজায় দাপুটে, আবার কখনও কখনও অতিমাত্রার দলবাজিতে লিপ্ত থাকছেন। তার লাগামহীন দল বন্দনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমনকি খোদ প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীও বিব্রত হয়ে পড়েন।

ক্ষমতার বেজায় দাপট তার
ধোপদুরস্ত পোশাক পরিচ্ছদ-চলনে বলনে ওভার স্মার্ট শীর্ষ পর্যায়ের আমলা কবির বিন আনোয়ার এখন সবার জন্যই ’উটকো ঝামেলা‘ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার অতিমাত্রার খবরদারিত্ব আর ডজন ডজন ব্যক্তিগত ফরমায়েশের ধকলে মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে জেলা এমনকি থানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়েছেন। একইভাবে তার দাপুটে আচরণ ও বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মিদের মধ্যেও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তার চালচলন এমপি-মন্ত্রী স্টাইলে। তিনি কখনও প্রেমিক কবি, মানবসেবায় মাদারতেরেসার আদর্শপুত্র (!), কখনও অজ্ঞাত ক্ষমতার বেজায় দাপুটে, আবার কখনও কখনও অতিমাত্রার দলবাজিতে লিপ্ত থাকছেন। তার লাগামহীন দল বন্দনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমনকি খোদ প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীও বিব্রত হয়ে পড়েন।

পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বহুল বিতর্কিত এ সচিবের অজ্ঞাত ক্ষমতার দাপটে আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতা, স্থানীয় সংসদ সদস্য এমনকি সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও অজানা শঙ্কায় তটস্থ থাকেন। কবির বিন আনোয়ার অনেক বৈঠকে প্রায়ই বলে থাকেন-‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দিক থেকে ৪/৫ নম্বরেই আমার স্থান। আমিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে বিশেষ আস্থায় ৪২টি রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী করা হয়েছে। দেশে এমন বিরল সুযোগ পাওয়া সেকেন্ডম্যান বলতে আর কেউ নেই।’ এ উদাহরণকে পুঁজি করেই যেখানে সেখানে নিজের ক্ষমতার বাহাদুরী জাহির করতে সচিব কবির বড়ই উৎসাহী। বড়ত্ব প্রমানে ঘন ঘন বিদেশ গমনাগমন, যে কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মকর্তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আর অপমান অপদস্থতার মাধ্যমে তার বিকৃত সুখ নেয়ার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে এন্তার। নিজ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীকেও তিনি পরোক্ষভাবে ধমক দিয়ে বেড়ান। শীর্ষ এই আমলা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব পদে আসীন হয়েই সবকিছু বেমালুম ভুলে যেতে বসেছেন। সিভিল সার্ভেন্টের আচরণবিধি মুছে ফেলে তিনি মুহূর্তেই বনে গেছেন ডাকসাইটে নেতা।

রাজনীতিতে সক্রিয় থাকাসহ নানামুখি কাজ আর ছোটাছুটির ব্যস্ততায় পেশাগত সরকারি কর্মকান্ডে খুব বেশি মনোযোগী হতে পারেন না সচিব কবির। বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন তিনি, অধিষ্ঠিত রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ নানা সংস্থা-সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে। এরমধ্যে অন্যতম-চেয়ারম্যান, জাতীয় সম্পত্তি বিষয়ক কমিটি-বাংলাদেশ স্কাউট; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইয়োগা এসোসিয়েশন, সাধারণ সম্পাদক, ফজলুল হক মুসলিম হল এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাবি, চেয়ারম্যান, ইসাবেলা ফাউন্ডেশন, পরিচালক, বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন, মেম্বার, এসডাব্লিউআইডি-বাংলাদেশ; সদস্য, অদম্য বাংলাদেশ; প্রধান উপদেষ্টা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম-সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা; উপদেষ্টা, পথশিশুদের মজার ইশকুল, সভাপতি, সাঁকো প্রতিবন্ধী স্কুল সিরাজগঞ্জ, সভাপতি, জুয়েল অক্সফোর্ড স্কুল সিরাজগঞ্জ ইত্যাদি অন্যতম। এসব সংগঠনের স্বার্থে আর নিজ এলাকায় প্রভাব বলয় বাড়াতে সচিব হয়েও অন্যান্য মন্ত্রনালয়, দপ্তর-অধিদপ্তরে তার অসংখ্য তদবির সুপারিশ করতে হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোক নিয়োগের সুপারিশ করতেও তিনি কোনো দ্বিধাবোধ করেন না।

এছাড়াও তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি, নদী গবেষণা প্রোগ্রাম এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সৌখিন ফটোগ্রাফী থেকে শুরু করে গভীর বন-বাদারে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘুরে বেড়ানো, হাওড়-বাওড়-দ্বীপ ঘুরে পরিজায়ী পাখি অনুসন্ধানে হেসে খেলে দিন কাটাতে বড়ই মজা পান কবির বিন আনোয়ার। এতসব গুরুত্বপূর্ণ জীবন ঘনিষ্ঠ দায়-দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে হাপিয়ে ওঠা সচিব শুধু রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে অংশ নিতে গেলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। প্রায়ই দেখা যায়, কর্মস্থলে নিজ চেয়ারে বসে কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সভা সেমিনারেও ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় কাটানো কবির বিন আনোয়ারের কাছে সবকিছুই যেন বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।

এমপি হওয়ার বেজায় খায়েস কবিরের;
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের নিজ এলাকায় এমপি হওয়ার বড়ই খায়েশ। তাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের চেয়ারে বসে সদা সর্বদাই দলীয় কর্মকান্ডেই ব্যস্ত থাকেন তিনি, রোমান্টিক হয়ে উঠেন সাহিত্য চর্চা নিয়েও। জেলা ও থানা পর্যায়ে জনসাধারণ সম্পৃক্ত সমাবেশসহ নানা অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দলীয় নেতাদের ভঙ্গিতে ভাষণ দেয়ার ব্যাপারে তার বেজায় শখ। তাছাড়া সরকারি বেসরকারি প্রকল্প উদ্বোধন, নিজের নামেই ফলক স্থাপন, সরকারি ত্রাণ-পুণর্বাসনমূলক কর্মকান্ড মন্ত্রী নেতাদের পরিবর্তে একা একা পরিচালনা করতেই তার বেশি আনন্দ। বিগত বন্যায় তার নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্তদের জন্য সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ সামগ্রী তিনি অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে নৌকায় তুলে চরাঞ্চলে বিতরণ করতে নিয়ে যান। ত্রাণ কাজে অংশ গ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, কাওয়াকোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমসহ আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ রওনা দিলেও তাদেরকে মধ্য নদী থেকেই অপমানজনক ভাবে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়।

কবির বিন আনোয়ার শত কাজের ফাঁকেও নিয়মিত সিরাজগঞ্জে যাতায়াত ও অবস্থান করেন, নানা কৌশলে দান সহায়তা বিলিয়ে বেড়ান। একটি ব্যস্ততম মন্ত্রনালয়ের পূর্ণাঙ্গ সচিব হিসেবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের চেয়েও সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য কর্মকান্ডেই বেশি ব্যস্ত থাকেন তিনি। মহল্লা পর্যায়ের শরীর চর্চার ক্লাবেও প্রধান অতিথি হিসেবে রাজনৈতিক নেতার আদলে বক্তৃতা দেওয়াটা তার খুবই পছন্দের। অনেক অনুষ্ঠানাদিতে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন পাওয়ার আশাতেও তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আবার রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে সচিব কবির নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেও কোনো কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হন। এসব ক্ষেত্রে সচিবকে প্রধান অতিথি করানোর ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা ও থানা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও আয়োজকদের কাছে ধর্ণা দিতে বাধ্য হন।

এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সচিবের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কাছ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত আদায় করার বিব্রতকর কাজটি প্রায়ই করতে হয়। এটা ভীষণ লজ্জার, আয়োজকরাও পড়েন বড়ই বিপাকে। সম্প্রতি কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পূর্ব নির্ধারিত প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথির নাম লেখা ব্যানার টানানো শেষ-ঠিক এ মুহূর্তেই শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সচিব আনোয়ার। এমনকি আগাম না জানিয়ে তিনি সরাসরি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েই শপথ বাক্য পাঠ করানোর উদ্যোগ নেন। ওই সময় অনুষ্ঠানস্থলে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও বিষয়টি সবাই এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন।

সচিব কবির বিন আনোয়ার আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচন করার ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা নিয়েই যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলছেন। এক্ষেত্রে জেলা ও শহর আওয়ামীলীগে তার ঘনিষ্ঠজনদের নেতৃত্ব পাইয়ে দিতে সর্বোচ্চ মহলে তদবির সুপারিশ যেমন করেছেন, তেমনি সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ উপজেলায় নিজের সমর্থকদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করিয়েছেন। কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় মো: সেলিম রেজাকে। সচিব সমর্থক হিসেবে পরিচিত সেলিম রেজাকে নির্বাচিত করতে কবির বিন আনোয়ার প্রশাসনের নানা পর্যায়ে প্রকাশ্যে প্রভাব খাটান এমনকি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় তিনি স্বশরীরেও অংশ নেন। ওই নির্বাচনে সেলিম রেজা বিজয় লাভের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একই কায়দায় দুটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও তার সমর্থকদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করতে সচিব কবিরের অন্তহীন ছোটাছুটি দেখতে পেয়েছেন এলাকাবাসী।

নানা কুটকৌশলে ক্ষমতাসীন দলে ক্ষোভ ও বিরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে কিছু নেতা কর্মিকে কাছে টেনে দল ভারি করার চেষ্টা চালান সচিব কবির। তাদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাজনৈতিক মাঠেও নিজের আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন তিনি। এসবের বিপরীতে এমপি সমর্থক নেতা কর্মিদের নানাভাবে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার বানানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ আর্থিক কর্মকান্ডের ততপরতা চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে। অথচ সচিবের একক ক্ষমতাবলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকান্ড থেকে স্থানীয় সাংসদ ও তার অনুসারীদের বহুদূরে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাংসদের অনুসারী দলীয় ঠিকাদাররা পানি উন্নয়ন বোর্ডে কোনো সরবরাহের কাজ বা সাব কন্ট্রাক্টের কাজ করারও সুযোগ পান না। জেলার অন্যান্য সংস্থার টেন্ডার কার্যক্রমেও সচিব কবির প্রভাব খাটিয়ে এমপি সমর্থকদের বঞ্চিত রাখেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার অধিনস্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বাদী বানিয়ে এমনকি সচিব স্বয়ং বাদী হয়েও জেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ নেতাদের নামে একের পর এক মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করে রেখেছেন। এমন একাধিক মামলায় ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহবায়ক এমদাদ অভিযোগ করে বলেন, আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। সচিবের মা ইসাবেলার নামে সিরাজগঞ্জ শহীদ শামসুদ্দিন ষ্টেডিয়ামে তিনি খেলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটি খেলা চলমান থাকায় আরেকটি প্রতিযোগিতা পরিচালনায় অক্ষমতা প্রকাশ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। এর জের ধরেই আমার উপর আক্রোশ মেটাচ্ছেন তিনি।

ব্যক্তি জীবনেও তার দুর্ণামের ছড়াছড়িঃ
যমুনা তীরের মনোমুগ্ধ স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত রেস্ট হাউস-যমুনা বিলাস এখন সচিবের আনন্দ আশ্রম হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে উঠেছে। তবে আশপাশের বাসিন্দারা এ ভবনকে সচিব কবিরের হেরেমখানা বলেই চেনে জানে। অচেনা মুখের অজ্ঞাত লোকজনের ব্যাপক আনাগোনাসহ নানামুখি কর্মকান্ডের কারণে কথিত হেরেমখানাটি রহস্যের আধার হয়ে আছে। সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ এ আশ্রমটিতে সচিবের একান্ত সহযোগিরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এ আশ্রমটি জমজমাট থাকে।

আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যমুনা বিলাস থেকে ছড়িয়ে পড়া গাজার গন্ধে গোটা এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে থাকে। সচিব অবস্থানকালে চেনা অচেনা সুন্দরী নারীদেরও আনাগোনা থাকে। এসব নিয়ে সচিবের দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন ঘিরে দুর্ণামের ছড়াছড়ি।

কবির বিন আনোয়ারের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, কলেজ জীবন থেকে শুরু করে ৪০ বছর ধরেই গাজার নেশায় চরম আসক্তি রয়েছে কবির বিন আনোয়ারের। পরবর্তীতে গাজার সঙ্গে অন্যান্য মাদকের নেশাতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি, নারী সংশ্লিষ্টতার বিনোদনেও তার জুড়ি মেলা ভার। ইদানিং অতিরিক্ত নেশাজনিত কারণে প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, মানসিক সমস্যাতেও ভুগছেন তিনি। এসব নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ মোহিত কামালের চিকিৎসা সহায়তাও নিতে হয় তাকে। তিনি ভারতেও মনোরোগ ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা তাদের ব্যবস্থাপত্রে কবির বিন আনোয়ারকে মাদকাসক্তের ভয়াবহতা থেকে জীবন রক্ষায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে টানা তিন মাস চিকিৎসা গ্রহণের জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় সে চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়নি তার, এ কারণে সুস্থ্যও হতে পারছেন না তিনি।

তার পারিবারিক জীবনও নানা বিষাক্ততার ছোবলে বিপর্যস্ততা রয়েছে এই সচিবের। যৌবনের শুরুতেই ‘নেতা বাবার‘ দাপট দেখিয়ে নিজের খালা সম্পর্কিত এক নারীকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন কবির বিন আনোয়ার। ধারাবাহিক নীপিড়ন নির্যাতনের মুখে তার সেই প্রথম স্ত্রী বেগম কুলসুম আসমা মহল (সাধনা মহল) সংসার ছেড়ে পালিয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছেন। এরপর নানা কৌশল খাটিয়ে প্রেমের অভিনয়ে ইমন নামে এক তরুণিকে বিয়ে করে সংসার বাধেন। কিন্তু তার নানা অপকর্মে ২য় স্ত্রী ইমন অতিষ্ঠ হলেও প্রথম স্ত্রীর মতো সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেননি। স্বামী কবির বিন আনোয়ারের অন্যায় অত্যাচার, শারিরিক নির্যাতন, হরদম মাদক সেবন, পরনারী আসক্তি এবং সরকারি কর্মস্থলে নানা অনৈতিকতা ও লুটপাটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ সম্পদ অর্জনের তথ্য জানিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও আবেদন জানান তিনি। বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো তার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিজের বিয়েযোগ্য মেয়ে থাকা সত্তেও কবির বিন আনোয়ার অল্প বয়সের কিশোরী-তরুণিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নিত্য নতুন এ বান্ধবীদের বগলদাবা করেই আয়েশী ভঙ্গিমায় দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর নেশায় মত্ত থাকেন তিনি। বাইরের বেলেল্লাপনাতেই তার স্বাচ্ছন্দ্যময় সুখ বলেও মন্তব্য করেন ইমন।

এসব অভিযোগ তোলার কারণে কয়েক বছর আগে ২য় স্ত্রী ইমনকে পাগল আখ্যা দিয়ে মারধোর করে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। চলবে……

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




গাঁজায় পাগল সচিবের বেপরোয়া কান্ড!

আপডেট সময় : ০৭:৪৮:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক;  

ধোপদুরস্ত পোশাক পরিচ্ছদ-চলনে বলনে ওভার স্মার্ট শীর্ষ পর্যায়ের আমলা কবির বিন আনোয়ার এখন সবার জন্যই ’উটকো ঝামেলা‘ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তার চালচলন এমপি-মন্ত্রী স্টাইলে। তিনি কখনও প্রেমিক কবি, মানবসেবায় মাদারতেরেসার আদর্শপুত্র (!), কখনও অজ্ঞাত ক্ষমতার বেজায় দাপুটে, আবার কখনও কখনও অতিমাত্রার দলবাজিতে লিপ্ত থাকছেন। তার লাগামহীন দল বন্দনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমনকি খোদ প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীও বিব্রত হয়ে পড়েন।

ক্ষমতার বেজায় দাপট তার
ধোপদুরস্ত পোশাক পরিচ্ছদ-চলনে বলনে ওভার স্মার্ট শীর্ষ পর্যায়ের আমলা কবির বিন আনোয়ার এখন সবার জন্যই ’উটকো ঝামেলা‘ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার অতিমাত্রার খবরদারিত্ব আর ডজন ডজন ব্যক্তিগত ফরমায়েশের ধকলে মন্ত্রনালয় থেকে শুরু করে জেলা এমনকি থানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পর্যন্ত ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পড়েছেন। একইভাবে তার দাপুটে আচরণ ও বেপরোয়া কর্মকান্ডের কারণে মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মিদের মধ্যেও চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তার চালচলন এমপি-মন্ত্রী স্টাইলে। তিনি কখনও প্রেমিক কবি, মানবসেবায় মাদারতেরেসার আদর্শপুত্র (!), কখনও অজ্ঞাত ক্ষমতার বেজায় দাপুটে, আবার কখনও কখনও অতিমাত্রার দলবাজিতে লিপ্ত থাকছেন। তার লাগামহীন দল বন্দনায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা এমনকি খোদ প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীও বিব্রত হয়ে পড়েন।

পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বহুল বিতর্কিত এ সচিবের অজ্ঞাত ক্ষমতার দাপটে আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতা, স্থানীয় সংসদ সদস্য এমনকি সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও অজানা শঙ্কায় তটস্থ থাকেন। কবির বিন আনোয়ার অনেক বৈঠকে প্রায়ই বলে থাকেন-‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দিক থেকে ৪/৫ নম্বরেই আমার স্থান। আমিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে বিশেষ আস্থায় ৪২টি রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী করা হয়েছে। দেশে এমন বিরল সুযোগ পাওয়া সেকেন্ডম্যান বলতে আর কেউ নেই।’ এ উদাহরণকে পুঁজি করেই যেখানে সেখানে নিজের ক্ষমতার বাহাদুরী জাহির করতে সচিব কবির বড়ই উৎসাহী। বড়ত্ব প্রমানে ঘন ঘন বিদেশ গমনাগমন, যে কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মকর্তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আর অপমান অপদস্থতার মাধ্যমে তার বিকৃত সুখ নেয়ার ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে এন্তার। নিজ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীকেও তিনি পরোক্ষভাবে ধমক দিয়ে বেড়ান। শীর্ষ এই আমলা পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব পদে আসীন হয়েই সবকিছু বেমালুম ভুলে যেতে বসেছেন। সিভিল সার্ভেন্টের আচরণবিধি মুছে ফেলে তিনি মুহূর্তেই বনে গেছেন ডাকসাইটে নেতা।

রাজনীতিতে সক্রিয় থাকাসহ নানামুখি কাজ আর ছোটাছুটির ব্যস্ততায় পেশাগত সরকারি কর্মকান্ডে খুব বেশি মনোযোগী হতে পারেন না সচিব কবির। বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে আস্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন তিনি, অধিষ্ঠিত রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ নানা সংস্থা-সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে। এরমধ্যে অন্যতম-চেয়ারম্যান, জাতীয় সম্পত্তি বিষয়ক কমিটি-বাংলাদেশ স্কাউট; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইয়োগা এসোসিয়েশন, সাধারণ সম্পাদক, ফজলুল হক মুসলিম হল এলামনাই এসোসিয়েশন, ঢাবি, চেয়ারম্যান, ইসাবেলা ফাউন্ডেশন, পরিচালক, বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশন, মেম্বার, এসডাব্লিউআইডি-বাংলাদেশ; সদস্য, অদম্য বাংলাদেশ; প্রধান উপদেষ্টা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম-সিরাজগঞ্জ জেলা শাখা; উপদেষ্টা, পথশিশুদের মজার ইশকুল, সভাপতি, সাঁকো প্রতিবন্ধী স্কুল সিরাজগঞ্জ, সভাপতি, জুয়েল অক্সফোর্ড স্কুল সিরাজগঞ্জ ইত্যাদি অন্যতম। এসব সংগঠনের স্বার্থে আর নিজ এলাকায় প্রভাব বলয় বাড়াতে সচিব হয়েও অন্যান্য মন্ত্রনালয়, দপ্তর-অধিদপ্তরে তার অসংখ্য তদবির সুপারিশ করতে হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোক নিয়োগের সুপারিশ করতেও তিনি কোনো দ্বিধাবোধ করেন না।

এছাড়াও তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, সুন্দরবন সংরক্ষণ কমিটি, নদী গবেষণা প্রোগ্রাম এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সৌখিন ফটোগ্রাফী থেকে শুরু করে গভীর বন-বাদারে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ঘুরে বেড়ানো, হাওড়-বাওড়-দ্বীপ ঘুরে পরিজায়ী পাখি অনুসন্ধানে হেসে খেলে দিন কাটাতে বড়ই মজা পান কবির বিন আনোয়ার। এতসব গুরুত্বপূর্ণ জীবন ঘনিষ্ঠ দায়-দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে হাপিয়ে ওঠা সচিব শুধু রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে অংশ নিতে গেলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। প্রায়ই দেখা যায়, কর্মস্থলে নিজ চেয়ারে বসে কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সভা সেমিনারেও ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় কাটানো কবির বিন আনোয়ারের কাছে সবকিছুই যেন বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।

এমপি হওয়ার বেজায় খায়েস কবিরের;
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের নিজ এলাকায় এমপি হওয়ার বড়ই খায়েশ। তাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের চেয়ারে বসে সদা সর্বদাই দলীয় কর্মকান্ডেই ব্যস্ত থাকেন তিনি, রোমান্টিক হয়ে উঠেন সাহিত্য চর্চা নিয়েও। জেলা ও থানা পর্যায়ে জনসাধারণ সম্পৃক্ত সমাবেশসহ নানা অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দলীয় নেতাদের ভঙ্গিতে ভাষণ দেয়ার ব্যাপারে তার বেজায় শখ। তাছাড়া সরকারি বেসরকারি প্রকল্প উদ্বোধন, নিজের নামেই ফলক স্থাপন, সরকারি ত্রাণ-পুণর্বাসনমূলক কর্মকান্ড মন্ত্রী নেতাদের পরিবর্তে একা একা পরিচালনা করতেই তার বেশি আনন্দ। বিগত বন্যায় তার নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্তদের জন্য সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ সামগ্রী তিনি অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে নৌকায় তুলে চরাঞ্চলে বিতরণ করতে নিয়ে যান। ত্রাণ কাজে অংশ গ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, কাওয়াকোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল আলীমসহ আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ রওনা দিলেও তাদেরকে মধ্য নদী থেকেই অপমানজনক ভাবে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়।

কবির বিন আনোয়ার শত কাজের ফাঁকেও নিয়মিত সিরাজগঞ্জে যাতায়াত ও অবস্থান করেন, নানা কৌশলে দান সহায়তা বিলিয়ে বেড়ান। একটি ব্যস্ততম মন্ত্রনালয়ের পূর্ণাঙ্গ সচিব হিসেবে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের চেয়েও সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য কর্মকান্ডেই বেশি ব্যস্ত থাকেন তিনি। মহল্লা পর্যায়ের শরীর চর্চার ক্লাবেও প্রধান অতিথি হিসেবে রাজনৈতিক নেতার আদলে বক্তৃতা দেওয়াটা তার খুবই পছন্দের। অনেক অনুষ্ঠানাদিতে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন পাওয়ার আশাতেও তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আবার রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে সচিব কবির নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেও কোনো কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হন। এসব ক্ষেত্রে সচিবকে প্রধান অতিথি করানোর ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা ও থানা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও আয়োজকদের কাছে ধর্ণা দিতে বাধ্য হন।

এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সচিবের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কাছ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে দাওয়াত আদায় করার বিব্রতকর কাজটি প্রায়ই করতে হয়। এটা ভীষণ লজ্জার, আয়োজকরাও পড়েন বড়ই বিপাকে। সম্প্রতি কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পূর্ব নির্ধারিত প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথির নাম লেখা ব্যানার টানানো শেষ-ঠিক এ মুহূর্তেই শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সচিব আনোয়ার। এমনকি আগাম না জানিয়ে তিনি সরাসরি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েই শপথ বাক্য পাঠ করানোর উদ্যোগ নেন। ওই সময় অনুষ্ঠানস্থলে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও বিষয়টি সবাই এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন।

সচিব কবির বিন আনোয়ার আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচন করার ইচ্ছা পূরণের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা নিয়েই যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে চলছেন। এক্ষেত্রে জেলা ও শহর আওয়ামীলীগে তার ঘনিষ্ঠজনদের নেতৃত্ব পাইয়ে দিতে সর্বোচ্চ মহলে তদবির সুপারিশ যেমন করেছেন, তেমনি সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ উপজেলায় নিজের সমর্থকদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করিয়েছেন। কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় মো: সেলিম রেজাকে। সচিব সমর্থক হিসেবে পরিচিত সেলিম রেজাকে নির্বাচিত করতে কবির বিন আনোয়ার প্রশাসনের নানা পর্যায়ে প্রকাশ্যে প্রভাব খাটান এমনকি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় তিনি স্বশরীরেও অংশ নেন। ওই নির্বাচনে সেলিম রেজা বিজয় লাভের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কর্মিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একই কায়দায় দুটি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও তার সমর্থকদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করতে সচিব কবিরের অন্তহীন ছোটাছুটি দেখতে পেয়েছেন এলাকাবাসী।

নানা কুটকৌশলে ক্ষমতাসীন দলে ক্ষোভ ও বিরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে কিছু নেতা কর্মিকে কাছে টেনে দল ভারি করার চেষ্টা চালান সচিব কবির। তাদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাজনৈতিক মাঠেও নিজের আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন তিনি। এসবের বিপরীতে এমপি সমর্থক নেতা কর্মিদের নানাভাবে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার বানানো হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ আর্থিক কর্মকান্ডের ততপরতা চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে। অথচ সচিবের একক ক্ষমতাবলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকান্ড থেকে স্থানীয় সাংসদ ও তার অনুসারীদের বহুদূরে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাংসদের অনুসারী দলীয় ঠিকাদাররা পানি উন্নয়ন বোর্ডে কোনো সরবরাহের কাজ বা সাব কন্ট্রাক্টের কাজ করারও সুযোগ পান না। জেলার অন্যান্য সংস্থার টেন্ডার কার্যক্রমেও সচিব কবির প্রভাব খাটিয়ে এমপি সমর্থকদের বঞ্চিত রাখেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তার অধিনস্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বাদী বানিয়ে এমনকি সচিব স্বয়ং বাদী হয়েও জেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ নেতাদের নামে একের পর এক মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করে রেখেছেন। এমন একাধিক মামলায় ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ পৌর যুবলীগের আহবায়ক এমদাদ অভিযোগ করে বলেন, আমি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। সচিবের মা ইসাবেলার নামে সিরাজগঞ্জ শহীদ শামসুদ্দিন ষ্টেডিয়ামে তিনি খেলা চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটি খেলা চলমান থাকায় আরেকটি প্রতিযোগিতা পরিচালনায় অক্ষমতা প্রকাশ করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। এর জের ধরেই আমার উপর আক্রোশ মেটাচ্ছেন তিনি।

ব্যক্তি জীবনেও তার দুর্ণামের ছড়াছড়িঃ
যমুনা তীরের মনোমুগ্ধ স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত রেস্ট হাউস-যমুনা বিলাস এখন সচিবের আনন্দ আশ্রম হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে উঠেছে। তবে আশপাশের বাসিন্দারা এ ভবনকে সচিব কবিরের হেরেমখানা বলেই চেনে জানে। অচেনা মুখের অজ্ঞাত লোকজনের ব্যাপক আনাগোনাসহ নানামুখি কর্মকান্ডের কারণে কথিত হেরেমখানাটি রহস্যের আধার হয়ে আছে। সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ এ আশ্রমটিতে সচিবের একান্ত সহযোগিরা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এ আশ্রমটি জমজমাট থাকে।

আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যমুনা বিলাস থেকে ছড়িয়ে পড়া গাজার গন্ধে গোটা এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে থাকে। সচিব অবস্থানকালে চেনা অচেনা সুন্দরী নারীদেরও আনাগোনা থাকে। এসব নিয়ে সচিবের দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন ঘিরে দুর্ণামের ছড়াছড়ি।

কবির বিন আনোয়ারের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, কলেজ জীবন থেকে শুরু করে ৪০ বছর ধরেই গাজার নেশায় চরম আসক্তি রয়েছে কবির বিন আনোয়ারের। পরবর্তীতে গাজার সঙ্গে অন্যান্য মাদকের নেশাতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি, নারী সংশ্লিষ্টতার বিনোদনেও তার জুড়ি মেলা ভার। ইদানিং অতিরিক্ত নেশাজনিত কারণে প্রায়ই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, মানসিক সমস্যাতেও ভুগছেন তিনি। এসব নিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ মোহিত কামালের চিকিৎসা সহায়তাও নিতে হয় তাকে। তিনি ভারতেও মনোরোগ ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা তাদের ব্যবস্থাপত্রে কবির বিন আনোয়ারকে মাদকাসক্তের ভয়াবহতা থেকে জীবন রক্ষায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে টানা তিন মাস চিকিৎসা গ্রহণের জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় সে চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়নি তার, এ কারণে সুস্থ্যও হতে পারছেন না তিনি।

তার পারিবারিক জীবনও নানা বিষাক্ততার ছোবলে বিপর্যস্ততা রয়েছে এই সচিবের। যৌবনের শুরুতেই ‘নেতা বাবার‘ দাপট দেখিয়ে নিজের খালা সম্পর্কিত এক নারীকে বিয়ে করে ঘরে তোলেন কবির বিন আনোয়ার। ধারাবাহিক নীপিড়ন নির্যাতনের মুখে তার সেই প্রথম স্ত্রী বেগম কুলসুম আসমা মহল (সাধনা মহল) সংসার ছেড়ে পালিয়ে নিজের জীবন বাঁচিয়েছেন। এরপর নানা কৌশল খাটিয়ে প্রেমের অভিনয়ে ইমন নামে এক তরুণিকে বিয়ে করে সংসার বাধেন। কিন্তু তার নানা অপকর্মে ২য় স্ত্রী ইমন অতিষ্ঠ হলেও প্রথম স্ত্রীর মতো সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেননি। স্বামী কবির বিন আনোয়ারের অন্যায় অত্যাচার, শারিরিক নির্যাতন, হরদম মাদক সেবন, পরনারী আসক্তি এবং সরকারি কর্মস্থলে নানা অনৈতিকতা ও লুটপাটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ সম্পদ অর্জনের তথ্য জানিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ারও আবেদন জানান তিনি। বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো তার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নিজের বিয়েযোগ্য মেয়ে থাকা সত্তেও কবির বিন আনোয়ার অল্প বয়সের কিশোরী-তরুণিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নিত্য নতুন এ বান্ধবীদের বগলদাবা করেই আয়েশী ভঙ্গিমায় দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর নেশায় মত্ত থাকেন তিনি। বাইরের বেলেল্লাপনাতেই তার স্বাচ্ছন্দ্যময় সুখ বলেও মন্তব্য করেন ইমন।

এসব অভিযোগ তোলার কারণে কয়েক বছর আগে ২য় স্ত্রী ইমনকে পাগল আখ্যা দিয়ে মারধোর করে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। চলবে……