ঢাকা ০৬:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




মহা সমিকরনে তিন সিটি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ৭১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 
এবার তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে নজর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে তারা। অতীতের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটি নির্বাচনকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে নিচ্ছে বিএনপি। এ নির্বাচনে জিতলেও ‘লাভ’ এবং হারলেও ‘লাভ’ বলে মনে করছে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা দলটি।

নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে এই তিন সিটিতে। বছরের শেষ এবং আগামী বছরের শুরুতে সিটিগুলোতে নির্বাচন হবে। কিছুটা সময় থাকলেও এখন থেকেই মেয়র প্রার্থী যাচাই-বাছাই শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী খুঁজতে দলের পক্ষ থেকে জরিপও চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, তিন সিটিতে দলীয় প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা উত্তর সিটিতে বিগত নির্বাচনের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দলের আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা প্রার্থী হতে পারেন। চট্টগ্রাম সিটিতে প্রার্থী হবেন দলের নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিন তরুণ নেতা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। অবশ্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও তৎপর হয়ে উঠছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও জোরেশোরে আলোচনায় উঠে আসছে। বর্তমান মেয়রদের পাশাপাশি আরও কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীও দলীয় মনোনয়ন পেতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। অবশ্য জরিপের মাধ্যমে উপযুক্ত ও যোগ্য প্রার্থীকেই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ভোটের মাঠে নামানো হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল।

বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ইতিবাচক’ রাজনৈতিক চিন্তা করেই শান্তিপূর্ণভাবে সামনে পথচলার পরামর্শ দিয়েছেন। নানামুখী হিসাব-নিকাশ করে সম্ভাব্য তিন প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের দুই শীর্ষ নেতা। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলীয় ফোরামের এক সভায় জরিপের মাধ্যমে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কর্মীবান্ধব ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীরাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। তারপরও বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল হিসেবে প্রতিটি নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে। প্রথমে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগামীতে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কার বেশি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি নেতিবাচক ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তবে ফলাফল কী হবে, তা আমাদের জানা আছে।’

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়াদ কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ওই তিন সিটিতেই একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং একই বছরের ১৭ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দায়িত্ব নিতে দেরি হওয়ায় সেখানকার প্রথম বৈঠকও দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিদ্যমান সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ শুরু হয়। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। এ হিসাবে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যভাগের আগে ঢাকার দুই সিটি এবং আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

এ অবস্থায় চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ধরেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে আরও কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। এই সিটির নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার ওপর।

কোন সিটি কার দখলে :দেশে বর্তমানে ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। এর মধ্যে ৯টিতেই আওয়ামী লীগের, দুইটিতে বিএনপি এবং একটিতে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত মেয়র রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়ররা হচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটিতে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, চট্টগ্রামে আ জ ম নাছির উদ্দীন, রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, ময়মনসিংহে ইকরামুল হক টিটু, নারায়ণগঞ্জে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির নির্বাচিত মেয়ররা হচ্ছেন সিলেটে আরিফুল হক এবং কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কু। এ ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টি থেকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ :দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিন সিটি নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর পরই দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গতবারের মতো এবারও তিন সিটিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে শক্তিশালী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে।

সূত্র বলছে, নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে মেয়র পদে জনপ্রিয় মুখকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ জন্য আগেভাগে প্রার্থী ঠিক করে রাখার পক্ষে দলের নীতিনির্ধারকরা। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান তিন মেয়রের কার্যক্রম ও দক্ষতাকেও বিবেচনায় আনা হবে।

সূত্র মতে, প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জরিপ চলছে। তবে প্রার্থী যাকেই করা হোক না কেন, তফসিল ঘোষণার পরই দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে তিনি সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের বেলায়ও।

আবার নির্বাচনের মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষের ভোটের লড়াইয়ে আসা না আসার ওপরও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি নির্ভর করছে। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় কি-না- সেদিকেও নজর রাখছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে এলে ভোটের লড়াই তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে মনে করছেন তারা। সে ক্ষেত্রে ভোটপর্ব উত্তরণে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার পক্ষে তারা। ফলে নির্বাচনের বেশ আগেভাগে প্রার্থী ঠিক করে মাঠে নামিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে কিছুটা হলেও মতভেদ রয়েছে দলীয় নীতিনির্ধারকদের কারও কারও মধ্যে। তারা বলছেন, চলতি বছর ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার বিষয়টি জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন হলে ভোটের মাঠে সরকারদলীয় প্রার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবার ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা আগামী বছরের মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন সর্বজনীনভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও সরকার। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন শেষ করার পক্ষে অনেকেই। আর হাতে সময় থাকায় এপ্রিলের পর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে আপত্তি নেই দলের কারও।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রস্তুতি এখনও শুরু হয়নি। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যাচাই-বাছাই শেষে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও দক্ষদেরই মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। গত নির্বাচনের বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।

বিএনপি :একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে আসছে বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে নানা হিসাব-নিকাশ কষে অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। দেশি-বিদেশিদের কাছে ইতিবাচক রাজনৈতিক মনোভাব দেখাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপি মনে করছে, প্রধানত তিনটি কারণে তাদের সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। প্রথমত, নির্বাচন কিছুটা অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হলেই বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা জয়ী হবেন। আর সরকারি দলের প্রার্থীদের জিততে হলে কেন্দ্র দখল করে বিজয় ছিনিয়ে নিতে হবে। এতে নির্বাচনে বিজয়ী হলেও তাদের লাভ এবং হারলেও লাভ। কারণ বিজয় ছিনিয়ে নিলে দেশি ও বিদেশিদের কাছে আবারও সরকারি দলের ‘মুখোশ’ উন্মোচিত হবে। এটি প্রমাণ করতে হলেও বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, দলের বৃহত্তর স্বার্থেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বিএনপির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার সুযোগ হবে। দল শক্তিশালী হবে। আবার দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয়ভাবে নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে কাউন্সিলর পদে অনেকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়ে যাবেন। তাতে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ প্রশ্নের মুখে পড়বে।

তৃতীয়ত, প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির ইতিবাচক রাজনৈতিক মনোভাবই দেশি-বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা যাবে। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী ও গণতান্ত্রিক দল- তা আবারও প্রমাণ হবে বলে মনে করেন দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপি নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে জয়ী হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এবার সিটি নির্বাচনগুলোর দিকে জনগণ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ নজর রাখবে। বিএনপি নেতাদের দাবি, ‘বিগত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা, ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধীপক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে না দেওয়ার ঘটনাগুলো সরকারের বিপক্ষে গেছে। ভোট নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও বিভিন্ন মহল থেকে আসছে। এবার তিন সিটির নির্বাচনেও যদি সরকার একই ধরনের কৌশল নেয়, তাহলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) আরও কলঙ্কিত হবে। এ পরিস্থিতিতে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করতে বিএনপির দাবি আরও জোরালো হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। তারা সব নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ করতে মাঝেমধ্যে তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করেছিলেন। এবার তারা তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে দাবি করেন তিনি।

বিগত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থীরা দুপুরের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোট কারচুপি, অনিয়ম, কেন্দ্র দখল এবং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। তবে ভোট গণনা শেষে বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোট পাওয়ায় ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের অনেকে। নেতাদের অনেকে বলেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকলে তিন সিটির মধ্যে এক-দুটিতে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হতে পারতেন।

অবশ্য এবার বিএনপি প্রার্থীরা সরকারের নানা দুর্নীতি, ডেঙ্গুসহ রাজধানীর সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা সামনে এনে বিএনপি প্রার্থী কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মহা সমিকরনে তিন সিটি

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 
এবার তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে নজর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছে তারা। অতীতের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটি নির্বাচনকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে নিচ্ছে বিএনপি। এ নির্বাচনে জিতলেও ‘লাভ’ এবং হারলেও ‘লাভ’ বলে মনে করছে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা দলটি।

নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে এই তিন সিটিতে। বছরের শেষ এবং আগামী বছরের শুরুতে সিটিগুলোতে নির্বাচন হবে। কিছুটা সময় থাকলেও এখন থেকেই মেয়র প্রার্থী যাচাই-বাছাই শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী খুঁজতে দলের পক্ষ থেকে জরিপও চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, তিন সিটিতে দলীয় প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা উত্তর সিটিতে বিগত নির্বাচনের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে দলের আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন খোকা প্রার্থী হতে পারেন। চট্টগ্রাম সিটিতে প্রার্থী হবেন দলের নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তিন তরুণ নেতা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। অবশ্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও তৎপর হয়ে উঠছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও জোরেশোরে আলোচনায় উঠে আসছে। বর্তমান মেয়রদের পাশাপাশি আরও কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীও দলীয় মনোনয়ন পেতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। অবশ্য জরিপের মাধ্যমে উপযুক্ত ও যোগ্য প্রার্থীকেই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে ভোটের মাঠে নামানো হবে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল।

বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ইতিবাচক’ রাজনৈতিক চিন্তা করেই শান্তিপূর্ণভাবে সামনে পথচলার পরামর্শ দিয়েছেন। নানামুখী হিসাব-নিকাশ করে সম্ভাব্য তিন প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন দলের দুই শীর্ষ নেতা। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলীয় ফোরামের এক সভায় জরিপের মাধ্যমে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী বেছে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কর্মীবান্ধব ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীরাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। তারপরও বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল হিসেবে প্রতিটি নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে। প্রথমে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগামীতে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কার বেশি জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি নেতিবাচক ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তবে ফলাফল কী হবে, তা আমাদের জানা আছে।’

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়াদ কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ওই তিন সিটিতেই একই দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং একই বছরের ১৭ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দায়িত্ব নিতে দেরি হওয়ায় সেখানকার প্রথম বৈঠকও দেরিতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ৬ আগস্ট বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিদ্যমান সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠানের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ শুরু হয়। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। এ হিসাবে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যভাগ থেকে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যভাগের আগে ঢাকার দুই সিটি এবং আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

এ অবস্থায় চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ধরেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানে আরও কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। এই সিটির নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার ওপর।

কোন সিটি কার দখলে :দেশে বর্তমানে ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। এর মধ্যে ৯টিতেই আওয়ামী লীগের, দুইটিতে বিএনপি এবং একটিতে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত মেয়র রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়ররা হচ্ছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটিতে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, চট্টগ্রামে আ জ ম নাছির উদ্দীন, রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, ময়মনসিংহে ইকরামুল হক টিটু, নারায়ণগঞ্জে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির নির্বাচিত মেয়ররা হচ্ছেন সিলেটে আরিফুল হক এবং কুমিল্লায় মনিরুল হক সাক্কু। এ ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টি থেকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ :দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিন সিটি নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর পরই দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গতবারের মতো এবারও তিন সিটিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে শক্তিশালী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে।

সূত্র বলছে, নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে মেয়র পদে জনপ্রিয় মুখকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ জন্য আগেভাগে প্রার্থী ঠিক করে রাখার পক্ষে দলের নীতিনির্ধারকরা। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান তিন মেয়রের কার্যক্রম ও দক্ষতাকেও বিবেচনায় আনা হবে।

সূত্র মতে, প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে জরিপ চলছে। তবে প্রার্থী যাকেই করা হোক না কেন, তফসিল ঘোষণার পরই দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে তিনি সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের বেলায়ও।

আবার নির্বাচনের মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষের ভোটের লড়াইয়ে আসা না আসার ওপরও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টি নির্ভর করছে। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় কি-না- সেদিকেও নজর রাখছেন দলীয় নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে এলে ভোটের লড়াই তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে মনে করছেন তারা। সে ক্ষেত্রে ভোটপর্ব উত্তরণে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার পক্ষে তারা। ফলে নির্বাচনের বেশ আগেভাগে প্রার্থী ঠিক করে মাঠে নামিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে কিছুটা হলেও মতভেদ রয়েছে দলীয় নীতিনির্ধারকদের কারও কারও মধ্যে। তারা বলছেন, চলতি বছর ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার বিষয়টি জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন হলে ভোটের মাঠে সরকারদলীয় প্রার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবার ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা আগামী বছরের মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন সর্বজনীনভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও সরকার। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন শেষ করার পক্ষে অনেকেই। আর হাতে সময় থাকায় এপ্রিলের পর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে আপত্তি নেই দলের কারও।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রস্তুতি এখনও শুরু হয়নি। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যাচাই-বাছাই শেষে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও দক্ষদেরই মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। গত নির্বাচনের বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে।

বিএনপি :একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা থেকে সরে আসছে বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে নানা হিসাব-নিকাশ কষে অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। দেশি-বিদেশিদের কাছে ইতিবাচক রাজনৈতিক মনোভাব দেখাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপি মনে করছে, প্রধানত তিনটি কারণে তাদের সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। প্রথমত, নির্বাচন কিছুটা অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হলেই বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা জয়ী হবেন। আর সরকারি দলের প্রার্থীদের জিততে হলে কেন্দ্র দখল করে বিজয় ছিনিয়ে নিতে হবে। এতে নির্বাচনে বিজয়ী হলেও তাদের লাভ এবং হারলেও লাভ। কারণ বিজয় ছিনিয়ে নিলে দেশি ও বিদেশিদের কাছে আবারও সরকারি দলের ‘মুখোশ’ উন্মোচিত হবে। এটি প্রমাণ করতে হলেও বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, দলের বৃহত্তর স্বার্থেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত বিএনপির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার সুযোগ হবে। দল শক্তিশালী হবে। আবার দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থানীয়ভাবে নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে কাউন্সিলর পদে অনেকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়ে যাবেন। তাতে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ প্রশ্নের মুখে পড়বে।

তৃতীয়ত, প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির ইতিবাচক রাজনৈতিক মনোভাবই দেশি-বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা যাবে। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী ও গণতান্ত্রিক দল- তা আবারও প্রমাণ হবে বলে মনে করেন দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপি নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে জয়ী হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এবার সিটি নির্বাচনগুলোর দিকে জনগণ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ নজর রাখবে। বিএনপি নেতাদের দাবি, ‘বিগত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা, ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধীপক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে না দেওয়ার ঘটনাগুলো সরকারের বিপক্ষে গেছে। ভোট নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও বিভিন্ন মহল থেকে আসছে। এবার তিন সিটির নির্বাচনেও যদি সরকার একই ধরনের কৌশল নেয়, তাহলে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) আরও কলঙ্কিত হবে। এ পরিস্থিতিতে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে করতে বিএনপির দাবি আরও জোরালো হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। তারা সব নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের প্রতিবাদ করতে মাঝেমধ্যে তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করেছিলেন। এবার তারা তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে দাবি করেন তিনি।

বিগত তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থীরা দুপুরের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ভোট কারচুপি, অনিয়ম, কেন্দ্র দখল এবং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। তবে ভোট গণনা শেষে বিএনপি প্রার্থীরা বিপুল ভোট পাওয়ায় ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের অনেকে। নেতাদের অনেকে বলেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকলে তিন সিটির মধ্যে এক-দুটিতে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হতে পারতেন।

অবশ্য এবার বিএনপি প্রার্থীরা সরকারের নানা দুর্নীতি, ডেঙ্গুসহ রাজধানীর সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা সামনে এনে বিএনপি প্রার্থী কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।