ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




এরশাদের জন্য দোয়া চেয়েছেন রওশন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯ ৯১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হু্সেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকাহত তার পরিবার এবং জাতীয় পার্টির নিযুত নেতাকর্মী। তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তার স্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। রোববার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিত হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এ দোয়া চান।

রোববার সকাল পৌনে ৮টায় এরশাদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। ২৬ জুন থেকে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে এরই মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছেছেন তার পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদও বাবার জন্য দোয়া চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। তাকে যেন আল্লাহ বেহেশত নসিব করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় মসজিদে। এর পর পর্যায়ক্রমে সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর হেলিকপ্টারযোগে মরদেহ রংপুরে নেয়া হবে। সেখানে চতুর্থ জানাজা শেষে এরশাদকে ঢাকায় এনে সেনাবাহিনী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

৯ বছরের সফল শাসক এরশাদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।

মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ সময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। এ কারণে গত প্রায় ছয় মাস ধরে রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন তিনি। দলের বিশেষ কর্মসূচিগুলোতে তাকে হুইলচেয়ারে করে আসতে দেখা গেছে।

এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও শপথ অনুষ্ঠানে যাননি এরশাদ। পরে তিনি হুইলচেয়ারে করে সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে শপথ নেন। অসুস্থতার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েও একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনে যেতে পারেননি সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

২৬ জুন অসুস্থতা বেড়ে গেলে এরশাদ নিজেই ব্যক্তিগত সহকারীদের নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যান। প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে রক্তের রোগ মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। ৮৯ বছর বয়স্ক এরশাদের অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছিল না।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি ঘটলে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) নেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এরশাদের অধিকাংশ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই কাজ করছে না।

তার অবস্থার অবনতি ঘটলে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করাসহ এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, বিদেশ নেয়ার মতো অবস্থায় নেই এরশাদ। এ কারণে সিএমএইচ হাসপাতালেই তার চিকিৎসা দেয়া হয়।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালুসহ ৯ বছরের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর পর গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকেন।

কারাগারে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে রংপুর থেকে কোনো নির্বাচনেই হারেননি পল্লীবন্ধু এরশাদ।

দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদেও জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের আসনে। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদমর্যাদায় ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসান।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




এরশাদের জন্য দোয়া চেয়েছেন রওশন

আপডেট সময় : ১২:৪৯:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক; 
সাবেক রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হু্সেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোকাহত তার পরিবার এবং জাতীয় পার্টির নিযুত নেতাকর্মী। তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তার স্ত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। রোববার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিত হাসপাতালে তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এ দোয়া চান।

রোববার সকাল পৌনে ৮টায় এরশাদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। ২৬ জুন থেকে তিনি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে এরই মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছেছেন তার পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা।

সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। এরশাদের ছেলে এরিক এরশাদও বাবার জন্য দোয়া চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। তাকে যেন আল্লাহ বেহেশত নসিব করেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় মসজিদে। এর পর পর্যায়ক্রমে সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পর হেলিকপ্টারযোগে মরদেহ রংপুরে নেয়া হবে। সেখানে চতুর্থ জানাজা শেষে এরশাদকে ঢাকায় এনে সেনাবাহিনী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

৯ বছরের সফল শাসক এরশাদের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।

মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাকে দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ সময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। এ কারণে গত প্রায় ছয় মাস ধরে রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন তিনি। দলের বিশেষ কর্মসূচিগুলোতে তাকে হুইলচেয়ারে করে আসতে দেখা গেছে।

এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও শপথ অনুষ্ঠানে যাননি এরশাদ। পরে তিনি হুইলচেয়ারে করে সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে শপথ নেন। অসুস্থতার কারণে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েও একাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনে যেতে পারেননি সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

২৬ জুন অসুস্থতা বেড়ে গেলে এরশাদ নিজেই ব্যক্তিগত সহকারীদের নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যান। প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে রক্তের রোগ মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন। ৮৯ বছর বয়স্ক এরশাদের অস্থিমজ্জা পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন উৎপাদন করতে পারছিল না।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি ঘটলে লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) নেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, এরশাদের অধিকাংশ অঙ্গপ্রত্যঙ্গই কাজ করছে না।

তার অবস্থার অবনতি ঘটলে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে পাঠাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করাসহ এ-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, বিদেশ নেয়ার মতো অবস্থায় নেই এরশাদ। এ কারণে সিএমএইচ হাসপাতালেই তার চিকিৎসা দেয়া হয়।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালুসহ ৯ বছরের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর পর গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকেন।

কারাগারে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে রংপুর থেকে কোনো নির্বাচনেই হারেননি পল্লীবন্ধু এরশাদ।

দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদেও জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের আসনে। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদমর্যাদায় ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসান।