ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




হলি আর্টিজান হামলার তিন বছর, নব্য জেএমবি দুর্বল হলেও ‘লোন উলফ’ নিয়ে ভয়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪১:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০১৯ ৮০ বার পড়া হয়েছে
হলি আর্টিজান সূত্রেই জঙ্গি দমনে সফলতা, চার্জশিটের পর জড়িত আর কাউকে মেলেনি

প্রধান প্রতিবেদকঃ

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের তদন্ত শেষে গত বছর আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হলেও তদন্তকারীদের সন্দেহ ছিল, এই ঘটনার সঙ্গে আরো জঙ্গির সম্পৃক্ততা পাওয়া যেতে পারে। তবে চার্জশিট দাখিলের এক বছর পার হলেও আর কোনো জঙ্গির হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত থাকার তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হলি আর্টিজান হামলার পর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শী নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে দুই বছরের অভিযানে সংগঠনটির নেতৃত্ব পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখন নব্য জেএমবির যেমন শক্তিশালী কাঠামো নেই, তেমনি নেই একক নেতৃত্বও। তবে দেশে জঙ্গি মতাদর্শী কিছু মানুষ আছে যারা ‘লোন উলফ’ বা একাকী হামলা চালাতে পারে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের তদন্তকারীরা এমনই দাবি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বব্যাপী আলোচিত হলি আর্টিজান হামলার তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হলি আর্টিজান হামলায় নব্য জেএমবির বড় নাশকতার পরিকল্পনা সামনে আসে। এরপর দেশব্যাপী অভিযানে হলি আর্টিজানে জড়িত ১৩ শীর্ষ জঙ্গিসহ নিহত হয়েছে শতাধিক। এই মামলায় জীবিত ছয় আসামি চার্জশিটের আগে এবং দুই আসামি চার্জশিটের পরে গ্রেপ্তার হয়েছে। আইএসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংগঠনের একজন প্রধান থাকার দাবি করা হলেও তদন্তে ভারতের কাশ্মীরকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের তথ্যই পাচ্ছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। তবে সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার কারণে বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে ঝুঁকি নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে। তাই এখন সচেতনতা ও সতর্কতা বাড়ানোই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বলেছিলাম, জীবিত আটজনের বাইরে তদন্তে কারো নাম তদন্তে আসতে পারে। তখন সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। পরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুজনকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে নতুন কোনো তথ্য বা অন্য কাউকে অভিযুক্ত করার মতো বা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাইনি।’ গতকাল রবিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ে রিপোর্টিং এবং রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন।

ছোট দলে নব্য জেএমবি

নব্য জেএমবির বর্তমান নেতৃত্ব এবং ভারত উপমহাদেশে আইএসের বাংলাদেশি নেতা থাকার দাবি প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, নব্য জেএমবির নেতৃত্ব এখন ভেঙে গেছে। সবার নেতা এমন কেউ নেই। ছোট ছোট দলে ভিন্ন ভিন্ন নেতা আছে। এখন তারা সংগঠিত হয়ে নয়, অনেকটা লোন উলফ ধরনের হামলা করতে পারে। আর আইএসের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি কাশ্মীর রাজ্য বা ভারতে; আমাদের এখানে নেই।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে হামলার সময় তামিম আহমেদ চৌধুরী, সারোয়ার জাহান মানিকসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নব্য জেএমবির নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাইনুল ইসলাম মূসা, আইয়ুব বাচ্চু এবং পান্থপথে অলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আকরাম খান নিলয়সহ কয়েকজন আমিরের দায়িত্ব পায়। সিরিয়ায় চলে যাওয়া চিকিৎসক রেজোয়ান, নিলয়সহ কয়েকজন নব্য জেএমবিতে অর্থিক সহায়তা দেন। হামলার জন্য তাঁদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থাকলেও হলি আর্টজানের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের অভিযুক্ত করার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি।

হলি আর্টিজান-পরবর্তী অভিযান প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল হলি আর্টিজান স্টাইলে আরো কিছু সহিংস ঘটনা ঘটানোর। কিন্তু প্রো-অ্যাকটিভ ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে তাদের সেই পরিকল্পনাগুলো অভিযান চালিয়ে রুখে দেওয়া হয়েছে। হলি আর্টিজানের পরবর্তী শোলাকিয়ার ঘটনা বাদ দিলে সিলেটে একটি ঘটনা আছে, যেটি সেকেন্ডারি অ্যাটাক। সেটি ছাড়া আর বড় কোনো ঘটনা বাংলাদেশ ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় ঘটনাপ্রবাহের কারণে অনেক সময় জঙ্গিরা অনুপ্রাণিত হয়, কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। আইএসের টেরিটরি লস বা ফিজিক্যাল ডিফিট ইরাক ও সিরিয়ায় হয়ে গেছে। তবে নিউজিল্যান্ডে যখন আক্রমণ হলো তখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের যারা ঝিমিয়ে পড়েছিল, বা যারা তাদের সিমপ্যাথাইজার তাদের ভেতর এক ধরনের আলোড়ন লক্ষ করেছি। সর্বশেষ যে ঘটনাটি আরো বেশি জঙ্গিবাদীদের জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা বলা যায় সেটি হলো শ্রীলঙ্কায় হামলা।

দুই বছরে তছনছ, এর পরও হুমকি

একাধিক সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান হামলার পর ২০১৬ সালে ৯টি অভিযানে ৫৫ জন এবং ২০১৭ সালে ১৮টি অভিযানে ৩৮ জন জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। সিলেটে অভিযান চলাকালে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। এরপর জঙ্গিদের এমন সক্রিয় হামলা দেখা যায়নি। গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে এবং ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের ওপর ককটেল বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনার পর আইএসের পক্ষে কথিত দায় স্বীকার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘এই দুটি যে জঙ্গি হামলা তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, তাহলেও বোঝা যাবে যে জঙ্গিরা দুর্বল হয়েছে। ব্যবহৃত বোমা বা ধরন ছিল অনেকটাই সাধারণ।’

দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের আমরা দমন করতে পেরেছি। কিন্তু জঙ্গিবাদ অর্থাৎ এ আইডিওলজিতে বিশ্বাস করা লোক এখনো সমাজে বিদ্যমান। যতক্ষণ পর্যন্ত এই আইডিওলজিতে বিশ্বাসী লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকি থাকবে। তবে সেই ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করবে তাদের সক্ষমতার ওপর।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গুলশান হামলার ঘটনাকে ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা বলাটা ঠিক হবে না। আমাদের কাছে কিছু তথ্য ছিল। কিন্তু সে তথ্য সুনির্দিষ্ট ছিল না। দূতাবাসগুলোয় একটা হামলা হতে পারে—এ রকম একটি ভাসা ভাসা তথ্য আমাদের কাছে ছিল, সে জন্য আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছিলাম।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। তারা দেশি-বিদেশি ২০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। আগের দিন হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের এএসপি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহম্মেদ নিহত হন। দুই বছর ২২ দিন পর গত বছরের ২৪ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিটিটিসি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হলি আর্টিজান হামলার তিন বছর, নব্য জেএমবি দুর্বল হলেও ‘লোন উলফ’ নিয়ে ভয়

আপডেট সময় : ০৯:৪১:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০১৯
হলি আর্টিজান সূত্রেই জঙ্গি দমনে সফলতা, চার্জশিটের পর জড়িত আর কাউকে মেলেনি

প্রধান প্রতিবেদকঃ

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা ও লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞের তদন্ত শেষে গত বছর আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হলেও তদন্তকারীদের সন্দেহ ছিল, এই ঘটনার সঙ্গে আরো জঙ্গির সম্পৃক্ততা পাওয়া যেতে পারে। তবে চার্জশিট দাখিলের এক বছর পার হলেও আর কোনো জঙ্গির হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত থাকার তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হলি আর্টিজান হামলার পর ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শী নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে দুই বছরের অভিযানে সংগঠনটির নেতৃত্ব পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখন নব্য জেএমবির যেমন শক্তিশালী কাঠামো নেই, তেমনি নেই একক নেতৃত্বও। তবে দেশে জঙ্গি মতাদর্শী কিছু মানুষ আছে যারা ‘লোন উলফ’ বা একাকী হামলা চালাতে পারে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের তদন্তকারীরা এমনই দাবি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বব্যাপী আলোচিত হলি আর্টিজান হামলার তিন বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হলি আর্টিজান হামলায় নব্য জেএমবির বড় নাশকতার পরিকল্পনা সামনে আসে। এরপর দেশব্যাপী অভিযানে হলি আর্টিজানে জড়িত ১৩ শীর্ষ জঙ্গিসহ নিহত হয়েছে শতাধিক। এই মামলায় জীবিত ছয় আসামি চার্জশিটের আগে এবং দুই আসামি চার্জশিটের পরে গ্রেপ্তার হয়েছে। আইএসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সংগঠনের একজন প্রধান থাকার দাবি করা হলেও তদন্তে ভারতের কাশ্মীরকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের তথ্যই পাচ্ছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। তবে সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার কারণে বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে ঝুঁকি নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে। তাই এখন সচেতনতা ও সতর্কতা বাড়ানোই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বলেছিলাম, জীবিত আটজনের বাইরে তদন্তে কারো নাম তদন্তে আসতে পারে। তখন সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। পরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুজনকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে নতুন কোনো তথ্য বা অন্য কাউকে অভিযুক্ত করার মতো বা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাইনি।’ গতকাল রবিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ে রিপোর্টিং এবং রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন।

ছোট দলে নব্য জেএমবি

নব্য জেএমবির বর্তমান নেতৃত্ব এবং ভারত উপমহাদেশে আইএসের বাংলাদেশি নেতা থাকার দাবি প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, নব্য জেএমবির নেতৃত্ব এখন ভেঙে গেছে। সবার নেতা এমন কেউ নেই। ছোট ছোট দলে ভিন্ন ভিন্ন নেতা আছে। এখন তারা সংগঠিত হয়ে নয়, অনেকটা লোন উলফ ধরনের হামলা করতে পারে। আর আইএসের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি কাশ্মীর রাজ্য বা ভারতে; আমাদের এখানে নেই।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে হামলার সময় তামিম আহমেদ চৌধুরী, সারোয়ার জাহান মানিকসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নব্য জেএমবির নেতৃত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মাইনুল ইসলাম মূসা, আইয়ুব বাচ্চু এবং পান্থপথে অলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আকরাম খান নিলয়সহ কয়েকজন আমিরের দায়িত্ব পায়। সিরিয়ায় চলে যাওয়া চিকিৎসক রেজোয়ান, নিলয়সহ কয়েকজন নব্য জেএমবিতে অর্থিক সহায়তা দেন। হামলার জন্য তাঁদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থাকলেও হলি আর্টজানের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদের অভিযুক্ত করার মতো তথ্য পাওয়া যায়নি।

হলি আর্টিজান-পরবর্তী অভিযান প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল হলি আর্টিজান স্টাইলে আরো কিছু সহিংস ঘটনা ঘটানোর। কিন্তু প্রো-অ্যাকটিভ ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে তাদের সেই পরিকল্পনাগুলো অভিযান চালিয়ে রুখে দেওয়া হয়েছে। হলি আর্টিজানের পরবর্তী শোলাকিয়ার ঘটনা বাদ দিলে সিলেটে একটি ঘটনা আছে, যেটি সেকেন্ডারি অ্যাটাক। সেটি ছাড়া আর বড় কোনো ঘটনা বাংলাদেশ ঘটেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় ঘটনাপ্রবাহের কারণে অনেক সময় জঙ্গিরা অনুপ্রাণিত হয়, কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়। আইএসের টেরিটরি লস বা ফিজিক্যাল ডিফিট ইরাক ও সিরিয়ায় হয়ে গেছে। তবে নিউজিল্যান্ডে যখন আক্রমণ হলো তখন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদীদের যারা ঝিমিয়ে পড়েছিল, বা যারা তাদের সিমপ্যাথাইজার তাদের ভেতর এক ধরনের আলোড়ন লক্ষ করেছি। সর্বশেষ যে ঘটনাটি আরো বেশি জঙ্গিবাদীদের জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা বলা যায় সেটি হলো শ্রীলঙ্কায় হামলা।

দুই বছরে তছনছ, এর পরও হুমকি

একাধিক সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান হামলার পর ২০১৬ সালে ৯টি অভিযানে ৫৫ জন এবং ২০১৭ সালে ১৮টি অভিযানে ৩৮ জন জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। সিলেটে অভিযান চলাকালে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদসহ ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। এরপর জঙ্গিদের এমন সক্রিয় হামলা দেখা যায়নি। গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে এবং ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের ওপর ককটেল বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনার পর আইএসের পক্ষে কথিত দায় স্বীকার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘এই দুটি যে জঙ্গি হামলা তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, তাহলেও বোঝা যাবে যে জঙ্গিরা দুর্বল হয়েছে। ব্যবহৃত বোমা বা ধরন ছিল অনেকটাই সাধারণ।’

দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের আমরা দমন করতে পেরেছি। কিন্তু জঙ্গিবাদ অর্থাৎ এ আইডিওলজিতে বিশ্বাস করা লোক এখনো সমাজে বিদ্যমান। যতক্ষণ পর্যন্ত এই আইডিওলজিতে বিশ্বাসী লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকি থাকবে। তবে সেই ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করবে তাদের সক্ষমতার ওপর।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘গুলশান হামলার ঘটনাকে ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা বলাটা ঠিক হবে না। আমাদের কাছে কিছু তথ্য ছিল। কিন্তু সে তথ্য সুনির্দিষ্ট ছিল না। দূতাবাসগুলোয় একটা হামলা হতে পারে—এ রকম একটি ভাসা ভাসা তথ্য আমাদের কাছে ছিল, সে জন্য আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছিলাম।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায়। তারা দেশি-বিদেশি ২০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়। আগের দিন হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের এএসপি রবিউল করিম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহম্মেদ নিহত হন। দুই বছর ২২ দিন পর গত বছরের ২৪ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করে সিটিটিসি।