ঢাকা ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ




কেমন আছেন সেই জজ মিয়া?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:১০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অগাস্ট ২০২০ ১০৪ বার পড়া হয়েছে

জাহিদ হাসান রনিঃ ২০০৪ সালের আজকের এই দিনে (২১ আগস্ট) তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রথম থেকেই। আর এই আষাঢ়ের গল্পের নায়ক বানানো হয়েছিল নিরীহ তরুণ জালাল আহমেদ ওরফে জজ মিয়াকে।

নোয়াখালীর সেনবাগের গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়েছিল তাকে। এরপর নির্মম নির্যাতন আর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদালতে দেয়া হয়েছিল শেখানো গ্রেনেড হামলার স্বীকারোক্তি। বিএনপি-জামায়াত জোটের গ্রেনেড হামলার কুশীলবদের বাঁচাতেই তৎকালীন সিআইডি কর্মকর্তাদের এমন অপতৎপরতার বলি হয় জজ মিয়া।

তবে ২০০৬ সালের আগস্টে এর পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার ছোট বোন খোরশেদা বেগম। তিনি বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সিআইডি তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি। এরপর জোট সরকার আর ‘জজ মিয়া গল্প’ নিয়ে এগোতে পারেনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এই মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেওয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া জজ মিয়া, পার্থসহ ২০ জনকে।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন জজ মিয়া। করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। বিয়ে করেছেন, এক কন্যা সন্তানের বাবাও হয়েছেন। গ্রেনেড হামলার মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ায় জজ মিয়ার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও শরীরের লোমগুলো খাড়া হয়ে যায় তার।

জজ মিয়া বলেন, আমি দোষী না হয়েও প্রায় পাঁচ বছর জেল খেটেছি। আর সিআইডিতে রিমান্ডে থাকাবস্থায় আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার ব্যথা এখনো টের পাই। মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য আমারে চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ওপর দিয়ে যে অমানুষিক নির্যাতন গেছে, যে সর্বনাশ হয়েছে, এমন সর্বনাশ যেন কোনো দিন আমার শত্রুরও না হয়। তাছাড়া সরকার যদি আমাকে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তবে একটু ভালো হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




কেমন আছেন সেই জজ মিয়া?

আপডেট সময় : ০৬:১০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অগাস্ট ২০২০

জাহিদ হাসান রনিঃ ২০০৪ সালের আজকের এই দিনে (২১ আগস্ট) তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় প্রথম থেকেই। আর এই আষাঢ়ের গল্পের নায়ক বানানো হয়েছিল নিরীহ তরুণ জালাল আহমেদ ওরফে জজ মিয়াকে।

নোয়াখালীর সেনবাগের গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়েছিল তাকে। এরপর নির্মম নির্যাতন আর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদালতে দেয়া হয়েছিল শেখানো গ্রেনেড হামলার স্বীকারোক্তি। বিএনপি-জামায়াত জোটের গ্রেনেড হামলার কুশীলবদের বাঁচাতেই তৎকালীন সিআইডি কর্মকর্তাদের এমন অপতৎপরতার বলি হয় জজ মিয়া।

তবে ২০০৬ সালের আগস্টে এর পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার ছোট বোন খোরশেদা বেগম। তিনি বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর থেকে সিআইডি তাঁর পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি। এরপর জোট সরকার আর ‘জজ মিয়া গল্প’ নিয়ে এগোতে পারেনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এই মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেওয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া জজ মিয়া, পার্থসহ ২০ জনকে।

বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন জজ মিয়া। করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। বিয়ে করেছেন, এক কন্যা সন্তানের বাবাও হয়েছেন। গ্রেনেড হামলার মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ায় জজ মিয়ার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। বিভীষিকাময় নির্যাতনের কথা মনে হলে এখনও শরীরের লোমগুলো খাড়া হয়ে যায় তার।

জজ মিয়া বলেন, আমি দোষী না হয়েও প্রায় পাঁচ বছর জেল খেটেছি। আর সিআইডিতে রিমান্ডে থাকাবস্থায় আমাকে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার ব্যথা এখনো টের পাই। মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য আমারে চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ওপর দিয়ে যে অমানুষিক নির্যাতন গেছে, যে সর্বনাশ হয়েছে, এমন সর্বনাশ যেন কোনো দিন আমার শত্রুরও না হয়। তাছাড়া সরকার যদি আমাকে কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তবে একটু ভালো হয়।