ঢাকা ০৮:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার! Logo ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর সংস্কার শুরু Logo বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির দাবিতে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের মানববন্ধন Logo কুবি উপাচার্যের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে শিক্ষক সমিতির সাত দিনের আল্টিমেটাম




এটিএম বুথে জালিয়াতিঃ গতিহীন তদন্তে চার্জশিট হয়নি তিন বছরেও

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০২:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০১৯ ৭৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;

তিন বছর আগে ব্যাংকের অটোমেটেড ট্রেলার মেশিন (এটিএম) ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্র। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নতুন ওই জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংক খাতে তোলপাড় হয়। চক্রের অন্যতম হোতা বিদেশি পিওটর সিজোফেন মুজারেক গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ঢাকার বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা হয়। কিন্তু তিন বছর পার হলেও রহস্যজনক কারণে সে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি, চার্জশিটও দিতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যেই ৩১ মে ফের বিদেশি চক্র ঢাকায় এটিএম জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিতে গিয়ে ধরা পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া জার্মানির নাগরিক পিওটর কারাগারে থাকলেও এরই মধ্যে দুটি মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে জালিয়াত চক্রের মূল সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নাবির। এ ছাড়া ইউক্রেনের এন্ড্রি নামে ও রোমানিয়ার রোমিওর নাম বেরিয়ে আসে। পিওটর জবানবন্দিতে বলেছিল, গুলশান থানার তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক (তৎকালীন) ফিরোজ কবির তাদের পুরো অপকর্মের সহযোগী ছিল। তবে তাকে গ্রেফতারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে পিওটরের চক্রটি। তারা গুলশান, বনানী ও কালশীর চারটি বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি এবং পরে ক্লোন কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নেয়। গ্রাহকের হিসাবে গরমিল হলে বিষয়টি পরে ধরা পড়ে। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের টনক নড়ার পাশাপাশি চক্রের সদস্যদের ধরতে সক্রিয় হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পিওটরকে গ্রেফতার করলে বেরিয়ে আসে শুধু এটিএম মেশিনই নয়; তারকা মানের আবাসিক হোটেলে পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন বসিয়েও ওই চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকগুলো গ্রাহক অসন্তুষ্টির কথা চিন্তা করে তা চেপে যায়। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড শাখার আরও তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শুরুর দিকে ওই ঘটনায় করা মামলাগুলো তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। পরে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায়। বনানী থানায় আইসিটি অ্যাক্টে করা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, তাদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে পলাতক এন্ড্রি এবং রোমিওর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখনও না পাওয়ায় চার্জশিট দিতে বিলম্ব হচ্ছে।

পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তারা তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন ফরিদ নাবির এই জালিয়াত চক্রের সমন্বয়কারী। তার হাত ধরেই পিওটর, এন্ড্রি ও রোমিও ঢাকায় আসে। তারা ব্যাংক জালিয়াতির জন্য গুলশানের বিভিন্ন হোটেলে বৈঠকও করে। জালিয়াতির ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের সবাইকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হবে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ফরিদ নাবির, এন্ড্রি ও রোমিওকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় ইন্টারপোল উদ্যোগ নেয়নি। চার্জশিট দেওয়ার পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে নতুন করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




এটিএম বুথে জালিয়াতিঃ গতিহীন তদন্তে চার্জশিট হয়নি তিন বছরেও

আপডেট সময় : ০২:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক;

তিন বছর আগে ব্যাংকের অটোমেটেড ট্রেলার মেশিন (এটিএম) ও পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্র। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নতুন ওই জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংক খাতে তোলপাড় হয়। চক্রের অন্যতম হোতা বিদেশি পিওটর সিজোফেন মুজারেক গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ঢাকার বিভিন্ন থানায় কয়েকটি মামলা হয়। কিন্তু তিন বছর পার হলেও রহস্যজনক কারণে সে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি, চার্জশিটও দিতে পারেনি পুলিশ। এর মধ্যেই ৩১ মে ফের বিদেশি চক্র ঢাকায় এটিএম জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিতে গিয়ে ধরা পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউক্রেনে জন্ম নেওয়া জার্মানির নাগরিক পিওটর কারাগারে থাকলেও এরই মধ্যে দুটি মামলায় আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারের পর আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে জালিয়াত চক্রের মূল সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নাবির। এ ছাড়া ইউক্রেনের এন্ড্রি নামে ও রোমানিয়ার রোমিওর নাম বেরিয়ে আসে। পিওটর জবানবন্দিতে বলেছিল, গুলশান থানার তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক (তৎকালীন) ফিরোজ কবির তাদের পুরো অপকর্মের সহযোগী ছিল। তবে তাকে গ্রেফতারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পুলিশ জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করে পিওটরের চক্রটি। তারা গুলশান, বনানী ও কালশীর চারটি বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি এবং পরে ক্লোন কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নেয়। গ্রাহকের হিসাবে গরমিল হলে বিষয়টি পরে ধরা পড়ে। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের টনক নড়ার পাশাপাশি চক্রের সদস্যদের ধরতে সক্রিয় হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পিওটরকে গ্রেফতার করলে বেরিয়ে আসে শুধু এটিএম মেশিনই নয়; তারকা মানের আবাসিক হোটেলে পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন বসিয়েও ওই চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকগুলো গ্রাহক অসন্তুষ্টির কথা চিন্তা করে তা চেপে যায়। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কার্ড শাখার আরও তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শুরুর দিকে ওই ঘটনায় করা মামলাগুলো তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। পরে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায়। বনানী থানায় আইসিটি অ্যাক্টে করা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিটিটিসির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম সমকালকে বলেন, তাদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে পলাতক এন্ড্রি এবং রোমিওর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এখনও না পাওয়ায় চার্জশিট দিতে বিলম্ব হচ্ছে।

পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তারা তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন ফরিদ নাবির এই জালিয়াত চক্রের সমন্বয়কারী। তার হাত ধরেই পিওটর, এন্ড্রি ও রোমিও ঢাকায় আসে। তারা ব্যাংক জালিয়াতির জন্য গুলশানের বিভিন্ন হোটেলে বৈঠকও করে। জালিয়াতির ঘটনায় যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের সবাইকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হবে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ফরিদ নাবির, এন্ড্রি ও রোমিওকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় ইন্টারপোল উদ্যোগ নেয়নি। চার্জশিট দেওয়ার পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে নতুন করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে।