ঢাকা ১২:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo চাকুরীচ্যুত প্রকৌশলী নাসির বহাল তবিয়তে পায়রা বন্দরে: গড়েছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়!  Logo যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সকল দলকে নিয়ে বিএনপির যৌথসভা Logo ১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে বরিশাল-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী স্বপনের মনোনয়নপত্র দাখিল Logo রাজপথ বিএনপির দখলে না থাকলেও বিটিভি  বিএনপি জামায়াতের দখলে! Logo দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বেস্ট হোল্ডিং Logo অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএম সৈয়দ সালমা উসমানের বেপরোয়া দুর্নীতি! Logo বরিশালের বাকেরগঞ্জে পল্লী চিকিৎসকের ঘরে লুটপাট Logo ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন এখন করাপশনের ত্রিমুখী জুটি Logo মনোনয়নপ্রত্যাশী ৩৩৬২ জনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন শেখ হাসিনা Logo থিয়েটার কুবি’র নেতৃত্বে সুইটি-হান্নান




হোটেলের পার্টিতে ভিআইপিদের রুপের জালে ফাঁসিয়ে বাসায় ঢুকে চুরি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৩১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯ ১২৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক;
কখনও তার নাম তানিয়া, কখনও এ্যানি। নদী, সাদিয়া, ডা. নওশীন আরও কত কী? প্রথম দেখায় যে কারও-ই চোখ আটকে যায় গাজীপুরের মেয়েটির প্রতি। বাহ্যিক সৌন্দর্যে সবাইকে মুগ্ধ করে ঢাকার অভিজাত আবাসিক হোটেল, পার্টি সেন্টারগুলোতে হাজির হন তিনি। মূল লক্ষ্য, বিত্তবানদের টাগের্ট করে তাদের বাসা পর্যন্ত যাওয়া এবং সুযোগ বুঝে চুরি করে সরে পড়া।

ঢাকা শহরে ২০টির বেশি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে মেয়েটি। রাজধানীতে তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে চারটি মিরপুর থানায়, একটি দারুস সালাম, একটি আদাবর, একটি তেজগাঁও, দুটি মোহাম্মদপুর, একটি নিউ মার্কেট এবং একটি দক্ষিণখান থানায়।

সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে গিয়ে ডিবি তানিয়ার সন্ধান পায়। ডিবি জানতে পারে, তানিয়া প্রথমে বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুর সঙ্গে আগে একবার ওই বাসায় যান। সে সময় থেকে তার চুরির টার্গেট। এরপর বাসার সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে মেয়েটি।

চুরির উদ্দেশ্যে বাসায় প্রবেশের সময় দারোয়ানের কাছে মেয়েটি নিজেকে ডা. তানিয়া এবং বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দেন। বাড়িতে প্রবেশের পর বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের সঙ্গে আরেক অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেন। বলেন, তিনি ওমান থেকে এসেছেন, তার কাছে থাকা বেশকিছু ডলার রাখার মতো নিরাপদ জায়গা না থাকায় এখানে এসেছেন। প্রথমে রাজি না হলেও একপর্যায়ে বৃদ্ধ আঙ্কেল রাজি হয়ে খুলে দেন আলমারি। সে সুযোগে তানিয়া নিয়ে নেন নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার।

ঢাকার রেডিসন হোটেলের এক পার্টিতে একজনের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে দ্বিতীয় বাসায় প্রবেশ করেন তানিয়া। চুরি করেন একই কৌশলে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ডিবিকে জানান, সাধারণত চুরি করতে যাওয়ার সময় তিনি তার বিশ্বস্ত এক উবার ড্রাইভার কামালকে ফোন দিয়ে আগে থেকে জানান। অপর সহযোগী আসিফ ড্রাইভার কামালকে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

দীর্ঘ তদন্তের পর অবশেষে রোববার রাতে তানিয়াকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তার ড্রাইভার কালাম, সহযোগী আসিফ, দুলারি ওরফে আফসানাকে। গ্রেফতারের সময় তার ব্যাগ থেকে প্রায় ছয় ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, চোরাই স্বর্ণ বিক্রির দেড় লাখ টাকা এবং চুরির কাজে ব্যবহৃত উবারচালিত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারের পর ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তানিয়াকে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চলে রাজধানীর মাসকট প্লাজার একটি স্বর্ণের দোকানে। এরপর ওই দোকানের কর্মচারী রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়। রায়হান তানিয়ার চোরাই স্বর্ণ কিনে বিক্রি করে। তার কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ ভরির গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

কেন চুরির পথ বেছে নিলেন- ডিবি কার্যালয়ে অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদে তানিয়া শিকদার বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল নায়িকা হওয়ার। কিন্তু সেটা হতে এসে বিভিন্নজনের কাছে প্রতারিত হয়েছি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেই।’

তানিয়ার গ্রেফতার হওয়া বা জেল খাটা এবারই প্রথম নয়। এর আগে দু’দফায় প্রথমে পাঁচ মাস এবং পরে তিন মাস জেল খেটেছেন বলে জানান এই নারী।

ডিবি উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসায় স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ অর্থ চুরি হয়। ওই ঘটনায় ভাটারা থানায় দুটি মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও ওই চোরচক্রকে খুঁজতে মাঠে নামে। দীর্ঘ তদন্ত ও অভিযানের পর তানিয়া ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতারে সফল হয় ডিবি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




হোটেলের পার্টিতে ভিআইপিদের রুপের জালে ফাঁসিয়ে বাসায় ঢুকে চুরি

আপডেট সময় : ০৫:৩১:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক;
কখনও তার নাম তানিয়া, কখনও এ্যানি। নদী, সাদিয়া, ডা. নওশীন আরও কত কী? প্রথম দেখায় যে কারও-ই চোখ আটকে যায় গাজীপুরের মেয়েটির প্রতি। বাহ্যিক সৌন্দর্যে সবাইকে মুগ্ধ করে ঢাকার অভিজাত আবাসিক হোটেল, পার্টি সেন্টারগুলোতে হাজির হন তিনি। মূল লক্ষ্য, বিত্তবানদের টাগের্ট করে তাদের বাসা পর্যন্ত যাওয়া এবং সুযোগ বুঝে চুরি করে সরে পড়া।

ঢাকা শহরে ২০টির বেশি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে মেয়েটি। রাজধানীতে তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে চারটি মিরপুর থানায়, একটি দারুস সালাম, একটি আদাবর, একটি তেজগাঁও, দুটি মোহাম্মদপুর, একটি নিউ মার্কেট এবং একটি দক্ষিণখান থানায়।

সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাটে চুরি হয়। সেই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে গিয়ে ডিবি তানিয়ার সন্ধান পায়। ডিবি জানতে পারে, তানিয়া প্রথমে বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুর সঙ্গে আগে একবার ওই বাসায় যান। সে সময় থেকে তার চুরির টার্গেট। এরপর বাসার সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে মেয়েটি।

চুরির উদ্দেশ্যে বাসায় প্রবেশের সময় দারোয়ানের কাছে মেয়েটি নিজেকে ডা. তানিয়া এবং বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দেন। বাড়িতে প্রবেশের পর বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের সঙ্গে আরেক অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেন। বলেন, তিনি ওমান থেকে এসেছেন, তার কাছে থাকা বেশকিছু ডলার রাখার মতো নিরাপদ জায়গা না থাকায় এখানে এসেছেন। প্রথমে রাজি না হলেও একপর্যায়ে বৃদ্ধ আঙ্কেল রাজি হয়ে খুলে দেন আলমারি। সে সুযোগে তানিয়া নিয়ে নেন নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার।

ঢাকার রেডিসন হোটেলের এক পার্টিতে একজনের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে দ্বিতীয় বাসায় প্রবেশ করেন তানিয়া। চুরি করেন একই কৌশলে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ডিবিকে জানান, সাধারণত চুরি করতে যাওয়ার সময় তিনি তার বিশ্বস্ত এক উবার ড্রাইভার কামালকে ফোন দিয়ে আগে থেকে জানান। অপর সহযোগী আসিফ ড্রাইভার কামালকে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।

দীর্ঘ তদন্তের পর অবশেষে রোববার রাতে তানিয়াকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় তার ড্রাইভার কালাম, সহযোগী আসিফ, দুলারি ওরফে আফসানাকে। গ্রেফতারের সময় তার ব্যাগ থেকে প্রায় ছয় ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, চোরাই স্বর্ণ বিক্রির দেড় লাখ টাকা এবং চুরির কাজে ব্যবহৃত উবারচালিত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

গ্রেফতারের পর ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তানিয়াকে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চলে রাজধানীর মাসকট প্লাজার একটি স্বর্ণের দোকানে। এরপর ওই দোকানের কর্মচারী রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়। রায়হান তানিয়ার চোরাই স্বর্ণ কিনে বিক্রি করে। তার কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ ভরির গলিত স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

কেন চুরির পথ বেছে নিলেন- ডিবি কার্যালয়ে অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদে তানিয়া শিকদার বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল নায়িকা হওয়ার। কিন্তু সেটা হতে এসে বিভিন্নজনের কাছে প্রতারিত হয়েছি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেই।’

তানিয়ার গ্রেফতার হওয়া বা জেল খাটা এবারই প্রথম নয়। এর আগে দু’দফায় প্রথমে পাঁচ মাস এবং পরে তিন মাস জেল খেটেছেন বলে জানান এই নারী।

ডিবি উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসায় স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ অর্থ চুরি হয়। ওই ঘটনায় ভাটারা থানায় দুটি মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও ওই চোরচক্রকে খুঁজতে মাঠে নামে। দীর্ঘ তদন্ত ও অভিযানের পর তানিয়া ও তার সঙ্গীদের গ্রেফতারে সফল হয় ডিবি।