ঢাকা ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo গোপালগঞ্জে ‘নৌকার দুর্গ’ ভাঙার চ্যালেঞ্জে বিএনপি Logo ফরিদপুরে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ Logo ডিপিডিসির রুহুল আমিন ফকির দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন শতকোটি টাকার সম্পদ Logo উত্তরখানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা Logo খুলনা-৬ আসনে বিএনপির সাক্ষাতের ডাক পেলেন সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী Logo গুলশানে ‘Bliss Art Lounge’-এ অভিযান: প্রচুর বিদেশি মদসহ ৯ জন গ্রেফতার Logo টঙ্গীতে ১১ বছরের ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ নিখোঁজ Logo “স্টার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫” পেলেন দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ Logo খুলনায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ, এলাকায় চাপা উত্তেজনা Logo স্বৈরাচার সরকারের সুবিধাভোগী ‘যশোর বিআরটিএ অফিসের তারিক ধরাছোঁয়ার বাইরে|(পর্ব – ০১)

ছাত্রলীগ কোটা-নিয়োগে বিপর্যস্ত এসেনশিয়াল ড্রাগস, সংস্কারক এমডি সামাদ মৃধা গভীর ষড়যন্ত্রের টার্গেটে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:২১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ ২০৫ বার পড়া হয়েছে

সকালের সংবাদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:

রাষ্ট্রীয় ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) বর্তমানে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ সংকট ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মুখে। প্রতিষ্ঠানটি আজ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি- লুটপাটের ইতিহাস। বিশেষ করে সাবেক স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সেলিম। সেই সময় তার প্রভাবেই প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয় নিয়োগের গ্যারেজে পরিণত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই সময়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী নেতাকর্মীদের, অনেক ক্ষেত্রে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে, যোগ্যতা উপেক্ষা করে চাকরি প্রদান করা হয়। প্রায় কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ পায় শুধুমাত্র দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে। এইসব নিয়োগের পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা, মেধার যাচাই বা স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ছিটেফোঁটাও ছিল না। ফলে, এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি পেশাদারিত্ব হারিয়ে ফেলে এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দখলদারিতে পরিণত হয়।

এই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের অধিকাংশই গোপালগঞ্জ ও আশপাশের জেলা থেকে আগত ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। আজও তারা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছে। সাবেক সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তাদের একটি বড় অংশ চাকরিকে বাণিজ্যে রূপান্তর করে—দৈনিক কাজ না করেও বেতন উত্তোলন, ঠিকাদারি সিন্ডিকেটে অংশগ্রহণ, লজিস্টিকস দুর্নীতি, ফার্মাসিউটিক্যাল মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতিসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমানে তাদের সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে পড়ায় ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে বর্তমান সরকার ও এমডিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া।

স্বৈরাচার মুক্ত পটপরিবর্তনের পর, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় দায়িত্ব পান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সামাদ মৃধা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অতীতের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। তিনি দলীয় নিয়োগ নয়, মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে চান। তার অধীনে শুরু হয় ভুয়া সনদে চাকরি পাওয়া, অবৈধ পদোন্নতি, দায়িত্বে অনুপস্থিতি ও অর্থ লেনদেনের ভিত্তিতে পদ দেওয়া কর্মকর্তাদের তালিকাকরণ ও তদন্ত।

তবে, সামাদ মৃধার এই সংস্কার কর্মসূচি এখন চরম প্রতিরোধের মুখে। পুরনো নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এই চক্রটি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।

বিশেষ করে সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এমপি-মন্ত্রীদের মালিকানাধীন কিছু মিডিয়া হাউজ, যাদের দ্বারা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ঢেকে রাখা হতো, তারা এখন আবার সক্রিয়ভাবে সামাদ মৃধার সংস্কার কার্যক্রমকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন।

স্বাস্থ্য খাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একজন প্রশাসকের বিরুদ্ধে নয় বরং রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানকে দলীয় দখল থেকে মুক্ত করার উদ্যোগকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার জন্য একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

এমডি সামাদ মৃধার অধীনে ইতিমধ্যে কয়েকটি বড় নিয়োগ বাতিল, বিতর্কিত কর্মকর্তা বদলি এবং আগের নিয়োগবিধি পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তার এই সাহসী ও অনমনীয় অবস্থানই আজ তাকে স্বৈরাচারের ছানা পোনাদের কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করে তুলেছে।

এক সময়ের গর্বের প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস আজ নিষিদ্ধ আওয়ামী রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রতীক। সামাদ মৃধার মতো একজন প্রশাসক যখন এটিকে নতুন করে গড়ে তুলতে এগিয়ে আসেন, তখনই তাকে রুখে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী।

আজ এই প্রতিষ্ঠান, শুধু একজন এমডি নয়, বরং জাতির স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে এসেনশিয়াল ড্রাগসকে একটি নিরপেক্ষ, দক্ষ ও দেশসেবায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।

Loading

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :
error: Content is protected !!

ছাত্রলীগ কোটা-নিয়োগে বিপর্যস্ত এসেনশিয়াল ড্রাগস, সংস্কারক এমডি সামাদ মৃধা গভীর ষড়যন্ত্রের টার্গেটে

আপডেট সময় : ০৫:২১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

সকালের সংবাদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:

রাষ্ট্রীয় ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) বর্তমানে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ সংকট ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মুখে। প্রতিষ্ঠানটি আজ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ স্বৈরাচারী সরকারের রাজনৈতিক নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি- লুটপাটের ইতিহাস। বিশেষ করে সাবেক স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সেলিম। সেই সময় তার প্রভাবেই প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয় নিয়োগের গ্যারেজে পরিণত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই সময়ে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী নেতাকর্মীদের, অনেক ক্ষেত্রে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে, যোগ্যতা উপেক্ষা করে চাকরি প্রদান করা হয়। প্রায় কয়েক হাজার কর্মী নিয়োগ পায় শুধুমাত্র দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে। এইসব নিয়োগের পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা, মেধার যাচাই বা স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ছিটেফোঁটাও ছিল না। ফলে, এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি পেশাদারিত্ব হারিয়ে ফেলে এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দখলদারিতে পরিণত হয়।

এই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের অধিকাংশই গোপালগঞ্জ ও আশপাশের জেলা থেকে আগত ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। আজও তারা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান করছে। সাবেক সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তাদের একটি বড় অংশ চাকরিকে বাণিজ্যে রূপান্তর করে—দৈনিক কাজ না করেও বেতন উত্তোলন, ঠিকাদারি সিন্ডিকেটে অংশগ্রহণ, লজিস্টিকস দুর্নীতি, ফার্মাসিউটিক্যাল মান নিয়ন্ত্রণে গাফিলতিসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমানে তাদের সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে পড়ায় ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়ে বর্তমান সরকার ও এমডিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া।

স্বৈরাচার মুক্ত পটপরিবর্তনের পর, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় দায়িত্ব পান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সামাদ মৃধা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অতীতের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। তিনি দলীয় নিয়োগ নয়, মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে চান। তার অধীনে শুরু হয় ভুয়া সনদে চাকরি পাওয়া, অবৈধ পদোন্নতি, দায়িত্বে অনুপস্থিতি ও অর্থ লেনদেনের ভিত্তিতে পদ দেওয়া কর্মকর্তাদের তালিকাকরণ ও তদন্ত।

তবে, সামাদ মৃধার এই সংস্কার কর্মসূচি এখন চরম প্রতিরোধের মুখে। পুরনো নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগপন্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে বিতর্কিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এই চক্রটি শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।

বিশেষ করে সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এমপি-মন্ত্রীদের মালিকানাধীন কিছু মিডিয়া হাউজ, যাদের দ্বারা আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ঢেকে রাখা হতো, তারা এখন আবার সক্রিয়ভাবে সামাদ মৃধার সংস্কার কার্যক্রমকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার প্রচারণায় নেমেছেন।

স্বাস্থ্য খাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একজন প্রশাসকের বিরুদ্ধে নয় বরং রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানকে দলীয় দখল থেকে মুক্ত করার উদ্যোগকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার জন্য একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

এমডি সামাদ মৃধার অধীনে ইতিমধ্যে কয়েকটি বড় নিয়োগ বাতিল, বিতর্কিত কর্মকর্তা বদলি এবং আগের নিয়োগবিধি পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তার এই সাহসী ও অনমনীয় অবস্থানই আজ তাকে স্বৈরাচারের ছানা পোনাদের কর্তৃক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করে তুলেছে।

এক সময়ের গর্বের প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস আজ নিষিদ্ধ আওয়ামী রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রতীক। সামাদ মৃধার মতো একজন প্রশাসক যখন এটিকে নতুন করে গড়ে তুলতে এগিয়ে আসেন, তখনই তাকে রুখে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী।

আজ এই প্রতিষ্ঠান, শুধু একজন এমডি নয়, বরং জাতির স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ রক্ষার সংগ্রামের প্রতীক। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে এসেনশিয়াল ড্রাগসকে একটি নিরপেক্ষ, দক্ষ ও দেশসেবায় নিবেদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।

Loading