বোরহানউদ্দিনে পৌর বিএনপি নেতাদের চাঁদাবাজির অভিযোগ: প্রশাসন নীরব

- আপডেট সময় : ১১:০১:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"square_fit":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

✓ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌর বিএনপি’র নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
✓চাঁদা না দিলে গালাগালি, চড়থাপ্পড়, ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে প্রাননাশের হুমকি ধামকির অভিযোগ
✓ পৌর বিএনপি’র সম্পাদক মনিরুজ্জামান কবিরের নেতৃত্বে চাঁদাবাজির অভিযোগে উদ্বিগ্ন অনেকেই
সকালের সংবাদ প্রতিবেদক: বিগত আগষ্ট মাসে সরকারের পতনের পর ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় নামে বেনামে চাঁদাবাজির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতিক সময়ে একাধিক ব্যাক্তি, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিযোগকারীদের বক্তব্য, জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে প্রশাসনের দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী একটি মহল চাঁদাবাজিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান, ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফুল হক, বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান-উজ্জামান, বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার ইন চার্জ (oc) ছিদ্দিকুর রহমান এর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী একাধিক ব্যাক্তি ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমুলক কাজের সাথে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
মূলত পৌর বিএনপি’র এই নেতার নাম করেই সকলে চাঁদাবাজি পরিচালিত হচ্ছে। এসব চাঁদাবাজির বিষয়ে একাধিক ঘটনা গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও তথ্য রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বর্তমানে ওই নেতা শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এছাড়াও স্থানীয়দের মধ্যেও নিরীহ ব্যক্তি ভুক্তভোগী রয়েছে। আছে সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজের সাথে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাগণ নিজেদের সমুহ বিপদের কথা ভেবেই মুখবন্ধ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে চাতকের মত তাকিয়ে আছেন। কারণ, চাঁদাবাজরা চাঁদাবাজি করেই থেমে থাকেননি বরং ভুক্তভোগীদের উপরে চালিছেন শারীরিক নির্যাতন।
চাঁদাবাজদের চাহিদা মেটাতে না পারলেই ভুক্তভোগী নিরীহ সাধারণ মানুষকে গালাগালি, চড়থাপ্পড়, ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রাননাশের হুমকি ধামকিও দিয়েছে একাধিক বার এমন অভিযোগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর লিখিত অভিযোগের কিছু তথ্য এসেছে সংবাদমাধ্যমের হাতে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে কর্মকর্তা এসব অভিযোগ করেন। তারা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, “ভোলা জেলার বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্পসারণ প্রকল্পের আওতায় নতুন বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট (বোরহানউদ্দিন) – চরফ্যাশন ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। উক্ত লাইন নির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সকলের সহযোগিতা কামনা করে ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ০৭/০৫/২০২২ ইং তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজে বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উক্ত সঞ্চালন লাইনের ২/০ লোকেশনে (বোরহানউদ্দিন) পাইলিং কাজ স্থানীয় কিছু ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন অযাচিত দাবির মুখে বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিনই একাধিক গ্রুপ বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে এবং লাইন নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করছে। ফলে লাইন নির্মাণ কর্মীদের অলস বসে থাকতে হচ্ছে যার ফলে কর্মঘন্টা ও আর্থিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ফলে প্রকল্পের কাজ যথা সময়ে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এমতাবস্থায়, প্রকল্প কাজ নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আপনার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।”
লিখিত অভিযোগে, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় অবৈধ চাঁদাবাজি ও জনসাধারনকে হয়রানির বিষয়টি উঠে আসে। যা জেলা তথা বোরহানউদ্দিন উপজেলার আইনশৃঙ্খলার জন্য খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ।
চাঁদাবাজির বিষয়ে স্থানীয় জনগণ উৎকন্ঠা এবং উদগ্রীব হলেও ভোলা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার এই বিষয়ে কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি। এমনকি বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দও বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌরসভা বিএনপি’র অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহন করে নি – অভিযোগ স্থানীয়দের। চাঁদাবাজির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা সত্বেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিধি ও বিধান মোতাবেক কোন আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভুগী ও স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগীরা বলেন, চাঁদাবাজির মাস্টারমাইন্ড, বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌরসভা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান কবির। স্থানীয় বিএনপি’র একাধিক সদস্যদের অভিযোগ, মোঃ মনিরুজ্জামান কবির (ইট কবির) সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পতিত সরকারের অনেক নেতা ও কর্মীদের সাথে আঁতাত করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগকারীদের অভিযোগ মতে, চাঁদাবাজির মাস্টারমাইন্ড পৌরসভা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান কবির (ইট কবির) এর নেতৃত্বে, বোরহানউদ্দিন পৌরসভার বিএনপি’র সহ-সভাপতি, বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার সাইদুর রহমান (লিটন), বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌরসভা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ কবির নকতি, বোরহানউদ্দিন পৌরসভা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বোরহানউদ্দিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাব উদ্দিন বাচ্চু সহ মোট ৪ জনে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। যা সরকারের আইন ও বিধি মোতাবেক অপরাধ। বোরহানউদ্দিন উপজেলার স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিক দন্ডনীয় অপরাধ করেও চাঁদাবাজির মাস্টারমাইন্ড পৌরসভা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান কবির (ইট কবির) সহ সবাই প্রকাশ্য দিবালোকে বোরহানউদ্দিনে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার সহ অন্য অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বাহিনী, একাধিক চাঁদাবাজির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ ক্রমে লিখিত অভিযোগ করেছি। আপনি জেলা প্রশাসক মহদয় এবং জেলা পুলিশ সুপার মহদয়ের সাথে যোগাযোগ করেন। কর্মকর্তা আরও বলেন, নিঃসন্দেহে আমরা নানা রকম আশংকায় ভুগছি। অভিযুক্তরা যে কোন সময় আমাদের ক্ষতি সাধন করতে পারে, এমনি তারা আমাদের প্রাননাশের হুমকিও দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভোলায় নৌবাহিনীর কর্তার কাছে বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌরসভা বিএনপি’র নেতাদের চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলেও তারা বক্তব্য দেননি।
চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌরসভা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান কবির এর কাছে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে, তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রশাসনের নীরবতাকে পুঁজি করে পৌর বিএনপি’র এমন নীরব চাঁদাবাজিতে জনমনে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বোরহানউদ্দিন পৌর বিএনপি এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তাদের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস করেন না। সংবাদমাধ্যমের কাছে স্থানীয় একাধিক অভিযোগকারী ভুক্তভোগী এসব নেতৃবৃন্দের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
পৌর বিএনপির চাঁদাবাজির আরও বিস্তারিত চিত্র থাকবে আগামী পর্বে….