চলছে লিপিস্টিক সাংবাদিকতা!
- আপডেট সময় : ০১:০৪:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১ ৭৩০ বার পড়া হয়েছে
নিয়ন মতিয়ুল: “পত্রিকা আর কেউ পড়ে না। পড়ার মতো কিছু থাকেও না। পাতাগুলো ভরে থাকে, ..অনুষ্ঠিত, ..পালিত, ..উদযাপিত, ..আহত, ..নিহত, .. যৌনকর্মী-মদ-গাঁজা আটক– এসব সংবাদে। পাঠক কেন পয়সা দিয়ে এসব সংবাদ কিনবে? তাদের জন্য তো কিছু লেখা হয় না। পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে, ইউএনও’র ছেলের জন্মদিন পালন, ডিসি-এসপিকে সাংবাদিকদের ফুলেল শুভেচ্ছা। প্রথম পাতায় প্রায়ই নেতাদের ছবি, গালাগালি, মন্ত্রীদের গতানুগতিক বক্তব্যে ঠাসা। আর নিদেন পক্ষে সুসংবাদের মধ্যে থাকে, ..ইঁদুর-জিরা চাষে ভাগ্য বদল, .. ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। দুঃসংবাদের মধ্যে, …সংঘর্ষ, … বদলি, …বরখাস্ত। নতুন কিছু নেই পত্রিকায়। সেই সঙ্গে সাংবাদিকতাও নেই। কেউ আর সাংবাদিকতা করেও না।”
না, এসব কথা আমার নয়। একজন মফস্বল সংবাদকর্মীর। একটি ঐতিহ্যবাহী পত্রিকায় যার সঙ্গে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। সম্প্রতি ফোনে আলাপ করতে গিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি সিদ্ধান্তও নিয়েছেন সাংবাদিকতা আর করবেন না। পেশায় থাকবে না। কারণ হিসেবে বললেন, সাহসী রিপোর্ট লিখলেও তা প্রকাশ হয় না। পত্রিকার মালিক আর সম্পাদকরা এখন বাণিজ্যিক সাংবাদিকতা করছেন। যা প্রকাশ করলে বিজ্ঞাপনপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে সেটাই তাদের কাছে সংবাদ। যে সংবাদ প্রশাসন কিংবা সরকারের ঘুম হারাম করে সে রকম সংবাদ ছাপাতে তারা রাজি নন। আর দুর্ঘটনাবশত এরকম সংবাদ প্রকাশ হলে পরবর্তী ঘটনার দায় নেয় না অফিস। সম্পাদক কিংবা প্রকাশক পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো চাকরি খেয়ে বসেন সাংবাদিকদের।
মফস্বলের ওই সংবাদকর্মী আরো জানালেন, দেশপ্রেম থেকেই তিনি সাংবাদিকতায় এসেছিলেন। এখন তার সেই আবেগ আর নৈতিকতার কোনো মূল্যই নেই। তার বক্তব্য, ‘লিপিস্টিক সাংবাদিকতার’ কাছে সাহসী সাংবাদিকতা এখন পরাজিত। তাই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। তার ভাষ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে অনেকে সংবাদ লেখেন না। তবে আমার মনে হয়, যারা ভয় পান, তারা হয় সংবাদ লেখা জানেন না কিংবা আইনই বোঝেন না। কৌশল জেনে লিখলে সংবাদ নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। আসল সমস্যাটা হচ্ছে, দলকানা কিংবা বাণিজ্যিক সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী প্রকাশক কিংবা সম্পাদকদের নিয়ে। বেশিরভাগ পত্রিকার সংবাদ ব্যবস্থাপনার মূল জায়গায় তারা অযোগ্য, অদক্ষ, চাপাবাজদের বাসিয়েছেন। যারা সাংবাদিকতা ছাড়া সবই পারেন।
মফস্বলের সাহসী ওই সংবাদকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐতিহ্যবাহীসহ অনেক পত্রিকায় বেতনের পেছনে যে ব্যয় করা হয়, তার শতকরা ১০ ভাগও যদি মফস্বলের সাংবাদিকদের পেছনে ব্যয় করা হতো, তাহলে পত্রিকার চেহারাই পাল্টে যেত। মফস্বলে বন্ধ হয়ে যেত চাঁদাবাজ সাংবাদিক তৈরির পথ। সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতো পত্রিকা। অথচ তা না করে অনেক সম্পাদক তাদের নিজেদের চাঁদাবাজি আড়াল করতে মফস্বল সংবাদকর্মীদের পেশাদার চাঁদাবাজ হিসেবে তৈরি করছেন। তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। সাংবাদিকদের ওপর জনগণের বিশ্বাস হারানোর এটাই প্রধান কারণ।