ঢাকা ০৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আগস্ট বিপ্লবের অদৃশ্য শক্তি তারেক রহমান – মাহমুদ হাসান Logo ছাত্র জনতাকে ১০ মিনিটে ক্লিয়ার করার ঘোষণা দেয়া হামিদ চাকুরীতে বহাল Logo ছাত্রলীগ নেত্রী যুবলীগ নেতার প্রতারণার শিকার চিকিৎসক সালেহউদ্দিন: বিচার ও প্রতিকার দাবি Logo দেশসেরা সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনে সংবর্ধনা Logo মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি বিএমজিটিএ’র Logo এনবিআরে আরেক মতিউর: কর কমিশনার কবিরের সম্পদের পাহাড় Logo চাকুরীর নামে ভুয়া মেজরের কোটি টাকার প্রতারণা: মিথ্যে মামলায় ভুক্তভোগীদের হয়রানি Logo পটুয়াখালী এলএ শাখায় ঘুষ ছাড়া সেবা পাচ্ছেনা ইপিজেড ও পায়রা বন্দরের ক্ষতিগ্রস্তরা Logo খুলনায় বন্ধ পাটকল চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে আমজনতার দলের বিক্ষোভ Logo এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী রশীদ’র বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ




আগস্ট বিপ্লবের অদৃশ্য শক্তি তারেক রহমান – মাহমুদ হাসান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:২১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫ ৩৬ বার পড়া হয়েছে

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":[],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"square_fit":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

মাহমুদ হাসান:
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তারেক রহমান। এটা আর নতুন কোন খবর নয়। বরং গত ছয়মাসে এ বিষয়ে কোথাও কোন কৃতিত্ব দাবী করেননি তিনি। এটাই এখন আলোচ্য বিষয়। চলমান রাজনীতিতে কৃতিত্ব নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। বরং তারেক রহমান সেটা না করে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন ছাত্র-জনতা ও আপামর মানুষকে। এখানেই তিনি এগিয়ে আছেন সবার থেকে। দলের অন্যান্যদের চাইতে যোজন যোজন ফারাকে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আরো স্পষ্ট হবে বিষয়টি, বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বক্তব্য ও তারেক রহমানের বক্তব্যের ধরনের মাঝে রয়েছে আসমান-জমিন তফাৎ। তবে এটা ঠিক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ভাষায় বা যে ইঙ্গিত করে কথা বলেন দলের অনেক নেতারা হয়ত তা ধরতে পারেন না বা বুঝেও বলেন না। অনেকটা জেগে ঘুমানোর মতো অবস্থা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জন্যই তিনি নিজেকে বর্তমান সময়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। পেয়েছেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার নীরব সমর্থন।


৩১- দফা নিয়ে আর দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে জনসমাবেশগুলোতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরাসরি বা কোনভাবেই আন্দোলন সংগ্রামের এ বিজয়কে দলের একক কৃতিত্ব দাবী করেননি তারেক রহমান। তিনি এ বিজয়কে সামষ্টিক অর্জন হিসেবে তুলে ধরেছেন বার বার। ৫ আগষ্টের অর্জন ও বিজয়কে সংহত করতেও তাৎক্ষনিক কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। তারেক রহমান বলেছেন, ‘প্রতিশোধ নেয়া কোন রাজনীতিবিদদের কাজ নয়।’ এখনো এ কথার ওপর ভিত্তি করে আছেন তিনি। বিছিন্ন কিছু ঘটনায় দলের কিছু নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার কথা প্রকাশ হওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। শোনা যায়, দোষী ও চিহ্নিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঘটনাস্থলের বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের তিরস্কার করেছেন রূঢ় ভাষায়। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনার অবতারণা হলে পদ হারানোর মতো কঠোর সতর্কবানী শোনানো হয়েছে তাদের। এতে স্থানীয় নেতারা পড়েছেন বিপাকে। কর্মী সামলাবেন না সংগঠন গোছাবেন-এমন উভ সংকটে রয়েছেন তারা। তবে দলের কিছু সিনিয়র নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যারা এখনো রাজনীতি বহির্ভূত সমাজ ও আইন বিরোধী কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িত রেখেছেন তাদের জন্য সামনে শাস্তির নানা খড়গ ঝুলছে বলে কানাঘুষা শোনা যায় দলটির বিভিন্ন স্তরের লোকদের সাথে কথা বলে। তখন আম-ছালা উভয়ই হারানোর শংকা থাকবে চিহ্নিতদের। তবে সেটা সময়েই দেখা যাবে এই দুষ্টু চক্রকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কার্যত কেউ স্বীকার না করলেও দলের সবাই জানেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে থানা-ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি লিপিবদ্ধ করা হয় নানা কৌশলে। পদ-পদবী ও বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সময় এই ফিরিস্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা যায়।
১/১১ থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত তারেক রহমান নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, অসংখ্য সাজানো মামলার আসামী হয়েছেন, -অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে, সাজা দেয়া হয়েছে, বার বার আবেদন করেও পাসপোর্ট পাননি, অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও মামলার আসামী করা হয়েছিল। মৃত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে নোংরা ভাষায় কথা বলা হয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় ৫ আগস্টের পর একটি বারও তারেক রহমান কোন প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দেননি। কারো বিরুদ্ধে কোন বিষোদগার করেননি।
গত সাড়ে ১৬ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে যত খবর প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে স্বাভাবিক কারনেই সেসবের প্রতিবাদ জানানোর কথা। মানুষের সহমর্মিতা আদায় করার কথা। কিন্ত তিনি কোন জবাব দেননি। মিথ্যা অভিযোগ-অপবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তবে বার বার বলছেন দলের নেতা-কর্মীদের মামলা- হামলা, জেল- জুলুম ও গুম-খুনের কথা। বিচার চেয়েছেন এসব ঘটনার। বিগত পতিত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির বিচারও চেয়েছেন বার বার। কিন্তু কোথাও কোন কর্মসূচীতে নিজের ওপর, তার পরিবারের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কোন শব্দ উচ্চারণ করেননি তারেক রহমান।
তাঁর এ ভূমিকা নিশ্চয়ই প্রমান করে তারেক রহমান এখন আর ২০০১-২০০৬’র চেনা মানুষটি নন, একজন পরিপূর্ণ ও পরিনত রাজনীতিবিদ হিসেবে হাজির হয়েছেন জাতির সামনে। নিজেকে তৈরি করেছেন এক ভিন্ন ভাবমূর্তিতে। একই সময় জাতির সামনে একক নেতৃত্বের সুযোগও চলে আসছে তারেক রহমানের সামনে। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি’র পক্ষ থেকেও বৃহত্তর নির্বাচনী জোট করার প্রাথমিক আলাপ আলোচনা চলছে। এখন শুধু আসন সংখ্যা নিয়ে চলছে দরকষাকষি। জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী দল ঘোষনার আগ থেকে এ বিষয়ে কথা চালাচালি হচ্ছিল ঢাকা- লন্ডন। রাজনৈতিক মঞ্চে বিএনপির কিছু নেতা যতই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের সমালোচনা বা রক্ত চক্ষু প্রদর্শন করুক না কেন, তারেক রহমান ঠিকই তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারী নরসিংদীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের ফ্যামিলি ডে’তে কথা প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা আকমল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনর নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানালেন, ‘কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই লন্ডনে যোগাযোগ রক্ষা ও সময় সময় আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কথা বলেছেন ছাত্র নেতারা।’ সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথাও জানালেন সাংবাদিক আকমল।
এসব তথ্য দলের নেতারা জানালেও তারেক রহমান কখনো বলেননি এ বিষয়ে কোন কথা। তিনি হয়ত অনুধাবন করেছেন ফ্যাসিবাদ উৎখাতের সেই যুদ্ধের শেষ বাঁশিটা যে ছাত্ররাই বাজিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ৩ আগস্ট একদফার ঘোষনা দিয়েছিল এই সাহসী তরুণেরা। ৪ আগস্ট হঠাৎ করেই ‘মার্চ টু ঢাকা’ একদিন এগিয়ে আনা হলো। পতন তরান্বিত হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের। এ সবই ছিল পরিকল্পিত কর্মসূচি। এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, সেদিন পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে। মাঠের নেতা তখন ছাত্র-জনতা আর অদৃশ্যের চালিকাশক্তি ছিল তারেক রহমান।
তারেক রহমানের এই ভূমিকাকে একদিকে যেমন বলা যায় রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণ তেমনি বিজয়ী ছাত্রদের ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য ছিল হার না মানার শপথ। এই যুগলবন্দীই দেশকে দিয়েছে নতুন সূর্য।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ভবিষ্যতে নানা আঙ্গিকে গবেষণা হবে, রচিত হবে ইতিহাস-তখন হয়ত জানা যাবে আরো বিস্তারিত।
তবে সবকিছু নিয়েই জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এক ঐতিহাসিক সময়োচিত সিদ্ধান্ত। ইতিহাস সবার ভূমিকাকে যার যার মর্যাদায় স্থান দিবে নিশ্চয়ই। তা না হলে যুগে যুগে প্রতিবাদ-বিপ্লব হতেই থাকবে।

লেখক: মাহমুদ হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক।

Loading

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




আগস্ট বিপ্লবের অদৃশ্য শক্তি তারেক রহমান – মাহমুদ হাসান

আপডেট সময় : ১১:২১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫

মাহমুদ হাসান:
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তারেক রহমান। এটা আর নতুন কোন খবর নয়। বরং গত ছয়মাসে এ বিষয়ে কোথাও কোন কৃতিত্ব দাবী করেননি তিনি। এটাই এখন আলোচ্য বিষয়। চলমান রাজনীতিতে কৃতিত্ব নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম। বরং তারেক রহমান সেটা না করে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন ছাত্র-জনতা ও আপামর মানুষকে। এখানেই তিনি এগিয়ে আছেন সবার থেকে। দলের অন্যান্যদের চাইতে যোজন যোজন ফারাকে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আরো স্পষ্ট হবে বিষয়টি, বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বক্তব্য ও তারেক রহমানের বক্তব্যের ধরনের মাঝে রয়েছে আসমান-জমিন তফাৎ। তবে এটা ঠিক গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ভাষায় বা যে ইঙ্গিত করে কথা বলেন দলের অনেক নেতারা হয়ত তা ধরতে পারেন না বা বুঝেও বলেন না। অনেকটা জেগে ঘুমানোর মতো অবস্থা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জন্যই তিনি নিজেকে বর্তমান সময়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। পেয়েছেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার নীরব সমর্থন।


৩১- দফা নিয়ে আর দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে জনসমাবেশগুলোতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরাসরি বা কোনভাবেই আন্দোলন সংগ্রামের এ বিজয়কে দলের একক কৃতিত্ব দাবী করেননি তারেক রহমান। তিনি এ বিজয়কে সামষ্টিক অর্জন হিসেবে তুলে ধরেছেন বার বার। ৫ আগষ্টের অর্জন ও বিজয়কে সংহত করতেও তাৎক্ষনিক কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। তারেক রহমান বলেছেন, ‘প্রতিশোধ নেয়া কোন রাজনীতিবিদদের কাজ নয়।’ এখনো এ কথার ওপর ভিত্তি করে আছেন তিনি। বিছিন্ন কিছু ঘটনায় দলের কিছু নেতা-কর্মীর জড়িত থাকার কথা প্রকাশ হওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। শোনা যায়, দোষী ও চিহ্নিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঘটনাস্থলের বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের তিরস্কার করেছেন রূঢ় ভাষায়। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনার অবতারণা হলে পদ হারানোর মতো কঠোর সতর্কবানী শোনানো হয়েছে তাদের। এতে স্থানীয় নেতারা পড়েছেন বিপাকে। কর্মী সামলাবেন না সংগঠন গোছাবেন-এমন উভ সংকটে রয়েছেন তারা। তবে দলের কিছু সিনিয়র নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যারা এখনো রাজনীতি বহির্ভূত সমাজ ও আইন বিরোধী কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িত রেখেছেন তাদের জন্য সামনে শাস্তির নানা খড়গ ঝুলছে বলে কানাঘুষা শোনা যায় দলটির বিভিন্ন স্তরের লোকদের সাথে কথা বলে। তখন আম-ছালা উভয়ই হারানোর শংকা থাকবে চিহ্নিতদের। তবে সেটা সময়েই দেখা যাবে এই দুষ্টু চক্রকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কার্যত কেউ স্বীকার না করলেও দলের সবাই জানেন দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে থানা-ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি নেতা-কর্মীর বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি লিপিবদ্ধ করা হয় নানা কৌশলে। পদ-পদবী ও বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সময় এই ফিরিস্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা যায়।
১/১১ থেকে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত তারেক রহমান নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন, অসংখ্য সাজানো মামলার আসামী হয়েছেন, -অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে, সাজা দেয়া হয়েছে, বার বার আবেদন করেও পাসপোর্ট পাননি, অরাজনৈতিক ব্যক্তি হয়েও তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও মামলার আসামী করা হয়েছিল। মৃত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে নোংরা ভাষায় কথা বলা হয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় ৫ আগস্টের পর একটি বারও তারেক রহমান কোন প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দেননি। কারো বিরুদ্ধে কোন বিষোদগার করেননি।
গত সাড়ে ১৬ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে যত খবর প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে স্বাভাবিক কারনেই সেসবের প্রতিবাদ জানানোর কথা। মানুষের সহমর্মিতা আদায় করার কথা। কিন্ত তিনি কোন জবাব দেননি। মিথ্যা অভিযোগ-অপবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তবে বার বার বলছেন দলের নেতা-কর্মীদের মামলা- হামলা, জেল- জুলুম ও গুম-খুনের কথা। বিচার চেয়েছেন এসব ঘটনার। বিগত পতিত সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির বিচারও চেয়েছেন বার বার। কিন্তু কোথাও কোন কর্মসূচীতে নিজের ওপর, তার পরিবারের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কোন শব্দ উচ্চারণ করেননি তারেক রহমান।
তাঁর এ ভূমিকা নিশ্চয়ই প্রমান করে তারেক রহমান এখন আর ২০০১-২০০৬’র চেনা মানুষটি নন, একজন পরিপূর্ণ ও পরিনত রাজনীতিবিদ হিসেবে হাজির হয়েছেন জাতির সামনে। নিজেকে তৈরি করেছেন এক ভিন্ন ভাবমূর্তিতে। একই সময় জাতির সামনে একক নেতৃত্বের সুযোগও চলে আসছে তারেক রহমানের সামনে। সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি’র পক্ষ থেকেও বৃহত্তর নির্বাচনী জোট করার প্রাথমিক আলাপ আলোচনা চলছে। এখন শুধু আসন সংখ্যা নিয়ে চলছে দরকষাকষি। জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী দল ঘোষনার আগ থেকে এ বিষয়ে কথা চালাচালি হচ্ছিল ঢাকা- লন্ডন। রাজনৈতিক মঞ্চে বিএনপির কিছু নেতা যতই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের সমালোচনা বা রক্ত চক্ষু প্রদর্শন করুক না কেন, তারেক রহমান ঠিকই তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারী নরসিংদীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের ফ্যামিলি ডে’তে কথা প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা আকমল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনর নেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানালেন, ‘কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই লন্ডনে যোগাযোগ রক্ষা ও সময় সময় আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কথা বলেছেন ছাত্র নেতারা।’ সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথাও জানালেন সাংবাদিক আকমল।
এসব তথ্য দলের নেতারা জানালেও তারেক রহমান কখনো বলেননি এ বিষয়ে কোন কথা। তিনি হয়ত অনুধাবন করেছেন ফ্যাসিবাদ উৎখাতের সেই যুদ্ধের শেষ বাঁশিটা যে ছাত্ররাই বাজিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে ৩ আগস্ট একদফার ঘোষনা দিয়েছিল এই সাহসী তরুণেরা। ৪ আগস্ট হঠাৎ করেই ‘মার্চ টু ঢাকা’ একদিন এগিয়ে আনা হলো। পতন তরান্বিত হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের। এ সবই ছিল পরিকল্পিত কর্মসূচি। এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, সেদিন পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার ব্যানারে। মাঠের নেতা তখন ছাত্র-জনতা আর অদৃশ্যের চালিকাশক্তি ছিল তারেক রহমান।
তারেক রহমানের এই ভূমিকাকে একদিকে যেমন বলা যায় রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণ তেমনি বিজয়ী ছাত্রদের ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য ছিল হার না মানার শপথ। এই যুগলবন্দীই দেশকে দিয়েছে নতুন সূর্য।
২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ভবিষ্যতে নানা আঙ্গিকে গবেষণা হবে, রচিত হবে ইতিহাস-তখন হয়ত জানা যাবে আরো বিস্তারিত।
তবে সবকিছু নিয়েই জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান এক ঐতিহাসিক সময়োচিত সিদ্ধান্ত। ইতিহাস সবার ভূমিকাকে যার যার মর্যাদায় স্থান দিবে নিশ্চয়ই। তা না হলে যুগে যুগে প্রতিবাদ-বিপ্লব হতেই থাকবে।

লেখক: মাহমুদ হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক।

Loading