ঢাকা ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! Logo ইবি উপাচার্যকে ১০লাখ ঘুষ প্রস্তাব এক তরুনীর! Logo মামলায় জর্জরিত কুলাউড়ার ছাত্রদল নেতা মিতুল পালিয়ে আছেন প্রবাসে Logo ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শাবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু Logo থিয়েটার কুবির ইফতার মাহফিল Logo রাজধানীর শান্তিনগর বাজার নিয়ে শত কোটি টাকার লুটপাট Logo ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি শিক্ষক সমিতির শোক Logo ঢাবি শিক্ষক ড. জিয়া রহমানের মৃত্যুতে শাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo ময়মনসিংহ স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি সজীব, সম্পাদক আশিক Logo পুরান ঢাকায় জুতার কারখানার আগুন




রাজধানীতে সক্রিয় ৫ শতাধিক পেশাদার ছিনতাইকারী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১ ১১৮ বার পড়া হয়েছে

কেউ সালাম পার্টি, কেউ মলম কিংবা অজ্ঞান পার্টির সদস্য! ডিএমপির হালনাগাদ তালিকা।

সকালের সংবাদ ডেস্ক: পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নানের ফোন ছিনতাইয়ের পর রাজধানীর ছিনতাই পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবছে পুলিশ। বিশেষ করে পেশাদার ছিনতাইকারীদের ধরতে শিগগিরই মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ইতোমধ্যে রাজধানীর থানাওয়ারী ছিনতাইকারীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এতে ৫ শতাধিক ছিনতাইকারীর নাম, পিতার নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এমনকি কয়েকজনের মোবাইল নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত তালিকার একটি কপি সম্প্রতি যুগান্তরের হাতে আসে। এতে দেখা যায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইকারী তালিকাভুক্ত হয়েছে ভাটারা থানায়। যার সংখ্যা ৩৪ জন। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, শাহবাগ, পুরান ঢাকা এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে কম ছিনতাইপ্রবণ এলাকার মধ্যে রাজধানীর উত্তরখান এবং দক্ষিণখান অন্যতম। এ এলাকায় মাত্র ৩ জন ছিনতাইকারীর নাম পেয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে ঢাকায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীর সংখ্যা ৫৮৪ জন। এদের মধ্যে কেউ অজ্ঞান পার্টি, কেউ মলম পার্টি কেউবা সালাম পার্টির সদস্য। ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ পেশাদার মাদকসেবী হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত।

রাজধানীর ছিনতাইকারীদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘সক্রিয় ছিনতাইকারী বলতে যাদেরকে বোঝায় এরকম ৫ শতাধিক ছিনতাইকারীর তালিকা আমাদের কাছে আছে। এরা পেশাদার ছিনতাইকারী। এদের অনেকে নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য ছিনতাই করছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহামারিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া। তবে এটা স্বীকৃত বিষয় যে, কর্মসংস্থান যত সংকুচিত হবে, অপরাধ তত বাড়বে। অবশ্য এজন্য আমরা নজরদারি আরও বাড়িয়েছি। ফলে ছোটখাটো ছিনতাই হলেও বড় ধরনের ঘটনা যেমন, ব্যাংকের সামনে থেকে বা অন্য কোথাও বড় অঙ্কের অর্থ ছিনতাইয়ের ঘটনা শহরে একেবারেই ঘটেনি।’

পুলিশ বলছে, রাজধানীতে সক্রিয় ছিনতাইকারীদের মূলত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি চক্র নির্জন অলিগলিতে টার্গেটের সন্ধানে ওতপেতে থাকে। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। এদের কেউ কেউ ছিনতাইয়ের কাজে ধারালো অস্ত্রের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে।

এছাড়া সালাম পার্টি নামে সম্প্রতি একটি অপরাধী গ্রুপকে সক্রিয় দেখা যায়। যারা মূলত রিকশাযাত্রীদের আকস্মিক সালাম দিয়ে জোরপূর্বক রিকশায় উঠে পড়ে। এরপর ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। আরেকটি গ্রুপ মলম পার্টি বা অজ্ঞান পার্টি নামে পরিচিত। তারা খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে মূলত বাসযাত্রীদের অজ্ঞান করে থাকে। থানাভিত্তিক অনুসন্ধান চালিয়ে এ তিন শ্রেণির অপরাধীদেরই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘অপরাধ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হতে হবে। একজন মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কারও ফোন ছিনতাইয়ের পর সাময়িক পুলিশি তৎপরতা দিয়ে অপরাধ নির্মূল সম্ভব নয়। তবে ছিনতাইকারীদের যে তালিকার কথা বলা হচ্ছে, এজন্য পুলিশ অবশ্যই সাধুবাদ পেতে পারে।

এখন এ বিষয়ে পরিকল্পিতভাবে কার্যকর অভিযানে নামতে হবে। পুলিশের অ্যাকশন প্ল্যানিংয়ের মধ্যে বিষয়টি ঢোকাতে হবে। তাহলেই রাজধানীর ছিনতাই পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।’

পুলিশের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন বস্তি এলাকার বাসিন্দা। অনেকে আছেন ভাসমান। আবার বরিশাল, কুমিল্লা এবং ফেনী এলাকা থেকে ঢাকায় এসে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। রাজধানীর একেক এলাকায় ছিনতাইয়ের ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন, বিমানবন্দর সড়কে বেশির ভাগ ছিনতাই হয় পুলিশ পরিচয়ে।

রাস্তায় সাজানো চেকপোস্ট বসিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির নামে সবকিছু হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। আবার সদরঘাট এলাকায় মলম পার্টির সদস্য খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। এছাড়া মতিঝিল এলাকায় টানা পার্টি এবং উত্তরা, মিরপুর এলাকায় চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, রাজধানীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুব ভোরে এবং গভীর রাতে নির্জন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বাড্ডা ও ভাটারা, মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া শাহবাগ, মগবাজার, রমনা পার্ক, মালিবাগ রেলগেট, চাঁনখারপুল, ঢাকা মেডিকেল এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীর হাজারীবাগ এবং মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, ফার্মগেট, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী এলাকায় খুব ভোরে বা নির্জন রাস্তায় সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দেয় পুলিশ। তবে সম্প্রতি হাতিরঝিল, গুলশান-১ নম্বর গোল চক্কর ও বনানী এলাকায়ও ছিনতাই বেড়েছে।

পুলিশ বলছে, রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষের একটি অংশ চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এদের অনেকেই পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে গেছেন। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার নজির আছে ভূরি ভূরি।

এ কারণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক পুনর্বাসনের মতো বিকল্প উদ্যোগের কথা চিন্তা করতে হবে। তা না হলে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

মিরপুর : পুলিশের তালিকা অনুযায়ী মিরপুর জোনে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ৫৮ জন। এর মধ্যে মডেল থানায় নাম আছে ৮ জনের। মিরপুর-১০, পূরবী সিনেমা হল ও মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী আরিফুল ইসলামের বাবার নাম আনোয়ার হোসেন, মা-জাহানারা বেগম। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘলদী গ্রামে তার বাড়ি।

বর্তমানে তিনি ৬ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাসার ভাড়াটিয়। অপরজনের নাম জুবায়ের হোসেন ওরফে রাসেল, বাবা মৃত হায়দার সিকদার, মায়ের নাম মৃত সজিদ নাহার। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থানার চর বাগমারা গ্রামে। বর্তমানে ৬ নম্বর সেকশনের, এ-ব্লকের ৪নং রোডে ৫৬ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকেন (আ. সাত্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া)।

রাজধানীর কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, সনির মোড় ও জার্মান টেকনিক্যাল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাইয়ে জড়িত ফজলুল হক ওরফে সাকিল। তার বাবার নাম মৃত সিরাজুল হক, মায়ের নাম ফরিদা বেগম। বাড়ি ভোলা সদরের ইলিশা (তুলাতুলি) গ্রামে। বর্তমানে মিরপুর কলওয়ালাপাড়া ৩ নম্বর রোডের ১৪৮/৫/খ বাসায় বসবাস করছেন তিনি। এছাড়া মিরপুর এলাকায় ছিনতাইয়ের জড়িত হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত হাসান, বাবা আবুল হাশেম এবং উজ্জ্বল, বাবা আব্দুর রশিদ। উভয়ের ঠিকানা মিরপুর কলওয়ালাপাড়া।

মিরপুরের জর্মান টেকনিক্যাল এলাকা, ১০ নম্বর গোলচত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড, আল নাহিয়ান উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত তিনজন পুলিশের তালিকাভুক্ত। এরা হলেন সবুজ, বাবা আবু বক্কর, মা- আয়শা বেগম, গ্রামের বাড়ি সিরাগঞ্জের খোকশাবাড়ি (বোনারগাতি। বর্তমানে তিনি মিরপুরের শাহ আলী থানার বসতি হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়ির ভাড়াটিয়া। অপরজনের নাম লেলিন শেখ, বাবা মৃত ফটিক শেখ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার খাড়হাট মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি।

এছাড়া ছিনতাইকারী হিসাবে চিহ্নিত আশরাফুল ইসলাম, বাবা সেলিম, মায়ের নাম আফরোজা বেগম, গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী। বর্তমানে তিনি সাভারের ক্যাপিটাল গার্মেন্টের গালিতে আলম সাহেবের বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

পল্লবী : পল্লবী এলাকার ছিনতাইকারী হিসাবে পুলিশের তালিকায় ১৪ জনের নাম আছে। এদের মধ্যে ১০ নম্বর সেকশন, পূরবী সিনেমা হলের সামনে ছিনতাইয়ে জড়িত রাশেদ, আরিফুল ও আব্দুর রব ওরফে কাল্লু। এছাড়া ১১ নম্বর সেকশন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পথচারীদের মোবাইল ফোন ও ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায় সাকিল, রনি খোকন ও সাইফুল ওরফে ফরমা সাইফুল। এদের মধ্যে সাইফুল নিজেকে পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেয়। পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, ‘দুর্বৃত্তরা আকস্মিক পথচারীদের গতিরোধ করে। এরপর তল্লাশির নামে পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়।’

পল্লবী ১২ নম্বর সেকশন, খাবার বিলাশ রেস্টুরেন্ট এবং চন্দ্রবিন্দু শপিংমহল এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় ওতপেতে থাকে ছিনতাইকারী রকি, ইমন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। এদের মধ্যে পেশাদার ছিনতাইকারী রকিকে শেল্টার দেয় পল্লবী ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী নুর ইসলাম। এছাড়া সন্ধ্যার পর বিবাহ বাড়ি কমিউিনিটি সেন্টারের সামনে ছিনতাইকারী ইমনের সার্বক্ষণিক অবস্থান শনাক্ত করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, কালশী নতুন রাস্তার মোড় থেকে লোহারপুর এবং ১১ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের সবুজ বাংলা গেট থেকে নাভানা আবাসিক এলাকায় বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার সঙ্গে ৫ ছিনতাইকারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তারা হলেন নূরা, রবিন, ফয়সাল, মাহবুবু ওরফে কোদাল মাহবুব ও আরজু। তাদের কয়েকজন বাউনিয়া বাঁধ এবং বিহারি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা।

এছাড়া কাজীপাড়া এবং শ্যাওড়াপাড়া এলাকার ছিনতাইকারী হিসাবে দিপংকর বিশ্বাস ওরফে সুমনের নাম আছে পুলিশের তালিকায়। ছিনতাইকারী হিসাবে বুলবুল আহম্মেদ ও রাব্বি ওরফে মিশু নামের দুই তরুণের নাম আছে পুলিশের তালিকায়। তারা পিএসসি কনভেসনশন হল, ভিশন গার্মেন্ট এবং মিরপুর ১৩ নম্বর ওভারব্রিজ এলাকায় সক্রিয়।

এছাড়া শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, পুলপাড়, ১০নং গোলচত্বর, আল হেলাল হাসপাতাল, কাফরুল এলাকা, আগারগাঁও উড়ো জাহাজ ক্রসিং এবং কচুক্ষেত বাজার এলাকার ৮ জন ছিনতাইকারীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন রবিন, সাকিল, রফিকুল ইসলাম পাপ্পু, জাবেদ, আয়নাল, হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও সুমন। সুমনের বাবার নাম মোহাম্মদ। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানার ভাবড়াসুর গ্রামে।

পুলিশের তালিকায় ছিনতাইকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত সুমনের নাম-ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। সোমবার বিকালে তার নম্বরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তিনি ছিনতাইকারী নন। কখনো ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা আছে।

মিরপুরের ভাষানটেক থানা এলাকায় ৪ জন ছিনতাইকারী পুলিশের তালিকাভুক্ত। তারা হলেন শামী ওরফে আগুন, বাবা হারুণ অর রশিদ, বর্তমানে সাগরিকা বস্তির মশুরার বাড়ির ভাড়াটিয়া। অন্যরা হলেন ইয়াসিন, মিছা ও হৃদয়। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ভাষানটেক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ঘন বসতিপূর্ণ শাহ আলী মাজার, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, সনির মোড় থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত এলাকায় ১৪ জন ছিনতাইকারীর বিচরণ রয়েছে। তারা হলেন সাইফুল, সজিব ওরফে মাস্টার সজিব, সুমন ওরফে বাবুর্চি সুমন, ফালান, হাসান, মামুন, আশরাফুল, হৃদয় ও ইমাম। এদের মধ্যে সজিব ওরফে মাস্টার সজিব পেশাদার মাদকসেবী।

রাজধানীর গাবতলী আন্ডারপাস থেকে বিআইডব্লিইটিএ ঘাট, খালেক সিটি ও বড়বাজার এলাকায় সক্রিয় ১১ জন ছিনতাইকারী পুলিশের তালিকাভুক্ত। তারা হলেন শিপন, হিরা, রিদপন, অন্তর, রবিউল হাসান ওরফে বুলেট, মেহরাব হোসেন, মুনসুর হাসান, হৃদয় হাসান, কালাচানা ওরফে কালা, সাজ্জাদ ও শফিকুল ইসলাম বিপ্লব।

তালিকার এক নম্বরে থাকা শিপনের বাবার নাম রুহুল আমিন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। বর্তমানে ৯৩ কোটবাড়ি হাজী নাসরিন আক্তারের বাড়ির (নিহন মঞ্জিল) ভাড়াটিয়া। পুলিশের তালিকায় তার মোবাইল নম্বর সংযুক্ত রয়েছে। তবে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রমনা : পুলিশের রমনা জোনে ছিনতাইকারীর সংখ্যা শতাধিক। ৫টি থানা যথাক্রমে রমনা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ১১৬ জন। এর মধ্যে শাহবাগ থানায় তালিকাভুক্ত ৩৪ জন। এছাড়া রমনায় ২৪, ধানমন্ডিতে ১৪, হাজারীবাগে ৩৩, নিউমার্কেটে ৮ এবং কলাবাগান থানায় ৩ জন ছিনতাইকারীর নাম ও ঠিকানা তালিকাভুক্ত।

রাজধানীর ওয়্যারলেস মোড়, সেঞ্চুরি আর্কেড, বারডেম হাসপাতালের দক্ষিণ পাশ, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট এলাকায় সক্রিয় ছিনতাইকারীরা হচ্ছেন শফিকুল ইসলাম, আহমেদ হোসে মোল্লা দিপু, আল মামুন আকন্দ, ইব্রাহিম, মুরাদ মোল্লা, টিটু, অনিক মিয়া, রাজু মিয়া, আজগর, তপন, বিল্লাল, হৃদয়, রুবেল ইসলাম, টোকন, অপূর্ব চৌধুরি, ব্লেড বাবু, মিরাজ হোসেন রুবেল, এরাবিয়ান সোহেল, সম্রাট, মোহাম্মদ হাসান, অয়ন হোসেন তুষার, সাইদুল, শিপন ও সৌরভ।

পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, মগবাজার মোড় ও আশপাশের এলাকায় আকস্মিক পথচারীদের চোখে বিষাক্ত উপকরণ যেমন মরিচের গুঁড়া, স্প্রে এবং জাম্বাক নামের একধরনের মলম লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে চোখে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং টাকাপয়সাসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু লুটে চম্পট দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ওয়্যারলেস এবং মৌচাক মোড়, রমনা পার্ক এবং কাকরাইল এলাকায় ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের রেকর্ড আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ, ওসমানী উদ্যাগ ও গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় সক্রিয় ছিনতাইকারী হিসাবে যাদের নাম তালিকাভুক্ত তারা হলেন রাকিব হাসান, রবিন, জুম্মন, তোফাজ্জল হোসেন, মিরাজ, আল-আমিন, রহিদ মিয়া, সাব্বির হোসেন, খোরশেদ আলম, ফেরদৌস, মোরছালিন, মামুনুর রশিদ, আকাশ, তুষার আহম্মেদ ওরফে রুবেল, মনির, কফিল ওরফে মামুন, মনির কাজী, শাকিল, সাগর পাইক, সাইফুল, কবির হোসেন, হৃদয়, সকিব শেখ, রহিম, আবুল হায়াত, সাগর, সোহাগ সরকার, শাহ আলম, সাকিল, গলাকাটা সাগর, হাতকাটা সুমন, রুবেল, নয়ন, আল আমিন, রাব্বি আকন্দ ও শাহিন।

গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, সিটি কলেজ, পপুলার হাসপাতালসহ আশপাশের গলিতে ছিনতাইয়ের দৌরাত্ম্য বেশি। এমনকি গভীর রাতেও এ এলাকায় দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের গতিরোধ করা হয়। দুর্বৃত্তরা প্রথমে ঢিল ছুড়ে ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে দেয়। এরপর অন্ধকার গলিতে টার্গেটের জন্য ওতপাতে। পুলিশের তালিকায় এসব এলাকার ছিনতাইকারী হিসাবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন সাব্বির শেখ, ফারুক শেখ, মকবুল হোসেন, সাব্বির হোসেন হেলাল, ফালান শিকদার, তোফাজ্জল হোসেন ওরফে সুমন, অনিক, মনির, আল মামুন, রনি মুন্সি ও স্বপন।

পুলিশের তালিকা অনুযায়ী হাজারীবাগ থানা এলাকায় ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো হচ্ছে জেএস এক্সপ্রেস ফিলিং স্টেশন, বেড়িবাঁধ, সালাম সরদার রোড, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রকল্প এলাকা, টেনারি মোড়, মনেশ্বর রোড, জিগাতলা ও নিমতলা শেরেবাংলা রোড। হাজারীবাগ থানায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ৩৩ জন। তারা হলেন জিএম কারুজ্জামান খোকন, বর্তমানে ৫৮/৪৪/১ হাবীব সাহেবের বাড়ি; সাইমন, বাবা মৃত ফজর আলী, বর্তমানে রায়েরবাজার কমিউনিটি সেন্টারের ঢাল ফরহাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া; সালাম, বাবা মৃত ছাকিম আলী মোল্লা, বর্তমানে মাহাদী নগর কামরাঙ্গীরচর; রনি, বাবা রতন, বর্তমানে ঝাউচর, বিল্লাল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া; শুক্কুর, বাবা রাজু, বর্তমান ঠিকানা-সাদেক খানের আড়ত; সাগর, বাবা কামাল, বর্তমানে ইউসুফ স্কুল বাগানবাড়ি রোড হক মিয়ার বাড়ি; স্বপন, বাবা বাঁশতলা এলাকার বাসিন্দা মৃত আলী খান; আজমির, বাবা মৃত আব্দুল আলী; সোলাইমান, শুভ হোসেন, লিটু মিয়া, মাঈন উদ্দিন, মনির হোসেন, পারভেজ, বাবু, ফয়েজ, কোরবান, সাথী ওরফে নার্গিস, স্বামী মান্নান; সেন্টু, পাভেল, তারেক, তানজিল, রকি, মাসুদ, মারুফ, পারভেজ, রাসেল ওরফে ছোট রাসেল, আল আমিন, রাকিব, রাহাত, জোবায়ের, বাবর, সামাদ ও দুলাল।

এছাড়া হাজারীবাগ এলাকায় কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয়। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা রাস্তার মোড়ে টার্গেটের জন্য ওতপেতে থাকে। পুলিশ এ ধরনের গ্রুপ ছিনতাই চক্রের কয়েকজনকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ল্যাংড়া ফয়সাল, হুমায়ুন, ইমন, আকাশ ও চান্দু।

পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব মোড় এলাকায় মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনতাইচক্র সক্রিয়। এরা হলেন রাশেদ ওরফে ফরমা রাশেদ, রুবেল, পালান, ইয়াছিন, মিরাজ, কাজল, পারভেজ, সবুজ, রাব্বি, শহিদ, রিয়াজ, মাসুদ রানা, নাদিম ওরফে ফরমা নাদিম, রাজু, কাওছার, আমিনুল, আশরাফুল, হৃদয় ও তাহেরুল ইসলাম। এছাড়া নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় সংঘবদ্ধ নারী ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়।

রিকশযাত্রী নারীদের টার্গেট করে তারা। নারীদের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল হ্যাঁচকা টানে ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছে পুলিশ। এরা হলেন সুমি, রুমা ও নাদিরা, নাছিমা, রিপা ও খোরশেদা বেগম।

রাজধানীর পান্থপথ, কাওরান বাজার ও কমফোর্ট হাসপাতাল এলাকায় সক্রিয় হিসাবে ৩ জন ছিনতাইকারীর নাম আছে পুলিশের খাতায়। এরা হলেন সেন্টু, বাবা মৃত মতি মিয়া, বর্তমানে ঝাউচর হাজারীবাগের বাসিন্দা। তালিকায় নাম আছে তৌসিফ, পিতা সুজন শেখ, বর্তমানে ১৭/৬ ফ্রি স্কুলে স্ট্রিট কাঁঠালবাগান, স্থায়ী ঠিকানা গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানা এবং তারেক, বাবা অজ্ঞাত, বর্তমানে তিনি কাঁঠালবাগান বাজার এলাকায় বসবাস করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




রাজধানীতে সক্রিয় ৫ শতাধিক পেশাদার ছিনতাইকারী

আপডেট সময় : ১০:১৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

কেউ সালাম পার্টি, কেউ মলম কিংবা অজ্ঞান পার্টির সদস্য! ডিএমপির হালনাগাদ তালিকা।

সকালের সংবাদ ডেস্ক: পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নানের ফোন ছিনতাইয়ের পর রাজধানীর ছিনতাই পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবছে পুলিশ। বিশেষ করে পেশাদার ছিনতাইকারীদের ধরতে শিগগিরই মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ইতোমধ্যে রাজধানীর থানাওয়ারী ছিনতাইকারীদের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। এতে ৫ শতাধিক ছিনতাইকারীর নাম, পিতার নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এমনকি কয়েকজনের মোবাইল নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত তালিকার একটি কপি সম্প্রতি যুগান্তরের হাতে আসে। এতে দেখা যায়, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইকারী তালিকাভুক্ত হয়েছে ভাটারা থানায়। যার সংখ্যা ৩৪ জন। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, শাহবাগ, পুরান ঢাকা এলাকায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য রয়েছে।

রাজধানীর সবচেয়ে কম ছিনতাইপ্রবণ এলাকার মধ্যে রাজধানীর উত্তরখান এবং দক্ষিণখান অন্যতম। এ এলাকায় মাত্র ৩ জন ছিনতাইকারীর নাম পেয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে ঢাকায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীর সংখ্যা ৫৮৪ জন। এদের মধ্যে কেউ অজ্ঞান পার্টি, কেউ মলম পার্টি কেউবা সালাম পার্টির সদস্য। ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ পেশাদার মাদকসেবী হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত।

রাজধানীর ছিনতাইকারীদের তালিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘সক্রিয় ছিনতাইকারী বলতে যাদেরকে বোঝায় এরকম ৫ শতাধিক ছিনতাইকারীর তালিকা আমাদের কাছে আছে। এরা পেশাদার ছিনতাইকারী। এদের অনেকে নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য ছিনতাই করছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহামারিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া। তবে এটা স্বীকৃত বিষয় যে, কর্মসংস্থান যত সংকুচিত হবে, অপরাধ তত বাড়বে। অবশ্য এজন্য আমরা নজরদারি আরও বাড়িয়েছি। ফলে ছোটখাটো ছিনতাই হলেও বড় ধরনের ঘটনা যেমন, ব্যাংকের সামনে থেকে বা অন্য কোথাও বড় অঙ্কের অর্থ ছিনতাইয়ের ঘটনা শহরে একেবারেই ঘটেনি।’

পুলিশ বলছে, রাজধানীতে সক্রিয় ছিনতাইকারীদের মূলত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি চক্র নির্জন অলিগলিতে টার্গেটের সন্ধানে ওতপেতে থাকে। তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। এদের কেউ কেউ ছিনতাইয়ের কাজে ধারালো অস্ত্রের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে।

এছাড়া সালাম পার্টি নামে সম্প্রতি একটি অপরাধী গ্রুপকে সক্রিয় দেখা যায়। যারা মূলত রিকশাযাত্রীদের আকস্মিক সালাম দিয়ে জোরপূর্বক রিকশায় উঠে পড়ে। এরপর ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। আরেকটি গ্রুপ মলম পার্টি বা অজ্ঞান পার্টি নামে পরিচিত। তারা খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে মূলত বাসযাত্রীদের অজ্ঞান করে থাকে। থানাভিত্তিক অনুসন্ধান চালিয়ে এ তিন শ্রেণির অপরাধীদেরই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘অপরাধ নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হতে হবে। একজন মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কারও ফোন ছিনতাইয়ের পর সাময়িক পুলিশি তৎপরতা দিয়ে অপরাধ নির্মূল সম্ভব নয়। তবে ছিনতাইকারীদের যে তালিকার কথা বলা হচ্ছে, এজন্য পুলিশ অবশ্যই সাধুবাদ পেতে পারে।

এখন এ বিষয়ে পরিকল্পিতভাবে কার্যকর অভিযানে নামতে হবে। পুলিশের অ্যাকশন প্ল্যানিংয়ের মধ্যে বিষয়টি ঢোকাতে হবে। তাহলেই রাজধানীর ছিনতাই পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।’

পুলিশের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন বস্তি এলাকার বাসিন্দা। অনেকে আছেন ভাসমান। আবার বরিশাল, কুমিল্লা এবং ফেনী এলাকা থেকে ঢাকায় এসে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। রাজধানীর একেক এলাকায় ছিনতাইয়ের ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন, বিমানবন্দর সড়কে বেশির ভাগ ছিনতাই হয় পুলিশ পরিচয়ে।

রাস্তায় সাজানো চেকপোস্ট বসিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীদের গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির নামে সবকিছু হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। আবার সদরঘাট এলাকায় মলম পার্টির সদস্য খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। এছাড়া মতিঝিল এলাকায় টানা পার্টি এবং উত্তরা, মিরপুর এলাকায় চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলছে, রাজধানীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুব ভোরে এবং গভীর রাতে নির্জন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বাড্ডা ও ভাটারা, মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া শাহবাগ, মগবাজার, রমনা পার্ক, মালিবাগ রেলগেট, চাঁনখারপুল, ঢাকা মেডিকেল এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীর হাজারীবাগ এবং মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, ফার্মগেট, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী এলাকায় খুব ভোরে বা নির্জন রাস্তায় সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দেয় পুলিশ। তবে সম্প্রতি হাতিরঝিল, গুলশান-১ নম্বর গোল চক্কর ও বনানী এলাকায়ও ছিনতাই বেড়েছে।

পুলিশ বলছে, রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষের একটি অংশ চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এদের অনেকেই পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে গেছেন। কিন্তু কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার নজির আছে ভূরি ভূরি।

এ কারণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক পুনর্বাসনের মতো বিকল্প উদ্যোগের কথা চিন্তা করতে হবে। তা না হলে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

মিরপুর : পুলিশের তালিকা অনুযায়ী মিরপুর জোনে তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ৫৮ জন। এর মধ্যে মডেল থানায় নাম আছে ৮ জনের। মিরপুর-১০, পূরবী সিনেমা হল ও মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী আরিফুল ইসলামের বাবার নাম আনোয়ার হোসেন, মা-জাহানারা বেগম। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দিঘলদী গ্রামে তার বাড়ি।

বর্তমানে তিনি ৬ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাসার ভাড়াটিয়। অপরজনের নাম জুবায়ের হোসেন ওরফে রাসেল, বাবা মৃত হায়দার সিকদার, মায়ের নাম মৃত সজিদ নাহার। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থানার চর বাগমারা গ্রামে। বর্তমানে ৬ নম্বর সেকশনের, এ-ব্লকের ৪নং রোডে ৫৬ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকেন (আ. সাত্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া)।

রাজধানীর কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল, সনির মোড় ও জার্মান টেকনিক্যাল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাইয়ে জড়িত ফজলুল হক ওরফে সাকিল। তার বাবার নাম মৃত সিরাজুল হক, মায়ের নাম ফরিদা বেগম। বাড়ি ভোলা সদরের ইলিশা (তুলাতুলি) গ্রামে। বর্তমানে মিরপুর কলওয়ালাপাড়া ৩ নম্বর রোডের ১৪৮/৫/খ বাসায় বসবাস করছেন তিনি। এছাড়া মিরপুর এলাকায় ছিনতাইয়ের জড়িত হিসাবে পুলিশের তালিকাভুক্ত হাসান, বাবা আবুল হাশেম এবং উজ্জ্বল, বাবা আব্দুর রশিদ। উভয়ের ঠিকানা মিরপুর কলওয়ালাপাড়া।

মিরপুরের জর্মান টেকনিক্যাল এলাকা, ১০ নম্বর গোলচত্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড, আল নাহিয়ান উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের এলাকায় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত তিনজন পুলিশের তালিকাভুক্ত। এরা হলেন সবুজ, বাবা আবু বক্কর, মা- আয়শা বেগম, গ্রামের বাড়ি সিরাগঞ্জের খোকশাবাড়ি (বোনারগাতি। বর্তমানে তিনি মিরপুরের শাহ আলী থানার বসতি হাউজিংয়ের ১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়ির ভাড়াটিয়া। অপরজনের নাম লেলিন শেখ, বাবা মৃত ফটিক শেখ, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার খাড়হাট মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি।

এছাড়া ছিনতাইকারী হিসাবে চিহ্নিত আশরাফুল ইসলাম, বাবা সেলিম, মায়ের নাম আফরোজা বেগম, গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী। বর্তমানে তিনি সাভারের ক্যাপিটাল গার্মেন্টের গালিতে আলম সাহেবের বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

পল্লবী : পল্লবী এলাকার ছিনতাইকারী হিসাবে পুলিশের তালিকায় ১৪ জনের নাম আছে। এদের মধ্যে ১০ নম্বর সেকশন, পূরবী সিনেমা হলের সামনে ছিনতাইয়ে জড়িত রাশেদ, আরিফুল ও আব্দুর রব ওরফে কাল্লু। এছাড়া ১১ নম্বর সেকশন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পথচারীদের মোবাইল ফোন ও ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায় সাকিল, রনি খোকন ও সাইফুল ওরফে ফরমা সাইফুল। এদের মধ্যে সাইফুল নিজেকে পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেয়। পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, ‘দুর্বৃত্তরা আকস্মিক পথচারীদের গতিরোধ করে। এরপর তল্লাশির নামে পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়।’

পল্লবী ১২ নম্বর সেকশন, খাবার বিলাশ রেস্টুরেন্ট এবং চন্দ্রবিন্দু শপিংমহল এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় ওতপেতে থাকে ছিনতাইকারী রকি, ইমন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। এদের মধ্যে পেশাদার ছিনতাইকারী রকিকে শেল্টার দেয় পল্লবী ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী নুর ইসলাম। এছাড়া সন্ধ্যার পর বিবাহ বাড়ি কমিউিনিটি সেন্টারের সামনে ছিনতাইকারী ইমনের সার্বক্ষণিক অবস্থান শনাক্ত করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, কালশী নতুন রাস্তার মোড় থেকে লোহারপুর এবং ১১ নম্বর সেকশনের সি-ব্লকের সবুজ বাংলা গেট থেকে নাভানা আবাসিক এলাকায় বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার সঙ্গে ৫ ছিনতাইকারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তারা হলেন নূরা, রবিন, ফয়সাল, মাহবুবু ওরফে কোদাল মাহবুব ও আরজু। তাদের কয়েকজন বাউনিয়া বাঁধ এবং বিহারি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা।

এছাড়া কাজীপাড়া এবং শ্যাওড়াপাড়া এলাকার ছিনতাইকারী হিসাবে দিপংকর বিশ্বাস ওরফে সুমনের নাম আছে পুলিশের তালিকায়। ছিনতাইকারী হিসাবে বুলবুল আহম্মেদ ও রাব্বি ওরফে মিশু নামের দুই তরুণের নাম আছে পুলিশের তালিকায়। তারা পিএসসি কনভেসনশন হল, ভিশন গার্মেন্ট এবং মিরপুর ১৩ নম্বর ওভারব্রিজ এলাকায় সক্রিয়।

এছাড়া শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, পুলপাড়, ১০নং গোলচত্বর, আল হেলাল হাসপাতাল, কাফরুল এলাকা, আগারগাঁও উড়ো জাহাজ ক্রসিং এবং কচুক্ষেত বাজার এলাকার ৮ জন ছিনতাইকারীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন রবিন, সাকিল, রফিকুল ইসলাম পাপ্পু, জাবেদ, আয়নাল, হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও সুমন। সুমনের বাবার নাম মোহাম্মদ। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানার ভাবড়াসুর গ্রামে।

পুলিশের তালিকায় ছিনতাইকারী হিসাবে তালিকাভুক্ত সুমনের নাম-ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়েছে। সোমবার বিকালে তার নম্বরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তিনি ছিনতাইকারী নন। কখনো ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা আছে।

মিরপুরের ভাষানটেক থানা এলাকায় ৪ জন ছিনতাইকারী পুলিশের তালিকাভুক্ত। তারা হলেন শামী ওরফে আগুন, বাবা হারুণ অর রশিদ, বর্তমানে সাগরিকা বস্তির মশুরার বাড়ির ভাড়াটিয়া। অন্যরা হলেন ইয়াসিন, মিছা ও হৃদয়। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ভাষানটেক থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ঘন বসতিপূর্ণ শাহ আলী মাজার, মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর, সনির মোড় থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত এলাকায় ১৪ জন ছিনতাইকারীর বিচরণ রয়েছে। তারা হলেন সাইফুল, সজিব ওরফে মাস্টার সজিব, সুমন ওরফে বাবুর্চি সুমন, ফালান, হাসান, মামুন, আশরাফুল, হৃদয় ও ইমাম। এদের মধ্যে সজিব ওরফে মাস্টার সজিব পেশাদার মাদকসেবী।

রাজধানীর গাবতলী আন্ডারপাস থেকে বিআইডব্লিইটিএ ঘাট, খালেক সিটি ও বড়বাজার এলাকায় সক্রিয় ১১ জন ছিনতাইকারী পুলিশের তালিকাভুক্ত। তারা হলেন শিপন, হিরা, রিদপন, অন্তর, রবিউল হাসান ওরফে বুলেট, মেহরাব হোসেন, মুনসুর হাসান, হৃদয় হাসান, কালাচানা ওরফে কালা, সাজ্জাদ ও শফিকুল ইসলাম বিপ্লব।

তালিকার এক নম্বরে থাকা শিপনের বাবার নাম রুহুল আমিন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। বর্তমানে ৯৩ কোটবাড়ি হাজী নাসরিন আক্তারের বাড়ির (নিহন মঞ্জিল) ভাড়াটিয়া। পুলিশের তালিকায় তার মোবাইল নম্বর সংযুক্ত রয়েছে। তবে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রমনা : পুলিশের রমনা জোনে ছিনতাইকারীর সংখ্যা শতাধিক। ৫টি থানা যথাক্রমে রমনা, শাহবাগ, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ১১৬ জন। এর মধ্যে শাহবাগ থানায় তালিকাভুক্ত ৩৪ জন। এছাড়া রমনায় ২৪, ধানমন্ডিতে ১৪, হাজারীবাগে ৩৩, নিউমার্কেটে ৮ এবং কলাবাগান থানায় ৩ জন ছিনতাইকারীর নাম ও ঠিকানা তালিকাভুক্ত।

রাজধানীর ওয়্যারলেস মোড়, সেঞ্চুরি আর্কেড, বারডেম হাসপাতালের দক্ষিণ পাশ, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট এলাকায় সক্রিয় ছিনতাইকারীরা হচ্ছেন শফিকুল ইসলাম, আহমেদ হোসে মোল্লা দিপু, আল মামুন আকন্দ, ইব্রাহিম, মুরাদ মোল্লা, টিটু, অনিক মিয়া, রাজু মিয়া, আজগর, তপন, বিল্লাল, হৃদয়, রুবেল ইসলাম, টোকন, অপূর্ব চৌধুরি, ব্লেড বাবু, মিরাজ হোসেন রুবেল, এরাবিয়ান সোহেল, সম্রাট, মোহাম্মদ হাসান, অয়ন হোসেন তুষার, সাইদুল, শিপন ও সৌরভ।

পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, মগবাজার মোড় ও আশপাশের এলাকায় আকস্মিক পথচারীদের চোখে বিষাক্ত উপকরণ যেমন মরিচের গুঁড়া, স্প্রে এবং জাম্বাক নামের একধরনের মলম লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে চোখে তীব্র প্রদাহ শুরু হয়। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ, মোবাইল ফোন এবং টাকাপয়সাসহ আনুষঙ্গিক সবকিছু লুটে চম্পট দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ওয়্যারলেস এবং মৌচাক মোড়, রমনা পার্ক এবং কাকরাইল এলাকায় ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাইয়ের রেকর্ড আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ, ওসমানী উদ্যাগ ও গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় সক্রিয় ছিনতাইকারী হিসাবে যাদের নাম তালিকাভুক্ত তারা হলেন রাকিব হাসান, রবিন, জুম্মন, তোফাজ্জল হোসেন, মিরাজ, আল-আমিন, রহিদ মিয়া, সাব্বির হোসেন, খোরশেদ আলম, ফেরদৌস, মোরছালিন, মামুনুর রশিদ, আকাশ, তুষার আহম্মেদ ওরফে রুবেল, মনির, কফিল ওরফে মামুন, মনির কাজী, শাকিল, সাগর পাইক, সাইফুল, কবির হোসেন, হৃদয়, সকিব শেখ, রহিম, আবুল হায়াত, সাগর, সোহাগ সরকার, শাহ আলম, সাকিল, গলাকাটা সাগর, হাতকাটা সুমন, রুবেল, নয়ন, আল আমিন, রাব্বি আকন্দ ও শাহিন।

গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, সিটি কলেজ, পপুলার হাসপাতালসহ আশপাশের গলিতে ছিনতাইয়ের দৌরাত্ম্য বেশি। এমনকি গভীর রাতেও এ এলাকায় দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের গতিরোধ করা হয়। দুর্বৃত্তরা প্রথমে ঢিল ছুড়ে ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে দেয়। এরপর অন্ধকার গলিতে টার্গেটের জন্য ওতপাতে। পুলিশের তালিকায় এসব এলাকার ছিনতাইকারী হিসাবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন সাব্বির শেখ, ফারুক শেখ, মকবুল হোসেন, সাব্বির হোসেন হেলাল, ফালান শিকদার, তোফাজ্জল হোসেন ওরফে সুমন, অনিক, মনির, আল মামুন, রনি মুন্সি ও স্বপন।

পুলিশের তালিকা অনুযায়ী হাজারীবাগ থানা এলাকায় ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো হচ্ছে জেএস এক্সপ্রেস ফিলিং স্টেশন, বেড়িবাঁধ, সালাম সরদার রোড, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের প্রকল্প এলাকা, টেনারি মোড়, মনেশ্বর রোড, জিগাতলা ও নিমতলা শেরেবাংলা রোড। হাজারীবাগ থানায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ৩৩ জন। তারা হলেন জিএম কারুজ্জামান খোকন, বর্তমানে ৫৮/৪৪/১ হাবীব সাহেবের বাড়ি; সাইমন, বাবা মৃত ফজর আলী, বর্তমানে রায়েরবাজার কমিউনিটি সেন্টারের ঢাল ফরহাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া; সালাম, বাবা মৃত ছাকিম আলী মোল্লা, বর্তমানে মাহাদী নগর কামরাঙ্গীরচর; রনি, বাবা রতন, বর্তমানে ঝাউচর, বিল্লাল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া; শুক্কুর, বাবা রাজু, বর্তমান ঠিকানা-সাদেক খানের আড়ত; সাগর, বাবা কামাল, বর্তমানে ইউসুফ স্কুল বাগানবাড়ি রোড হক মিয়ার বাড়ি; স্বপন, বাবা বাঁশতলা এলাকার বাসিন্দা মৃত আলী খান; আজমির, বাবা মৃত আব্দুল আলী; সোলাইমান, শুভ হোসেন, লিটু মিয়া, মাঈন উদ্দিন, মনির হোসেন, পারভেজ, বাবু, ফয়েজ, কোরবান, সাথী ওরফে নার্গিস, স্বামী মান্নান; সেন্টু, পাভেল, তারেক, তানজিল, রকি, মাসুদ, মারুফ, পারভেজ, রাসেল ওরফে ছোট রাসেল, আল আমিন, রাকিব, রাহাত, জোবায়ের, বাবর, সামাদ ও দুলাল।

এছাড়া হাজারীবাগ এলাকায় কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ সক্রিয়। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা রাস্তার মোড়ে টার্গেটের জন্য ওতপেতে থাকে। পুলিশ এ ধরনের গ্রুপ ছিনতাই চক্রের কয়েকজনকে তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ল্যাংড়া ফয়সাল, হুমায়ুন, ইমন, আকাশ ও চান্দু।

পুলিশের তালিকায় বলা হয়েছে, রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব মোড় এলাকায় মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনতাইচক্র সক্রিয়। এরা হলেন রাশেদ ওরফে ফরমা রাশেদ, রুবেল, পালান, ইয়াছিন, মিরাজ, কাজল, পারভেজ, সবুজ, রাব্বি, শহিদ, রিয়াজ, মাসুদ রানা, নাদিম ওরফে ফরমা নাদিম, রাজু, কাওছার, আমিনুল, আশরাফুল, হৃদয় ও তাহেরুল ইসলাম। এছাড়া নিউমার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় সংঘবদ্ধ নারী ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়।

রিকশযাত্রী নারীদের টার্গেট করে তারা। নারীদের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল হ্যাঁচকা টানে ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছে পুলিশ। এরা হলেন সুমি, রুমা ও নাদিরা, নাছিমা, রিপা ও খোরশেদা বেগম।

রাজধানীর পান্থপথ, কাওরান বাজার ও কমফোর্ট হাসপাতাল এলাকায় সক্রিয় হিসাবে ৩ জন ছিনতাইকারীর নাম আছে পুলিশের খাতায়। এরা হলেন সেন্টু, বাবা মৃত মতি মিয়া, বর্তমানে ঝাউচর হাজারীবাগের বাসিন্দা। তালিকায় নাম আছে তৌসিফ, পিতা সুজন শেখ, বর্তমানে ১৭/৬ ফ্রি স্কুলে স্ট্রিট কাঁঠালবাগান, স্থায়ী ঠিকানা গোপালগঞ্জের মকসুদপুর থানা এবং তারেক, বাবা অজ্ঞাত, বর্তমানে তিনি কাঁঠালবাগান বাজার এলাকায় বসবাস করেন।