রাজনৈতিক মহলে সাংবাদিক উৎপলের মনগড়া সংবাদ আতঙ্ক!
- আপডেট সময় : ০৭:৫০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮৩ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: মিথ্যা ও বানোয়াট গল্পে সাজানো সংবাদ পরিবেশন নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে সচিব, এমপি, ছাত্রলীগ যুবলীগ সহ রাজনৈতিক অঙ্গনে। সকালে নিউজ আপলোড বিকেলে ডিলেট, মাঝখানে চাঁদাবাজির রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ উৎপল দাসের বিরুদ্ধে। পেশায় তিনি সাংবাদিক হলেও পেশার চেয়ে বড় নেশা তার টাকা আর মদ। ১০০ থেকে লাখ টাকা, যেকোনো পরিমাণেই তার চাই। তার চাহিদার পরিমাণ অনুসারে টাকা না দিলে যে কারো বিরুদ্ধে অসত্য নিউজ এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভয় দেখান তিনি। মান-সম্মান বাঁচাতে কথিত ওই সাংবাদিকের মদের টাকার যোগান দেন ভুক্তভোগীরা।
তার বসবাস বাসায় নয় বিলাসবহুল আবাসিক হোটেলে। যেখানে প্রতিদিন থাকার খরচ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিদিন বারে তার মদের খরচ ১০ হাজার টাকা। দুনিয়া উল্টে যাক কিন্তু নিত্যদিনের হোটেল আর মদের খরচ তার যোগান দিতে হবে। আর এই টাকার জোগান দিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এমপি মন্ত্রী সচিব থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল তার টার্গেট। মনগড়া মিথ্যা ও ভিত্তিহীন গল্পে সাজানো সংবাদ পরিবেশন করে এসব ব্যক্তিদের হুমকি দিয়ে আদায় করে নেন প্রতিদিনের মদ ও বিলাসবহুল আবাসিক হোটেলের খরচ।
এভাবেই চলছে উৎপল দাসের ডিজিটাল চাঁদাবাজি। বলছিলাম উৎপল দাসের কথা। একটি পত্রিকার সাংবাদিক উৎপল ইতোমধ্যে তার সীমা ছাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তার টার্গেট এর শিকার অনেকেই আক্ষেপের সুরে বলেন এই উৎপলকে থামাবে কে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এমপিপুত্র বলেন, উৎপল প্রথমে আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করে। নিজের মান বাঁচাতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। এমনকি এখনও প্রায়ই রাতে মদের টাকা যোগান দিতে আমাকে ফোন দেয়। টাকা না দিলে হুমকি-ধামকি দেয়।
এছাড়াও সরকারদলীয় ছাত্রলীগ যুবলীগসহ অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে উৎপল এর বিরুদ্ধে।
নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায় জন্ম উৎপলের। পিতা পেশায় একজন শিক্ষক। বড় দুই বোন বিবাহিত। তবে পরিবারের সাথে বর্তমানে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি পরিবারের। এর পেছনে রয়েছে আরেক কলঙ্কের গল্প। এলাকার এক লোকের কাছ থেকে নিয়োগের কথা বলে আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বিপথগামী উৎপল। পরে চাকরি দিতে না পারায় উৎপলের পরিবারকে ভুক্তভোগী টাকার জন্য চাপ দেয়। তখন তারা বলে, পুত্রকে ত্যাজ্য করেছে উৎপলের পরিবার।
ছাত্রজীবনের শুরুতে মেধার স্বাক্ষর রাখা উৎপল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এক সময় জড়িয়ে পড়ে রঙিন বোতলের মায়ায়। পরে সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তার। প্রায়শই রাজধানীর বেস্ট ওয়েস্টার্ন লা ভিঞ্চি হোটেলের বারে মদের নেশায় প্রায়ই বুদ হয়ে থাকেন তিনি। বিলাসবহুল আবাসিক হোটেলে বসবাস ও মদের বারে রাতভর আনন্দ ফুর্তির অর্থের যোগান দিতে তাকে এর-ওর কাছে হাত পাততে হয় বলে উৎপলের ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা যায়।
সূত্র জানায়, উৎপলের চাঁদাবাজির মূলে রয়েছে মাদকাসক্তি। নিয়মিত বোতল খান তিনি। তার নিজস্ব ফেসবুক টাইমলাইনে এমন মদ্যপানের ছবি নিজেই প্রচার করে থাকেন উৎপল দাস। বোতলের টাকার যোগানের জন্যই একে-ওকে ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে নিউজ করার হুমকি এবং ফেসবুকে তার নামে মিথ্যা তথ্যে পোস্ট করার হুমকি দিয়ে থাকেন তিনি। তার ক্লাইয়েন্টদের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতারা। দিনের পর দিন ব্লাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে মদের টাকা সংগ্রহ করেন তিনি।
উৎপলের চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন এ পর্যন্ত এমন অন্তত ৩০ জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কখনো কখনো নিজেকে নব্য আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করেন উৎপল। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এই পরিচয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পদ পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিকাশে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার প্রমাণ রয়েছে। উৎপলের অভিনব চাঁদাবাজির কল রেকর্ডসহ যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
অসংখ্য ভুক্তভোগীদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এই প্রতিবেদককে তথ্য-প্রমাণসহ জানান, খুলনা বিভাগের একটি জেলার ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পাইয়ে দিতে চাঁদা দাবি করেন উৎপল। পরে টাকা চাঁদা দিলেও পদ মিলেনি। সে সংক্রান্ত এক চ্যাটলিস্টে দেখা যায় উৎপল তাকে মোবাইল মেসেজে বলেন, “পাঁচটার মধ্যে কিছু করলে আমিও আপনার জন্য কিছু করতে পারবো।” এর কিছুক্ষণ পরে ফের এক মেসেজে উৎপল বলেন, “থ্যাঙ্কস ব্রো. (ব্রাদার) গট ৫০০০।”
অন্য এক কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তির কাছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কিংবা সদস্য পদ পাইয়ে দেয়ার জন্য এক লাখ টাকা দাবি করেন উৎপল। এ সময় পদ পাওয়ার আগে তাকে বিশ হাজার টাকা দেয়ার জন্যও চাপাচাপি করেন তিনি। তবে টাকা দেয়ার পরেও পোস্ট না পাওয়ায় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ড হয়। পরে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ওই ভুক্তভোগীকে হুমকি প্রদান করতে দেখা যায় উৎপলকে।
ভিত্তিহীন ও মনগড়া সংবাদ প্রচারের হুমকি দাতা এই উৎপল এর থেকে পরিত্রান চাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। তবে সে পরিত্রান কবে, কীভাবে মিলবে সেই চিন্তায় বিভোর তারা।