ঢাকা ০৮:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকারঃ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী  Logo মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নতুন বাসের উদ্বোধন Logo মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য: ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক Logo মঙ্গল শোভাযাত্রা – তাসফিয়া ফারহানা ঐশী Logo সাস্টিয়ান ব্রাহ্মণবাড়িয়া এর ইফতার মাহফিল সম্পন্ন Logo কুবির চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার ও পূর্নমিলনী Logo অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদের মায়ের মৃত্যুতে শাবির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ পরিষদের শোক প্রকাশ Logo শাবির অধ্যাপক জহীর উদ্দিনের মায়ের মৃত্যুতে উপাচার্যের শোক প্রকাশ Logo বিশ কোটিতে গণপূর্তের প্রধান হওয়ার মিশনে ‘ছাত্রদল ক্যাডার প্রকৌশলী’! Logo দূর্নীতির রাক্ষস ফায়ার সার্ভিসের এডি আনোয়ার!




ঢাকায় করোনা চিকিৎসার বিভীষিকাময় বর্ণনা, ‘বিছানার কাছেই লাশ পড়ে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:২৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২০ ১০২ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক; 

শাহাদাত হোসেন বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার। গত মাসের একদম শেষের দিকে একটু জ্বর উঠেছিল। খুব সামান্যই তাপমাত্রা ছিল। এরপর একটি প্যারাসিটামল খাওয়ার পর এক রাতেই জ্বর সেরে গিয়েছিল। এরপর তিনি পেশাগত দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু বাড়িতে তার শ্বশুর কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপক জ্বর ও মাথাব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার পর ভাবলেন নিজেও একটু পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। দেখা গেল তার কোন উপসর্গ না থাকলেও তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর তার শ্বশুরসহ পুরো পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর তার মনে হয়েছে জীবনে এতটা অসহায় কোনদিন বোধ করেননি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ জানার পর শুরুতে তিনি খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সহকর্মীদের সহায়তায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

তার ভাষায়, ‘হাসপাতালে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে নয়দিন পার করেছি আমরা। ওখানে মনে হয়েছে রোগীরা একেবারে অভিভাবকহীন। আমি খুবই অসহায় বোধ করেছি। দেখতাম চোখের সামনে রোগীরা মারা যাচ্ছে। লাশ ওয়ার্ডেই পড়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেহেতু নির্দিষ্ট ব্যক্তি লাশ দাফন করেন হয়তো তাদের সংখ্যা কম কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সেকারণে হয়তোবা। কিন্তু এতে একজন অসুস্থ রোগী যে এমনিতেই ভয়ে আছে তার মনের অবস্থা কী হয়?’

শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে তিনি খুবই অসহায় বোধ করেছেন। তিনি হাসপাতালে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিলেন, ২৪ ঘণ্টায় একজন চিকিৎসক আসতেন। অনেক দূর থেকে কথা বলে চলে যেতেন।

নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে একটি মানুষকেও পাওয়া যায় না। এরকমও হয়েছে যে নার্স আসেনি বলে একবার সকালের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া হয়নি। চিকিৎসক দিনে একবারও আসেনি সেটিও হয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘কিন্তু একজন চিকিৎসকের কথায় আমার ভরসা পাওয়ার কথা। তার কথায় আমার মনোবল বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার কেউ ছিল না।’

অন্যান্য সুবিধাদির বর্ণনা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি যে ওয়ার্ডে ছিলেন সেখানে একশো মতো রোগী ছিল। এতজন রোগীর জন্য মাত্র তিনটি টয়লেট, তিনটি গোসলখানা। শাহাদাত হোসেন এক পর্যায়ে রোগী বাড়তে শুরু করার পর চিকিৎসকদের অনুরোধ করে তার শ্বশুরসহ বাড়ি চলে আসেন।

দেশে সবচেয়ে প্রথম যে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সাংবাদিক শনাক্ত হয়েছিলেন সেটি ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের। সেখানে ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কর্মরত আশিকুর রহমান রাজু আক্রান্তদের একজন।

তিনি বলছেন, ‘শনাক্ত হওয়ার পর যখন কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে যান শুরুতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কারণ সবাই পিপিই পরে অনেক দূরে দাড়িয়ে আছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মনোবল হারাতে শুরু করেন। তাকে একজন ওয়ার্ড বয় একটা পলিথিন ব্যাগে বিছানার চাদর, বালিশ, বালিশের কাভার, টয়লেট টিস্যু আর একটা সাবান দেয়। এগুলো দিয়ে ওয়ার্ড বয় কেচিগেট তালা মেরে চলে গেল। নিজের বিছানাও নিজে গুছিয়ে নিতে হল। প্রথম দিন তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে কেউ আসেনি। চিকিৎসকদের ফোন করে তিনি সেটি জানানোর পর সাড়ে ৪টার দিকে তার জন্য একটি বক্সে করে খাবার এসেছিল। কোন প্লেট দেয়া হতো না। সেখানে পানি গরম করা থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজেকে করে নিতে হয়েছে। এমনকি জ্বর হলে যে মাথায় পানি দিতে হয়, সেসময়ও সহায়তা দেয়ার কেউ ছিল না। একটা বালতি, মগ কিছুই ছিল না, এসব অভিযোগ তিনি করেছেন।

আশিকুর রহমান বলছিলেন, জ্বর নিয়ে যে কয়দিন বাসায় ছিলেন তার মনোবল চাঙ্গা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই সেটি হারাতে শুরু করেন। জায়গাটা একটা ভূতের বাড়ির মতো। চারপাশে কেউ নাই। সেরে ওঠার পর যেদিন গ্রামের বাড়িতে গেছেন চেনা পরিচিত লোকেরাও তার খবর নেননি। আমি আসতেছি এটা দেখেই বাড়ির কাছে পুরো রাস্তা খালি হয়ে গেল। আমি যেন ভিনগ্রহের কেউ এরকম মনে হচ্ছিল।

এ বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




ঢাকায় করোনা চিকিৎসার বিভীষিকাময় বর্ণনা, ‘বিছানার কাছেই লাশ পড়ে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা’

আপডেট সময় : ০৩:২৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২০

অনলাইন ডেস্ক; 

শাহাদাত হোসেন বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার। গত মাসের একদম শেষের দিকে একটু জ্বর উঠেছিল। খুব সামান্যই তাপমাত্রা ছিল। এরপর একটি প্যারাসিটামল খাওয়ার পর এক রাতেই জ্বর সেরে গিয়েছিল। এরপর তিনি পেশাগত দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু বাড়িতে তার শ্বশুর কয়েকদিনের মধ্যে ব্যাপক জ্বর ও মাথাব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার পর ভাবলেন নিজেও একটু পরীক্ষা করিয়ে নেবেন। দেখা গেল তার কোন উপসর্গ না থাকলেও তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপর তার শ্বশুরসহ পুরো পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির পর তার মনে হয়েছে জীবনে এতটা অসহায় কোনদিন বোধ করেননি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ জানার পর শুরুতে তিনি খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না। সহকর্মীদের সহায়তায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

তার ভাষায়, ‘হাসপাতালে চরম প্রতিকূলতার মধ্যে নয়দিন পার করেছি আমরা। ওখানে মনে হয়েছে রোগীরা একেবারে অভিভাবকহীন। আমি খুবই অসহায় বোধ করেছি। দেখতাম চোখের সামনে রোগীরা মারা যাচ্ছে। লাশ ওয়ার্ডেই পড়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যেহেতু নির্দিষ্ট ব্যক্তি লাশ দাফন করেন হয়তো তাদের সংখ্যা কম কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সেকারণে হয়তোবা। কিন্তু এতে একজন অসুস্থ রোগী যে এমনিতেই ভয়ে আছে তার মনের অবস্থা কী হয়?’

শাহাদাত হোসেন বলছেন, হাসপাতালে তিনি খুবই অসহায় বোধ করেছেন। তিনি হাসপাতালে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলছিলেন, ২৪ ঘণ্টায় একজন চিকিৎসক আসতেন। অনেক দূর থেকে কথা বলে চলে যেতেন।

নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে একটি মানুষকেও পাওয়া যায় না। এরকমও হয়েছে যে নার্স আসেনি বলে একবার সকালের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া হয়নি। চিকিৎসক দিনে একবারও আসেনি সেটিও হয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘কিন্তু একজন চিকিৎসকের কথায় আমার ভরসা পাওয়ার কথা। তার কথায় আমার মনোবল বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে মানসিক সাপোর্ট দেয়ার কেউ ছিল না।’

অন্যান্য সুবিধাদির বর্ণনা দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি যে ওয়ার্ডে ছিলেন সেখানে একশো মতো রোগী ছিল। এতজন রোগীর জন্য মাত্র তিনটি টয়লেট, তিনটি গোসলখানা। শাহাদাত হোসেন এক পর্যায়ে রোগী বাড়তে শুরু করার পর চিকিৎসকদের অনুরোধ করে তার শ্বশুরসহ বাড়ি চলে আসেন।

দেশে সবচেয়ে প্রথম যে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সাংবাদিক শনাক্ত হয়েছিলেন সেটি ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের। সেখানে ভিডিওগ্রাফার হিসেবে কর্মরত আশিকুর রহমান রাজু আক্রান্তদের একজন।

তিনি বলছেন, ‘শনাক্ত হওয়ার পর যখন কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে যান শুরুতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। কারণ সবাই পিপিই পরে অনেক দূরে দাড়িয়ে আছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি মনোবল হারাতে শুরু করেন। তাকে একজন ওয়ার্ড বয় একটা পলিথিন ব্যাগে বিছানার চাদর, বালিশ, বালিশের কাভার, টয়লেট টিস্যু আর একটা সাবান দেয়। এগুলো দিয়ে ওয়ার্ড বয় কেচিগেট তালা মেরে চলে গেল। নিজের বিছানাও নিজে গুছিয়ে নিতে হল। প্রথম দিন তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে কেউ আসেনি। চিকিৎসকদের ফোন করে তিনি সেটি জানানোর পর সাড়ে ৪টার দিকে তার জন্য একটি বক্সে করে খাবার এসেছিল। কোন প্লেট দেয়া হতো না। সেখানে পানি গরম করা থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজেকে করে নিতে হয়েছে। এমনকি জ্বর হলে যে মাথায় পানি দিতে হয়, সেসময়ও সহায়তা দেয়ার কেউ ছিল না। একটা বালতি, মগ কিছুই ছিল না, এসব অভিযোগ তিনি করেছেন।

আশিকুর রহমান বলছিলেন, জ্বর নিয়ে যে কয়দিন বাসায় ছিলেন তার মনোবল চাঙ্গা ছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই সেটি হারাতে শুরু করেন। জায়গাটা একটা ভূতের বাড়ির মতো। চারপাশে কেউ নাই। সেরে ওঠার পর যেদিন গ্রামের বাড়িতে গেছেন চেনা পরিচিত লোকেরাও তার খবর নেননি। আমি আসতেছি এটা দেখেই বাড়ির কাছে পুরো রাস্তা খালি হয়ে গেল। আমি যেন ভিনগ্রহের কেউ এরকম মনে হচ্ছিল।

এ বিষয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা