রাজধানীতে স্পার নামে যৌন ব্যাবসা, অসামাজিক কার্যকলাপ
- আপডেট সময় : ১২:১৬:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০১৯ ১৭২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
‘আওয়ার থেরাপিস্ট ইজ ইয়াং… অ্যান্ড সো হট।’ বাংলায়, ‘আমাদের থেরাপিস্টরা কচি এবং খুব আকর্ষণীয়।’ গুলশানের অ্যারোমা থাই স্পা’র প্রিন্ট বিজ্ঞাপন এটি। নিজেদের ফেসবুক পেজে স্পন্সর বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রচারণা এমন!
বিজ্ঞাপনটিতে গ্রাহকদের দুই ধরনের ম্যাসেজ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘নুরু ম্যাসেজ’ ও ‘বডি টু বডি ম্যাসেজ’। আরও লেখা আছে, ‘উই হ্যাভ নিউ ফোর গার্লস (আমাদের সংগ্রহে নতুন চারটি মেয়ে আছে)।’
ম্যাসেজ পার্লারের এমন বিজ্ঞাপনে ম্যাসেজ ছাড়াও স্পষ্টভাবে অন্যকিছুর ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে! ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, বিজ্ঞাপনে ‘নুরু ম্যাসেজের’ কথা উল্লেখ রয়েছে। নুরু ম্যাসেজ বলতে শরীরের সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে ম্যাসেজ করা বোঝায়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জনপ্রিয়। ‘বডি টু বডি ম্যাসেজ’ তার চেয়েও ভয়ংকর, এটি অনেকেরই জানা…।
শুধু অ্যারোমা নয়, ঢাকা শহরে তাদের মতো প্রায় ডজনখানেক স্পা সেন্টার অশ্লীল বিজ্ঞাপন আর মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশে বডি ম্যাসেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অথচ তাদের কাছে নেই কোনো বৈধ কাগজ কিংবা ট্রেড লাইসেন্স। সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে হোটেল, বিউটি পার্লার, সেলুন আর ব্যায়ামাগারের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে এ ব্যবসা, চলছে অশ্লীলতা।
পরিচয় গোপন করে সেবাগ্রহীতা সেজে কথা হয় গুলশানের স্পা জোন’র কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটের বিপরীতে একটি ভবনে সেন্টার তাদের। কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এখানে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১০-১২ জন মেয়ে দিয়ে ম্যাসেজ করানো হয়। বয়স ছাড়াও ম্যাসেজে পারদর্শী ও অপারদর্শীদের আলাদা ক্যাটাগরি রয়েছে। ইউনিভার্সিটিপড়ুয়া কম বয়সী মেয়েরাও আছে। যদি কেউ প্রশিক্ষিত মেয়েদের নিয়ে সারা শরীর ম্যাসেজ করাতে চান তাহলে খরচ পড়বে ঘণ্টাপ্রতি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। যদি এক ঘণ্টা ফুল কাজ করেন তাহলে পড়বে পাঁচ হাজার। ভালো ক্যাটাগরির আকর্ষণীয় মেয়েদের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ছয় থেকে সাত হাজার পড়বে।’
পুলিশের ঝামেলা হবে না তো? জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো সমস্যা নাই, আমাদের সব বৈধতার কাগজ আছে। আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করি, নিয়মিত মাসোয়ারা দেই। কোনো সমস্যা নাই।’
কথা হয় গুলশানের ব্লু ট্যারেস স্পা নামের একটি স্পা অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে বিউটি সেলুনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনা করছে ম্যাসেজ সেন্টার, করছেন অসামাজিক কার্যকলাপ!
ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘ভালো মেয়েদের দ্বারা’ বডি ম্যাসেজ করা হয়। ঘণ্টায় তিন থেকে চার হাজার টাকা লাগে। এখানে ‘ফুল কোর্সও’ রয়েছে, রেট সাত থেকে ১০ হাজার টাকা।
একই চিত্র গুলশান-বনানী এলাকার গুলশান সেলুন অ্যান্ড স্পা, লেটস রিল্যাক্স স্পা, ঢাকা গুলশান স্পা, ফেমাস স্পা’র। অশ্লীলতার ইঙ্গিত দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করে তরুণ ও বয়স্ক পুরুষদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
ঢাকা গুলশান স্পা’র একটি বিজ্ঞাপনে স্পা’র সঙ্গে ‘কমপ্লিট ফান’র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্ট করা হয়েছে অশ্লীল ভিডিও।
এর আগেও বেশ কয়েকবার স্পা’র নামে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ঘটিয়েছে কয়েকটি স্পা সেন্টারে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্পা’র নামে অসামাজিক কাজ করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে গুলশান ও বনানী এলাকার ডব্লিউ বিউটি অ্যান্ড স্পা, মহাখালী ডিওএইচএস-এর ফনিক্স হেলথ কেয়ার, গুলশানের হোয়াইট বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা সেন্টার এবং ডায়মন্ড বিউটি অ্যান্ড স্পা’য় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের বিরুদ্ধে তরুণীদের দিয়ে স্পা করানোর পর সেসময়ের ছবি ধারণ করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ ছিল।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিউটি পার্লার বা হোটেলের আদলে কেউ যাতে অসামাজিক কার্যকলাপ না করতে পারে সেদিকে নজর রাখছে পুলিশ। এছাড়া এসবের দ্বারা কেউ যাতে ব্ল্যাকমেইল বা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।