ঢাকা ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ছড়ানো গুজবে সয়লাব Logo সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে Logo জবিতে আজীবন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ Logo শাবিতে হল প্রশাসনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নোটিসে জোর পূর্বক সাইন আদায় Logo এবার সামনে আসছে ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনকারীদের মারধরের আরো ঘটনা Logo আবাসিক হল ছাড়ছে শাবি শিক্ষার্থীরা Logo নিরাপত্তার স্বার্থে শাবি শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড সাথে রাখার আহবান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের Logo জনস্বাস্থ্যের প্রধান সাধুর যত অসাধু কর্ম: দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ! Logo বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখা যুগ্ম পরিচালক আলমগীরের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য  Logo রাজশাহীতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটনকে হয়রানিমূলক মামলায় বএিমইউজরে নিন্দা ও প্রতিবাদ




মোটর মেকানিক নারীর বিস্ময় গল্প

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯ ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক;
ছয়-সাত বছর আগের কথা। দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার এলাকার অগ্রণী ব্যাংকে একটি কাজে গিয়েছিলেন রাবেয়া সুলতানা রাব্বি। তিনি গাড়ির মেকানিক—এ পরিচয় শুনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের চোখ কপালে উঠে গেল! কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলেন না। বাধ্য হয়ে রাব্বি তাঁর পরিচয়পত্র দেখালেন। তারপরও বিস্ময় কাটে না, একজন নারী কীভাবে গাড়ির মেকানিক হন!

শুধু ব্যাংকের ব্যবস্থাপকই নন, অনেকেই রাব্বির পেশা শুনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই রাবেয়া সুলতানা রাব্বি ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারে গাড়ির মেকানিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজধানীর পান্থপথে কেয়ারের গ্যারেজে বসে রাব্বি জানালেন তাঁর জীবনযুদ্ধের কথা। ২০০৫ সালে টাকার অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না। বাবা আবদুল আজিজ ফরাজী তরিতরকারির ব্যবসা করলেও প্রায়ই নানা অসুখ-বিসুখে বাড়িতেই বসে থাকতেন। ছয় ছেলেমেয়ের সংসার তাঁর।

একদিন কেয়ারের মাঠকর্মীরা রাব্বিদের বাড়িতে এসে কেয়ারের পক্ষ থেকে নারীদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের কথা জানালেন। একেবারেই ভিন্ন একটি পেশার কথা শুনে রাব্বি যোগ দিলেন সেই প্রশিক্ষণে।

রাব্বি বলছিলেন, ‘গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণে নাম লেখালাম। প্রশিক্ষণ শেষে কয়েকজন নারীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় কেয়ার থেকে। কিন্তু আমার চাকরি হলো না। কিছুদিন পর কেয়ার থেকে বলা হলো মেকানিক হিসেবে কাজ করার জন্য। সেই সুযোগ লুফে নিয়ে শুরু করলাম গাড়ি দেখভালের কাজ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত করেই চলছি। কেয়ারের বিভিন্ন গাড়ি, মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ের কাজ করি। সেখানে সবার কাছে আমার পরিচয় “মেকানিক রাব্বি আপা”। আমিও তাঁদের এই ডাকে সাড়া দিই।’

গাড়ির ব্রেক ঠিক করা, গাড়ির মবিল বদলানো, ফিল্টার পরিবর্তনসহ নানা কাজ করতে হয় রাব্বিকে। রাব্বি গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘গাড়ির চাকায় হাত দিলেই বুঝতে পারি কোন গাড়িতে কী সমস্যা হয়েছে।’

তিন বছর বয়সী ছেলের মা রাব্বি। স্বামী একরামুল হক একটি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সন্তানকে দেখভাল করার জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষ এখন রাব্বি। গ্রামে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খরচও চালান রাব্বি। বলছিলেন, ‘প্রতি মাসে বাবা-মায়ের জন্য পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। অন্য পাঁচ ভাইবোন থাকলেও বাবা-মায়ের মাসিক খরচ আমাকেই দিতে হয়।’

মূল বেতন আর ওভারটাইম মিলে ৪৪ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পান রাব্বি। নিয়মিত ট্যাক্স দেন। রাব্বি বললেন, ‘আমার বেতনের কথা শুনে আরও নারীরা যাতে এই পেশায় আসে, সেই জন্য কত বেতন পাই তা বললাম।’ হাসতে হাসতে বললেন, ‘গ্রামে গেলে মানুষ আমার চারপাশে ভিড় করে। কী কী কাজ করি, কীভাবে করি, জানতে চায় আর অবাক হয়। ওদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার ভালো লাগে।’

কেয়ারের সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাব্বি জানালেন, কেয়ারে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান, কোনো বৈষম্য নেই।

রাব্বির কাজের সম্পর্কে কেয়ারের পরিবহন ব্যবস্থাপক মো. সেলিম শেখ বললেন, রাব্বি শুধু মেকানিকের কাজই নিখুঁতভাবে করেন না, ফাইলিং থেকে শুরু অফিসের বেশ কিছু কাজেও সাহায্য করেন। কোনো কাজের কথা বললে ‘না’ করেন না। সব মিলে দারুণ এক কর্মী তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




মোটর মেকানিক নারীর বিস্ময় গল্প

আপডেট সময় : ০৫:৩৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক;
ছয়-সাত বছর আগের কথা। দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার এলাকার অগ্রণী ব্যাংকে একটি কাজে গিয়েছিলেন রাবেয়া সুলতানা রাব্বি। তিনি গাড়ির মেকানিক—এ পরিচয় শুনে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের চোখ কপালে উঠে গেল! কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইলেন না। বাধ্য হয়ে রাব্বি তাঁর পরিচয়পত্র দেখালেন। তারপরও বিস্ময় কাটে না, একজন নারী কীভাবে গাড়ির মেকানিক হন!

শুধু ব্যাংকের ব্যবস্থাপকই নন, অনেকেই রাব্বির পেশা শুনে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। যাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই রাবেয়া সুলতানা রাব্বি ২০০৬ সাল থেকে বেসরকারি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারে গাড়ির মেকানিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজধানীর পান্থপথে কেয়ারের গ্যারেজে বসে রাব্বি জানালেন তাঁর জীবনযুদ্ধের কথা। ২০০৫ সালে টাকার অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না। বাবা আবদুল আজিজ ফরাজী তরিতরকারির ব্যবসা করলেও প্রায়ই নানা অসুখ-বিসুখে বাড়িতেই বসে থাকতেন। ছয় ছেলেমেয়ের সংসার তাঁর।

একদিন কেয়ারের মাঠকর্মীরা রাব্বিদের বাড়িতে এসে কেয়ারের পক্ষ থেকে নারীদের গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের কথা জানালেন। একেবারেই ভিন্ন একটি পেশার কথা শুনে রাব্বি যোগ দিলেন সেই প্রশিক্ষণে।

রাব্বি বলছিলেন, ‘গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণে নাম লেখালাম। প্রশিক্ষণ শেষে কয়েকজন নারীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় কেয়ার থেকে। কিন্তু আমার চাকরি হলো না। কিছুদিন পর কেয়ার থেকে বলা হলো মেকানিক হিসেবে কাজ করার জন্য। সেই সুযোগ লুফে নিয়ে শুরু করলাম গাড়ি দেখভালের কাজ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত করেই চলছি। কেয়ারের বিভিন্ন গাড়ি, মোটরসাইকেল সার্ভিসিংয়ের কাজ করি। সেখানে সবার কাছে আমার পরিচয় “মেকানিক রাব্বি আপা”। আমিও তাঁদের এই ডাকে সাড়া দিই।’

গাড়ির ব্রেক ঠিক করা, গাড়ির মবিল বদলানো, ফিল্টার পরিবর্তনসহ নানা কাজ করতে হয় রাব্বিকে। রাব্বি গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘গাড়ির চাকায় হাত দিলেই বুঝতে পারি কোন গাড়িতে কী সমস্যা হয়েছে।’

তিন বছর বয়সী ছেলের মা রাব্বি। স্বামী একরামুল হক একটি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সন্তানকে দেখভাল করার জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষ এখন রাব্বি। গ্রামে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খরচও চালান রাব্বি। বলছিলেন, ‘প্রতি মাসে বাবা-মায়ের জন্য পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হয়। অন্য পাঁচ ভাইবোন থাকলেও বাবা-মায়ের মাসিক খরচ আমাকেই দিতে হয়।’

মূল বেতন আর ওভারটাইম মিলে ৪৪ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পান রাব্বি। নিয়মিত ট্যাক্স দেন। রাব্বি বললেন, ‘আমার বেতনের কথা শুনে আরও নারীরা যাতে এই পেশায় আসে, সেই জন্য কত বেতন পাই তা বললাম।’ হাসতে হাসতে বললেন, ‘গ্রামে গেলে মানুষ আমার চারপাশে ভিড় করে। কী কী কাজ করি, কীভাবে করি, জানতে চায় আর অবাক হয়। ওদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার ভালো লাগে।’

কেয়ারের সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাব্বি জানালেন, কেয়ারে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান, কোনো বৈষম্য নেই।

রাব্বির কাজের সম্পর্কে কেয়ারের পরিবহন ব্যবস্থাপক মো. সেলিম শেখ বললেন, রাব্বি শুধু মেকানিকের কাজই নিখুঁতভাবে করেন না, ফাইলিং থেকে শুরু অফিসের বেশ কিছু কাজেও সাহায্য করেন। কোনো কাজের কথা বললে ‘না’ করেন না। সব মিলে দারুণ এক কর্মী তিনি।