নিশ্চিত নন মোসাদ্দেক

- আপডেট সময় : ১১:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯ ১৪৬ বার পড়া হয়েছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
এই সময়টায় মোসাদ্দেক হোসেনের প্রশংসা চারদিকে। সৈকত ডাকনামের ২৩ বর্ষীয় অলরাউন্ডারে মশগুল সমর্থকরা। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল দেশকে জিতিয়ে তিনি জাতীয় বীর। ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের কথা উঠলেই কিংবদন্তির মতো উঠে আসবে মোসাদ্দেকের নাম। ২৭ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংসটার ইতিহাসমূল্য অমরত্ব কিনে নেওয়ার সমান। কিন্তু ২ জুন ১২তম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের উদ্বোধনী ম্যাচের একাদশে কি থাকবেন মোসাদ্দেক?
ওই ম্যাচ লন্ডনে। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের একাদশ নিয়ে যে ভাবনা সেখানে মোসাদ্দেক নেই। মাশরাফীর দল এখন এমন এক ম্যাচ উইনারকে দারুণ কীর্তির পরের ম্যাচেই ড্রপ করে দিতে পারে। পেশাদারিত্বের এমন অসম্ভব মধুর এক অবস্থান ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।
যেভাবে বিশ্বকাপ দলে মোসাদ্দেক
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর চোখের সমস্যায় আক্রান্ত হলেন মোসাদ্দেক। তাতে জাতীয় দলে খেলা মিস করতে থাকলেন। চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর আর জায়গা ধরে রাখতে পারলেন না। শেষবার জায়গা হারান সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের পর।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সাত নম্বর পজিশন নিয়ে ভাবছিল। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডে সফরে গিয়ে সাব্বির রহমান সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দিলেন। তাতে বিশ্বকাপে তার জন্য সাত নম্বর নির্ধারিত। কিন্তু এই পজিশনে যে কি না ব্যাটিংয়ে ফিনিশিং জানেন, বোলিংয়েও কার্যকর এমন একজন ব্যাকআপ লাগে। অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার পছন্দ ছিলেন মোসাদ্দেক।
কিন্তু ঢাকা লিগের প্রায় শেষটা পর্যন্ত নিজেকে অনিশ্চয়তায় রেখেছিলেন অলরাউন্ডার। শেষ ১৬ ম্যাচের ১৪ ইনিংস খেলে এক সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিতে ৪৮.৮০ গড়ে ৪৮৮ রান নিয়ে মোসাদ্দেক লিগ শেষ করলেন। অধিনায়ক হিসেবে আবাহনীকে শিরোপাও জেতালেন। সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেভাবে ম্যাচ জিতিয়েছেন অনেকটা সেভাবে লিগে ম্যাচ জেতানোর অভিজ্ঞতা আছে মোসাদ্দেকের। কিন্তু লিগে স্ট্রাইকরেট ছিল ৭৪.৮৪, যেটা তার সংগ্রামের কথাই বলেছিল। যদিও আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে তার স্ট্রাইকরেট ৮৫-এর মতো। ১২ ইনিংসে ১২টা উইকেটও ছিল। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের জন্য প্যাকেজ হিসেবে টিকে গিয়েছিলেন। কারণ, মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে বোলিং করতে পারবেন না। পার্টটাইমার অফ স্পিনারও বাংলাদেশের দরকার তাই।
একাদশে সুযোগ পেতে হলে
এখন পর্যন্ত ২৬ ম্যাচের অভিজ্ঞতা মোসাদ্দেকের। ৩৩.৯১ গড়ে ৪০৭ রান করার পাশাপাশি ১১ উইকেট শিকার করেছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মোসাদ্দেক জায়গা পেয়েছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি পরীক্ষার কারণে। আর ফাইনালে উইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে পেরেছেন সাকিব আল হাসান চোটের কারণে খেলতে না পারায়।
লিটন কুমার দাস হালে দলে নিয়মিত ছিলেন। এখন সুযোগ পেয়ে সৌম্য সরকার ওপেনিংয়ে ধারাবাহিক। মিডল অর্ডারেও সব পারফরমার। তাই সুযোগ হচ্ছে না। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৬ রান করেও ফাইনালে একাদশের বাইরে। একই কথা নবীন পেসার আবু জায়েদ রাহীর ব্যাপারে। সেদিন ৫ উইকেট নিয়েও ফাইনালে দর্শক।
মাশরাফীর দর্শন, মূল পরিকল্পনার সঙ্গে আপস নেই। বিকল্প হিসেবে পারফর্ম করলে সেটা দারুণ ব্যাপার। একটা পেশাদার দল এভাবেই গড়ে ওঠে। তাই লিটন, আবু জায়েদদের এসব মেনে নিতে হয়। হয়তো সেদিনের ফাইনালের হিরো মোসাদ্দেককেও মেনে নিতে হবে। বিশ্বকাপের আগে ২৬ ও ২৮ মে যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ বাংলাদেশের। এমন প্রস্তুতিতে সবাই আসলে মূল দলটাকে খেলাতে চায়। তাহলে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে চূড়ান্ত একাদশ হওয়ার কথা।
সেখানে মোসাদ্দেকের জায়গা কোথায়? কম্বিনেশন এভাবে দুর্দান্ত মিলছে বলে গত বিশ্বকাপের হিরো রুবেল হোসেনকেও বসে থাকতে হচ্ছে। ইংল্যান্ডে ফিজের অভিজ্ঞতা ভালো না। তবু এগিয়ে থাকবেন তিনি। পেস অলরাউন্ডারের যোগ্যতায় সাইফউদ্দিন। আয়ারল্যান্ডে মিরাজের অফ স্পিন নির্ভর করার মতো হয়ে উঠেছে। মিঠুন নির্ভরযোগ্য, সাব্বিরকে বাইরে রাখতে নারাজ দল।
তাহলে?
মোসাদ্দেকের তাই আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নেই।