ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo আগস্ট বিপ্লবের অদৃশ্য শক্তি তারেক রহমান – মাহমুদ হাসান Logo ছাত্র জনতাকে ১০ মিনিটে ক্লিয়ার করার ঘোষণা দেয়া হামিদ চাকুরীতে বহাল Logo ছাত্রলীগ নেত্রী যুবলীগ নেতার প্রতারণার শিকার চিকিৎসক সালেহউদ্দিন: বিচার ও প্রতিকার দাবি Logo দেশসেরা সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনে সংবর্ধনা Logo মাদরাসাসহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি বিএমজিটিএ’র Logo এনবিআরে আরেক মতিউর: কর কমিশনার কবিরের সম্পদের পাহাড় Logo চাকুরীর নামে ভুয়া মেজরের কোটি টাকার প্রতারণা: মিথ্যে মামলায় ভুক্তভোগীদের হয়রানি Logo পটুয়াখালী এলএ শাখায় ঘুষ ছাড়া সেবা পাচ্ছেনা ইপিজেড ও পায়রা বন্দরের ক্ষতিগ্রস্তরা Logo খুলনায় বন্ধ পাটকল চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে আমজনতার দলের বিক্ষোভ Logo এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী রশীদ’র বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ




বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মেয়ে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯ ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ; 

‘বাবা আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন, আমি কই যামু, রাতে চোখে দেহি না, আমার কেউ নাই’ অঝরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ৮০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুন। এ সময় পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটে গেলেও অসহায় এ বৃদ্ধার কথা শোনার যেন কেউ নেই।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিলাপের সুরে বৃদ্ধা হামিদা খাতুন বলতে থাকেন, ‘রোববার সকালে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পর একটা রুটি খাওয়াইছে। এর পর বলে চল, আজকে তরে থইয়াইব (রেখে আসব)। আইজ তরে মমসিং (ময়মনসিংহ) থইয়া আসব। আগে আমারে অনেক দেখছে, ইদানিং কের লাইগা আমার লগে এমডা লাগাইছে। সে কয় তুই আমার মা না, আমি তোর মাইয়া না। আমারে কয় এইহানে বইয়া বইয়া খাস, তোর বাপ দাদার কামাই? কিছু দিছস আমারে? এই কয়ে আমারে গাড়িত তুলে এইহানে রাইখা চইলা গেছে। যাওয়ার সময় আমি কইছি আমারে খাওয়ার কিছু দিয়া যা, রাও করল না, দৌড়ইয়া গেছে গা।’

স্থানীয় পান দোকানি সুজনের চোখে পড়ে রোববার সকালের এ নিষ্ঠুর ঘটনা। তিনি বলেন, মধ্যবয়সী এক নারী একটি অটোরিকশায় ওই বৃদ্ধাকে এনে এখানে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও কেউ নিতে আসেনি।

সুজন আরও বলেন, এই নারীর স্বামী নঈমুল্লা এক সময় শহরের সি.কে. ঘোষ রোড এলাকায় পান সিগারেটের ব্যবসা করতেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে স্বামীর তিনিও ওই এলাকার একটি মার্কেটের সামনে সিগারেট বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে বার্ধক্যের ভারে আশ্রয় মেলে বড় মেয়ে পলির কাছে। সেখানে লাঞ্ছনা, অপমান আর মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

ছোট মেয়ে মলি। সেও খবর নেয় না। রোববার সকালে বড় মেয়ে পলি একটি অটোরিকশায় করে হালুয়াঘাট থেকে এনে সি.কে. ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে ফেলে রেখে যায়।

সন্ধ্যার পরও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় প্রেসক্লাব মার্কেটের পরিছন্নতাকর্মী আঁখির তত্ত্বাবধানের সাময়িকভাবে তুলে দেয়া হয় হামিদাকে।

আখি বলেন, আমারও বাবা মা আছেন। একজন বৃদ্ধা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। তাই বিবেকের তাড়নায় আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। নানি বলে ডাকি।

প্রেসক্লাবের এমএলএসএস শহীদ বলেন, এই নারীকে অনেক দিন ধরে চিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি একটি বাক্স দোকান বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে সে সিগারেট বিক্রি করত। আর রাতে আবাসনে একজনের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মেয়ে

আপডেট সময় : ১২:০৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ; 

‘বাবা আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন, আমি কই যামু, রাতে চোখে দেহি না, আমার কেউ নাই’ অঝরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ৮০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুন। এ সময় পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটে গেলেও অসহায় এ বৃদ্ধার কথা শোনার যেন কেউ নেই।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিলাপের সুরে বৃদ্ধা হামিদা খাতুন বলতে থাকেন, ‘রোববার সকালে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পর একটা রুটি খাওয়াইছে। এর পর বলে চল, আজকে তরে থইয়াইব (রেখে আসব)। আইজ তরে মমসিং (ময়মনসিংহ) থইয়া আসব। আগে আমারে অনেক দেখছে, ইদানিং কের লাইগা আমার লগে এমডা লাগাইছে। সে কয় তুই আমার মা না, আমি তোর মাইয়া না। আমারে কয় এইহানে বইয়া বইয়া খাস, তোর বাপ দাদার কামাই? কিছু দিছস আমারে? এই কয়ে আমারে গাড়িত তুলে এইহানে রাইখা চইলা গেছে। যাওয়ার সময় আমি কইছি আমারে খাওয়ার কিছু দিয়া যা, রাও করল না, দৌড়ইয়া গেছে গা।’

স্থানীয় পান দোকানি সুজনের চোখে পড়ে রোববার সকালের এ নিষ্ঠুর ঘটনা। তিনি বলেন, মধ্যবয়সী এক নারী একটি অটোরিকশায় ওই বৃদ্ধাকে এনে এখানে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও কেউ নিতে আসেনি।

সুজন আরও বলেন, এই নারীর স্বামী নঈমুল্লা এক সময় শহরের সি.কে. ঘোষ রোড এলাকায় পান সিগারেটের ব্যবসা করতেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে স্বামীর তিনিও ওই এলাকার একটি মার্কেটের সামনে সিগারেট বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে বার্ধক্যের ভারে আশ্রয় মেলে বড় মেয়ে পলির কাছে। সেখানে লাঞ্ছনা, অপমান আর মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

ছোট মেয়ে মলি। সেও খবর নেয় না। রোববার সকালে বড় মেয়ে পলি একটি অটোরিকশায় করে হালুয়াঘাট থেকে এনে সি.কে. ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে ফেলে রেখে যায়।

সন্ধ্যার পরও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় প্রেসক্লাব মার্কেটের পরিছন্নতাকর্মী আঁখির তত্ত্বাবধানের সাময়িকভাবে তুলে দেয়া হয় হামিদাকে।

আখি বলেন, আমারও বাবা মা আছেন। একজন বৃদ্ধা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। তাই বিবেকের তাড়নায় আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। নানি বলে ডাকি।

প্রেসক্লাবের এমএলএসএস শহীদ বলেন, এই নারীকে অনেক দিন ধরে চিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি একটি বাক্স দোকান বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে সে সিগারেট বিক্রি করত। আর রাতে আবাসনে একজনের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকত।