ঢাকা ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo শাবি ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ছড়ানো গুজবে সয়লাব Logo সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে Logo জবিতে আজীবন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ Logo শাবিতে হল প্রশাসনকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নোটিসে জোর পূর্বক সাইন আদায় Logo এবার সামনে আসছে ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনকারীদের মারধরের আরো ঘটনা Logo আবাসিক হল ছাড়ছে শাবি শিক্ষার্থীরা Logo নিরাপত্তার স্বার্থে শাবি শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড সাথে রাখার আহবান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের Logo জনস্বাস্থ্যের প্রধান সাধুর যত অসাধু কর্ম: দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ! Logo বিআইডব্লিউটিএ বন্দর শাখা যুগ্ম পরিচালক আলমগীরের দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য  Logo রাজশাহীতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটনকে হয়রানিমূলক মামলায় বএিমইউজরে নিন্দা ও প্রতিবাদ




বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মেয়ে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯ ২২৭ বার পড়া হয়েছে

জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ; 

‘বাবা আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন, আমি কই যামু, রাতে চোখে দেহি না, আমার কেউ নাই’ অঝরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ৮০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুন। এ সময় পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটে গেলেও অসহায় এ বৃদ্ধার কথা শোনার যেন কেউ নেই।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিলাপের সুরে বৃদ্ধা হামিদা খাতুন বলতে থাকেন, ‘রোববার সকালে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পর একটা রুটি খাওয়াইছে। এর পর বলে চল, আজকে তরে থইয়াইব (রেখে আসব)। আইজ তরে মমসিং (ময়মনসিংহ) থইয়া আসব। আগে আমারে অনেক দেখছে, ইদানিং কের লাইগা আমার লগে এমডা লাগাইছে। সে কয় তুই আমার মা না, আমি তোর মাইয়া না। আমারে কয় এইহানে বইয়া বইয়া খাস, তোর বাপ দাদার কামাই? কিছু দিছস আমারে? এই কয়ে আমারে গাড়িত তুলে এইহানে রাইখা চইলা গেছে। যাওয়ার সময় আমি কইছি আমারে খাওয়ার কিছু দিয়া যা, রাও করল না, দৌড়ইয়া গেছে গা।’

স্থানীয় পান দোকানি সুজনের চোখে পড়ে রোববার সকালের এ নিষ্ঠুর ঘটনা। তিনি বলেন, মধ্যবয়সী এক নারী একটি অটোরিকশায় ওই বৃদ্ধাকে এনে এখানে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও কেউ নিতে আসেনি।

সুজন আরও বলেন, এই নারীর স্বামী নঈমুল্লা এক সময় শহরের সি.কে. ঘোষ রোড এলাকায় পান সিগারেটের ব্যবসা করতেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে স্বামীর তিনিও ওই এলাকার একটি মার্কেটের সামনে সিগারেট বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে বার্ধক্যের ভারে আশ্রয় মেলে বড় মেয়ে পলির কাছে। সেখানে লাঞ্ছনা, অপমান আর মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

ছোট মেয়ে মলি। সেও খবর নেয় না। রোববার সকালে বড় মেয়ে পলি একটি অটোরিকশায় করে হালুয়াঘাট থেকে এনে সি.কে. ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে ফেলে রেখে যায়।

সন্ধ্যার পরও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় প্রেসক্লাব মার্কেটের পরিছন্নতাকর্মী আঁখির তত্ত্বাবধানের সাময়িকভাবে তুলে দেয়া হয় হামিদাকে।

আখি বলেন, আমারও বাবা মা আছেন। একজন বৃদ্ধা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। তাই বিবেকের তাড়নায় আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। নানি বলে ডাকি।

প্রেসক্লাবের এমএলএসএস শহীদ বলেন, এই নারীকে অনেক দিন ধরে চিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি একটি বাক্স দোকান বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে সে সিগারেট বিক্রি করত। আর রাতে আবাসনে একজনের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকত।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :




বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন মেয়ে

আপডেট সময় : ১২:০৪:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০১৯

জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ; 

‘বাবা আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন, আমি কই যামু, রাতে চোখে দেহি না, আমার কেউ নাই’ অঝরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ৮০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুন। এ সময় পাশ দিয়ে মানুষ হেঁটে গেলেও অসহায় এ বৃদ্ধার কথা শোনার যেন কেউ নেই।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বিলাপের সুরে বৃদ্ধা হামিদা খাতুন বলতে থাকেন, ‘রোববার সকালে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পর একটা রুটি খাওয়াইছে। এর পর বলে চল, আজকে তরে থইয়াইব (রেখে আসব)। আইজ তরে মমসিং (ময়মনসিংহ) থইয়া আসব। আগে আমারে অনেক দেখছে, ইদানিং কের লাইগা আমার লগে এমডা লাগাইছে। সে কয় তুই আমার মা না, আমি তোর মাইয়া না। আমারে কয় এইহানে বইয়া বইয়া খাস, তোর বাপ দাদার কামাই? কিছু দিছস আমারে? এই কয়ে আমারে গাড়িত তুলে এইহানে রাইখা চইলা গেছে। যাওয়ার সময় আমি কইছি আমারে খাওয়ার কিছু দিয়া যা, রাও করল না, দৌড়ইয়া গেছে গা।’

স্থানীয় পান দোকানি সুজনের চোখে পড়ে রোববার সকালের এ নিষ্ঠুর ঘটনা। তিনি বলেন, মধ্যবয়সী এক নারী একটি অটোরিকশায় ওই বৃদ্ধাকে এনে এখানে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও কেউ নিতে আসেনি।

সুজন আরও বলেন, এই নারীর স্বামী নঈমুল্লা এক সময় শহরের সি.কে. ঘোষ রোড এলাকায় পান সিগারেটের ব্যবসা করতেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে স্বামীর তিনিও ওই এলাকার একটি মার্কেটের সামনে সিগারেট বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে বার্ধক্যের ভারে আশ্রয় মেলে বড় মেয়ে পলির কাছে। সেখানে লাঞ্ছনা, অপমান আর মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

ছোট মেয়ে মলি। সেও খবর নেয় না। রোববার সকালে বড় মেয়ে পলি একটি অটোরিকশায় করে হালুয়াঘাট থেকে এনে সি.কে. ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে ফেলে রেখে যায়।

সন্ধ্যার পরও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় প্রেসক্লাব মার্কেটের পরিছন্নতাকর্মী আঁখির তত্ত্বাবধানের সাময়িকভাবে তুলে দেয়া হয় হামিদাকে।

আখি বলেন, আমারও বাবা মা আছেন। একজন বৃদ্ধা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। তাই বিবেকের তাড়নায় আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। নানি বলে ডাকি।

প্রেসক্লাবের এমএলএসএস শহীদ বলেন, এই নারীকে অনেক দিন ধরে চিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি একটি বাক্স দোকান বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে সে সিগারেট বিক্রি করত। আর রাতে আবাসনে একজনের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকত।