অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ০৪:৩৬:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৯ ৫৯ বার পড়া হয়েছে

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ – যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা কীভাবে সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। এতে প্রদর্শন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান, ‘আসুন দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
বাংলাদেশের অর্জনক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৩ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।
শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে।
নারীর ক্ষমতায়নে অর্জন; নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০% এর উপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।
মন্দা মোকাবেলায় সাফল্য; মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযু্ক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।
দেশজুড়ে এখন উন্নয়নের ছোঁয়া। গত ১০ বছরে দেশ বদলে গেছে। স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি য়েছে। দেশ এখন ক্ষুধামুক্ত। দারিদ্র্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। কুঁড়েঘর এখন কবিতায়, বাস্তবে নেই। খালি পায়ের মানুষ চোখে পড়ে না। ছেঁড়া কাপড় পরিহিত মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আকাশ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম চেনা যায় না। হাতিরঝিলে গেলে মনে হয়, এ যেন বিদেশ. আধুনিক কোনো দেশের ভূখণ্ড। কোনো জাদুর ছোঁয়ায় এভাবে দেশ বদলে যায়নি। শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণেই গত ১০ বছরে দেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে।
পরিশেষে বলছি, গণমাধ্যম মূলত সমাজের দর্পণ স্বরূপ। সমাজের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। তাই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম প্রত্যেক মানুষকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মানুষের এই দেশপ্রেমকে জাগরণ করে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সন্ত্রাস দমন, দুর্নীতি দমন, কর্মসংস্থান তৈরি, কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র-গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জনমত তৈরি, সচেতনতা বৃদ্ধি, সাহিত্য সাংস্কৃতিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম সরকারের শত্রু নয়, উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তিই হচ্ছে গণমাধ্যম।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান ল’ইয়ার্স ফোরাম।