আইজিপিকে নিয়ে চক্রান্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল
- আপডেট সময় : ০৭:৫৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২২৮ বার পড়া হয়েছে
নাহিদ উকিল জুয়েল:
[ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)-এর কন্যা] বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কারণে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলাম। কিন্তু এখন যেহেতু ব্যাপারটা মিডিয়ায় ঢালাওভাবে প্রচারিত হচ্ছে, কিছু কথা না বললেই নয়।
প্রথমত সংবাদ শিরোনামে ‘বেনজীর আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা’ বলা হলেও বিষয়টি মোটেও ব্যক্তিগত পর্যায়ের নয়। এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটি ব্যক্তি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নয়; বরং অভিযোগটি র্যাবের বিরুদ্ধে। আর তারই অংশ হিসেবে র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ভাই, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ভাই (আইজিপি হিসেবে নয়)সহ র্যাবের আরও চারজন অফিসারের ব্যাপারে এই নিষেধাজ্ঞা। অথচ মিডিয়ায় ঢালাওভাবে বেনজীর আহমেদ ভাইয়ের নাম দিয়ে শিরোনাম করা হচ্ছে। এটি অবশ্য টিআরপির খেলা। কারণ, তিনি যখন যে চেয়ারে ছিলেন, সেটি নিয়েই মিডিয়ার আগ্রহ বেশি ছিল। তবে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা রিশতার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলা অবস্থায় তাঁর নাম এভাবে শিরোনামে আনার ব্যাপারটি আমার কাছে ভালো লাগেনি। কারণ, অধিকাংশ মানুষ খবরের বিস্তারিত না পড়ে শুধু শিরোনাম পড়েই চলে যায়।
বাংলাদেশ হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এত মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠল কেন, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। প্রকৃতপক্ষে এই করোনা পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে ক্ষতির মুখে পড়েছে, সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভিশনারি ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে চলমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এবং মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত হওয়াই মূলত পশ্চিমা বিশ্বের এত জ্বলনের কারণ। তাই তো ৯-১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’ তে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ। আর তারপর এল র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং তার ছয় কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি।
বিষয়টি নিয়ে হয়তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় বিবৃতি দেবে। তবে আমি আমার সামান্য জ্ঞানে কিছু ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে চাই।
র্যাব বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অধীনে থাকা একটি কম্পোজিট ফোর্স। এই বাহিনীর নামেই রয়েছে ‘র্যাপিড’ শব্দটি। আর তাই এই বাহিনীর কার্যক্রম কিংবা ম্যান্ডেটেও রয়েছে ভিন্নতা। মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই র্যাবের এত অভিযান। জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নেই র্যাব তার সর্বশক্তি বিনিয়োগ করেছে এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছে।
আমরা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই, বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান কিংবা বিস্তারের ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা মোতায়েন করেছে এবং সেসব দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জন্মের সাথে সাথেই র্যাব তথা বাংলাদেশ পুলিশের দুঃসাহসিক অভিযানে জঙ্গিবাদ হয়েছে ছিন্নভিন্ন। এককথায় জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন হয়ে গেছে। আর তাই হয়তো এই অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপের সুযোগটি নষ্ট হওয়াতেই তারা আশাহত হয়ে খেপেছে। মাদকের ব্যাপারটিও অনেকটা সে রকম। যেহেতু মাদক একদম ব্যক্তিপর্যায়ের ইস্যু, তাই মাদক শতভাগ নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের দমনে র্যাব অনেকটাই সফল হয়েছে।
মাদক ও জঙ্গিবাদ দমনের ফলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার হয়েছে সুসংহত। অথচ বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাখ্যা করছে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে! হায় সেলুকাস!
যুক্তরাষ্ট্র মূলত বিভিন্ন বন্দুকযুদ্ধে নিহত সন্ত্রাসীদের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না; কারণ, প্রত্যেক মানুষেরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যেকোনো অপরাধের শাস্তিই আইন ও আদালতের প্রক্রিয়ায়ই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তবে একই সাথে আমার সাধারণ জ্ঞান দ্বারা আমি এটিও বুঝি, জঙ্গিদের সাথে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, এসব থাকাটাই স্বাভাবিক এবং র্যাব-পুলিশের অভিযানে তারা আত্মসমর্পণ না করে আক্রমণ করলে র্যাব-পুলিশেরও হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে পাল্টা জবাব দেওয়াটাই স্বাভাবিক। আর র্যাব-পুলিশ যেহেতু প্রশিক্ষিত ও অস্ত্র সরঞ্জামে সজ্জিত থাকে, সেহেতু তাদের কাছে জঙ্গিদের পরাস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই প্রক্রিয়াতেই হয়তো বেশ কিছু জঙ্গি ঘটনাস্থলে মারা গেছে। র্যাব-পুলিশেরও কিছু সদস্য আহত/নিহত হয়েছেন।
মাদকের ব্যাপারটিও অনেকটা এ রকম। বিশেষ করে বেনজীর আহমেদ যখন ঘোষণা দিলেন ‘হুয়েভার, হোয়াটএভার, হোয়্যারএভার, কেউই আমাদের অপারেশনের বাইরে নন।’ তখন মাদক ব্যবসায়ীরাও তাদের শক্তি বাড়াতে অস্ত্রশস্ত্র সাথে নিয়েই মাদক চালান করা শুরু করল এবং পরিণতিও আগের মতোই হলো।
সবচেয়ে বড় কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আইনের প্রতি চূড়ান্ত শ্রদ্ধাশীল বলেই তাঁর নিজের পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারটি পর্যন্ত আইনানুগ প্রক্রিয়াতেই সম্পন্ন করেছেন। আমি বলতে পারি, যিনি তাঁর নিজের পরিবারের ব্যাপারেই আইন লঙ্ঘন করেননি, তিনি অন্য ব্যাপারেও আইন কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতেন না।
বেনজীর আহমেদ তো সেই মহৎপ্রাণ, যার অনন্য প্রচেষ্টায় সুন্দরবনের জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে দস্যুতা ছেড়ে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা ও সুপারিশের মাধ্যমে এই লোকগুলোকে আইনের কঠিনতা থেকে বাঁচিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর মতো কাজ কি মানবতা নয়?
হোলি আর্টিজানে যখন জঙ্গিরা এতগুলো মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল, তখন ব্যক্তিগত একটি সোশ্যাল কল ফেলে সবার আগে অন দ্য স্পটে হাজির হয়ে অভিযানে নিজে অংশ নেওয়া কি মানবতা নয়?
করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি গৃহবন্দী গরিব কর্মহীনদের খাদ্যসহায়তার ব্যবস্থা করে দেওয়া কি মানবতা নয়?
রাজশাহীর বাঘায় এক বাগানমালিক যখন তার আমের জন্য শামুকখোল পাখির সব বাসা ভেঙে দিতে উদ্যত হয়েছিল, তখন বাগানমালিককে আমের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে পাখিগুলোকে রক্ষা করা কি মানবতা নয়?
করোনায় মারা যাওয়া প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে খাদ্য, পোশাক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান কি মানবতা নয়?
এ রকম উদাহরণ লিখতে গেলে শেষ হবে না। আর কয়টা উদাহরণই বা জনসম্মুখে আসে। আমি তো আজ পর্যন্ত দেখলাম না তিনি কখনো তাঁর নিজের কোনো মানবিক কার্যক্রম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
শেষে একটা কথা বলি। চট্টগ্রামের তালসরা মাজার লুটের ঘটনা, লিমন ইস্যু এবং সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার ইস্যুর পরও বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে মানুষ র্যাবের ওপর সর্বোচ্চ আস্থা রেখেছিল। আর র্যাবের পুরো কর্মকাণ্ডে তো কত অফিসারই জড়িত ছিল। তবু অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু বেনজীর আহমেদ আর বর্তমান ডিজি মামুন ভাইয়ের নাম কেন আনা হলো? এগুলো আসলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রতিশোধের চেষ্টামাত্র। বেনজীর ভাই ডিএমপি কমিশনার থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ৫ মের ঢাকা অবরোধ নস্যাৎ করেছেন, রাস্তায় সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা বন্ধ করেছেন। স্বাধীনতা ও জনগণের শত্রুদের প্রতিহত করেছেন। তিনি একজন দেশপ্রেমিক। দেশ ও জনগণের কল্যাণের প্রশ্নে তিনি সদা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বেনজীর ভাই তাঁর অবসরের বয়সসীমায় চলে এসেছেন। তিনি নিজ কর্ম দ্বারা পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে নিজেকে সবচেয়ে ক্যারিশমাটিক অফিসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ক্যারিশমার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বব্যাপী। আর এ জন্যই তাঁকে লক্ষ্য করেই শত্রুপক্ষের এত ষড়যন্ত্র।
তবে বেনজীর ভাইকে শুধু বলব, আপনার প্রতি একটাই অনুরোধ, আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। কারণ, আপনার জন্য পুরো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের দোয়া ও সমর্থন আছে। আর সেই দোয়াতেই আপনি সব সময় ভালো থাকবেন ইনশাআল্লাহ। আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা।
লেখক: নাহিদ উকিল জুয়েল, সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘ভালোবাসি মাতৃভাষা’ গ্রন্থের সংকলক ও ইংরেজি অনুবাদক।