অবৈধ আইপি টিভির অন্তরালে ঢাকা-সৌদি’র ইয়াবা নেটওয়ার্ক! ধারাবাহিক পর্ব -১
- আপডেট সময় : ০৮:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুন ২০২১ ১৬৬ বার পড়া হয়েছে
(ধ্বংস হচ্ছে প্রবাসীরা, হুমকির মুখে সৌদির শ্রমবাজার)
খান মোহাম্মাদ জুয়েল: করোনায় গোটা বিশ্ব নাকাল হলেও থেমে নেই আন্তর্জাতিক মাদক মাফিয়ারা। নৌ ও সড়ক পথে মিয়ানমার সহ ভারত সীমান্ত থেকে ঢাকায় আনা বড় বড় ইয়াবার চালান না না কৌশলে বিমান যোগে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরব সহ মধ্যে প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে পাচার হওয়া এসব ইয়াবা প্রবাসীদের যেমন নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তেমনি মাদক ও মাদকের নেশায় জড়িয়ে নানা অপরাধ ও অপকর্মের কারনে দেশের ভাবমূর্তী নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মধ্যেপ্রাচ্য সহ মুসলমানদের পবিত্র ভূমি সৌদি আরবে ।
বিদেশে বিমানযোগে ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটের প্রধান কারবারিদের অন্যতম সদস্যরা মুলত কুমিল্লা সদরের কালির বাজার ইউপি ও পাশ্ববর্তী উপজেলা বরুড়ার মহেষপুর সহ আশে পাশের এলাকার কয়েকটি গ্রামের প্রবাসী আন্তর্জাতিক ইয়াবা পাচারকারীরা। সৌদি প্রশাসনের নজরদারিতে থাকা সৌদির শীর্ষ এক ইয়াবা ডিলার ঢাকায় অনুমোদনহীন একটি আইপি টেলিভিশনের অন্তরালে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারে সক্রিয় বলে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণে বেড়িয়ে এসেছে। লকডাউনে বিশেষ ফ্লাইট ও লকডাউন তুলে নেয়ার পর বিমান চালু হলে সম্প্রতি ইয়াবার বেশ কিছু বড় বড় চালান সৌদি আরবে তার মাধ্যমেই প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে।
গতবছর সৌদির রাজধানী রিয়াদে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ধনুয়াখলা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে শাহআলম এর প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার মুন্সিগঞ্জ জেলার সাহেদুর সৌদি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হয়। আটকের সময় তার কাছ থেকে ১৭হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলে বেড়িয়ে আসে ইয়াবার আসল মালিক শাহআলমের নাম। এর আগেও সৌদির ইয়াবা ডন হিসেবে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদের শিরোনাম হয় শাহআলম। সাহেদুর ইয়াবা সহ আটকের পর গা ঢাকা দেয় শাহআলম। এর কিছুদিন পরই দেশে চলে আছে। সৌদি পুলিশ কে ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে এলেও নিজের বাড়িতে আসেন নি তিনি। অবস্থান নেয় ঢাকায় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় । দেদারছে টাকা খরচ করে শখ্যতা গড়ে তোলে তাদের সাথে। এদিকে নিজ বাড়ি ও এলাকায় না আসার কারন অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লা সীমান্তের বড় বড় কয়েকজন মাদক কারবারির পাওনা টাকা চাপ, ভীসা দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেয়া টাকা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও নিজেদের অজান্তে তার ইয়াবা বহন করতে গিয়ে সেদেশে আটক হয়ে জেল খেটে দেশে আসা তার নিজ গ্রাম ও এলাকার আশেপাশের হতভাগা প্রবাসীদের ভয়। শাহআলমের কাছে মাদক, ভীসা ও প্রবাসীদের পাওনা টাকার পরিমানও কম নয়। বিভিন্ন মাধ্যম সংগ্রহ করা তথ্য থেকে জানা যায় এই টাকার পরিমান প্রায় ৬০ কোটি টাকারও অধিক। এ কারনেই এলাকায় না এসে ঢাকায় অবস্থান নিয়ে কুমিল্লার কয়েকজন সাংবাদিকের সহায়তায় তাদের ঢাকায় নিয়ে বিজয় নগর এলাকায় আইসিএল সিলভার রেইন ভবনের ৮ম তলায় বিশাল অফিস ভাড়া নিয়ে আইবিএন টিভি নামে একটি অনলাইন ও আইপি টেলিভিশন চালু করে। কোন প্রকার আয় না থাকলেও প্রতিমাসে অফিস ভাড়া সহ যার খরচ রয়েছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা । আর এসব খরচ একাই বহন করছেন আইপিটিভির এমডি পদে থাকা মাধ্যমিক পাশ করা শাহআলম। প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলা দিয়ে এই আইপি টেলিভিশনের অন্তরালে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সৌদির ইয়াবা ডন শাহআলম। অনলাইন টেলিভিশনটি চালুর পর একাধিক মাদক মামলার আসামী তার দুই সহযোগীকে নিয়ে বেশ কয়েকবার সৌদি আরবে যাতায়াতও করে শাহআলম। যাদের একজন তারই এলাকার ড্রাইভার সাদ্দাম এবং অপরজন সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী ভারত সীমান্ত এলাকার জিহাদ।
মুসলমানদের পবিত্র ভূমি সৌদি আরবের ইয়াবা কারবারিদের মাঝে ধনুয়াখলার শাহআলম, বরুড়া মহেষপুরের মোতালেব এবং বুড়িচং সোন্দ্রমের শাহপরান শীর্ষ ইয়াবা ডিলার হিসেবে পরিচিত । লোভে পরে আন্তর্জাতিক শীর্ষ এই ইয়াবা ডিলারদের ফাঁদে পা দিয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর, বরুড়া ও বুড়িচং সহ বিভিন্ন উপজেলার শতশত প্রবাসী যুবক নিঃস্ব হয়ে বিদেশে জেলে খেটে দেশে এসেছে। সৌদি শীর্ষ ইয়াবা ডিলারদের মাঝে বরুড়ার মোতালেব ও শাহপরানের ইয়াবার চালানগুলো মুলত শাহআলমের মাধ্যমেই সৌদিতে ঢুকছে। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারি বরুড়ার বেলভূজ এলাকার জুয়েল মোল্লার রহস্য জনক মৃত্যু এবং এরপর বরুড়া মহেষপুর এলাকার মোতালেব সৌদি পুলিশের হাতে ৫হাজার পিস ইয়াবা ও এক ফিলিপাইনি নারী সহ আটক হওয়ার পর সৌদি আরবের ইয়াবা বাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে তাদেরই অন্যতম সহযোগী ও পার্টনার ধনুয়াখলার শাহআলম। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শাহআলম কে। দু’তিন বছরেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায় শাহআলম । গ্রামের কৃষকের ছেলে মাধ্যমিক পাশ করে ২০১২ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবের রিয়াদে অন্যের দোকানে কাজ করা শাহআলম ১৮সালের পর দুবছরেই কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যায়। মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা, আল কাসিম, ভাতা, হারা সহ গোটা সৌদি আরবের ইয়াবা কারবারি এজেন্টদের কাছে শাহআলম হয়ে ওঠে ইয়াবা ডন।
২য় পর্বে থাকছে
সৌদির ইয়াবা ডন শাহআলমের ইয়াবার জালে আটকে সৌদি আরবের বিভিন্ন জেলে অবস্থান করা ও জেল খেটে ফেরত আসা প্রবাসী ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার বক্তব্য। জেলে থাকা প্রবাসীদের স্ত্রী’দের ধর্ষণ ও প্রলোভনে ফেলে শাহআলমের অনৈতিক সম্পর্কের জেরে সংসার ভাঙ্গন। বিমানে ইয়াবা পাচার কৌশল, সংবাদ প্রকাশের পর শাহআলমের সৌদি পলায়ন।